somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুফীবাদ (ইসলামিক মিষ্টিসিজম) পার্ট ৩

২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পুষ্টের লিঙ্কঃ Click This Link

ধর্ম এবং অতিন্দ্রীয়তাবাদঃ
একটু মাথা খাটিয়ে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এই অতিন্দ্রীয়তাবাদ বা Mysticism বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন উপাদান এর সাথে যুক্ত করেছে, আবার বিভিন্ন ধর্ম এর থেকে অনেক কিছু নিয়েছে। যখন এটা বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে এসেছে, তখন এটা “নির্ভানা” –রুপ নিয়েছে যেখানে জাগতিক সবকিছু ত্যাগ করে, নিরামিষ ভোজী হয়ে ধ্যনে সময় কাটানো এইসব কিছু এসেছে। আবার যখন এটা ইহুদী ধর্মের কাছে এসেছে তখন এটা রুপ নিয়েছে “কাব্বালা” রুপে যেখানে সমস্ত সৃস্টি ঐশ্বরিক স্বত্বার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে এবং এই ঐশ্বরিক স্বত্বাকে মানুষ তার চেতনায় ধারন করতে পারে। এই একই বিষয় “ওয়াদাত-আল-ওয়াযুদ”সুফীজমের মাধ্যমে ইসলামের মধ্য বিদ্যমান। যখন এই অতিন্দ্রীয়তাবাদ ইসলামের সংস্পর্শে এসেছে, তখন এটা নাম নিয়েছে সূফীবাদ। এই অতিন্দ্রীয়তাবাদ তার অভীষ্ট লক্ষে পৌছাতে কোন বিশেষ ধর্মের প্রয়োজন হয়না।

ইসলাম এবং সুফীবাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্যঃ
সুফীবাদ মূল ইসলামের সাথে এমন ভাবে মিশে গেছে যে সাধারণ দৃষ্টিতে একে ইসলাম থেকে পার্থক্য করা আপাত দৃস্টিতে খুব কঠিন। এর প্রধান কারন হচ্ছে আমাদের সমাজে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ এত বেশি যে আমরা সুফী মতাদর্শকে অনেক সময় ইসলামিক মতাদর্শ হিসাবে জেনে, বুঝে পালন করে আসছি। সুফীরা সাধারণত তাদের তাত্বিক এবং ব্যবহারিক প্রয়োগ কে জাস্টিফাই করার জন্য কোরআন থেকে কিছু রেফারেন্স টানেন। আমি ঐ রেফারেন্সের দিকে যাবনা বা ঐ রেফারেন্সের পাল্টা কোন যুক্তি দিবনা। যদি কেউ এই ব্যপারে কোরআন থেকে কোন রেফারেন্স দেয়, প্রসঙ্গক্রমে আমি অবশ্যই উত্তর দেওয়ার চেস্টা করব। এই ফাকে একটা কথা বলে রাখি যে ইসলাম এবং কোরআন সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমেই এই পার্থক্য বের করার অন্যতম উপায়।

আগের আলোচনা থেকে যদি আমরা সংক্ষেপ করি, তবে আমরা ইসলাম এবং সুফীবাদের মধ্যে নিম্নক্ত পার্থক্য গুলি করতে পারি।

১। ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ ভাবে আত্নসমর্পণ করা, এক বলা হয় দ্বীনে-বন্দেগী।অন্যদিকে সুফীবাদ হচ্ছে আল্লহর সাথে এক হয়ে যাওয়া বা যাওয়ার পথ খোজা, একে বলা হয় দ্বীনে খোদা।

২। ইসলামে সবচেয়ে ঘৃন্য এবং বড় পাপ হচ্ছে শিরক, যেখানে সূফীবাদ শিরক কে গৌরান্বিত করে।এর প্রধান মতবাদগুলি শিরকের দোষে দুষ্ট।

৩। ইসলামে প্যগানিজমের কোন স্থান নাই, অন্যকথায় ইসলাম প্যগানিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, যেখানে সুফীবাদ এই প্যগানিজম থেকেই বেশিরভাগ উপাদান গ্রহণ করেছে।

৪। আল্লাহ বলেছেন আল্লাহ বিশ্বজগৎ সৃস্টি করেছেন যা বাস্তব, সুফী মতবাদ বলে এই বাস্তব জগতের কোন অস্বতিত্ব নেই।

৫। ইসলামে মানুষের দেবত্ব/ঈস্বরত্ব(divinity) পাওয়ার কোন স্থান নাই এবং এই বিষয়টাকে সম্পূর্ণরুপে অস্বীকার করা হয়েছে, যেখানে সূফীবাদের লক্ষ্যই হচ্ছে কিভাবে দেবত্ব/ঈস্বরত্ব(divinity) পৌঁছানো যায়।

উপরের পার্থক্য গুলির কারনে সুফীবাদের ব্যবহারিক অনুশীলন লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাদের বেশিরভাগ আচার অনুষ্ঠান শিরকের দোষে দুস্ট।

যারা কষ্ট করে এই লেখাটা পড়েছেন, তাদেরকে একটা প্রশ্ন করি, কখনো কি ভাবে দেখেছেন যে ইসলাম প্রথম এসেছে আরবে, কিন্তু আপনার সকল ইমাম (মাযহাব এবং হাদিস লেখক সহ), প্রধান সবগুলি সুফী ত্বরীকার প্রচারক- সবই এসেছেন তখনকার পার্সিয়ান এম্পায়ার থেকে- যারা উমর (রাঃ)এর সময় আরবদের হাতে পরাজিত হয়।সবার অরজিন ই এক-পার্সিয়ান। কেন? এবং এর প্রভাব কি? আমি শুধু এতটুকু বলব যে এটা কি পরিমান গুরুত্বপূর্ণ তা কল্পনাতীত।

সুফীবাদ-প্রাথমিক যুগঃ
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম ১শত বছরের মধ্যে এই তাসাউফ বা Mysticism বলে কোন ধরানা ইসলামে ছিলনা। ধারনা করা হয়, মুসলমানদের মধ্যে প্রথম “খানকা” স্থাপন করেন “আবুল হাসেম উসমান বিন সারেক” নামক এক ব্যক্তি যিনি কুফাতে (ইরাক) বসবাস করতেন এবং ১৬০ হিজরি সনে মৃত্যু বরন করেন। এই ব্যক্তি আগে অগ্নি উপাসক ছিল, পরে অনেকের মত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু উনার এই “খানকা” তখনকার সময়ে খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি, কিন্তু ধীরে ধীরে পরে এই ধরনা জনপ্রিয়তা লাভ করে। তারা নিজেদেরকে মুমিনের বদলে সুফী বলে পরিচয় দিত, এবং বাকিটা ইহুদী ইতিহাসের পুনারাবৃত্তি ছাড়া কিছুই না। ইহুদীদের দুই ধরনের ওহীঃ ওহী জালী এবং ওহী কাফী এই সূফীদের মধ্যে প্রচলন হল। বলা হল ওহী জালী যা নবী মুহাম্মদের উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা শেষ এবং অবতীর্ণ হওয়া শেষ হয়ে গেছে এবং কিন্তু ওহী কাফী- সূফীদের কাছে অবতীর্ণ হয় এবং এটা এখনও চলমান। যেহেতু এই ওহী কাফী সূফীদের মধ্যে লিখিত আকারে রাখা হত না এবং লিখিত ভাবে অনুসারী বা অন্য অন্য অনুসারীদের মধ্যে হস্তান্তর হত না, শুধু মাত্র মৌখিক ভাবে অথবা দীর্ঘ সময়ে গোপন সাধনা দ্বারা অর্জন করা যেত, সেহেতু তারা এর উৎপত্তি উৎস আলী (রাঃ) কে ধরে থাকেন এবং শেষ প্রান্তে থাকেন পীর। বলা হয়ে থাকে আলী (রাঃ) হতে হাসান বসরীর মাধ্যমে এই বিশেষ ধরনের ওহী প্রথম হস্তান্তর হয়, যদিও হাসান বসরীর আলী (রাঃ) এর সাথে কখনও সরাসরি দেখা হয়েছে এমন কোন সঠিক দলীল পাওয়া যায়না। এর পর মনসুর-আল- হাল্লআজের কাহিনী আগেই বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও মহিউদ্দিন বিন আরাবী, আব্দুল কাদের জিলানী প্রমুখ এই ধারনা কে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে ভুমিকা রাখেন। এই সুফিজম মুসলিম বিশ্বে নবম শতাব্দীতে বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং দশম শতাব্দীতে চূড়ান্ত রুপ লাভ করে।

উপমহাদেশে সুফীবাদ এবং ইসলামঃ
এটা সত্য যে সুফীরা এই উপমহাদেশে সূফীবাদের নামে ইসলামের প্রচলন করেছে। তারা এই সুফীজমকে ইসলামের ছদ্দবেশে এই উপমহাদেশে এনেছে এবং উপমহাদেশের মানুষ এটাকে গ্রহণ করেছে এই জন্য যে এই সুফীজমের বেশিরভাগ মতবাদই তাদের মতবাদের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন। সুফীজমের প্রভাবের কারনেই এই উপমহাদেশে কবর পুজা এত বেশি এবং এর প্রভাবেই এই উপমহাদেশের মাটিতে এত বেশি মাজার। এই উপমহাদেশে সুফীজম যখন ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা পেয়ে একটা শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলছিল, তখন ১১ শতাব্দীর দিকে হিন্দু ব্রাহ্মণরা “ভক্তি মুভমেন্ট” শুরু করে যেখান থেকে প্রচার করা হয় “রাম এবং রহিম” এক। (রাম- হিন্দুদের দেবতা, রহিম-আল্লাহ)। এই ব্যপারে মোঃ সিরাজুল ইসলাম তার বই Sufism and Bhakti: A Comparative Study তে বলেছেনঃ

“In this later phase, the conceptions of the Hindu and Sufi mystics so deeply intermingled with each other that it was extremely difficult to designate them distinctly. In both their eyes Ram and Rahim, Krisna and karim, Brahmin and Mlechha (lower caste), Mecca and kasha, Kabba and keilash were equal. Thus dont only form the spiritual angle but also form social and moral aspects of Sufism and Bhakti have great importance and relevance in the Indian society, religion and culture.”

হিন্দু যোগী এবং মুসলমান সূফী একসাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলল, একজন আরেকজনের কাছ থেকে চতুরতা শিখল এবং উভয়েই কেরামত দেখাতে লাগল। শেখ সাদ-ই সিরাজী সত্যি বলেছিলেন “ সুফী/সাধুরা উড়েনা, তাদের সমর্থকরা তদের উড়ায়” (Saints fly not. Their disciples make them fly )। এর পরিনতি হল সামগ্রিকভাবে দুই ধর্মের একত্রিত হওয়া, এবং নতুন একটা ধর্মের/মতবাদের জন্ম দেওয়া যার নাম ইত্তেহাদ-ই-দ্বীন (Unified faith)

এই মতবাদের ফলে যারা হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং যে সকল মুসলমান (সূফীবাদের অনুসারী) বেদান্ত দ্বারা উদ্ভাসিত হল, তারা সবাই অর্ধেক হিন্দু এবং অর্ধেক মুসলমান হিসাবেই রইল। এইজন্য এখনও এই উপমহাদেশের অনেক (বেশিরভাগ বলাই উচিৎ ছিল) মানুষেরা স্বজ্ঞানে/ অজ্ঞানে এই ইত্তেহাদ-ই-দ্বীন (Unified faith) এর অনুসারী- অর্ধেক হিন্দু এবং অর্ধেক মুসলমান।আর এই কারনেই হিন্দুরা মুসলিম সূফীদেরকে এত শ্রদ্ধা করে। উপমহাদেশের সব জায়গাতেই এইটা দেখতে পাবেন। আজমেরী থেকে শাহজালালের মাজার- একটু চোখ কান খোলা রাখলেই দেখবেন এর সত্যতা।

Hindus worship idols, Muslims worship graves. We have ‘Urs instead of Yatra, Tawaf of graves instead of Phairay, Agarbatti in place of Momebatti, Tabarruk versus Prashad, Qawwali versus Bhajan, Araq-e-Gulab versus Gangajal, Kharqa versus Zunnar, and so on. (Iman-e-Khalis by Fazil ‘Uloom-e Deeniyah, Dr. Masooduddin Usmani)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৫৯
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×