somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈসা (আঃ) এর প্রকৃত জন্ম রহস্য- এবং আমাদের ভুল ধারনা। (পর্ব ১)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমগ্র পৃথিবীর মুসলমানরা বিশ্বাস করে ঈসা (আঃ) এর জন্ম হয়েছে পিতা ছাড়া। উনার জন্ম হয়েছে ইম্মেকুলেট কন্সেপশণ এর মাধ্যমে। অর্থাৎ কোন পরুষের সান্নিধ্য ছাড়াই উনার মাতা মরিয়ম গর্ভ ধারন করেছিলেন। মরিয়ম একজন কুমারী, এবং মরিয়ম কখনো কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নি। খৃস্টানদের বিশ্বাসও প্রায় একি রকম। ইনফ্যাক্ট খৃষ্টান ধর্মের বিশ্বাসের মুল ভিত্তির একটা হচ্ছে যে ঈসা (আঃ) এর পিতা বিহীন জন্ম লাভ করা। এর ফলে ঈসা (আঃ) কে তারা ঈশ্বর পুত্র এবং রক্ষাকর্তা হিসাবে মর্যাদা দিয়েছেন, যদিও বাইবেলে ঈসা (আঃ) এর একজন পিতার কথা বলা আছে যার নাম জোসেফ (সে আসলেই ঈসা (আঃ) এর পিতা কি না সেটা আমার বিষয় না)। যদিও মুসলমানরা ঈশ্বর পুত্র থিওরীতে বিশ্বাস করে না কিন্তু তার জন্মের ব্যপারে প্রায় সবকিছু খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের বিশ্বাস একি রকম।

বিশ্বাসের মুল ভিত্তিঃ
মুসলমানদের এই বিশ্বাসের মুল ভিত্তি হচ্ছে কোরআনের বেশ কিছু আয়াত, যেখানে আল্লাহ ঈসা (আঃ) কে বলেছেন কালিমুল্লাহ অর্থাৎ নিদর্শন, তার মাতাও নিদর্শন, আল্লাহ মরিয়মের গর্ভে রুহ ফুকে দিয়েছিলেন, এবং তাকে “কুন” অর্থাৎ “হও” শব্দ দ্বারা তৈরি করেছেন। এখানে আরও বলা হয়ে থাকে যে কোরআনের কোথাও বলা হয়নি যে মরিয়মের কোথাও বিবাহ সম্পর্কিত সম্পর্ক ছিল অর্থাৎ তিনি বিবাহিত ছিলেন অথবা ঈসা (আঃ) এর পিতার কথা কোরআনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ্য করেছি যে, এই সংক্রান্ত বিষয়ে যখন কোন প্রশ্ন করা হয় তখন কিছু সিলেক্টেড আয়াত প্রমানের স্বপক্ষে বলা হয়। সবগুলি আয়াত এক সাথে বলা হয় না। এই ক্ষেত্রে, খৃষ্টানদের মত আমরাও আমাদের বিশ্বাস কে বিভিন্ন স্কলারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি, স্কলাররা যা বলেন আমরা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিই, কখনো পড়ে দেখিনা অথবা পড়লেও সেই কন্টেক্সট ছাড়া সিলেক্টেড কিছু আয়াত। আমি স্কলার নই, কিন্তু আল্লাহর আয়াত না বুঝার মত গাধাও নই।

মুল সমস্যাঃ
আমার কাছে যেটা মুল সমস্যা মনে হচ্ছে তা হচ্ছে কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে আল্লাহর আইন অপরিবর্তনশীল।
This has been Allah’s Sunnat (Law) and there will never be a change in this (10:64,48: 23, 17:77, 35:43)।

আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
So set your face to the religion upright. Nature (made by) Allah (upon) which He has created mankind [on it]. No change (should there be) in the creation (of) Allah[ /sb] .That (is) the religion the correct, but most men (do) not know. (৩০:৩০)
(এই আয়াত গুলি মানলে এবং মনে রাখলে আমার মনে হয় আমাদের সমাজে প্রচলিত ৯০% ধর্মীয় কল্প কাহিনী /কু সংস্কার দূর হয়ে যাবে)
এই বিষয়ে একটু পড়ে প্রসঙ্গক্রমে আলোচনা করা হবে।

আমার কথাঃ
(আমার মুল উদ্দেশ্য ছিল খৃস্টানদের ১৮৬২ এবং ১৯৪৫ সালে খুজে পাওয়া (Dead Sea Scroll and scroll in Nag Hamidi )নিয়ে লিখিত বই গুলি এবং “গসপল অব মার্ক” এর বেশ কিছু ভার্স নিয়ে- যেখানে ঈসা (আঃ) এর ক্রুশবিদ্ধ হওয়া এবং স্বর্গারোহণের কথা বলা আছে। যেহেতু মুল scroll গুলি ইন্টারনেটে নাই, এই গুলি পড়া ও সম্ভব না, তাই এই সংক্রান্ত যে বই গুলি লেখা হয়েছে তা পড়া। এই গুলি পড়তে গিয়ে সাথে এই বিষয়েও জানতে পারি এবং পড়ে এই নিয়ে লেখা পড়া করি।)


ঈসা (আঃ) এর পিতা ছিলেন না- এই বিশ্বাসের মুল ভিত্তি যাচাই করতে গেলে কোরআন বর্ণিত এই সম্পর্কিত আয়াত গুলি কে এক করে তার পর দেখতে হবে। শুধু ঈসা (আঃ) এর জন্মই নয়, এর সাথে অন্যান্য জন্ম কাহিনী, মানুষ সৃস্টির কাহিনী এক করে এবং বিভিন্ন শব্দের অর্থ কোরানের প্রেক্ষিতে এনালাইসিস করে তবে একটা পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। এটা আমার জন্য অবশ্যই একটা কঠিন কাজ। এই নিয়ে পড়া লেখা করতে গিয়ে যে দেখেছি যে এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত প্রচুর আয়াত কোরআনে রয়েছে।

পিতার কথা উল্লেখ না করার অর্থ পিতা ছিল না – এটা কোন যুক্তি নাঃ
উদাহরণ স্বরূপ আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পিতার কথাও কোরআনে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। এমনিভাবে অনেক নবীর পিতার কথা কোরআনে উল্লেখ করা হয়নি। যেম নুহ (আঃ), মুসা (আঃ), হারুন (আঃ),দাউদ (আঃ) , যাকারিয়া (আঃ) প্রমুখ। তাদের কি পিতা ছিল না? অবশ্যই ছিল। সুতরাং কোরআনে কোন নবীর পিতার কথা উল্লেখ না করলেই যে ঐ নবীর পিতা ছিলনা এই কথা বলা যাবে না। এইটা সিম্পল যুক্তি।


ঈসা (আঃ) এর পিতার কথা কোরআনে উল্লেখ করা আছেঃ
কোরআনের ৬:৮৪-৮৭ নম্বর আয়াতে ১৮ জন নবীর নাম উল্লেখ করা আছে, যেখানে ৬:৮৫ নম্বর আয়াতে ঈসা (আঃ) এর নাম রয়েছে। এর পর আল্লাহ ৬:৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে তাদের পিতৃপুরুষ, সন্তান এবং ভাইদেরকে সরল পথে চালিত করেছেন।

And We bestowed to him Ishaq and Yaqub, all We guided. And Nuh, We guided before; and of his descendents, Dawood and Sulaiman and Ayyub and Yusuf and Musa and Harun. And thus We reward the good-doers. And Zechariah and John and Jesus and Elias - and all were of the righteous. And Ishmael and Elisha and Jonah and Lot - and all [of them] We preferred over the worlds. (৬ঃ৮৪-৮৬)

এই ১৮ জন নবীর নাম নেবার পর, তাদের সম্পর্কে এর পরের আয়াতে আল্লহ বলেছেন

আক্ষরিক অনুবাদঃ
And from their fathers and their descendants and their brothers - and We chose them and We guided them to a straight path (৬ঃ৮৭)

Yusuf Ali (Saudi Rev. 1985)
(To them) and to their fathers, and progeny and brethren…

M. M. Pickthall
With some of their forefathers and their offspring and their brethren…

Shakir
And from among their fathers and their descendants and their brethren…

Muhammad Mahmoud Ghali
And of their fathers, and of their off springs, and of their brethren; …

T.B.Irving
We picked out some of their forefathers, their offspring and their brethren,…

এইখানে ক্রিটিক্যাল শব্দটা হচ্ছে “Wamin aba-ihim” । আসুন দেখি, এই শব্দের অর্থ কি। Wa= And/এবং, min= From/হইতে, aba= Father/পিতা (আপনি যেমন বাংলায় আব্বা ডাকেন, উহা সেই একই আব্বা) ihim= Among theirs/তাদের মধ্যে। একসাথে এর অর্থ দ্বারায় And from among their fathers/ এবং তাদের পিতাদের মধ্য হইতে…

এই ৬:৮৭ আয়াত অনুবাদ করতে গিয়ে স্কলাররা বেশ সমস্যায় পরেছেন। তারা তাদের বিশ্বাস কে জাস্টিফাই করার জন্য এই Wamin aba-ihim শব্দটার বিভিন্ন অর্থ করেছেন। যেমন পিকথল এবং ইরভিং এর অর্থ করেছেন some of their forefathers অর্থাৎ তদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষদেরকে সিলেক্ট করা হয়েছিল এবং গাইড করা হয়েছিল, যদিও এইখানে বলা হয়নি তাদের কিছু সংখ্যকের পিতা ছিল এবং তাদেরকে গাইড করা হয়েছিল এবং কিছু সংখ্যকের পিতা ছিল না এবং তাদের গাইড করা হয় নি, এবং মুল বাক্যে এই some শব্দটা কোথাও নেই। দয়া করে ৬:৮৭ আবার পড়ুন।

যদি অনুবাদে এই “কিছু সংখ্যক” শব্দটা বসানো হয় তবে প্রশ্ন জাগে যে উল্লেখিত ১৮ জন নবীর মধ্যে কাদেরকে আল্লাহ গাইড করেন নই বা সিলেক্ট করেন নি।

এখন আসি aba শব্দ নিয়ে। এটা আমাদের বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত শব্দ যার অর্থ হচ্ছে পিতা। অনেকে এই “আব্বা” শব্দের অর্থ করেছেন পিতৃপুরুষ (যেমন পিকথল এবং ইরভিং),অর্থাৎ আব্বা শব্দের অর্থ পিতা নয়, বরং পিতৃপুরুষ। মিনিমাম ১০টা অনুবাদে এই অর্থ পাবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যদি ইসা (আঃ) এর পিতাই না থাকে তা হলে কিভাবে পিতৃপুরুষের প্রশ্ন আসে? অনেক আরও ম্যনিপুলেট করেছেন। এই আব্বা শব্দের অর্থ দ্বারা ancestor, predecessor or progenitor ইত্যাদি অর্থ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন একই, একজন পুরুষ মানুসের পিতা ছাড়া ancestor, predecessor or progenitor হতে পারেনা।

অনেকেই যুক্তির খাতিরে বলে থাকবেন এই পিতৃপুরুষ বলতে ইসা (আঃ) এর মায়ের দিক থেকে পূর্ব পুরুষ বুঝানো হয়েছে, সেই ক্ষেত্রে আমি বলব এই আয়াতের কন্টেক্সটে এই যুক্তি খাটেনা। তারপরও যদি আর্গুমেন্ট করতে চান, দয়া করে বাকী অংশটুকু পড়ুন।

আল্লাহর আইন অপরিবর্তনশীলঃ
এইখানে একটা বিষয়ে দৃস্টি আকর্ষণ করছি। এই ৬:৮৭ আয়াতে আল্লাহ “ইল্লা ইসা” বা ইসা ব্যাতিত এই ধরনের কোন কথা বলে নাই, অর্থাৎ ইসা (আঃ) যে ব্যতিক্রম এই ধরনের কোন কথা বলা হয় নাই যা কোরআনের বনর্নার একটি বৈশিস্ট। যারা মেজরিটি রুল এপ্লাই করতে চান তাদের জন্য এই কথা বলা। কোরআনে কোন সাধারন বর্ননার বিষয়ে যদি কোন ব্যতিক্রম থাকে তবে তা উল্লেখ করা থাকে। যেমনঃ

১। আল্লাহ নুহ (আঃ) এবং তার পরিবার কে রক্ষা করেছিলেন কিন্তু তার স্ত্রী (৬৬:১০) এবং ছেলে (১০:৪৩) ছাড়া। এই ব্যতিক্রম আল্লাহ বলেছেন।

২। আল্লাহ লুত (আঃ) এবং তার পরিবার বর্গকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং এই ক্ষেত্রেও তার স্ত্রী ব্যতিক্রম ছিলেন এটাও বলা হয়েছে। (৭:৮৩, ১১:৮১, ১৫:৬০, ২৬:১৭১, ২৭:৫৭, ২৯:৩২)

এই ঘটনা গুলি ছিল জীবন সম্পর্কিত সাধারন ঘটনা, এই ক্ষেত্রেও আল্লাহ যেখানে ব্যতিক্রম হয়েছে সেখানে উল্লেখ করেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন আল্লাহর আইন অপরিবর্তনশীল।
আল্লাহ বলেছেনঃ
So set your face to the religion upright. Nature (made by) Allah (upon) which He has created mankind [on it]. No change (should there be) in the creation (of) Allah .That (is) the religion the correct, but most men (do) not know. (৩০:৩০)
বোল্ড করা অংশটুকু ভাল করে পড়ুন। এই আয়াত লেখার প্রথম দিকে উল্লেখ করেছি, এখনও করছি। তাহলে প্রাকৃতিক ব্যপারে কোন ব্যতিক্রম হলে অবশ্যই আল্লহ উল্লেখ করতেন। সন্তান জন্ম দেওয়া এবং এর পদ্ধতি প্রাকৃতিক নিয়ম। এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলে অবশ্যই বলতেন। বরং এর বিপরীত কথাই বলা আছে।

তাহলে কিভাবে আল্লাহর কথা আমরা অস্বীকার করব। এই ৬:৮৭ আয়াত হচ্ছে ইসা (আঃ) এর পিতা থাকার এবং স্বভাবিক জন্মের প্রমান

এইবার দেখি কোরআনের কোন কোন আয়াত দিয়ে ইসা (আঃ) এর পিতা ছাড়া জন্ম এবং মরিয়ম (আঃ) কে কুমারী মাতা বলা হয়ে থাকে। আমরা দেখব, স্কলাররা যে আয়াতের ভিত্তিতে এই ধরনের কথা বলে থাকেন, তার সত্যতা কতটুকু।

ইসা (আঃ) আল্লাহর কালিমাহ (word/বানী)ঃ
কোরআনে বলা হয়েছে ইসা (আঃ) আল্লাহর কালিমাহ অর্থাৎ word/বানী। এই থেকে অনেক স্কলার বলেন যেহেতু আল্লাহ এই শব্দ “কালিমাহ” ব্যবহার করেছেন সেহেতু ইসা (আঃ) এর পিতা ছাড়া জন্ম লাভ করা সম্ভব। তাহলে এই কালিমাহ শব্দ কোন জার্ম সেল অর্থাৎ শুক্রাণু হিসাবে হিসাবে কাজ করতে হবে যা মরিয়মের গর্ভ ধারনের অণুঘটক হিসাবে কাজ করতে হবে।

এই কালিমাহ শব্দের অর্থ "a word", "a decree", "a prophecy", "a command"। ইসা (আঃ) আল্লাহর কালিমাহ হিসাবে জন্ম নিয়েছিলেন অর্থাৎ আল্লাহর কথা, ভবিষ্যৎবাণী পুরন করেছিলেন। এই আয়াত গুলি দেখা যাকঃ

when the angels said, "O Mary, indeed Allah gives you good tidings of a word (কালিমাহ) from Him, whose name will be the Messiah, Jesus, the son of Mary – (৩:৪৫)

…The Messiah, Jesus, the son of Mary, was but a messenger of Allah and His word (কালিমাহ) which He directed to Mary and a soul from Him…. (৪:১৭১)

এই কালিমাহ শব্দ নিয়ে প্রচুর লেখা হয়েছে এবং অনেকেই বলে থাকেন এই “কালিমাহ” শব্দই ইসা (আঃ) এর পিতা ছাড়া জন্ম গ্রহণের প্রমান অর্থাৎ এই শব্দই প্রমান করে মরিয়ম (আঃ) কোন পুরুষ ছাড়াই গর্ভ ধারন করেছিলেন। ঠিক আছে। তাহলে দেখা যাক আল্লাহ ইয়াহিয়া (আঃ) সম্পর্কে কি বলেছিলেন? মজার বিষয় হচ্ছে আল্লাহ কোরআনে ইয়াহিয়া (আঃ) সম্পর্কেও এই একই শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং বলেছেন ইয়াহিয়া (আঃ) আল্লাহর কালিমাহ অর্থাৎ শব্দ অথবা বানী। তাহলে এই একই শব্দ কিভাবে ইয়াহিয়া (আঃ) এর ক্ষেত্রে তার মাতার গর্ভ ধারনের কারন হল না? নাকি বলবেন ইয়াহিয়া (আঃ) ও পিতা ছাড়া জন্ম নিয়েছিলেন। আসুন দেখি কোরআন কি বলে। এখানে ইয়াহিয়া (আঃ) এর পিতা জাকারিয়া (আঃ) কে বলা হচ্ছেঃ

Then called him the Angels when he (was) standing - praying in the prayer chamber. "Indeed, Allah gives you glad tidings of Yahya, confirming (of) a Word from Allah and a noble and chaste and a Prophet among the righteous (৩:৩৯)

He said, "My Lord how can (there) be for me a son, and verily has reached me [the] old age and my wife (is) [a] barren?" He said, "Thus; Allah does what He wills." (৩:৪০)

এই ৩:৪০ এ বলা "Thus; Allah does what He wills." পড়ে মনে হতে পারে যে আল্লাহ তাৎক্ষনিক ইয়াহিয়া (আঃ) কে সৃস্টি করে ফেলেছেন।এই ক্ষেত্রে স্কলাররা বিভিন্ন গল্প বের করেছেন। এই স্কলাররা মুসলমানদের এই বলে বোকা বানাতে চায় যে কালিমাহ শব্দ একাই পিতা ছাড়া জন্ম গ্রহণের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তারা এইখানেই থেমে যান। এর সাথে সম্পর্কিত ২১:৯০ এর কথা তারা বলে না, কারন এই ২১:৯০ এর কথা বললে এই কালিমাহ এর মিরাকল (পিতা ছাড়া জন্ম অর্থে) বলে কিছু থাকে না

So We responded to him, and We bestowed on him Yahya, and We cured for him his wife. (২১:৯০)

সুতরাং বলা যায় যে যদিও ইয়াহিয়া (আঃ) ও আল্লাহর কালিমাহ, তার জন্ম ছিল স্বভাবিক। আল্লাহ জাকারিয়া (আঃ) এর স্ত্রীর বান্ধাত্য দূর করে দিয়েছিলেন এবং তাদের স্বভাবিক দাম্পত্য জীবনের কারনেই ইয়াহিয়া (আঃ) এর জন্ম হয়েছিল। এখানে ইয়াহিয়া (আঃ) এর ক্ষেত্রে কালিমাহ শব্দ যেমন কোন অলৌকিক কিছু বহন করে না অথবা কোন জার্ম সেল অর্থাৎ শুক্রাণু হিসাবেও গর্ভ ধারনের অণুঘটক হিসাবে কাজ করেনি, একই কথা প্রযোজ্য ইসা (আঃ) এর ক্ষেত্রেও।

এই কালিমাহ শব্দ আল্লাহ কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ বলেছেন সমস্ত সৃস্টি তার এই কালিমাহ/ কমান্ড/বানীর বহিঃপ্রকাশ। এই শব্দের ব্যবহারের জন্য দেখতে পারেন ১৮:১০৯, ৩১:২৭, ৬:৩৪, ৬:১১৬, ১০:৬৪, ১৮:২৭ আয়াতে।

ইসা (আঃ) এর সাদৃশ্য আদম (আঃ)মতঃ
সুরা আল ইমরানের ৩:৫৯ নম্বর আয়াত দিয়ে অনেক সময় জাস্টিফাই করার চেষ্টা করা হয় যে ইসা (আঃ) পিতা ছাড়া জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এই ৩:৫৯ এ বলা আছে ইসা(আঃ) তুলনা হচ্ছে আদম (আঃ) এর মত।যখনই এই তুলনা বা দৃষ্টান্তের কথা বলা হয়েছে তখন স্কলাররা এই দৃষ্টান্তকে ঈসা (আঃ) অলৌকিক জন্মের সাথে রিলেট করার চেষ্টা করেছেন। তারা বলেন যে আদম (আঃ) জন্ম হয়েছে পিতা এবং মাতা ছাড়া, এবং ঈসা (আঃ) এর জন্ম মাতা ছাড়া হয়েছে। এটাই হচ্ছে দুইজনের সাদৃশ্য। ভুল যুক্তি, কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় অকাট্য। +

The similitude of Jesus before Allah is as that of Adam; He created him from dust, then said to him: "Be". And he was. (৩:৫৯)
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।(৩:৫৯)

(এই সম্পর্কে কিছু বলার আগে একটু ভুমিকা দরকার, তা হচ্ছে এইখানে আদম বলতে প্রথম মানব বোঝানো হয়েছে নাকি প্রথম দিকের মানবজাতিকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই নিয়ে আমি অনেক আগে প্রচুর পড়ালেখা করেছি এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখেছি। আমার মন্তব্য হচ্ছে আদম বলতে প্রথম দিকের মানবজাতিকে বুঝানো হয়েছে। যারা আদম বলতে প্রথম মানব মনে করেন তাদের জন্য বলছি, এটা কোরআন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায় না, অনেক গোঁজামিল দিতে হয়। আর মনে রাখবেন কোরআনে নবুয়াতের কথা নুহ (আঃ) কে দিয়ে শুরু হয়েছে। এইখানে আমার লেখায় প্রথম মানব বা মানব জাতি যাই ধরি না কেন তাতে ব্যখ্যার কোন পার্থক্য হবে না। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ আদম বলতে প্রথম মানবকেই বুজেন, আমি এটা ধরেই লিখছি )
স্ক্লারদের কথা অনুযায়ী আদম (আঃ) এর সাথে ঈসা (আঃ) এর জন্ম সংক্রান্ত সাদৃশ্য আছে কিনা দেখি।

১। আদমের পিতা এবং মাতা উভয়েই ছিল না, ঈসা (আঃ) এর মাতা ছিল। তাহলে একি রকম হয় কি করে।

২। আদম কে সৃষ্টি করা হয়েছে (he was created), ঈসা (আঃ) জন্ম নিয়েছেন (born )।

৩। ঈসা (আঃ) মায়ের পেটে নিদৃস্ট সময় পর্যন্ত ছিলেন, আদম (আঃ) ছিলেন না

৪। আদম (আঃ) কে তৈরি করা হয়েছিল কাদামাটি (clay) যার আরবী হচ্ছে ত্বিন। (৭ঃ১২, ১৭ঃ৬১, ৩৮:৭১,৭৬)। কিন্তু ঈসা (আঃ) কে তৈরী করা হয়েছে তুরাব বা dust থেকে। তাহলে তাদের মধ্যে জন্ম বিষয়ক কি মিল আছে?

এখানে যে কারো বুঝা উচিত যে তাদের মধ্যে জন্ম সংক্রান্ত কোন মিল নেই।কোরআনের এই আয়াতে তাদের জন্ম সংক্রান্ত কোন মিলের কথা বলাও হয়নি।এইটা স্ক্লারদের ম্যনিপুলেশন ছাড়া আর কিছু না। আয়াতটি আবার পড়ুন। “He created him from dust/ তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন”। এখানে বলা হয়েছে him/ তাকে, বলা হয়নি their/তাদের। এইখানে him/ তাকে বলতে ঈসা (আঃ) কেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ঈসা (আঃ) কে dust(তুরাব) থেকে তৈরী করা হয়েছে।


মজার বিষয় হচ্ছে আল্লাহ সব মানুষকেই এই তুরাব বা dust থেকে তৈরী করেছেন। প্রমান দেখতে চাইলে দেখুন ১৮:৩৭, ২২:৫, ৩০:২০, ৩৫:১১, ৪০:৬৭। সুতরাং ঈসা (আঃ) এর সৃস্টি কিভাবে অন্য মানুষ সৃষ্টি থেকে ভিন্ন? কোন উত্তর আছে?
O mankind! If you have a doubt about the Resurrection, then We have created you from dust (turab) ,then out of a sperm, then from leech-like blood-clot (২২:৫)

Among His Signs is this, that He has created you from dust (turab).. (৩০:২০)


It is He Who has created your from dust (turab) , then from sperm-drop, then from an leech-like clot,..(৪০:৬৭)

তাহলে আল্লাহ এই দুইজনের মধ্যে কিসের সাদৃশ্যের কথা বলছেন। আল্লাহ তাদের মধ্যে সাধারন সাদৃশ্যের কথা বলছেন। যেমন তাদের দুইজনেরই সন্তান ছিল, স্ত্রী ছিল, দুইজনই মৃত্যু বরন করেছেন, ইত্যাদি। যারা ঈসা (আঃ) এর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এটা বিশ্বাস করতে চান না তাদের জন্য আমার একটা লেখা আছে, পড়ে দেখতে পারেন। (Click This Link)

আগামী পর্বে সমাপ্য

পরের পর্ব
http://www.somewhereinblog.net/blog/hanifdhaka/30094980
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৪
২৪টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×