somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রোধ

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“আমি না আমার ছোট ভাইকে খুন করতে চাই”

কথাটা শুনে আমার পিলে চমকে উঠল।
নতুন টুইশনি, দীর্ঘ দুই মাস পরে আবার টুইশনি শুরু করলাম। মাঝে একেবারে বেকার হয়ে দুটি মাস কাটল। রাস্তায় হঠাৎই সবিরের সাথে দেখা হয়ে গেল গত পরশু দিন। সবির আমার সাথে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করেছিল। তখন ভালই খাতির ছিল। পরবর্তীতে সে চিটাগাং মেডিকেলে চান্স পেয়ে চিটাগাং চলে গেল, আমি কোথাও চান্স না পেয়ে ভর্তি হয়েছিলাম পাস কোর্সে। পড়ালেখা সাবসিডিয়ারি হয়ে মেজর হল টিউশনি আর আড্ডাবাজি।

যাই হোক, সবির তার ভাগ্নির জন্য টিউটর খুঁজছে, আমাকে বলতেই আমি রাজি হয়ে যাই। ক্লাস নাইনের স্টুডেন্ট, আমাকে সপ্তাহে তিনদিন ম্যাথ করাতে হবে। সবির বলেছিল যে, মেয়েটা একটু অন্যরকম, কিন্তু অন্যরকম বলতে সে কি মিন করেছিল তা আমি বুঝিনি।

আমি আজ প্রথম মেয়েটিকে পড়াতে এসেছি। আমি বসেছিলাম, হঠাৎ একটি তের চৌদ্দ বছরের মেয়ে সামনে এসে দাঁড়াল এবং এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। আমি অনেকখানি অবাক হলাম। সাধারনত নতুন টিউশনিতে স্টুডেন্ট জড়সড় হয়ে থাকে, নতুন টিচারকে বুঝতে সময় নেয়। কিন্তু এই মেয়েটি প্রথমেই যে কথাতি বলল, তা হল – “আপনিই নতুন টিচার? ও আচ্ছা...”

তার সাথে আমার গত এক ঘণ্টা ধরে কথপকথন চলছে। আমাদের কথাবার্তার কিছু চুম্বক অংশ এইরকমঃ

“আপনিই নতুন টিচার? ও আচ্ছা...”

“হ্যাঁ আমি তোমার নতুন টিচার। আমার নাম রিতম। তোমার নাম কি?”

“আপনার নাম আমি জানি, আপনি ছোট মামার বন্ধু। আপনিও তো আমার নাম জানেন, তাই না! কেন বোকার মত কথা বলছেন...”

আমি ঢোঁক গিললাম। একি মেয়েরে বাবা। এইটুকুন বাচ্চা একটা মেয়ের একি রূপ। আমাকে সবির যে সমস্যার কথা বলেছিল তা কি মেয়েটির বেয়দবির ব্যাপারে? আমি কথা ঘুরালাম-

“তাইতো, আমি বোকার মত প্রশ্ন করে ফেলেছি। দেখ তো কি জ্বালা, আমি শুরুতেই বোকামি করে ফেলেছি। তুমি ভাবছ এই বোকা টিচার কি পড়াবে...”

আমার কথা থামিয়ে দিয়ে সে বলল,

“স্যার, আমি না এক জায়গায় বসে থাকতে পারি না। আমি কি এখানে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে পারি?”

আমি মজা পেলাম। এতো আজীব চিজ! পুরো কমেডি সিনেমার ক্যারেকটার।

“হ্যাঁ পার। মন চাইলে তুমি দৌড়াতে দৌড়াতে পড়ালেখা করতে পারো।”
মেয়েটি হাসছে। সে আমার কথায় মজা পেয়েছে।

“তোমার আর কি কি এমন অদ্ভুত ইচ্ছা আছে?”

“একটা বিশেষ ইচ্ছা আছে...। আপনাকে বলব না”

“কেন আমাকে বলতে অসুবিধা কোথায়?”

“এটা খুব গোপন কথা, আপনি সবাইকে বলে দিবেন......”

আমি প্রমোদ গুনলাম। কি না কি গোপন কথা, থাক এই প্রসঙ্গ। আমি কিছুক্ষন তার সিলেবাস, পড়াশুনার অবস্থা এইসব আলোচনা করলাম। হঠাৎ সে বলে উঠলো,

“স্যার জানেন, আমি না গত দুইদিন টানা ঘুমিয়েছি।”

“কেন? তুমি বোধহয় ঘুমাতে পছন্দ কর?”

“না স্যার, ডাক্তারের দেয়া ওষুধ খাইয়ে আম্মু ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল। আজ আপনি আসবেন বলে আজকে ঘুম পাড়িয়ে রাখেনি।”

বলে কি পাগল মেয়েটা এসব। মেয়েটা ভয়ংকর ফাজিল টাইপের নিশ্চয়। আমার সাথে ফাজলামি করছে। টুইশনিতে এগুলো আমার কাছে নতুন নয়, আমি বহু ফাজিল স্টুডেন্ট পড়িয়েছি।

“তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে কেন? তুমি কি মহা পাজী?”

“না স্যার, আমার মাথায় সমস্যা... আমি একটা মেণ্টাল...হি...হিহি...”

রাগে আমার গা জ্বলছে। এতো মহা বেয়াদব একটি মেয়ে।

“স্যার কি আমার কথায় রাগ করেছেন? সত্যি আমার মাথায় সমস্যা, আম্মু মানসিক ডাক্তার দেখাচ্ছে।”

“তাই নাকি, কি সমস্যা তোমার? বলতো দেখি?”

“না আগে আপনি প্রমিজ করেন, কাউকে বলবেন না।”

“ঠিক আছে প্রমিজ, কাউকে বলব না”

“আমি না আমার ছোট ভাইকে খুন করতে চাই। দুইবার চেষ্টা করেছি, রাতের বেলা। আম্মুর সাথে ও ঘুমিয়ে ছিল। চাকু হাতে গিয়েছিলাম, আম্মু হঠাৎ জেগে উঠে আমায় দেখে ফেলে। মজার ব্যাপার আম্মু ভেবেছে আমি তাকে মারতে গিয়েছিলাম। তাই আম্মু আমার থেকে সাবধানে থাকে। কিন্তু আমিতো মারবো আমার ছোট ভাইকে...হাহা...হা”

কথাটা শুনে আমার পিলে চমকে উঠল। বলে কি? আমি চমকে উঠলাম মেয়েটির কথায় নয়, তার চাহনি দেখে। এযে খুনে চাহনি, রক্তের ঝিলিক চোখের কোনে। তার শিশুসুলভ হাসিটি হঠাৎ পিশাচের হাসি মনে হল।

[গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৩৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×