somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাফিজের চাকুরীর ভাইভা!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব তাড়াহুড়ো করে হাফিজ বাসা থেকে বের হয়, আজকে ওর চাকুরির ভাইভা, সকাল দশটায় পরীক্ষা শুরু হবে কিন্তু ওর ঘুম ভেঙ্গেছে সাড়ে নয়টায়! শাহবাগ থেকে উত্তরা- বিশাল পথ অথচ হাতে আছে মাত্র বিশ মিনিট, এদিকে কোন গাড়িও পাচ্ছে না। কোন হরতাল বা অবরোধের কথা হাফিজ মনে করতে পারে না। কিন্তু রাস্তায় কোন গাড়ি নেই কেন তার উত্তর ওকে কে দিবে? অস্থির ভাবে সিএনজি খোঁজার জন্য দৌড়াতে থাকে ও। একটার পর একটা সিএনজিকে ও জিজ্ঞেস করতে থাকে, কিন্তু কেউ-ই ওদিকে যাওয়ার জন্য রাজি হয় না। অনেক কাকুতি মিনতি করে কিন্তু কারো মন গলাতে পারে না ও। কী করবে কিছুই ভেবে পায় না। রাস্তার ধুলো আর শরীরের ঘামে গায়ের সাদা রঙের শার্ট ময়লা রঙ ধারণ করতে থাকে। অনেক সময় চেষ্টার পরে একটা ট্যাক্সি ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি হয়। গাড়িতে উঠেই ড্রাইভারকে ক্রমাগত তাড়া দিতে থাকে ছেলেটা, একটু তারাতারি করে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এটাও ও জানে, ড্রাইভার যত জোরেই চালানোর চেষ্টা করুক না কেন, রাস্তার জ্যাম আর দূরত্ব এতো সহজে অতিক্রমযোগ্য নয়।

যখন ওকে নিয়ে ট্যাক্সিটা আজমপুরে এসে থামে, ততক্ষণে এগারোটা বেজে গেছে। তাড়াহুড়ো করে ভাড়া মেটানোর জন্য পকেটে হাত দিয়েই হাফিজ বুঝতে পারে আজকে ওর কপালে শনি আছে! ও মানিব্যাগ নিয়ে আসেনি! ড্রাইভার মুখে বেশি কিছু না বলে শুধু একটা ধমক দিয়ে ওর হাত থেকে টাইটান ঘড়িটা খুলে নেয়। গত ক্রিস্টমাসে খ্রিষ্টান প্রেমিকার কাছ থেকে পাওয়া ঘড়িটা মনের কষ্ট সত্ত্বেও ওকে দিয়ে দিতে হয়। তবুও মনে আশা হয়তো ও আজকে ভাইভাতে অংশ নিতে পারবে।

নতুন আর কোন সমস্যা ছাড়াই ও অফিসে ঢুকে। ষষ্ঠ ফ্লোরে ভাইভা হওয়ার কথা, হাফিজ লিফটের জন্য দাঁড়ানোর মত ধৈর্য রাখতে পারে না। সাত তলা পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়েই দৌড়ে উঠে যায়, কিন্তু এসে যা ও দেখে তাতে আহাম্মকের মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া ওর আর কিছু করার থাকে না। ও দেখে- পুরো ফ্লোর খালি, অপেক্ষমান কেউ নেই! অথচ এতো তারাতারি তো সবার ভাইভা শেষ হওয়ার কথা না! কিন্তু কেউ যে নেই সেটা তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছে! কী করবে এখন?

করিডোরের শেষ মাথায় একটা ঘরের ভেজানো দরজা দেখে ও উঁকি দেয়, দেখে ভিতরে কয়েকজন লোক একটা বড় টেবিলের একপাশে সারি বেঁধে বসে আছেন, সবাই বেশ বয়স্ক আর গোছানো পোশাক পড়া। ভিতরে ঢোকার অনুমতি নিয়ে ঘরটার মাঝে ও প্রবেশ করে। ও দাড়িয়ে থাকে বসার অনুমতি পাবার অপেক্ষায়, কিন্তু মানুষগুলো ওকে বসতে বলার বদলে ওকে দেখে ক্যামন চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে! এরপর হঠাৎ তাদের মাঝে একজন হো হো করে হেসে উঠলে বাকিরাও কেউ হা হা, কেউ হো হো করে হাসি জুড়ে দেয়। কতক্ষণ এভাবে কাটে ও বুঝতে পারে না, শেষে বসে থাকা মানুষদের একজন প্রথম ওর সাথে বলেন-

- হাফিজ সাহেব, ভালো আছেন?
ওই লোকটা ওর নাম কীভাবে জানলো তা নিয়ে মাথা ঘামানোর মত সুযোগ ওর নেই। প্রচণ্ড শীত ছড়িয়ে এয়ার কন্ডিশন চলতে থাকা ঘরটার মাঝে খুব গরম অনুভব করতে করতেই ও কথার জবাব দেয়-
- জী স্যার, ভালো।
- এতো দেরি করলেন যে?
- স্যার, রাস্তায় একটু সমস্যা হয়েছিলো...
- হুম, কিন্তু সবাই তো পরীক্ষা দিয়ে চলে গেছে।
- জী স্যার, দেখতে পাচ্ছি...
- তা, আমরা তো আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় লোক পেয়ে গেছি, আপনাকে এখন কী করবো?
- স্যার, আমি অনেক কষ্ট করে এসেছি, যদি আমার পরীক্ষাটা একটু নিতেন...
- ঠিক আছে, নেবো। কিন্তু কথা হলো আপনি যত ভালো পরীক্ষা-ই দিন না কেন, চাকুরী কিন্তু পাবেন না।
- কেন স্যার?
- কারণ, আমরা চাকুরীর বিজ্ঞপ্তিতে কোন ড্রেস কোড উল্লেখ না করলেও প্যান্ট না পড়ে যে লোক চাকুরী নিতে চলে আসে, তাকে চাকুরী দেই কীভাবে?
বলে আবার হো হো করে হাসা শুরু করে দেন। সাথে বাকি সবাই ও তাল মিলিয়ে হো হো শব্দে যোগ দেন। সবাই হাসছেন, কিন্তু কেউ হা হা আর কেউ হো হো করে না, এবার সবাই ছন্দ মিলিয়ে হাসছেন। একসাথে সবাই হো হো করে উঠছেন আবার একসাথেই হা হা করে উঠছেন।
হাফিজ বোঝার চেষ্টা করে এটা কীভাবে সম্ভব! এতদূর পথ ও চলে আসলো, রাস্তায় কিংবা ট্যাক্সিতে ড্রাইভার কিছু বললো না, অফিসে ঢোকার সময় দারোয়ান ও কিছু বললো না- কিন্তু তা হয় কী করে? নিজেই নিজের শরীরের দিকে তাকায়। উপরের অংশে বেশ গুছিয়ে পোশাক পড়া, সাদা শার্টে মেরুন রঙের টাই, শার্ট গুজে দিয়ে পড়া, কিন্তু নিচের অংশে শুধু কালো রঙের ফুটবলারদের মত একটা হাফ প্যান্ট!

ভ্যাবলার মত নিজের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মানুষগুলোর দিকে তাকায়, এখন তারা আরও গুছিয়ে তাল মিলিয়ে হাসছেন। হাসতে হাসতে কেউ ওকে থাবা দেয়ার ভঙ্গি করছেন কেউ বা আবার দাড়িয়ে নাচ জুড়ে দিয়েছেন। আতঙ্কিত হাফিজ তাদের কাণ্ড দেখতে থাকে আর ওদিকে মানুষগুলোর অগোছালো অঙ্গভঙ্গির সাথে সাথে হাসির শব্দ দূরে চলে যেতে থাকে, অনেক দূরে... আরও এবং আরও দূরে!

... - ওই, ওঠ! ওই?
ধরফর করে বিছানায় উঠে বসে হাফিজ। ওর পাশে বন্ধু লিমন বসা, কলা খাচ্ছে।
- আর ঘুমাইস না, ওঠ!
- কয়টা বাজে?
- সাড়ে পাঁচটা।
- সকাল না বিকেল?
- ধুর শালা, সকাল না বিকেল মানে? আজকে না তোর ভাইভা? তাই তোরে একটু তারাতারি উঠাইয়া দিলাম। যা, বই তো সব আগেই পড়া শেষ করছস, এখন একটু রিভিশন দে, যাহ্‌!
- হুম যাই।

হাফিজের ফাঁকা বিছানায় লিমন শুয়ে পড়ে। সারারাত পাশের ঘরে তাস খেলে কাঁটিয়ে এখন চোখে ঘুম পাচ্ছে, তাই কায়দা করে ও হাফিজকে বিছানা ছাড়া করেছে। ব্যাটা কী খারাপের খারাপ! ডিপার্টমেন্টে টিচার হওয়ার লবিঙে সবার আগে আছে, বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষায় টিকে গেছে, বাপের অঢেল টাকা। তার মধ্যে আবার যাচ্ছে একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকুরীর জন্য! এটাও পেয়ে যাবে। লিমন একটা চাকুরী পায় না, আর ও সব পায়! পা, তুই সব চাকুরী পা, আমি আপাতত তোর বিছানায় আরাম করে ঘুমাই। নিজের মনে কথাটা বলে দুর্ভাগ্যের কপালে পাথর ফাটাতে ফাটাতে লিমন ঘুমিয়ে পড়ে।

হাফিজ পরিপাটি করে নিজেকে গুছিয়ে নেয়। ঘড়িটা হাতে নিয়ে পরম আদরে কবজিতে আটকে দিয়ে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে আবার হঠাৎ দৌড়ে এসে আয়নার সামনে দাড়ায় নিজেকে পরখ করে নিতে- আসলেই ও প্যান্ট পড়েছে তো? নাকি আবার কালো রঙের হাফ প্যান্টের মধ্যেই শার্ট গুজে দিয়ে তাতে টাই ঝুলিয়ে দিয়েছে!
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×