somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রধানমন্ত্রী এতো রাগ করলেন কেন?

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ঘেঁষতে পারেননি সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ, সাভারে ধসে পড়া ভবনের মালিক সোহেল রানার ‘মদদদাতা’ হিসেবে গণমাধ্যমে সমালোচিত যিনি। আমাদের জিজ্ঞাস্য মুরাদ জং-এর প্রতি প্রধানমন্ত্রী এতো রাগ কেন? তালিকার জন্য, নাকি রানাকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে?

''রানা' আওয়ামী লীগের কেউ নয়' সংসদে প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দিয়ে দেশজুড়ে সমালোচিত হয়েছেন। যদিও এই বক্তব্য তিনি দিয়েছিলেন, মুরাদ জংয়ের পাঠানো মিথ্যা তালিকার ওপর ভিত্তি করেই। পরে পার্টি অফিস থেকে প্রাপ্ত তালিকায় জানা গেল, সোহেল রানা সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক। এ্ররপর হয়তো প্রধানমন্ত্রী মুরাদের ওপর রাগ করেছেন।
আবার ভবন ধ্বসের পর রানা কাছের মানুষ কথাটি মুরাদ জং অস্বীকার করার পরও গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশের পর যখন সব পরিস্কার হয়ে গেল, সেই ঘটণায় প্রধানমন্ত্রী রাগ করলেন।

যদি দ্বিতীয় কারণে হয়, তাহলে একটু ভাল লাগতে পারে। কারণ অন্তত একটি খারাপ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরাগবাজন হয়েছেন। কিন্তু সংসদে দাঁড়িয়ে এ প্রসঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী মনে হচ্ছে, সেই পরিস্থিতি আগেই নষ্ট করেছেন।
আমাদের আমজনতার প্রশ্ন: মুরাদ জংয়ের ওপর আজ প্রধানমন্ত্রী এতো খেপলেন কেন?


এবার আজকের ঘটণাটি বলি:
ভবন ধসে আহত এবং ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কার্যক্রম দেখতে আজ সোমবার সাভার যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে তিনি আহতদের দেখতে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে মুরাদ আগে থেকে বসে থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢুকতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী ঢোকার পর নিরাপত্তাকর্মীরা হাসপাতালের নিচতলার ফটক আটকে দেয়। ফলে বাইরে থেকে যান মুরাদ জং। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সাভার বাসস্ট্যান্ডে রানা প্লাজার সামনে চলে যান তিনি। ধ্বংসস্তূপে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাকে দেখে আওয়ামী লীগ প্রধানকে চোখ ফিরিয়ে নিতে দেখা যায়।

রানা প্লাজার সামনে প্রধানমন্ত্রী গাড়ি থেকে নামার পর সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী উদ্ধার অভিযানে থাকা সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকার প্রধানকে পরিচয় করিয়ে দেন। ওই সময় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো সেনা কর্মকর্তাদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান মুরাদ জং। তাকে সেখানে দেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা উষ্মা প্রকাশ করে আরেক কর্মকর্তাকে বলেন, “ও ওইখানে গেল কীভাবে?” উচ্চস্বরে বলা এই কথা শুনে মুরাদ সেখান থেকে সরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গিয়ে দাঁড়ান।

এরপর রানা প্লাজার বিপরীত দিকের রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন উদ্ধার তৎপরতার কথা শুনছিলেন, তখন শেখ হাসিনার দু’পাশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর সঙ্গে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলাও ছিলেন। মুরাদ তখন একপাশে আওয়ামী লীগের নেতাদের পেছনে দাঁড়িয়ে, শেখ হাসিনাকে সেদিকে একবার তাকিয়েই মুখ ঘুরিয়ে নিতে দেখা যায়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের পিছু পিছু সাভার সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে গেলেও ঢুকতে না পেরে বারান্দায় ঘোরাঘুরি করে ফিরতে হয় আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যকে।

গত ২৪ এপ্রিল এই ভবন ধসে প্রায় চারশ’ মানুষের প্রাণহানির জন্য দায়ী করা হচ্ছে এর মালিক সোহেল রানাকে, যুবলীগের এই নেতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে মুরাদ জংয়ের বিরুদ্ধে। ভবন ধসে ব্যাপক প্রাণহানির পর রানার ফাঁসির দাবিতে সাভারে স্বজন হারানোদের যে মিছিল হয়েছে, তাতে স্লোগানে মুরাদ জংয়ের শাস্তিও দাবি করা হয়েছে। তবে ধসের পর থেকে রানা প্লাজার সামনে থাকা মুরাদ জং ভবন মালিক সোহেল রানাকে মদদ দেয়ার সব অভিযোগ নাকচ করে আসছেন।

সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়ে কয়েক মাস আগেও সাভার এলাকা পোস্টারে ছেয়ে ফেলেন রানা, যাতে মুরাদ জংয়েরও ছবি ছিল। অবশ্য সোমবারই এই কমিটি বাতিল ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। ফাটল ধরার পরদিন পুলিশের নিষেধ সত্ত্বেও নয় তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে ভবনটি ধসে পড়ে। ধসের সময় ভবনের নিচতলায় ছিলেন রানা, তবে ওই অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ধসের পর জনরোষে পড়ার আশঙ্কায় রানা প্রথমে বের হননি। পরে মুরাদ জংসহ যুবলীগের কর্মীরা গিয়ে তাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এরপরই পালিয়ে যান তিনি। চার দিন পর রোববার যশোরের বেনাপোলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রানা সাংবাদিকদের বলেন, মুরাদ জং নয়, স্থানীয়রাই তাকে ভবন থেকে বের করে এনেছিল।

রানা সাভারে মাদক চক্রের অন্যতম হোতা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, ধসে পড়া ভবন রানা প্লাজার বেসমেন্টেই ছিল ফেনসিডিলের ‘আড়ত’। সাভারের আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফউদ্দিন খান ইমু জানান, রানার শ্বশুর ছিলেন সাভার পৌর যুবদলের আহ্বায়ক। মূলত শ্বশুরের প্রভাব খাটিয়েই সে বিএনপি আমলে মাদক ব্যবসায় আসে। ২০০৯ সালের পর মুরাদ জংয়ের সঙ্গে রানার ঘনিষ্ঠতা হয় বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক নেতা জানান।

সাভার আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, মুরাদ জংয়ের সব কর্মসূচিতে লোক ‘সাপ্লাই’ দেয়ার দায়িত্ব ছিল রানার। আর সেজন্য রানার সব কাজে মদদ দিয়ে আসতেন সংসদ সদস্য। রানা প্লাজার সামনে থেকে গত কিছু দিন ধরে আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মিছিল শুরু হওয়ার কথা স্থানীয় অনেকেই বলেছেন।

মুরাদ জং ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জীবনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাভার আসনে দেশের প্রথম সংসদ সদস্য আনোয়ার জংয়ের এই ছেলে দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে ফিরে ২০০১ সালে নির্বাচন করলেও হেরে যান বিএনপি প্রার্থী ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর কাছে। ওই নির্বাচনে শিল্পোদ্যোক্তা হাসিনা দৌলা মনোনয়ন চাইলেও আওয়ামী লীগের টিকিট পান মুরাদ। পরের নির্বাচনেও হাসিনা দৌলাকে হটিয়ে দলীয় টিকিট পান তিনি, নির্বাচিতও হন। মুরাদ জংয়ের ‘আনুকূল্য’ পেয়েই সোহেল রানা সাধারণ অবস্থা থেকে কয়েক বছরের মধ্যে অর্থশালী হয়ে ওঠেন বলে স্থানীয়রা মনে করেন। বাস স্ট্যান্ডে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ৫৬ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা রানা প্লাজা ছাড়াও সাভার বাজার রোডে আরেকটি ভবন রয়েছে তার। একজন হিন্দু ব্যক্তির জমি দখল করে রানা প্লাজা নির্মাণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে, এই ভবন নির্মাণে ইমারত নির্মাণ অনুসরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভবন ধসের পর রানার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।


তথ্যসূত্র:
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×