১
আজকে প্ল্যানচেটের আসর বসার কথা ফয়সালের বাসায়। আত্মা হাজির করা হবে।মৃত মানুষের আত্মা।তার থেকে বিভিন্ন কথা শুনা হবে ।অতিতের কথা ,ভবিষ্যতের কথা। রাত বারটার পর বসবে আসর। রফিক একটু আগে ভাগেই চলে এসেছে। এখন এগারোটা বাজে। আসলে রফিক একটু এক্সাইটেড ছিল ,আগে কখনো সে আত্মা হাজির করা দেখেনি। লোক মুখে শুনেছে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের ও নাকি প্ল্যানচেটের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল।রবি ঠাকুর কয়েকবার এই আসরের আয়োজন করেছিলেন । রফিকের বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝা মাঝি অবস্থান। মাঝে মধ্যে মনে হয় এগুলো আসলে ফাঁকি,আবার মাঝে মধ্যে মনে হয় জগতে তো কত কিছু আছে রহস্যময়। সব কিছুর ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারেনি। বিজ্ঞান ব্যাখ্যাতিত বিষয় গুলোকে পাশ কেটে গেছে অত্যন্ত কৌশলে। তবে আজকে একটা ডিশিসনে আসবে রফিক। নিজ চোখে দেখা জিনিস আর পরের কাছে শোনা কথা এক না।এত দিন লোক মুখে শুনে ছে সব । আজ নিজ চোখে দেখার সুজোগ এসেছে । ফয়সালের প্যারানরমাল ব্যাপার গুলোর প্রতি অনেক আগ্রহ ।
কিছুদিন পর পরই কিছু লোক নিয়ে আসে যাদের নাকি প্যারানরমাল ক্ষমতা আছে। বেশির ভাগই ভুয়া ছিল । তবে গত মাসের একটা ঘটনা। যেটার ব্যাখ্যা রফিক আজও বের করতে পারেনি। এক সন্ধ্যায় ফয়সালের কল পেয়ে তার বাসায় আসে। এসে দেখে কোথা থেকে লিক লিকে ফরসা একটা লোক ধরে নিয়ে এসেছে সে । তার নাকি কি অদ্ভুত সব ক্ষমতা আছে। লোকটাকে দেখে একদমই পছন্দ হয়নি রফিকের । ফ্রড টাইপ লোক। সে তাকে ব্জিজ্ঞেস করে
- তোমার নাম কি ?
- ধলু মিয়া
- এটাই কি আসল নাম ?
- জ্বে না, বাপ-মা শখ করে রাইখছে ।
- তোমার নাকি কি সব অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ?
- জ্বে , আমি ভবিষ্যত কইতে পারি ।
ফয়সাল জাভেদকে নিয়ে এসেছে। জাভেদ ওর বন্ধু । পেশায় ডাক্তার । তার এই সব প্যারা নরমাল বিষয়গুলোতে বিশ্বাস নেই । কিন্তু শখ করে এসেছে দেখতে হয়তো।
স্যার একটা কথা বলব ?
-বল কি কথা
কাচুমাচু করে কিছুক্ষন , পড়ে বলে ,ওই স্যারের সামনে বিপদ, অনেক বিপদ ।
- কোন স্যার ?
জাভেদের দিকে আংগুল নির্দেশ করে সে
- কিসের বিপদ ?
- খারাপ আত্মার নজর আছে, লাশ কাটা ঘর থেকে লাগছে নজর ।
কি সব পাগল ছাগল ধরে নিয়ে এসেছোস ফয়সাল তুই , আমি গেলাম । এই সব নাটক ফাটক দেখার কোন টাইম নাই। রফিক তাকে বুঝিয়ে থামায় । থামে কিন্তু বিরক্তি ঠিকই প্রকাশ পাচ্ছে তার মুখ দিয়ে ।
- স্যার সেই খারাপ আত্মা স্যারকে মেরে ফেলবে। এমন ভাবে মারবে কেউ সন্দেহ করবে না। তবে আমি একটা মাদুলী দিব । সেটা হাতে দিলে আগামি পূর্ণিমা রাতে সেটা তাকে ছেড়ে চলে যাবে।
ওই তোমার ফালতু কথা রাখ । আর একটা কথা বলবা না। চিৎকার করে উঠে জাভেদ । মাদুলী দিয়ে টাকা খাওয়ার কিছু ধান্দা । আমার মাদুলী লাগবে না । টাকা লাগলে বল এমনিতেই দিচ্ছি। জাভেদ মানি ব্যাগ থেকে দুটো পাঁচশো টাকার নোট বের করে ধলু মিয়ার দিকে ছুড়ে মারে । ধলু মিয়া যাওয়ার আগে ফয়সালের কাছে একটা মাদুলী দিয়ে যায় । টাকা গুলো সে নেয়নি। ফয়সালের থেকেও না । ফয়সাল জাভেদকে অনেক বুঝিয়ে ও মাদুলী পড়াতে পারেনি । এর এক সপ্তাহ পরই জাভেদ এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় ।
২
অনেকক্ষন ধরে কলিংবেল দিচ্ছে ,দরজা খোলার কোন নাম নেই। কিছুক্ষন পরে দরজার ওপাশে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। কেউ আসতেছে দরজা খুলতে মনে হয় । একটা নয় দশ বছরের মেয়ে দরজা খুলে একপাশে সরে দাড়ালো। মেয়েটিকে দেখে ধাক্কা খেল যেন রফিক । অনেক পরিচিত লাগছে মেয়েটিকে । কোথায় যেন দেখেছে আগে । কপালের বাম পাশে একটা কাঁটা দাগ । দাগটাও পরিচিত। কিন্তু এখন মনে পড়ছে না। এটা একটা সমস্যা । অত্যন্ত প্রয়োজনের সময় আমাদের সহজ জিনিস গুলো মনে পরেনা ।
-আপনি কে ?
-আমি রফিক ,ফয়সালের বন্ধু। ফয়সাল বাসায় নেই ?
-হ্যা ,খালু বাসায় আছে। আপনি ভিতরে আসেন।
মনে হয় ফয়সাল আগেই তার আসার কথা মেয়েটিকে বলে রেখে ছিল। নাহলে এত সহজ ভাবে ঢুকতে দিত না।
রফিক ভিতরে ঢুকলো। ঘরের মধ্যে একটা আলো আধারির পরিবেশ । এর আগে কখনো এমন অন্ধকার করে রাখতে দেখেনি বাসা। মনে হয় প্ল্যানচেট করার আগে এমন পরিবেশ তৈরি করার নিয়ম। ফয়সাল তার বাল্য কালের বন্ধু। এই বাসায় তার অবাধ যাতায়াত। কেমন অচেনা লাগে পরিবেশটা । আগে এমন লাগেনি কখনো। মনে হচ্ছে অনেক গুলো মৃত মানুষের আত্মা তার দিকে চেয়ে আছে। একজন অন্যজনের সাথে ফিস ফিসিয়ে কথা বলছে । সে দেখছে না,শুধু অনুভব করতে পারছে , কিন্তু তাকে ঠিক ই দেখছে আত্মাগুলো। কেমন গা শিউরানো অনুভূতি। মেয়েটা ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে আছে,যায়নি।
ফয়সাল কি করে ?
খালু গোসল করে।
ভাবি কি করে?
খালাম্মা ও গোসল করতেছে।
ফয়সাল এই মেয়েটার কথাই মনে হয় বলেছিল আজ সকালে ফোনে। রত্নাদের গ্রামের মেয়ে। রত্না ফয়সালের স্ত্রী । তার স্ত্রী নাকি মেয়েটাকে ওর বাবা মা কে বুঝিয়ে অনেক কষ্টে ঢাকায় এনেছে । মেয়েটার তুলা রাশি।আর আত্মা তুলা রাশি ছাড়া কারও উপরে ভর করে না।যাদের উপরে ভর করে তাদেরকে বলা হয় মিডিয়াম।মিডিয়ামের বয়স হতে হয় বার বছরের নিচে।
তোমার নাম কি ?
মরিয়ম।
তুমি কি লেখা পড়া যান?
না,খালাম্মা বলছে স্কুলে ভর্তি করে দিবে।
ও আচ্ছা।
মেয়েটা ভিতরে গেল। আসলো একটু পর । একগ্লাস ঠান্ডা সরবত নিয়ে। লাল টকটকে সরবত। রুহ আফজা দিয়ে বানালে এমন কালার হয়। কিন্তু খেতে অনেক ভালো হয়েছে । রুহ আফজার স্বাদ এমন না। আরো কিছু মিক্সড করেছে মেয়েটি। বরফ কুচি ভাসছে। সরবত দিয়ে আবার চলে গেল কোথায় যেন । দেয়ালে একটা ছবি টানানো। নতুন কিনেছে ।আগে দেখে নাই এটা রফিক । এ্যান্টিক কালেকশন । একজন বৃদ্ধ। ফ্যাকাসে মুখ । মনে হয় যেন জীবন্ত । যে একেছে তার মেধার প্রশংসাই করতে হবে ।একটুকরো বাঁকা হাসি লোকটার মুখে । রফিকের মনে হল তার দিকেই তাকিয়ে হাসছে লোকটা । উপহাসে হাসি । রফিকের অসস্থি লাগছে। মনে হচ্ছে ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য। কোন ভয়ংকর ঘটনা ।আর সেটা ঘটবে আজ রাতেই।
৩
অতিপ্রাকৃত ঘটনা গুলো সব সময় আমাদের আশপাশেই ঘটতেছে। দেখা যাবে কেউ হয়তো টিভি দেখছে একান্ত মনে বা কম্পিউটার এ কাজ করছে। সেই ঘরেই তার ঘাড়েয় উপরে নিঃশ্বাস ফেলছে অশরীরী কোন কিছু । উষ্ণ বিছানায় আরামে নাক ডাকছে কেউ । খাটের পাশেই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে কোন পিশাচ।
রফিক কখন আসলি ?
আনমনা হয়ে গিয়েছিল রফিক ,গলা শুনে চমকে উঠে।
এইতো কিছুক্ষন আগে।
আরে বলিস না পুরো শরির রক্ত লেগে একাকার । তোর ভাবির ও একই অবস্থা। তাই আসর বসার আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম ।
রক্ত ,কিসের রক্ত। প্রশ্নটা করতে গিয়ে ও চেপে যায়। বলার মত হলে ফয়সাল নিজেই বলতো। হয়তো মুরগি কিনে এনেছিল ,সে গুলো জবাই দিতে গিয়ে গায়ে রক্ত লেগে গেছিল। টিভি ছাড়লো ফয়সাল । রিমোট নিয়ে একটার পর একটা চ্যানেল চেঞ্জ করে যাচ্ছে। তার এই একটা রোগ। কোন চ্যানেল দুই সেকেন্ডের বেশি দেখবে না । অস্থির প্রকৃতির । ভার্সিটির টিচারদের অস্থিরতা মানায় না। রফিকের মনে হয়,যারা বউয়ের একান্ত বাধ্যগত,তারা রিমোট পেলে তার উপর খবর দারি শুরু করে। ভাব খানা এমন পুরো বিশ্ব আমার হাতের মুঠোয়,আমি যখন যা খুশি করব,কে ফিরায় আমায়।
তুমি আবারো ঘন ঘন চ্যানেল চেঞ্জ করছো ?? তোমার কারনে একটা রিমোটও দশ দিনের বেশি টিকে না। এদিক দাও বলছি। বলেই বাঘের মত ঝাপিয়ে পরে রিমোট ফয়সালের হাত থেকে কেড়ে নেয় রত্না। তার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি। ফয়সাল পরাজিত বাঘের মত লেজ গুটিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কোন মোঘল সম্রাট ও বোধ হয় তার রাজ্য হাত ছাড়া হয়ে গেলে এমন মন খারাপ করে বসে থাকতো না। রত্নার চোখ যায় রফিকের দিকে। সে লজ্জায় মাথা নিচু করে। রফিককে আগে দেখে নাই সে। দেখলে এমন আচরন হয়তো করতো না। বাহিরের মানুষের সামনে সব আচরন করা যায় না। প্রথা বিরুদ্ধ। রত্নাকে অনেক সুন্দর লাগছে। গোসল করলে মেয়েদের এমনিতেই সুন্দর লাগে। পবিত্র একটা ভাব চলে আসে মুখে শরিরে। রত্না ব্যস্ত হয়ে উঠে।
মরিয়ম?
মরিয়ম যেন এই ডাকশুনার জন্যই প্রস্তুত ছিল। সাথে সাথে জবাব দেয়। । রফিক নিশ্চিত সে এতক্ষন দরজার ওপাশে দাঁড়ানো ছিল। কেমন রহস্যময় মেয়েটির আচার আচরন।
জ্বি খালাম্মা।
মেহমান এসেছে, খেতে দিয়েছ কিছু?
জ্বি,সরবত দিছি।
শুধু সরবত দিয়েছ কেন । মেহমান কে সরবত চা দিলে সাথে আরো কিছু দিতে হয়। মনে থাকবে ?
জ্বি ,আচ্ছা।
গ্লাসটা নিয়ে যাও।
গ্লাসে অল্প কিছু পরিমান সরবত অবশিষ্ঠ ছিল,সেটা রত্নার চোখে পরে। সে ডাক দেয় মরিয়মকে ।
মরিয়ম তুমি কি রুহ আফজা দিয়ে সরবত বানিয়েছো ??
জ্বি।
ঘরে তো রুহ আফজা থাকার কথা নয়,তুমি কোথায় পেলে ?
কোন জবাব দেয় না মরিয়ম,চুপ করে দাড়িয়ে থাকে। রত্নাকে একটু চিন্তিত দেখায়।
সে উঠে ভিতরে যায়। কোন কাজের কথা মনে পরেছে হয়তো। সাথে সাথে মরিয়ম ও যাচ্ছে । চমকে উঠে রফিক । মরিয়মের কাঁটা দাগ আগে কোথায় দেখেছিল সেটা মনে পরেছে । ধলু মিয়া ,ধলুমিয়ার কপালে ঠিক এমনই একটা দাগ ছিল। রফিকের মনে খারাপ কিছু ঘটার চিন্তাটা আবার ফিরে আসে। অশুভ কোন কিছুর ভয়ে তার অন্তরাত্মা কেপে উঠে । ভিতর থেকে অনুভব করছে পালাও রফিক , বাঁচতে চাইলে পালাও ।
৪
প্ল্যানচেটের আসর রেডি। ডাইনিং টেবিলে একটা কালো কাপড় বিছানো ।চারটা চেয়ার রেখে বাকি গুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।মাঝখানে একটা মোমবাতি।একটা প্যাড রাখা মরিয়মের সামনে,আত্মারা সব প্রশ্নের উত্তর প্যাডে লিখে দিবে।মরিয়ম নাকি পড়াশুনা জানে না।তাহলে সে লিখবে কিভাবে ?? দেখা যাক কি হয়।
ঘরের বাতি নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালানো হল।ফয়সাল একটা মন্ত্র পড়ছে, কোথা থেকে যেন সব নিয়ম কানুন শিখে এসেছে।আসর পরিচালনা করছে সে।মরিয়ম তার চেয়ারে গম্ভীরভাবে বসে আছে। এক সময় তার মুখের ভাব পরিবর্তন হতে শুরু করলো। কঠিন একটা ভাব। ঘরে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। কোন কিছু যে উপস্থিত হয়েছে রফিকের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে দিচ্ছে।অশরিরি কিছু,চোখে দেখা যায় না।মরিয়ম সোজা হল,তার চোখের পলক পরছে না কোন। রত্না ভীত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে ।ফয়সালের মন্ত্র পড়া শেষ।সে ঘোষণা দিল আমাদের যা যা প্রশ্ন আছে সেগুলো জেনে নিতে পারি আত্মার কাছ থেকে।
প্রথম প্রশ্ন সেই করলো।
তুমি কে?
নড়ে উঠল মরিয়ম,ঘড় ঘড় শব্দ বের হচ্ছে তার মুখ দিয়ে,নিশ্বাস নিচ্ছে জোড়ে জোড়ে।কলম তুলে নিল ।খস্ খস্ করে লিখলো প্যাডে। ঝুকে দেখল তিন জনেই।
তারক রায়,পেশা ডাক্তার, জন্ম ১৯৩৯,মৃত্যু ১৯৭৮।
কিভাবে মৃত্যু হয় , জিজ্ঞেস করে ফয়সাল ।
একই ভাবে লিখিত উত্তর পাওয়া যায়।
সড়ক দুর্ঘটনা ,স্থান কোলকাতা ।
রফিক মনে মনে প্রশ্ন গুছাচ্ছে ,এমন প্রশ্ন করতে হবে যেটা সে ছাড়া এখানে উপস্থিত কারো জানার কথা না। সে প্রশ্ন করে আত্মাকে।এমন একটা গোপন কথা বল আমার সম্পর্কে যা এখানে কেউ জানে না ।
আপনি বিবাহিত,নলিনী নামের একটা হিন্দু মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন। চমকে উঠে রফিক। আসলেই সে নলিণী নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল।আমেরিকা থাকতে। যখন আমেরিকা মাস্টার্স করতে গিয়েছিল। তখন কার ঘটনা এটা। এটা তার জীবনের গোপনীয় ঘটনার একটি।প্রতিটি মানুষের কিছু গোপন ব্যাপার থাকে যা অন্য কারও সামনে প্রকাশ করতে চায় না। রফিক আর কোন প্রশ্ন করে না। সে এখন নিঃসন্দেহ যে আত্মা বলে কিছু আছে। আর কোন প্রশ্ন করে বন্ধু আর তার স্ত্রীর সামনে অপ্রস্তুত হতে চায় না।
ফয়সাল আর রত্না বিভিন্ন প্রশ্ন করে যাচ্ছে।আর আত্মা নোট বুকে উত্তর লিপিবদ্ধ করছে। ফয়সাল হঠাৎ অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসে ।
সে তার মৃত্যুর তারিখ জানতে চায় ।আত্মা লিখে দেয় নোটবুকে ।
তারিখটা দেখে ঘাবড়ে যায় রফিক ।মৃত্যু ৩ রা নভেম্বর, রাত আটটা । তার মানে গতকাল ।কিভাবে সম্ভব ।ঘড়ির দিকে তাকায় ,৫টা বেজে গেছে।ভোর হতে বাকি নেই।আজকে ৪ই নিভেম্বর । ওঠা দরকার । বাসায় যেতে হবে । ঘুম দিতে হবে । মাথা এলোমেলো হয়ে আছে।
ঘুম ভাংগে রফিকের একটা ফোন কলে।ফয়সালের শালা কল করেছে ।সে খুব উত্তেজিত কোন ব্যাপার নিয়ে ।এক্ষনি ফয়সালদের বাসায় যেতে বলেছে ।ঘড়ির দিকে তাকায় রফিক সাড়ে এগারোটা বাজে ফয়সালদের বাসায় এসে দেখে লোকে বাসা গিজ গিজ করছে ।বাসার নিচে তিনটি লাশ সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। বুঝতে বাকি থাকে না কাদের লাশ এগুলো।
দুর্ঘটনা কখন ঘটেছে জিজ্ঞেস করে রফিক। মরিয়ম নামের এক মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে আনতে গিয়েছিল। ফেরার পথে গতকাল রাত ৮ টায় তাদের গাড়ী এক্সিডেন্ট করে,এলাকাবাসি তাদেরকে কাছের এক হসপিটালে প্রথমে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে ঘটনার সাথে সাথেই নাকি মারা গেছে তিনজন বলল ফয়সালের শালা।
কিছু বলে না রফিক । সে উপরে উঠে আসে। ডাইনিং টেবিলের মাঝে মোমবাতিটা যেমন ছিল তেমনই আছে । টেবিলে নোট খাতাটা পড়ে আছে।তুলে নেয় হাতে । শেষ লেখাটায় চোখ বুলায় রফিক । রাতে যে লেখাটা দেখেছিল।হুমহু সেটাই লেখা।
মৃত্যু ৩রা নভেম্বর ,রাত আটটা ............। (গল্পটা বাংলা নিউজে পূর্ব প্রকাশিত ধারাবাহিক ভাবে) শোয়েব হাসান