এটা কোনভাবেই প্রচলিত অর্থে ধর্মীয় গবেষণা না। এটা অনেকটা ধর্মে বর্ণিত ইতিহাস নিয়ে গবেষণা। যেহেতু এই লেখার চরিত্র গুলি মুলত ধর্মের সাথে রিলেটেড সেহেতু এইখানে প্রায় সব রেফারেন্সই ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। মুলত মুল স্ক্রিপচার ওল্ড টেস্টামেন্ট, কোরআন এবং সেইসাথে মুসলিম ট্রাডিশন থেকে নেওয়া কাহিনী এবং সেইসাথে জিওগ্রাফিক্যাল এনালাইসি করা হয়েছে। এই লেখায় আমি কোন সিদ্ধান্ত দেবনা, কারন এইটা আমার জন্য বিপদজনক (প্রচুর গালাগালি, ট্যাগ খাওয়া আরকি) হতে পারে। ব্লগ লেখার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। আমি শুধু কিছু পয়েন্ট আপনাদের সামনে তুলে ধরব, এবং এইসব পয়েন্টের ভিত্তিতে আপনারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিবেন। যারা ধর্মান্ধ তারা দয়া করে দূরে থাকবেন। কারও কোন প্রশ্ন থাকলে প্রশ্ন করবেন, এতে কোন সমস্যা নাই। জানলে উত্তর দিব, না জানলে বলব জানিনা। যদি যুক্তি প্রমান দিয়ে ভুল ধরিয়ে দিতে পারেন, স্বীকার করে নেব, এতে কোন সমস্যা নেই। ইনফ্যাক্ট আমার ভুল হতেই পারে। কিন্তু দয়া করে মুল লেখাকে পাশ কাটিয়ে কোন গালাগালি অথবা অযথা ট্যাগ করবেন না। এইখানে ঘঠনা বর্ণনার সময় নবীদের নাম আসবে, নিজ দায়িত্বে (আঃ) পড়ে নিবেন।
নবী ইব্রাহিম কে ছিলেনঃ
উনি সত্যিকার অর্থে কে ছিলেন (বংশধারা) তা বোঝানোর জন্য প্রচুর এনালাইসিস দরকার। ঐ দিকে আপাতত না গিয়ে আমরা উনার সম্পর্কে সাধারন যে জিনিষ গুলি জানি তা নিয়ে কথা বলি আর তা হচ্ছে উনি তিনটা একত্ববাদ ধর্মের পিতৃ পুরুষ। জুডাইজম, ক্রিশ্চিয়ানিটি, এবং ইসলাম তার বংশধরদের মধ্য থেকে এসেছে। যদিও ওল্ড টেস্টামেন্টে তার চরিত্র কে বিভিন্ন উপায়ে অবমনন করা হয়েছে, কোরআনে এর ঠিক বিপরীত বর্ণনা এসেছে। কোরআনে আল্লাহ নবী ইব্রাহিম সম্পর্কে খুবই উচ্চ সম্মানের সাথে বর্ণনা করেছেন। ইনফ্যাক্ট নবী মুহাম্মদ কে আল্লাহ নবী ইব্রাহিমের বিশ্বাস কে অনুসরণ করতে বলেছেন। মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত কোরআন দাড়া অনুমোদিত যত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আছে তার সবই এসেছে নবী ইব্রাহিম থেকে। নবী মোহাম্মদ নতুন কোন কিছু প্রচলন করেন নি। উদাহরণ স্বরুপ সালাত, সওম, হজ্জ, যাকাত- এই সবই এসেছে নবী ইব্রাহিমের আচার অনুষ্ঠান থেকে। নবী মুহাম্মদ শুধু এই আচার অনুষ্ঠান গুলি আবার সঠিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (দয়া করে আবার ভাববেন না আমি নবী মুহাম্মদ কে ছোট করছি, কোনভাবেই না)। এই রকম একজন বিশেষ ব্যক্তি নবী ইব্রাহিম সম্পর্কে আল্লাহ খুবই উচ্চ সম্মানের সাথে কথা বলবেন এটাই স্বভাবিক। এই সম্পর্কে কোরআনের কিছু বিশেষ আয়াত লক্ষণীয়।
বল, আল্লাহ সত্য বলেছেন। এখন সবাই ইব্রাহীমের ধর্মের অনুগত হয়ে যাও, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ ভাবে সত্যধর্মের অনুসারী। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (৩:৯৫)
অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শিরককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। (১৬:১২৩)
তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে।... (৬০:৪)
তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ বেপরওয়া, প্রশংসার মালিক। (৬০:৬)
সুতরাং আল্লাহ বার বার বলছেন যে নবী ইব্রাহিমের মধ্যে বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে, যেমন বলেছেন নবী মুহাম্মদের ক্ষেত্রেও। এখন প্রশ্ন হল, এই উত্তম আদর্শ কি জিনিষ? এই সম্পর্কিত ব্যাপারে মুসলিম ট্র্যাডিশন যার বেশিরভাগই ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে কপি করা (যা পরে আমরা দেখব) কি বলেছে তা একটু দেখি।
মুসলিম ট্রাডিশন এবং ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুযায়ী নবী ইব্রাহীমের কিছু আদর্শের নমুনাঃ
১। তিনি ভীত হয়ে উনার স্ত্রীকে মিশরের শাসকের হাতে স্বেচ্ছায় তুলে দিয়েছিলেন এবং এইজন্য উনি মিশরের শাসকের থেকে উপঢৌকন গ্রহণ করেছিলেন।
২। ঊনরা দুই স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার জের ধরে উনি প্রথম স্ত্রীর মন রক্ষা করতে উনার দ্বিতীয় স্ত্রীকে তার পুত্র সহ ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
৩। উনি উনার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং শিশুপুত্র কে মরুভূমি তে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে এসেছিলেন।
৪। কিছুদিন পর উনি যখন তার ফেলে আসা পুত্রের নিকট গমন করলেন, তার পুত্র ইসমাইল ঘরে ছিলনা। ইসমাইলের স্ত্রীর সাথে কথার জের ধরে ইসমাইলের জন্য একটা বার্তা রেখে উনি ফিরে আসলেন। ইসমাইল ঘরে ফিরে এসে এই বার্তা শুনে এর অর্থ বুঝে তার স্ত্রীকে তালাক দিলেন।
৫। উনি জীবনে তিনবার মিথ্যা কথা বলেছেন।
এই হচ্ছে ট্র্যাডিশন বর্ণিত উত্তম আদর্শের কিছু নমুনা। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় মুসলমানরা তাঁদের সাধারন জ্ঞান, বোধ ১২০০ বছর আগেই বিসর্জন দিয়েছে। আপনার কেমন লাগবে যখন আপনি জানবেন যে আপনার বাবা আপনার মা সহ আপনাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে এমন একজায়গায় ফেলে রেখে গিয়েছিল যেখানে আপনার অসহায় মা এবং আপনার মরণের অবস্থা হয়েছিল। তিনি কি ধরনের পিতা? তারপরেও আপনি তাকে আপনার উত্তম আদর্শ হিসাবে কিভাবে মানবেন? কারন আল্লাহ বলেছেন? যদি আপনি সত্যবাদী হন তবে, আল্লাহ কোথায় এইসব ঘঠনা বলেছেন তা বের করে দেখান।
তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর। (২ঃ১১১, ২৭ঃ৬৪)
সুতরাং আসেন দেখি কি প্রমান আছে।
(চলবে)
দ্বিতীয় পর্বের লিংকঃ নবী ইব্রাহিমের মিথলজিকাল ভ্রমণঃ পর্ব ২
(ছবিঃ গুগল)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৪