
আগের পর্বের লিঙ্কঃ
মিশর এবং ফেরাউনের সন্ধানে - পর্ব ১
গত পর্বে আমি যা বলেছি তা হল কোরআনে বর্ণিত মিশর এবং বর্তমান ইজিপ্ট একি দেশ/অঞ্চল না। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় এইটা কিভাবে এসেছে। এইটা মুলত সেপ্টুজায়ান্ট বাইবেলের ইচ্ছাকৃত ভুল অনুবাদ।
সেপ্টুজায়ান্ট বাইবেলঃ
খৃস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের বিভিন্ন এলাকা জয়ের মধ্য দিয়ে গ্রিকদের আধিপত্য শুরু হয়। এই সময় গ্রীক ভাষার আধিপত্যও লক্ষ্য করা যায়। এইটা সেই সময় যখন ইজিপ্টের শাসক টলেমী (টলেমী ২) গ্রীক ম্যান্ডেটে আলেকজান্দ্রিয়াতে ৭০ জন অনুবাদককে বাইবেল কে আরামিক থেকে গ্রীক ভাষায় রুপান্তিরত করার কাজে নিয়োজিত করেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম। ধারনা করা হয়, তাদের সংখ্যা ৭০ জন ছিল বলে তাদের দ্বারা অনুবাদকৃত বাইবেলকে সেপ্টুজায়ান্ট বাইবেল বলা হয়। ওল্ড টেস্টামেন্ট প্রথমে আরামিক থেকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং তার পর গ্রীক ভাষা থেকে অন্য বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। আজকে আমরা যে ওল্ড টেস্টামেন্ট ইংরেজী, ফ্রেঞ্চ ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় দেখতে পাই, তা মুলত গ্রীক ভাষা থেকে অনুবাদকৃত। এইখানে আরামিক ভাষা সম্পর্কে একটু বলে রাখা ভাল। আরামিক, আরাবিক, তথাকথিত “হিব্রু” এই সব ভাষায় লিখিত রুপ গুলি ভাওয়াল (স্বরবর্ণ) ছাড়া লিখিত হয়। এই জন্য এইসব ভাষায় লিখিত রুপকে সাইলেন্ট ল্যাংগুয়েজ বলে। অর্থাৎ, লিখিত রুপ হচ্ছে “আনভোকাল”- বা অনুচ্চারিত। ভাওয়ালকে ঐ ভাষার লোকজন স্বর্গীয় উচ্চারন/শব্দ মনে করত বিধায় তারা লেখার সময় ভাওয়াল ছাড়া লিখত। এই চর্চা এখনও বিদ্যমান। এই অরামিক থেকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদের সময় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে, জায়গার নাম, গোত্রের নাম পরিবর্তন করে। ধারনা করা হয় এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বিদ্যমান ছিল। তৎকালীন গ্রীক এবং ব্যাবিলনীয় স্ম্রাজ্যের সাথে তাদের নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে এই কুটচাল চালা হয়। অবশেষে ওমরের ইজিপ্ট দখল করার প্রায় ১০০০ বছর আগে গ্রীক ভাষায় অনুবাদকৃত ওল্ড টেস্টামেন্টের জন্ম হয়- যা সমস্ত ইতিহাসকে ম্যানিপুলেট করেছে এবং এর পরে এই ম্যনিপুলেশনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী ইতিহাস লেখা হয়েছে যা থেকে মুসলমানরাও মুক্ত নয়। একটা উদাহরণ দেই।
জেনেসিস ২১:২১
মুল আরামিক ভাষাঃ
וישׁב במדבר פארן ותקח־לו אמו אשׁה מארץ מצרים
গ্রীক ভাষায় রূপান্তরঃ
καὶ ἔλαβεν ،καὶ κατῴκησεν ἐν τῇ ἐρήμῳ τῇ Φαραν αὐτῷ ἡ μήτηρ γυναῖκα ἐκ γῆς Αἰγύπτου.
ইংরেজীতে অনুবাদঃ
And he dwelt in the wilderness of Paran (Pharan), and his mother took for him a wife from the land of Egypt
আরামিক ভাষায় যে শব্দটা এসেছে তা হচ্ছে מצרים বা M – tz – r – i – m (Mtzrim)। গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে Αἰγύπτου বা A-i-g-i(y)-p-t-o (Aigypto).
এখন এটা অনুবাদ করা হয়েছে מצרים= Αἰγύπτου= Egypt । আরবীতে “কিবত” ।
কোরআন যে শব্দটা এসেছে তা হচ্ছে Msrm যাকে ভোকালাইজ করলে হয় মিশর। এই Msrm বা Mtzrim অর্থ কাছাকাছি। যার অর্থ কনেটক্সট অনুযায়ী দাঁড়ায় একটা সুরক্ষিত জনাকীর্ণ শহর (ট্রেড হাব) অথবা ট্রেড সিটাডেল।

সুতরাং কোরআনে বর্ণিত মিশর শব্দের একটা অর্থ পাওয়া গেল। এখন এই মিশর কোথায় অবস্থিত তা কোরআনের সুরা ইউসুফ (সুরা ১২), ওল্ড টেস্টামেন্টে এবং কোরআনে বর্ণিত নবী ইব্রাহিমের ভ্রমণ, মুসার ভ্রমণের সাথে জিওগ্রাফি একসাথে করে এনালাইসিস করলে একটা ধারনা পাওয়া যায় যা আমরা পরে কোন সময় সুযোগ পেলে দেখব। এখন আমরা ফিরাউন কে খুজি।
ফিরাউন কে ছিলেনঃ
ফেরাউন তার সম্প্রদায়কে ডেকে বলল, হে আমার কওম, আমি কি মিসরের অধিপতি নই? এই নদী গুলো আমার নিম্নদেশে প্রবাহিত হয়, তোমরা কি দেখ না? (কোরআন ৪৩:৫১)
সুতরাং ফিরাউন মিশরের অধিপতি ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু আমরা আগেই দেখেছি কোরআনে বর্ণিত মিশর আর বর্তমান ইজিপ্ট একি জায়গা না। যদি তাই না হয়ে থাকে তবে এই ফিরাউন কে বা কি ছিলেন সেই প্রশ্ন স্বভাবিক ভাবেই আসে। আগের মত আমি এইখানে দুইটা পদ্ধতি অনুসরণ করব। প্রথমে দেখব ইজিপ্টের ইতিহাস কি বলে, অর্থাৎ আরকিওলজিস্টরা ইজিপ্ট থেকে যে সব জিনিশ আবিস্কার করেছেন সেই সব নিদর্শন কি বলে এবং শেষে দেখব কোরআন কি বলে। তাহলে চলুন আগে দেখি ইজিপ্টের আরকিওলজি এই ব্যাপারে কি বলে। তার আগে একটা কথা বলে নেই, এইটা সবার কমন বিশ্বাস যে ফারাও ইজিপ্টের শাসকের উপাধি। আমি আমার আগের পোস্টে “ইজিপ্ট নিয়ে একটি জরিপ” প্রশ্ন করেছিলাম ইজিপ্টের শাসকদের কি বলা হত। সবার উত্তর প্রায় একি ছিল আর তা হচ্ছে ফারাও/ফিরাউন। আসেন দেখি এর সত্যতা কতটুকু।
ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh কোনভাবেই ইজিপ্টের শাসকদের উপাধি ছিল না। “Egypt knew no Pharaohs nor Israelites”- by Ashraf Ezzat (Click This Link ) এই বইয়ে বিস্তারিত প্রমান সহকারে লেখা আছে। আমি এই বই সহ বিভিন্ন বই থেকে এর স্বপক্ষে কিছু প্রমান উপস্থাপন করব।
প্রমান ১ঃ
এই পর্যন্ত ইজিপ্টে যত হায়ারগ্লাফিক্স আবিস্কৃত হয়েছে, তার কোথাও ইজিপ্টের শাসকদেরকে ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh নামে সম্বোধন করা হয়েছে এই ধরনের কোন রকম প্রমান নেই।এই শব্দটা সম্পূর্ণ অনুস্থিত।
প্রমান ২ঃ
ইজিপ্টের সকল শাসকরা ৫ টি ভিন্ন নামের/উপাধির অধিকারী থাকেন। তার একটা নাম বা উপাধিও ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh না। উদাহরণ স্বরুপঃ

Thutmose III
The full titulary of Eighteenth Dynasty pharaoh Thutmose III, providing a guide to pronunciation and its equivalent meaning, is as follows
• Horus name: Kanakht Khaemwaset, "Horus Mighty Bull, Arising in Thebes"
• Nebty name: Wahnesytmireempet, "He of the Two Ladies, Enduring in kingship like Re in heaven"
• Golden Horus: Sekhempahtydjeserkhaw, "Horus of Gold Powerful of strength, Sacred of appearance"
• Praenomen: Menkheperre, "He of the Sedge and the Bee, Enduring of form is Re"
• Nomen: Thutmose Neferkheperu, "Son of Ra, Thutmose, beautiful of forms"
(Click This Link)
প্রমান ৩ঃ
ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুযায়ী এক্সোডাস সংঘটিত হয় খৃস্টপূর্ব ১২৫০ এ। এই সময়ে রামেসিস ২ এর শাসনকাল ছিল। রামেসিস ২ ১৯তম রাজবংশের শাসক ছিল। তার টাইটেল ছিল User-maat-ra Setep-en-ra।
ইজিপ্টে যতগুলি রাজবংশ ছিল এবং যতজন শাসক ছিলেন তাদের নাম এবং সময়কাল উইকিপিডিয়াতে দেওয়া আছে। লিংক দিলাম, যে কেউ চেক করে দেখতে পারেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_pharaohs
https://en.wikipedia.org/wiki/Saqqara_Tablet
প্রমান ৪ঃ
ইজিপ্টে যত জন শাসকের মমি পাওয়া গেছে তাদের তাদের শবাধারের ফলকে (রয়্যাল কার্তুজ) যে নাম পাওয়া যায় সেইখানেও এই ধরনের কোন নামের অস্তিত্ব নাই।
প্রমান ৫ঃ
এই পর্যন্ত প্যাপিরাসের যত স্ক্রল আবিষ্কৃত হয়েছে, ইজিপ্টের শাসকগন যত চিঠিপত্র চালাচালি করেছেন বা তাদের লেখক গন যত কিছু তাদের শাসকদের সম্পর্কে লিখেছেন কোথাও এই ধরনের ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh নাম নাই। পিরামিড, সমাধি ক্ষেত্র, তাদের মন্দির কোথাও এই ধরনের নাম নেই।
দ্য বুক অফ ডেডঃ
ইজিপশিয়ান কোন ডকুমেন্টে, হায়ারগ্লাফিক্সে, কোন প্রত্নত্ত্ব নিদর্শনে, পিরামিড, মন্দির, শবাধার কোন কিছুতেই ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh এই ধরনের কোন নামের অস্তিত্ব না পেয়ে ইহুদী স্কলাররা ব্যাপক চিন্তিত হয়ে পরেন। এই ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh নামের অস্তিত্ব যখন তারা ইজিপ্টের কোন কিছুতে খুজে বের করতে ব্যর্থ হয়ে তারা একটা নতুন থিওরী দাড় করালেন। অনেক খুজে তারা একটা নাম বের করল। জেমস হেনরি নামক একজন স্কলার অনেক গবেষণা করে কোন কিছু না পেয়ে একটা থিওরী দাড় করাল এই বলে যে আগে ইজিপশিয়ানরা তাদের গভর্নমেন্ট কে ‘The Great House’. বলে সম্বোধন করত। কালক্রমে, এই সম্বোধন স্বয়ং তাদের শাসকের উপাধিতে পরিণত হয়। আর ইজিপশিয়ান ভাষায় এবং উচ্চারনে এই ‘The Great House’ কে বলা হয় pr-aa। অদ্ভুত সুন্দর একটা সমাধান। মানুষ হয়ত ঘাস খায় বলেই এইগুলি বিশ্বাস করে।
কোরআন বলেছেঃ
ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে। (কোরআন ২০:২৪) । সুতরাং ফিরাউন কে যদি আমরা ‘The Great House’ ধরে অনুবাদ করি, তবে কোরআনের এই আয়াতের অনুবাদ হবে “The Great House’ এর কাছে যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে”। এইটা একধরনের ভন্ডামি এবং মানুষের ইন্টিলিজেন্টের প্রতি উপহাস ছাড়া কিছু নয়।
তার পরেও উপরে যতগুলি সোর্সের কথা উল্লেখ করেছি (প্যাপিরাসের স্ক্রল, হায়ারগ্লাফিক্স, ৫ ধরনের নাম, শবাধারে লেখা নাম, পিরামিডের গায়ে লেখা নাম, মন্দিরে লেখা নাম) কোথাও এই pr-aa শব্দটা নাই। তাহলে কোথায় আছে? আছে “দ্যা বুক অফ ডেড” এ। সেইখানে কি বলা আছে?

“Homage to thee …
o thou Lord of brightness
thou who art at the head
of the great house …
prince of night and of thick darkness …
he comes to thee being a pure soul …
..o, grant thou unto him
His mouth that he may speak therewith,
At the season when there are clouds
And darkness …”
সুতরাং এই The Great House’ শব্দটা কোনভাবেই ইজিপ্টের শাসকের সাথে সম্পর্কিত নয়, এটা তাদের দেবতা “হোরাস-রা” এর সাথে সম্পর্কিত। এইখানে “হোরাস-রা” কে বলা হয়েছে গ্রেট হাউজের অধিপতি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
সুতরাং ইজিপ্টের শাসকদেরকে ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh এই টাইটেলে ডাকা হত বা তাদের এই ধরনের টাইটেল ছিল তা কোনভাবেই প্রমানিত নয় বরং তাদের টাইটেল ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh এই সব ছিলনা তা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমানিত।
তাহলে ফারাও/ফিরাউন/Pharaoh কে বা কি ছিলেন? ইজিপ্ট নিয়ে আরকিওলজিকাল গবেষণা শেষ। এইবার আসেন আমরা কোরআনের দিকে ফিরে যাই।
ফেরাউনঃ একবচন নাকি বহুবচনঃ
কোরআনের ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে কোরআনে কোথাও “ফারাউনা” শব্দটা আসেনি। অর্থাৎ কোরআন বহুসংখ্যক ফিরাউনের কথা বলেনি। বলেছে একজন ফিরাউনের কথা। ইউসুফ নবীর সময় মিশরের শাসককে বলা হয়েছে “আলা-মালিক”। কিন্তু মুসা নবীর সময় শুধু আমরা এই ফিরাউনের অস্তিত্ব দেখতে পাই। মুসা নবীর আগে বা পরে আর কোন ফিরাউনের নাম বা ঘঠনা আমরা দেখতে পাইনা। সুতরাং এটা সম্পূর্ণ সত্য যে শুধুমাত্র একজন ফিরাউন ছিল যে কিন মুসা নবীর ঘঠনার সাথে সম্পৃক্ত।
ফেরাউনঃ টাইটেল বনাম নামঃ
প্রথম প্রশ্নটা হচ্ছে “ফেরাউন” শব্দটা কি কোন টাইটেল নাকি কারো নাম? এই সহজ বিষয়টা কেন আমাদের উলামাদের নজরে আসেনি তা বোধগম্য নয়। কোরআনে কোথাও ফেরাউনকে “আল-ফেরাউন” বলা হয়নি। অর্থাৎ কোন টাইটেল হিসাবে ফিরাউন শব্দটা ব্যাবহার করা হয়নি। কোরআনের ভাষা অনুসারে ফিরাউন একজন ব্যাক্তির নাম, কোন টাইটেল বা উপাধি না। আসুন এর স্বপক্ষে কিছু প্রমান দেখিঃ
প্রমান ১ঃ
আর মূসা বললেন, হে ফেরাউন, আমি বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত রসূল। (৭:১০৭)
যদি ফিরাউন একটি উপাধি/টাইটেল হত তবে মুসা নবী তাকে আল-ফিরাউন বলে ডাকত, কারন সুরা ইউসুফে আমারা দেখেছি শাসককে ডাকা হয়েছে “আল-মালিক” এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কে বালা হয়েছে “আল-আজিয”। অর্থাৎ টাইটেল বুঝাতে “আল” শব্দটা ব্যবহার হয়েছে।
প্রমান ২ঃ
ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না।
ভাষাগত ব্যাবহারে এইখানে ফেরাউনের স্ত্রীর সাথে লুত, নুহ এর স্ত্রীর সাথে কোন পার্থক্য নাই। একি এক্সপ্রেশন ব্যবহার করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কাফেরদের জন্যে নূহ-পত্নী ও লূত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। (৬৬:১০)
আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্যে ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। (৬৬:১১)
সবাই জানে নুহ, লুত হচ্ছে মানুষের নাম। এইখানে নুহ-পত্নী বলতে নুহের স্ত্রী কে বোঝান হয়েছে। তাহলে ফিরাউন-পত্নী বলতে কোন ফিরাউনের স্ত্রীকেই বোঝানো হয়েছে, এবং এই ফিরাউন কোন উপাধি না, এইটা একজন মানুষের নাম।
আরও প্রমান চান?
আমি আমার নিদর্শনাবলী ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসাকে প্রেরণ করেছি। ফেরাউন, হামান ও কারুণের কাছে, অতঃপর তারা বলল, সে তো জাদুকর, মিথ্যাবাদী। (৪০:২৩-২৪)
এইখানে হামান, কারুণ প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র নাম। তাহলে ফিরাউন কেন উপাধি হবে? কোরআনের যত জায়গায় ফিরাউন শব্দটি এসেছে, খুজে দেখতে পারেন কোথাও ফিরাউন কে টাইটেল হিসাবে উল্লেখ করা হয় নাই। নিজেই চেক করে দেখুন।
সুতরাং এইখান থেকে আমারা যে উপসংহারে পৌছাতে পারি তা হচ্ছে ফিরাউন কোন টাইটেল না বরং একজনের নাম যে কিনা মিশর নামক কোন স্থানের শাসক ছিল।
উপসংহারঃ
পর্ব ১ এবং পর্ব ২ থেকে যে উপসংহার পাওয়া যায় তা হচ্ছেঃ
১। বর্তমানে নীল নদীর তীরে ইজিপ্ট নামক যে দেশটি আছে তা কোরআনে বর্ণিত মিশর নয়।
২। ইহুদীরা কোনদিন মিশরে বন্দী ছিলনা।
৩। বর্তমানে প্যালেস্টাইন নামক যে জায়গাটি আছে তা কোনভাবেই প্রমিজড ল্যান্ড বা ব্লেসড ল্যান্ড না
৪। ইজিপ্টের শাসকদের উপাধি বা টাইটেল কোনভাবেই ফিরাউন/ফারাও না।
৫। ইহুদীদের ইতিহাসের সাথে কোনভাবেই ইজিপ্ট বা প্যালেস্টাইন জড়িত না।
৬। ফিরাউন কোন টাইটেল না, এটা একজন মানুষের নাম।
৭। বহুসংখ্যক ফিরাউনের কোন অস্তিত্ব বা প্রমান কোন কিছুই পাওয়া যায় না। শুধু মাত্র একজন ফিরাউন ছিল যিনি মুসা নবীর সময়ে মিশর নামক কোন জায়গার শাসক ছিলেন।
৮। সুতরাং ফিরাউন কোনভাবেই কখনো ইজিপ্ট নামক দেশটির শাসক ছিলেন না।
আমদের সম্পূর্ণ ইতিহাস মিথ্যার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে।
(সমস্ত ছবি গুগল এবং উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




