আমি যখোন নয় বছরের বালিকা , ঠিক সে সময় আগমন ঘটে ছোট একটা মেয়ের । ওর বয়স তখন এক বছর । জীবনে প্রথম বার এতো কাছ থেকে ছোট একটা মেয়েকে দেখা , সে যেন পরম আনন্দের অনুভূতি । তার ছোট ছোট হাত ছোট ছোট পা , আধো সুরে কথা বলা ,সব কিছু এতটাই আকর্ষন করছিল যে , ও হয়ে গেল আমাদের ভালো লাগার বিশাল সমুদ্র । সারাদিন ওকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকি , ওকে একটু কোলে নেওয়ার জন্য আমার আর আপুর রীতিমতো ঝগড়া লেগে যেতো । কিন্তু ও ছিল ততটাই বিপরীতমুখী, কিছুতেই আমাদের সাথে খেলতো না , সারাদিন কান্নাকাটি করে ঘর জাগিয়ে রাখতো । এভাবে কিছু মাস পর মামা মামী ওকে নিয়ে আলাদা বাসা নিল ।
দূরত্ব বেড়ে গেল, মাঝে মাঝে আম্মুর সাথে ওদের বাসায় চলে যেতাম ।
আমার জীবনে প্রথম টেলিপ্যাথি সেদিন সত্যি হলো । সেদিন মন খারাপ করে বসে ছিলাম ,তার কিছুক্ষন পর চোখ বন্ধ করে ওর নাম মনে মনে তিন বার উচ্চারন করলাম । কি অবাক কান্ড ! সত্যি সত্যি ও এসে হাজির । এতো খুশি হয়েছিলাম যে চোখে জল চলে এলো । সারাটা মুহূর্ত যতক্ষন ছিল ততক্ষন ওর সাথে ছিলাম ।
তারপর অনেক দিন পর ওর সাথে আবার দেখা, সেদিন খুব মন খারাপ হয়েছিল , ও কেমন শান্ত নীরব হয়ে গেছে , বড্ড অচেনা লাগছিল সেদিন ।
শেষ দেখা হলো 2015 এর 16 ডিসেম্বর , সেদিন ছিল আপুর বিয়ে , ওর আগমনে আমি খুব খুশি ছিলাম । শুধু আকদ হবে বলে মানুষ জন তেমন একটা ছিল না, বিয়ে বাড়ি মনেই হচ্ছিল না, সারাটা দিন ও আমার সাথে ছিল । আমি যেখানে ঠিক ও সেখানে যাচ্ছিল । যতবার সিড়ি দিয়ে উঠানামা করছিলাম দেখি আমার পিছন পিছন ও ঠিক হাজির । আগের রাতে ওর গল্প শুনে সারা রাত পাড় করেছিলাম , অবাক হয়ে ভাবছিলাম , ও যেন পুরো আমার সত্ত্বা । মনে পড়ে গেল মামীর বলা কথাগুলো । ওর তখনো পৃথিবীতে আগমন ঘটেনি । মামী তখন খুব বলতো , আমার যদি হাফসার মতো একটা মেয়ে হতো । সত্যি সত্যি আমার স্বভাবের অনেক খানি যেন ওর মাঝে মিলেমিশে আছে ।
সময় গুলো বড্ড পাষান, আবার কবে ওকে দেখবো জানি না, মামা জানালেন শীঘ্রই বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন । শুধু জানি ওকে খুব মিস করবো , ওর নিষ্পাপ চাহনি, ওর বালিকা সুলভ কথার শব্দ গুচ্ছ, একসাথে শেষ বার কফি খাওয়া ।
রাত গভীর হয় , প্রিয় মানুষ গুলো কেমন ঝাপসা হয়ে ধরা দেয় । যা আমার তা তো আমি হারাতে চাই না , সময় কেবল হারিয়ে দেয় । শুধু বলার আছে , বোন তুই অনেক ভালো থাক যতটা ভালো আমরা কল্পনা করি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১১