প্রশ্ন
আমি মোছাঃ শারমিন আক্তারের গত কয়েক মাস আগে এক জন ছেলের সাথে বিবাহ হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমার স্বামী মোটামোটি ধার্মিক ও তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পর্ক রাখেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অবস্থা ধর্মীয় দিক থেকে খুবই নাজুক। বিশেষভাবে তাঁর পিতার এযাবতকাল পর্যন্ত আমার সাথে বিভিন্ন আচার-আচরন আমাকে ঐস্বামীর সাথে ঘরসংসার করতে হতাশা যুগিয়েছে। প্রথমদিকে লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপনে সমাধা করার চেষ্টা করেছি। আমার স্বামীর সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় এবং সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ করতে বাধ্য হই। এখন মাননীয় মুফতি সাহেব হুজুরের কাছে আবেদন এই যে, আমার নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে শরয়ী সমাধানে বাধিত করবেন।
আমার শ্বশুর আমার সাথে এমন সব আচরন করে যার দ্বারা আমার সন্দেহের সৃষ্টি হয়। প্রায় সময় তিনি রাত ১/২ টা পর্যন্ত সজাগ থাকেন এবং আমাকে তাঁর পাশে বসে থাকতে বলেন। অনেক সময় সেই রুমে আর কেউ থাকে না। এদিকে আমার স্বামী একা রুমে অপেক্ষা করেন কিন্তু পিতাকে কিছুই বলতে পারেন না। আমার শ্বশুর আমার হাত ধরে চাপাচাপি করেন এবং বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন। এক সময় আমাকে তাঁর গালে চুমু দিতে বললে একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁর গালে চুমু দিতে বাধ্য হই। তারপর তিনি আমার মাথাকে টেনে ধরে তাঁর বুকের সাথে জড়িয়ে রাখেন। কিন্তু আমার বুক আমি তাঁর থেকে দূরে রাখি। এরুপ ঘটনা একাধিক বার সংঘটিত হয়। আমার শ্বশুরের এসব আচরনে আমি ঐস্বামীর সাথে ঘরসংসার করতে নিরুৎসাহিত হই। এব্যাপারে আমি হযরতের কাছে শরয়ী সমাধান জানতে চাই।
শ্বশুরের বক্তব্য:-আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলতে পারি যে, আমার পুত্রবধুর সাথে এসব আচরনের ক্ষেত্রে আমার কোনরুপ খারাপ মনোবাসনা ছিল না। অমার কোনরুপ কামপ্রবৃত্তিও ছিল না। আমি তাকে আমার মেয়ের মত মনে করি।
স্বামীর বক্তব্য:-উপরোক্ত ঘটনার ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হল, আমি আমার পিতার ব্যাপারে কোনরুপ খারাপ সন্দেহ করতে পারি না। তিনি কোন অসৎ উদ্দেশ্যে আমার স্ত্রীর সাথে কোনরুপ খারাপ আচরন করেছেন বলে আমি মনে করি না। বরং এটা তাঁর স্বাভাবিক আচরন। অন্যান্য মাহরাম মহিলা যেমন তাঁর মেয়েদের সাথেও তিনি এরুপ ব্যবহার করে থাকেন।
আবেদনকারী
মোছাম্মত শারমিন আক্তার
শরয়ী সমাধান
حامدا و مصليا و مسلما، اما بعد
প্্রশ্নে বর্ণিত ঘটনায় যেহেতু শ্বশুর কোনরুপ কামপ্রবৃত্তির অস্বীকার করছে এবং স্বামীও এক্ষেত্রে তাঁর পিতাকে সত্যায়ন করছে তাই শ্বশুরের এসব কার্যকলাপ দ্বারা হুরমতে মুছাহারাত প্রমাণিত হবে না। অর্থাৎ উক্ত স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকবে, তাঁরা একে অপরের জন্য হারাম হবে না।
তবে উল্লেখ্য যে, শ্বশুরের এসব কর্মকান্ড ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী সম্পুর্ণ হারাম। পুত্রবধুর সাথে এসব আচরন কোনমতেই জায়েয হবে না। সামাজিক ও মানবিক বিচারেও তা কুরুচিপুর্ণ বদঅভ্যাস ও অন্যায়। এসব বদঅভ্যাস থেকে ভবিষ্যতে অবশ্যয় বেঁচে থাকতে হবে। অন্যথায় গোনাহের বুঝা মাথায় নিয়ে কাল কিয়ামতের ময়দানে কঠিন শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকেই শয়তানের কঠিন ফাঁদ থেকে রক্ষা করুন। আমীন !
প্রমাণাদি
(۱)وَتَثْبُتُ بِاللَّمْسِ فِيهِمَا عن شَهْوَةٍ وَبِالنَّظَرِ إلَى فَرْجِهَا عن شَهْوَةٍ عِنْدَنَا وَلَا تَثْبُتُ بِالنَّظَرِ إلَى سَائِرِ الْأَعْضَاءِ بِشَهْوَةٍ وَلَا بِمَسِّ سَائِرِ الْأَعْضَاءِ إلَّا عن شَهْوَةٍ بِلَا خِلَافٍ وَتَفْسِيرُ الشَّهْوَةِ هِيَ أَنْ يَشْتَهِيَ بِقَلْبِهِ وَيُعْرَفُ ذلك بِإِقْرَارِهِ لِأَنَّهُ بَاطِنٌ لَا وُقُوفَ عليه لِغَيْرِهِ-
(بدائع الصنائع- فصل فى المحرمات.۳/۴۱۶ )
(۲) قال في الفتح: وَثُبُوتُ الْحُرْمَةِ بِمَسِّهَا مَشْرُوطٌ بِأَنْ يُصَدِّقَهَا أَوْ يَقَعَ فِي أَكْبَرِ رَأْيِهِ صِدْقُهَا .وَعَلَى هَذَا يَنْبَغِي أَنْ يُقَالَ فِي مَسِّهِ إيَّاهَا : لَا تَحْرُمُ عَلَى أَبِيهِ وَابْنِهِ إلَّا أَنْ يُصَدِّقَاهُ أَوْ يَغْلِبَ عَلَى ظَنِّهِمَا صِدْقُهُ .ا ه.( فتح القدير-فصل فى بيان المحرمات،۳/۲۱۳)