হাদিস নিয়ে ব্লগে অনেকই পোস্ট দেন আর অনেকেই কমেন্টে “আলহামদুলিল্লাহ”, “সুবাহানাল্লাহ”,“জাযাকাল্লাহ” বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। এই রকম চর্চা ফেসবুকে বেশি দেখা যায়। শুধু হাদিস হলে কথা ছিল, যে কোন একটা ছবি দেখিয়ে উহা অমুক নবীর কবর, অমুকের পায়ের ছাপ, মাছের পিঠে ছাগলের পিঠে বিভিন্ন নাম লেখা দেখিয়ে বলে বলুন “আলহামদুলিল্লাহ”/ “সুবাহানাল্লাহ”/“জাযাকাল্লাহ”। এই ধরনের কোন ফেসবুকার যদি ব্লগে থেকে থাকেন তবে আমার এই লেখা থেকে দূরে থাকবেন, কারন আমার এই লেখাটি কোনভাবেই তাদের জন্য নয়।
ছোট একটা ভুমিকা দেই। প্রথমে ভেবেছিলাম ইসলামের ইতিহাস নিয়ে লেখব, পড়ে দেখলাম উহা হাদিস কালেকশনের সাথেও জড়িত, পড়ে ভাবলাম হাদিস সংগ্রহ নিয়ে লেখি, কিন্তু উহা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যপার। পড়ে ভাবলাম বুখারি নিয়ে কিছু লিখি, কতটুকু লিখেছিলামও, পরে আর হয়ে উঠেনি। পরে ভাবলাম সব না হোক একটা ছোট বিষয় নিয়ে লিখি। তাই আজকের লেখা।
একটা অঙ্ক মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আশা করি ব্লগার ভাইয়েরা এই অঙ্কের সমাধান দিতে পারবেন। অঙ্কটা জটিল কোন ক্যালকুলাস না, সাধারন পাটিগণিত জানলেই করা যাবে। আশা করি গালা গালি না করে সবাই অঙ্কের দিকে মনোযোগ দিবেন।
ব্যাকগ্রাউন্ডঃ
বুখারির সময়কাল ১৯৪-২৫৬/২৬০ হিজরি। তাহলে উনি বেচে ছিলেন ৬২ অথবা ৬৬ বছর। ধরে নিলাম উনার জীবন কাল ৬৫ বছর। সেই সময়ে কোন মোবাইল, ইন্টারনেট, মোটর গাড়ি, বিমান কিছু ছিলনা। মানুষের চলাচলের মাধ্যম ছিল পায়ে হেটে, কোন বাহনে চড়ে (যেম্ন ঘোড়া, গাধা, উট ইত্যাদি) অথবা পালতোলা জাহাজে করে। আমার কাছে যে বুখারী বইটা আছে তাতে লেখা আছে যে উনি দীর্ঘ ১৬ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে হাদিস সংগ্রহ করেছেন এবং এই বইয়ের ৩০ নম্বর পাতায় লেখা আছে যে ইমাম বুখারী মোট ৬০০,০০০ (ছয় লাখ) হাদিস সংগ্রহ করেছেন। এই সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে বর্ণনাকারীর সাথে যোগাযোগ করা, বর্ণনাকারীর কাছে থেকে হাদিস সংগ্রহ করা, ঐ হাদিসের ইসনাদ অর্থাৎ চেইন অব নেরেটরস যাচাই বাচাই করা, প্রয়োজনে এই ইসনাদের বিশুদ্ধতা যাচাই বাচাই করার জন্য আবার অন্য কারো কাছে যাওয়া, এর পর ঐ হাদিসের গুনাগুন বিচার করা অর্থাৎ (ঐ হাদিস আরও কেউ বলেছে কিনা তা যাচাই বাচাই করা) তার পর উনার হিসাবে হাদিস শুদ্ধ মনে হলে গ্রহণ করা না হলে বর্জন করা। অনেক কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ব্যপার। এইবার আপনাদের জন্য অঙ্কঃ
ইনপুটঃ
১। বুখারির জীবন কাল ৬৫ বছর
২। উনি ১৬ বছরে এই হাদিস শেষ করেছেন
৩। ১ বছর= ৩৬৫ দিন
৩। ১দিন= ২৪ ঘণ্টা
৪। ১ ঘণ্টা = ৬০মিনিট
প্রশ্ন
১ঃ যদি উনি ১৬ বছরে ৬ লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করে থাকেন, তবে একটি হাদিস সংগ্রহ করে যাচাই বাচাই করে তা সঠিক না ভুল এটা বের করতে তার কত সময় লেগেছিল? ধরে নিন ১৬ বছরে উনি কোন বিশ্রাম, খাওয়া দাওয়া বা ঘুম কিছুই করেন নাই। টানা ১৬ বছর ২৪ ঘণ্টা দিন ধরে কাজ করেছেন।
২। উনি যদি জন্মের পরে থেকি টানা এই হাদিস সংগ্রহের কাজ করে থাকেন, তবে একটি হাদিস গ্রহণ বা বর্জন করতে কত সময় লেগেছিল?
৩। দৈনিক ১৫ ঘণ্টা হাদিসের পিছনে ব্যয় করা হয়েছে এটা ধরে নিলে, ৬৫ বছরে ৬০০,০০০ হাদিস কালেকশন করলে, প্রতি হাদিসের পিছনে কতটুকু সময় লেগেছে?
৪। দৈনিক ১৫ ঘণ্টা হাদিসের পিছনে ব্যয় করা হয়েছে এটা ধরে নিলে, ১৬ বছরে ৬০০,০০০ হাদিস কালেকশন করলে, প্রতি হাদিসের পিছনে কতটুকু সময় লেগেছে?
৫। উনি ৬০০,০০০ হাদিস থেকে ৭২৭৫ টি হাদিস গ্রহণ করেছিলেন (রিপিটিশন ছাড়া ২৭৬২)। তাহলে উনি কত % হাদিস বর্জন করেছিলেন?
৬। কেউ যদি বুখারির সংগ্রহীত হাদিসের সব বর্জন ঘোষণা করে (অর্থাৎ ঐ ৬০০,০০০ হাদিস) তবে তার মতের সাথে বুখারীর মতের পার্থক্য কত পারসেন্ট।
দয়া করে পাটি গণিতের মাধ্যমে সমাধান দিয়ে উপকৃত করবেন। আর ইচ্ছা করলে উপরে আমি যে ব্যকগ্রাউন্ড দিয়েছি তার সাথে আপনার উত্তর কতটা সমর্থন যোগ্য তা নিজেই যাচাই করেন।