somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্যায়কারী কারো আত্মীয় নয়, কারো বন্ধু নয়। সে একজন অপরাধী।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভয়ঙ্কর খুনি বোরহানের আফসোস


18 Sep, 2014
ভয়ঙ্কর খুনি বোরহানের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আ ম মো. সাঈদ এ রায় ঘোষণা করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ভাবীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণে বড় ভাইকে খুন করে বোরহান। ২০ বছর বয়সে বোরহান উদ্দিনের ওই নৃশংসতার দণ্ড হয়েছিল যাবজ্জীবন। ২২ বছর সাজা ভোগ শেষে বিশেষ ক্ষমায় গত বছরের ২১শে জুলাই মুক্তি পায় সে। জেলখানার ২২ বছরের বন্দিজীবনেও নিজেকে এতটুকু শোধরাতে পারেনি বোরহান। বরং জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আরও হিংস্র হয়ে ওঠে। ২৯ কাঠা পৈতৃক সম্পত্তির পুরোটা একা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এজন্য ছোট ভাই ফারুকসহ তার পরিবারের বাকি ৬ সদস্যের সবাইকে খুন করার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী মুক্তি পাওয়ার মাত্র ১০ দিন পর ১লা আগস্ট কিলিং মিশনে নামে বোরহান। মোটা একটি কাঠের মুগুর নিয়ে ফারুকের ঘরে হানা দেয়। কিন্তু দুপুরের ওই সময়ে বাড়িতে ছিলেন না ফারুক এবং তার দুই কন্যা সন্তান ফাতেমা (১১) ও রিংকি (৬)। ঘরে থাকা ফারুকের স্ত্রী নাজমা আক্তার অন্তরা (৩০) এবং তার দুই ছেলে শাহজাহান (৮) ও শাহপরানকে (৫) একে একে মুগুর দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে বোরহান। চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল। রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। রায় ঘোষণার সময় বোরহান আদালতে উপস্থিত ছিল। মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনার পরও তার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। বোরহান উদ্দিন জেলার হোসেনপুর উপজেলার নামাসিদলা গ্রামের মৃত সদর আলীর মেজ ছেলে।
মামলা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বোরহান উদ্দিনের বয়স তখন ২০। বড় ভাই সোহরাব উদ্দিন বিয়ে করলে ভাবীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সে। এ ঘটনায় শাসন করলে ক্ষিপ্ত হয়ে বোরহান ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে বড় ভাই সোহরাবকে। ভাইকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ড হলেও ২২ বছর সাজা ভোগ করার পর বিশেষ ক্ষমায় গত বছরের ২১শে জুলাই মুক্তি পায় সে। মুক্তি পেয়ে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে, বাবা-মা মারা যাওয়ার আগে ছোট ভাই ফারুকের নামে পৈতৃক সব সম্পত্তি (২৯ কাঠা) লিখে দিয়ে গেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে এলাকার লোকজনকে বিষয়টি জানায়। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য লোকজন এ নিয়ে সালিশও করেন। এতে সিদ্ধান্ত হয়, তাকে কিছু জমি দেয়া হবে। এ আশ্বাসে বোরহান সন্তুষ্ট না হয়ে পৈতৃক সম্পত্তির পুরোটা একা পেতে ছোট ভাই ফারুক, তার স্ত্রী নাজমা আক্তার অন্তরা, তাদের দুই ছেলে শাহজাহান (৮) ও শাহপরান (৫) এবং দুই মেয়ে ফাতেমা (১১) ও রিংকিসহ (৬) পরিবারের ৬ সদস্যের সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ঘটনার সময় বাড়িতে না থাকায় রক্ষা পায় ফারুক। ঘরে ফারুককে না পেয়ে তার স্ত্রী নাজমার মাথায় মুগুর দিয়ে আঘাত করে সে। এতে ঘটনাস্থলেই নাজমা মারা যায়। এর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর বড় ছেলে শাহজাহান ঘরে ঢুকলে তার মাথায়ও মুগুর দিয়ে আঘাত করে। এতে সেও মারা যায়। তারপর ছোট ছেলে শাহপরানকে পেয়ে তার মাথায়ও আঘাত করে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উঠানে ফেলে রাখে বোরহান। এ সময় মৃত নাজমা ও তার ছেলে শাহজাহানকে বসতঘরের বারান্দায় বাদাম গাছের লাকড়ির নিচে লুকিয়ে রাখে। পরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় বোরহান। স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে পেরে গুরুতর আহত শাহপরানকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিন খুন করেও ভাইকে খুন না করতে পারার আফসোস করে বোরহান জানিয়েছিল, বড় ভাইকে খুন করে মাত্র ২০ বছর বয়সে জেলে গেছি। ২২টি বছর জেলের অন্ধকারে পড়ে পড়ে মরছি। জীবনডা শেষ অইয়া গেছে জেলে থাইক্যা। ২২ বছরের জেল জীবনে একদিনও কেউ আমারে দেখবার লাগি যায় নাই। এর উপরে বাপ মইরা যাওয়ার আগে ছোড ভাইরে সব সম্পত্তি লেইখ্যা দিয়া গেছে। আমারে বাদ দিছে। এই অন্যায় কেমনে মাইন্যা নেয়ন যায়! আগে বড় ভাইরে ছুরি দিয়া আঘাত কইরা মারছি। আর আইজকা মারলাম ছোট ভাইয়ের বউ আর তার দুই ছেরারে। এরপরও আমার আফসোস, ফারুকরে মারতে পারলাম না। হেই সময় যদি ঘরের মধ্যে তারে পাইতাম, তাহলে নিশ্চিত, হের বউ আর সন্তানের মতো তারেও বাড়ি দিয়া মাথাটা ফাটাইয়া ফালতাম। কিন্তু হেরে পাইলাম না। বাইছে গেছে।
ট্রিপল মার্ডার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হোসেনপুর থানার তৎকালীন ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় ছোট ভাই ফারুক মিয়া বাদী হয়ে বোরহান উদ্দিনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। গ্রেপ্তারের পর বোরহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলাটি প্রথমে থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) নান্নু মোল্লা এবং পরে তিনি তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে বোরহানকে একমাত্র অভিযুক্ত করে এ বছরের ১৪ই জানুয়ারি তিনি আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন।
এদিকে আদালত বোরহানকে ফাঁসির আদেশ দেয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ফারুক মিয়া। তিনি জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারানোর শোক কোনভাবেই ভোলার নয়। তারপরও আদালতের রায়ে তিনি সুবিচার পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের জল্লাদ যেন কারও ঘরে জন্ম না নেয়।
উৎসঃ মানব জমিন

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×