যে কোন সময় বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। তাই এক প্যারা করে লিকছি। আর ব্লগে দিচ্ছি। ক্ষমা করবেন এজন্য।
অনেকদিন পর আজ ব্লগে। নেটের পাতা খুলেই চোখে পড়লো দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে শামীম ভাইয়ের নিয়ে চমৎকার একটা লেখা। নেটে পত্রিকা পড়তে গিয়ে দেখি প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তেও আজ বিদ্যুৎ। নেটে আরো কয়েকটা লেখা দেখে নিশ্চিত হলাম দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা চরম। তাই মনে হলো আজ নেপালের বিদ্যুৎ প্রসঙ্গ নিয়েই লিখি। অনেকেরই বিষয়টি জানা নেই।
আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের রিজিওনাল মাষ্টার্সের ২০ জন ছাত্র গত এক মাস ধরে নেপালে আছি। এই এক মাসে আমরা বুঝে গেছি একটি দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা কতোটা প্রকট হতে পারে। সেই সঙ্গে এও আমরা দেখছি একটি দেশের মানুষ এই সমস্যার সঙ্গে কিভাবে মানিয়ে নিতে পারে, দেখছি দেশের সরকার কতোটা নিশ্চুপ এবং অর্থহীনভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে। আর বিষয়টি নিয়ে কতোটা আন্তর্জাতিক রাজনীতি হতে পারে।
আমরা ছোটবেলায় যখন বাংলাদেশের নদী নিয়ে পড়তাম তখন জেনেছি আমাদের বেশিরভাগ নদীরই উৎপত্তিস্থল হিমলায়। আসলেই তাই। পানি সম্পদের দিক থেকে ব্রাজিলের পর পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ নেপাল। দেশটিতে যে পানি সম্পদ রয়েছে তা দিয়ে ৯০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু এখানে তৈরী হয় মাত্র ৫১২ মেওয়াগটের কাছাকাছ বিদ্যুৎ। এই দেশটির বিদ্যুৎ সংকট কতোটা প্রকট সেটা এখানে দিনের পর দিন না থাকলে বোঝা সম্ভব নয়। দিনের ১৬ ঘন্টাই এখানে বিদ্যুৎ থাকে না।
অদ্ভুত ব্যাপার কি জানেন? বিষয়টি যেন স্বাভাবিক নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছে নেপালের জনগন। এই যে বিদ্যুৎ নিয়ে এতো সমস্যা তা নিয়ে তাদের অনেক কষ্ট আছে, দুর্ভোগ আছে, কিন্তু বিক্ষোভ নেই। আজ পর্যন্ত নেপালে কোন বিক্ষোভ হয়নি বিদ্যুৎ সমস্যা জন্য। জনতা কোথাও কখনো ভাঙচুর করেনি বিদ্যুৎ দাবিতে। সবাই সমস্যাটি যেন প্রকৃতির নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছে।
এখানে বিদ্যুৎ যায় রুটিন করে। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন বিদ্যুৎ নেই। নেই তাই পানিও। আগে থেকে জমিয়ে রাখা পানিই তাই ভরসা। নেপালের বেশিরভাগ লোকজনই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে। ভোর-পাঁচটা কিংবা ছয়টায়। এখানকার স্কুল কলেজ শুরু হয় সাড়ে ছয়টা থেকে। অফিস আদালতও তাই। কাজেই সকালের দুর্ভোগটা বুঝুন। যাই হোক সকালে দীর্ঘক্ষন বিদ্যুৎ নেই। আসবে ১১-১২ টার দিকে। থাকবে ৩ টা চারটা পর্যন্ত। এরপর চলে যাবে। আসবে রাত আটটায়। আবার বিদ্যুৎ আসবে রাত ৮ টায় কিংবা রাত ১২ টায়। গত ১০ বছর ধরে এখানে দিনের ১৬ ঘন্টাই লোডশেডিং চলছে। এখান এখানে বসন্ত। তাই চাহিদা সবচেয়ে কম। সমস্যা হয় শীতের সময়। সে সময় তাপমাত্রা কমে যায় ৩-৪ ডিগ্রিতে বা আরো নিচে। তখন ঘরে ঘরে রুম হিটার জ্বলাতে হয়, গিজার লাগে, তাই খুব চাপ থাকে। এখন চাপ অনেক কম। তাই দিনে ১২-১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না।
এবার আসুন এই যে বিদ্যুৎ থাকে না তাতে লোকজনের প্রতিক্রিয়া কি? শুনলে যে কেউ অবাক হবেন। লোকজন এই বিষয়টিতে মানিয়ে নিয়েছে। যখন বিদ্যুৎ থাকে তারা সে সময় বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সব কাজ করে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাকি সময় তারা অন্ধকারেই বাস করে। তাই সন্ধ্যার সময় কাঠমান্ডুর বাড়িঘর অন্ধকার দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রশ্ন হলে তাহলে বড় বড় হোটেলগুলো কিভাবে চলে? কিভাবে চলে টেলিভিশন আর পত্রিকা অফিসগুলো।
খুব বড় হোটেলগুলো জেনারেটর ব্যবস্থা করে। কিন্তু বেশিরভাগ ছোট হোটেলের তা নেই। মূল কারন জ্বালানি। জেনারেটর চালাতে হলে ডিজেল লাগে। সেটা আনতে হয় ভারত থেকে অনেক দাম দিয়ে। বেশিরভাগই সেটা করতে পারে না। বিদ্যুৎ থাকে না বলে এখানে শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে না। টেলিভিশনগুলো চলছে হিমশিম অবস্থা নিয়ে। বিদ্যুৎ নেই বলে বেশিরভাগ টেলিভশেনেরই বিজ্ঞাপনের বাজার সীমিত। পত্রিকা অফিসগুলো আরো বাজে অবস্থায় চলে। শুনলে খারাপ লাগে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সমস্যার কারনে অনেক মিডিয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
বলছিলাম নেপালের মানুষের প্রত্রিকয়ার কথা। বেশিরভাগই এটা মেনে নিয়েছে। তারা ভেবে নিয়েছে এটা কপালের দুর্ভোগ। তাই পানিতে পৃথিবীর দ্বিতীয় সম্পদশালী দেশ হয়েও তারা আজ বিদ্যুৎ-এর অভাবে অন্ধাকারে।
প্রশ্ন হলো, সরকার তাহলে কি করছে? দীর্ঘদিনের রাজনতৈক অস্থিরতার কারনে এখানে সেভাবে বিনিয়োগ হয়নি। মাওবাদীরা এক দশক এখানে গেরিলার যুদ্ধ করেছে। সে সময় কোন বিদ্যুৎ প্লান্ট গড়ে ওঠেনি। তাই ৯০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরীর ক্ষমতা থাকার পরেও দেশটিতে বিদ্যুৎ হচ্ছে মাত্র ৫১২ মেগাওয়াট। ২০০৭ সালের নির্বাচনে মাওবাদীরা ক্ষমতায় আসার পর দেশের পরিস্থতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। রাজতন্ত্রের বিদায়, গনতন্ত্র এসব নিয়ে কিচুটা সম্ভাবনাও দেখা গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে এখনো কোন সম্ভাবনা দেখা দেয়নি। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রচন্দ নরওয়ে ঘুরে এসেছেন এবং নরওয় সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু প্রচন্দকে তারা কোন কথা দেয়নি। কাজেই সহসা নরওয়ে এখানে বিদ্যুৎ প্লান্ট করবে সে সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ থাকতে শুনেছি নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার চেষ্টা করছে সরকার। শুনলে হাসি পায়। নেপাল নিজেই সমস্যায় আছে, সে কিভাবে আরেক দেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে? এবার আসুন ভারতের রাজনীতি নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে। সে সব বুঝে নেন আপনারা। বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আর লিখতে পারছি না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:৫০