কিছু মানুষ আছেন যারা এই পৃথিবীতে এসেছেন এর সৌন্দর্য উপভোগের জন্য । যুদ্ধ, ফ্যাসাদ, ঘৃণা, হিংসা তাদের সুন্দর একটা দুনিয়া দেখার পদ্ধতিটাকে বাধা দিতে পারেনা । সবাই যেখানে খারাপ কিছু দেখে, তারা সেখান থেকে ভালটাকে খুঁজে এনে উপস্থাপন করেন । এদের সান্নিধ্য একটা পজেটিভ আবাহ তৈরি করে ।অশান্তির এই ধরণীকে উপভোগ করার একটা বিশেষ ক্ষমতা তাদের আছে, তাই তাদের আরও কয়টা দিন বেশী বেচে থাকার আকাঙ্খাটা তীব্র ।
Life is beautiful
গুইডো জীবিকার তাগিদে শহরে আগমন ইতালিতে। ইচ্ছে বইয়ের দোকান দিয়ে বেকারত্বের অবসান করা । কিছু দাপ্তরিক ঝামেলা আছে । ততদিন চাচার রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের চাকরি । চালচলন দেখে বুঝা যায় জীবনে কোন সমস্যাই সমস্যা না । হাতের কাছেই সব সমস্যার সমাধান রয়েছে তার । যদিও নিজের অজান্তেই তৈরি করে ফেলে কিছু হাস্যকর সমস্যা ।
ডোরা যে গুইডোর মতে শাহজাদী । আসলে তার মত চালচুলোহীনের তুলনায় শাহজাদীই । একজন শিক্ষিকা । সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, একজন সিভিল সারভেন্টের স্ত্রী হতে যাচ্ছেন। প্রথম দেখার পর থেকে গুইডোতে মুগ্ধ ।
গুইডোর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, বিচক্ষণতা আর চটপটে স্বভাব ডোরাকে আচ্ছন্ন করে রাখে । সে তার বর্তমান সম্পর্কের ইতি টেনে গুইডোর সাথে ঘর বাঁধতে চায় । এই সমস্যার সমাধান ও একমাত্র গুইডোই করতে পারে বিশ্বাস ডোরার । তাই বিয়ের আসরে “আমাকে এখান থেকে দূরে নিয়ে চলো” ডোরার এমন হঠকরি আবদারে সাড়া দেয় গুইডো ।
Life is too beautiful
পাঁচ বছর পর । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর অস্থিরতা চলছে । যোশয়া , গুইডো আর ডোরার ছেলে । ভালবাসা আর আদরে বেড়ে চলা আর দশটা বাচ্চার মত পশ্নবানে মাত করে চলে বাবা গুইডোকে । গুইডোর বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর তাকে ইহুদী বিদ্বেষী অসুন্দর পৃথিবীটাকে সুন্দরভাবে দেখতে শেখায় ।
ছেলেখেলা শুরু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুইডো আর যোশয়াকে নৎসি বাহিনী তাদের বন্দীশালায় বন্দী করা হলে ।
সবসময় শুনে আসা নৎসি বাহিনীর বন্দীশালার মত এটি নয় । যোশয়াকে এখানে একটা খেলায় অংশ গ্রহন করতে হবে । অনেক নিয়ম কানুনের মধ্যদিয়ে এ খেলা খেলতে হবে । যোশয়াকে তার বাবা সময় সময় নিয়ম গুলো বুঝিয়ে দেবেন । জিততে পারলে পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটা ট্যাংক । একেবারে আসল ট্যাংক ।
যোশয়া অনেকদিন শুধু ভেবেছে এমন একটা ট্যাংকের কথা । সে খুবই উৎসুক আজ । যোশয়াকে এ খেলায় জিততেই হবে । খেলাটা খুব কঠিন নয় । লুকোচুরি খেলা । কয়টা চিৎকার করে কথা বলা ইউনিফর্ম পরা লোকদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা । যোশয়া আগে এ ধরনের খেলা খেলেছে বাড়িতে । মা তাকে খুঁজে বের করতে পারতো না । সে জিতবেই ।
খেলাটা সময় সাপেক্ষ তাই বিরক্তিকর ও । অতিষ্ঠ হয়ে কয়েকবার খেলা ছেড়ে চলে যেতে চেয়ে ছিল । কিন্তু বাবার অনুরোধে আর জয়ের এত কাছে এসে ছেড়ে চলে যেতে পারেনি যোশয়া ।
তখন পর্যন্ত তার পয়েন্টই সব চেয়ে বেশী ছিল যে ।
ধর্য্য আর বুদ্ধিমান বাবার কৌশলে শেষ পর্যন্ত যোশয়া জিতে যায় খেলাটি সাথে সাধের ট্যাংকটা ।
পুরস্কারের সামনে দাঁড়িয়ে বিজয়ের আনন্দে উত্তেজিত যোশয়া ।
পুরস্কার হিসেবে পাওয়া নিজ ট্যাংকে বসা যোশয়া ।
মায়ের সাথে বিজয়ের আনন্দ ভাগ করছে যোশয়া ।
আমার রিভিউটা পড়ে মনে হতে পারে খুবই সাদাসিধে একটা গল্প । কিন্তু তার আগে কয়টা বিষয় জেনে নিন ।
যেকোন বেষ্ট সিনেমা লিস্টে যান । এই সিনেমা টপ ১০ টি সিনেমার মধ্যে পাবেন ।
চারটি ক্যাটাগরিতে অস্কার জেতে এই সিনেমা ।
তাই এটা সাধারন না অসাধারণ একটা সিনেমা ।
সিনেমার নায়ক, পরিচালক আর গল্পকার একই ব্যাক্তি, এটি আমার কখনই ভালো লাগে না । এমন মাল্টি - টাস্কার সব সময় কেমন জানি স্বার্থপর আর আত্ম অহংকারী টাইপের মনে হয় । কিন্তু রবার্টো বেঞ্জিনি লোকটাকে আমার ভালো লেগে গেছে । তার অভিনয় , পরিচালনা আর অসাধারন গল্প আমাকে মুগ্ধ করেছে ।
যারা এই সিনেমাটি দেখে ফেলেছেন জানি তারা বলবেন, অসাধারন সিনেমা । কিন্তু যারা দেখেননি । আর আমার রিভিউটি পড়েছেন , আর ভাবছেন খুবই সাধারন গল্প । তাদের আশ্বস্ত করছি ছবিটি দেখে ফেলুন । আমার মুভি রিভিউ লেখার হাত খুবই কাচা , মুভি দেখলেই তা বুঝতে পারবেন ।
টানা দুই ঘণ্টা সময় বের করে কোন বিরতি ছাড়া দেখবেন । এবং অন্তত আমাকে একটা ধন্যবাদ দিতে বাধ্য হবেন । চ্যালেঞ্জ থাকল । সবাইকে ধন্যবাদ ।
আরেকটা ব্যাপার । সিনেমাটি ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ । কোন ধরনের নোডিটি কিংবা বীভৎস দৃশ্য নেই । তারপরও একা দেখাটাই ভালো ।
হ্যাঁ । প্রথমেই যে ধাঁধাটা দেয়া আছে, সেই ধাঁধার উত্তরটা সিনেমাতে আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১০