somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে, প্রেমময় হাওড়ের দেশে

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের দিন সকাল বেলার বৃষ্টির কথা মনে হল বারবার। আজও আকাশে মেঘের ঘনঘটা। সুনামগঞ্জ পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের একটি আবাসিক হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবছে হাসিব। গতকাল বৃষ্টি থাকায় সাথে আনা ক্যামেরায় তেমন সাটার চাপা হয় নাই। মনে মনে দোয়া করল আজ যেন গতকালের মত বৃষ্টি না হয়।


সুনামগঞ্জ পুরাতন বাস স্ট্যান্ড হতে হিউম্যান হলারে করে রওনা দিল বৈঠাখালি বোট স্ট্যান্ডের উদ্দেশে। সেখান থেকে নৌকা পার হয়ে তাহিরপুরের উদ্দেশে আবার হিউম্যান হলারে করে ঘণ্টা দেড়েকের জার্নি শেষে এসে পৌঁছল প্রেমময় জলাধারের জনপদ টাঙ্গুয়ার হাওড়ে। এই যাত্রার সবচেয়ে ভালো লেগেছে ১০ ফিট চওড়া লম্বা ফিতার ন্যায় রাস্তা ধরে ছুটে চলা, যার হাতের ডানদিকে সারাক্ষণ রয়েছে মেঘালয় পাহাড়ের নয়নাভিরাম ভিউ। হাসিবের মন উশখুশ করছে সাটার চাপার জন্য। রাস্তার মাঝপথে হিউম্যান হলার থামিয়ে মিনিট দুয়েকের জন্য সাটার চাপাল মনের সাধ পূরণ করে নিল দলের সবাই।


দুইদিন আগে ঢাকা থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাসে করে ২৪ জনের দল রওনা দেয় “ভ্রমন বাংলাদেশ” আয়োজিত ইভেন্ট “হাওড় ও চায়ের দেশে”র উদ্দেশে। পথে তাদের সাথে যোগ দেয় আরও চারজন। পরের দিন আরও চারজন যোগ দিলে বহরের ব্যাপ্তি ঘটে ৩২ জনের দলে। প্রথম গন্তব্যস্থল শ্রীমঙ্গল। ভোররাত চারটা নাগাদ শ্রীমঙ্গল পৌঁছলে আগে থেকে বাবন ভাইয়ের ঠিক করে রাখা রেস্টহাউজে সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরে রেস্টনিতে। সকাল ছয়টায় বের হতে হবে বলে সবাই চোখ মুদলো ক্ষণিকের জন্য ঘুমের রাজ্যে পাল মেলতে।


সকালে বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে চারিধারে। কি আর করা, রেস্টহাউজেই সবাই অপেক্ষা করেছে। বৃষ্টি কিছুটা ধরে এলে তারা বের হয় মাধবপুর লেক, ন্যাশনাল চা বাগান আর লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশে। গতকাল ভালই লেগেছে স্পটগুলো ঘুরে। কিন্তু দুঃখ তেমন একটা ছবি তুলতে পারে নাই। মাধবপুর লেকের স্বচ্ছ ছবি, ন্যাশনাল চা বাগানের নয়ন জুড়ানো চা গাছগুলো, লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের পথ ধরে হেঁটে যাওয়া। এখন দেখা যাক হাওড়ের যাত্রা কতটা আনন্দদায়ক হয়। কাল বাস জার্নিতে ভালই এনজয় হয়েছে। সবার গান, হাসি আড্ডায় গাড়ির ভেতর যেন আনন্দ উৎসব চলেছে। সাথে খাবার-দাবার আর চা-জলপান এর কথা হাসিব বলতে চায় না। সে সবসময় এই কাজে সবচেয়ে পেছানো ভ্রমণসাথী। কিন্তু ভ্রমণ বাংলাদেশের প্রতিটা ট্রিপে খাবার-দাবার, আনন্দ আয়োজনের কোন কমতি থাকে না।


দুপুর বারোটা নাগাদ সবাই তাহিরপুর পৌঁছলে আগে থেকে ঠিক করে রাখা স্যালো ইঞ্জিন নৌকায় করে দলের ৩২ জনকে নিয়ে শুরু হল দেশের ২য় রামসার জলাধার “টাংগুয়ার হাওর” এর উদ্দেশে যাত্রা। আহ চারদিকে পানি, তার বুক চিরে চলেছে আমাদের জলযান। পানির এমন অপরুপ রূপ চোখকে দ্বিধান্বিত করে, মনকে উদাসী করে। হাসিবের চঞ্চল মন গেয়ে ওঠে,
“আমার মন মজাইয়ারে, দিল
মজাইয়া বন্ধে নিজের দেশে যায়...”



এমন প্রকৃতির রূপ দেখেইতো প্রেমরসে সিক্ত বাঊল শাহ আবদুল করিমের অনন্য অমর সৃষ্টি গানগুলো। তাই চাপা স্বভাবের সাদাসিধে হাসিবের মনে উথলে উঠে প্রেম রসের চোরা ঝর্ণা ধারা। আর এই আবেগের চাপা উচ্ছ্বাস প্রতিফলিত হল তার সেলুলয়েডে বন্দী প্রেমময় টাংগুয়ার হাওরের রূপে।


খনিজ সম্পদের বিশেষ করে কয়লার কল্যাণে সুপরিচিত টেকেরঘাট যত কাছে আসছিলো, হাসিবের মন ততই উচ্ছ্বসিত হচ্ছিলো মেঘালয় পাহাড়ের রূপ দেখে। মেঘের মিতালীতে স্নাত মেঘালয়য়ের পাদদেশ ঘেঁষে টাংগুয়ার হাওরের শেষাংশের স্বচ্ছ নীল জলরাশি, সাথে সূর্যাস্তের কাঁচাসোনা রোদ। ক্যামেরায় তোলা ছবির ডিসপ্লে তাই বলে। পুরোটা পথ হাসি-গল্প-আড্ডায় কাটিয়ে গোধূলিলগ্নে যখন টেকেরহাটে সবাই নামলো, তখন সবার মুখে একটি বাক্যই ছিল, “ওয়াও”।



হাতছোঁওয়া ব্যাবধানে অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘালয় পাহাড়। হাসিব এখন দোটানায় আছে। কোথায় কাটাবে রাত। গ্রুপ থেকে ঠিক করা হয়েছে মেয়েরা সবাই এবোঞ ছেলেরা অল্প কয়েকজন গেস্ট হাঊজে থাকবে বাকীরা ইঞ্জিন নৌকায় কাটাবে। কোনটা বেটার চয়েজ হাসিব ঠিক করতে পারছেনা। রাতের খাবার শেষ করে ঠিক করল সে নৌকায় রাত কাটাবে। যদিও স্থানীয় চেয়ারম্যানের পরিচালিত প্রাইভেট রেস্ট হাঊজটি ভালো এবং নিরাপদ। কিন্তু আকাশে অষ্টমীর চাঁদ, তার মাঝে মেঘেদের দল বেঁধে ছুটে চলা। তাই মন আর মানে না। রাত সাড়ে দশটার পরে নৌকায় চলে এলো। সারা রাত আড্ডা, গান, খুনসুটি করে সবাই মিলে কাটিয়ে দিল।
“আমার সারাটা রাত, মেঘলা আকাশ,
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম,
শুধু শেষরাতের জোছনাটুকু চেয়ে নিলাম...”


পরদিন সকালে সবাই মিলে গেল “বারেক টিলা” দেখতে। যদিও খুব অল্প সময় সেখানে সবাই ছিল, কিন্তু প্রকৃতির রূপ দেখে মুগ্ধ সবাই। হাসিবের মনে পড়ল নীলগিরির কথা। নীলগিরিতে যেমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতে মন চায়, এখানটায়ও তেমনই অনুভূতি। টিলার অনেক নীচে স্বচ্ছ পানির যাদুকাটা নদীর হাঁটু পানিতে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরছে, নদীর দুই পাড়ে নুড়িবালি ছড়ীয়ে রয়েছে। সূর্যের আলোতে তা চিকচিক করছে। আর টিলার পেছনে নদীর ওপারে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়াবিনী মেঘালয়, যার আঁচলে সদা খেলা করে রূপের রাগিণীরা। চোখে দেখে বাস্তব বলে বিশ্বাস হয় না, মনে হয় বিশাল কোন এলইডি টেলিভিশনে কোন দৃশ্য।



হাসিবদের দলটি বেলা দশটায় টেকেরঘাট হতে ফিরতি জার্নি শুরু করে সুনামগঞ্জ পৌছলো বেলা আড়াইটার পরে। এই সাড়ে চার ঘণ্টা রোদে বার্ন হয়ে বালক বালক চেহারার হাসিবের মুখমণ্ডল লাল হয়ে উঠলো। তিনটার গাড়ীতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে রাত ১১টার কিছু আগে তারা পৌছায় পুরনো ডেড়া ঢাকা শহরে, সাথে করে নিয়ে এলো মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে, প্রেমময় হাওড়ের দেশে অতিবাহিত করা সময়গুলোর স্মৃতিতুকু।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×