২০১২ সালের শুরুতে আমদানি রপ্তানি অধিদপ্তর এ গেলাম আইআরসি (আমদানি নিবন্ধন সনদ) ও ইআরসি (রপ্তানি নিবন্ধন সনদ) নিবো বলে। সরকার দলীয় রাজনৈতিক পদধারী এক কাকার রেফারেন্স নিয়ে।
কাকা বললেন, "কন্ট্রোলার সাহেব রে গিয়া আমারে ফোন ধরায় দিবি। অয় আমার বন্ধু মানুষ।"
অফিসে গেলাম। কন্ট্রোলার সাহেবের পিয়ন দেখে বললেন, "কই যাবেন?"
"জ্বি কন্ট্রোলারের রুমে যাবো। উনি আমার চাচার বন্ধু। আইআরসি ইআরসি নিবো।"
পিয়ন ব্যঙ্গাত্মকভাবে হেসে বললেন, "যান ভিতরে যান।"
সালাম দিয়ে ভিতরে গেলাম। কন্ট্রোলারকে পরিচয় দিলাম। তিনি প্রথমে হাসলেন। তারপর ভেটকি দিয়ে বললেন, "এই হানে পরিচয় দিয়া লাভ হইবো না। সরকারি ফি ছাড়া টাকা কতো আনছো হেইডা কও।"
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কাকার বন্ধু টাকা চায়! তাও এমন বিচ্ছিরি ভঙ্গিতে!
বললাম, "জ্বি টাকা নাই।"
"পাক্কা ছয় হাজার লাগবে। যাও টাকা নিয়া তারপর আইসো।"
কাকাকে বিষয়টি জানালাম তিনি খানিক কাচুমাচু করলেন। তারপর বললেন, "কি আর করবি টাকা দিয়াই কইরা আন। শালারা শুয়োর।"
আমার জিদ চাপলো। টাকা ছাড়াই সনদ নিবো। রাজনৈতিক অরাজনৈতি যত ধরনের পরিচয় আছে সব দিতে লাগলাম।
কিছুতেই কিছু হলো না। কন্ট্রোলার পিয়নকে ডেকে বললেন "টাকা না আনলে অরে ভিতরে ঢুকতে দিবা না।"
যে পত্রিকায় আমি এতদিন কাজ করেছি। সে পত্রিকার একজন সাংবাদিককে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, "জুয়েল এসব নিয়ে কেউ ঘাটাঘাটি করে না। সরকারি অফিসে এইটা সিম্পল বিষয়।"
পিয়ন বললেন, "কাউরে ফোন দিয়া লাভ নাই। এই টাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত যায়। সব মিডিয়ায় যায়। যান টাকা নিয়া আসেন।"
সেদিন ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলাম। পরের দিন আবার কন্ট্রোলারের অফিসে গেলাম। তিনি ধমক দিয়ে বললেন, "কোন লাভ নাই। প্রধানমন্ত্রী নিজেও যদি লাইসেন্স এর জন্য আসে তবুও অই ছয় হাজার টাকা নিয়া আইতে হইবো। যাও টাকা নিয়া আসো।"
হতাশ হয়ে ফিরে এলাম। পরের দিন টাকা নিয়ে গেলাম। দুই হাজার পকেটে লুকিয়ে রেখে প্রথমে চার হাজার টাকা দিলাম। কন্ট্রোলার ছুড়ে ফেলে দিলেন। পকেট হাতড়ে আরো দুই হাজার বের করে দেবার পর আদন্ত হাসি দিয়ে বললেন, "গুড বয়। যাও কালকে আইসা নিয়া যাইও।"
পরের দিন সনদ দুটো নিয়ে ফিরলাম।
এর পর প্রতি বছর সরকারি ফির বাইরে কন্ট্রোলারের পিয়ন ফজলুকে ১৫০০ টাকা ঘুষ দিয়ে নবায়ন করতে হয় আমাকে। শুধু আমাকে নয়। আমার মতো এরকম শত শত লোককে। কন্ট্রোলারের পিয়ন ফজলুর প্যান্টের দুই পকেট ফুলে যায় প্রতিদিন ঘুষের টাকা নিতে নিতে।
ঈদের আগে আমার এক আত্মীয়ের জন্য একটি আইআরসি ও ইআরসি লাইসেন্স করাতে সরকারি ফির বাইরে দশ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
আজ প্রথম আলোয় আমদানি রপ্তানি অধিদপ্তরের ঘুষ তখা স্পিড মানি নিয়ে ফকরুল ইসলামের রিপোর্ট টি দেখে নিজের কথাগুলো সবার সাথে শেয়ার করলাম। এবার দেখার বিষয় হনুমানের বিষ্ঠা (আমার দেয়া ঘুষের নাম) ভক্ষণকারী এই বদমাশটার কী বিচার হয়।
অপেক্ষায় রইলাম...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬