somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গর্ভ (একটি মানবিক সাইন্স ফিকশন)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.

রন্তু ঘাম মুছছে বারবার। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গেলেও পানি পান করার কথা তার মাথায় আসছে না। সে তার ইনকমে (Inner Communication Module) ম্রিদুনার টেলিপ্যাথিক তরঙ্গের ভাইব্রেসন অনুভব করতে পারছে। কিন্তু সে রেস্পনন্স করছে না, রেস্পনস না করে সাময়িক নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে, কিন্তু বাস্তব থেকে কতটা নিজেকে লুকিয়ে রাখবে সে। মানুষ আজ চরম অবাস্তব জীবন বেছে নিয়েছে, তাই নয় কি? আজ ৭০১৭ সালের ১২৮তম দিবস। এই দিনটি হয়ত মানব ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, হয়ত আগামীতে রন্তু আর ম্রিদুনার নাম স্মরণ করে মানবজাতি কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পরবে।

অথবা বিপরীতটাও হতে পারে, মানব ইতিহাসে চির কলঙ্ক হয়ে তারা ঘৃণার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। সে যাই হোক, এখন রন্তুর হাতে রয়েছে খুবই অল্প সময়। সে ম্রিদুনাকে অবচেতন করে রেখে এসেছে, ঘণ্টা দুয়েকের ভেতরই সে চেতনা ফিরে পাবে। সে আসার সময় দেখে এসেছে চেতনাহীন ম্রিদুনা এক আজানা বেদনায় কেমন নীল হয়ে আছে। রন্তু অতি দ্রুত আশেপাশের রোবটিক্স মডিউলগুলোর দিকে ছুটতে লাগল। সে জানে হাতে বেশী সময় নেই।


২.

ম্রিদুনা ধীরে ধীরে চোখ খুলল। কতটা সময় পর চোখ খুলল তা বুঝতে পারছে না। ইনকমে সিগন্যাল রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে সময়টাও জেনে নিতে পারছেনা, রিকোয়েস্ট পাঠানোর শক্তিটুকুও সে পাচ্ছে না। তার সারা শরীরের সব শক্তি কে যেন শুষে নিচ্ছে। আজ মানব সভ্যতা এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে মানুষকে কোন যন্ত্র ব্যাবহার করতে হয় না। মানব শরীরে জন্মের পরপরই ঢুকিয়ে দেয়া হয় ইনকম মডিউল, ইনকম একধরনের লিকুইড ক্রিস্টাল ডিভাইস যা রক্তের সাথে মিশে যায় এবং রক্তের লসিকার সাথে বিক্রিয়া করে একটিভ হয়ে যায়। যতদিন মানব শরীরে রক্তপ্রবাহ থাকে ততদিন এই ডিভাইস একটিভ থাকে। এই ডিভাইস মানুষের মস্তিস্কের সিগন্যাল পড়ে একধরনের সিগন্যাল তৈরি করে যা মানব শরীরের কম্পনের মাধ্যমে তরঙ্গাকারে প্রথম লেভেলের ভার্চুয়াল স্যাটেলাইটে চলে যায়। সেখান থেকে সিগন্যাল যায় সিসিআর (Central Control Region) এ, সেখান থেকে ইন্সট্রাকশন প্রাপ্ত হয় আশেপাশের রোবটিক্স মডিউলগুলো। মানুষ তার পার্শ্ববর্তী মডিউল হতে তার যে কোন প্রয়োজন মেটাতে পারে।

গত পাঁচ হাজার বছরে মানব সভ্যতা বেশ কয়েকটি চরাই-উতরাই পেড়িয়ে আজকের অবস্থায় এসেছে। প্রথমে মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এসেছে মহাবিশ্বে সভ্যতার জন্ম হয়েছে বেশ কয়েক জায়গায়। মানুষ এক সময় মহাকাশ ভ্রমণে বের হল, একে একে বহু চেষ্টার পর পৃথিবীর ন্যায় বেশ কিছু গ্রহ পেল যেখানকার ভূখণ্ড, আবহাওয়া, বায়ুমণ্ডল, পানির অস্তিত্ব থেকে শুরু করে হুবহু মিল ছিল। কয়েকটি গ্রহের খোঁজ পেল যেখানকার নক্ষত্র থেকে শুরু করে গ্রহ-উপগ্রহ হুবহু সৌরমণ্ডলের অনুরুপ। কিন্তু কোথাও কোন প্রাণের অস্তিত্ব পায় নাই। এমনকি বেশ কিছু জায়গায় পৃথিবী থেকে মানুষ গিয়ে কলোনি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু অজানা কোন এক কারণে মাত্র কয়েক বছরে কলোনির সকল মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এভাবে ছয় হাজার বছর পার হয়ে যায়। তারপর আসে সেই মহাধ্বংসের কাল। প্রায় ৮০০ বছর আগে পৃথিবীর পার্শ্ববর্তী গ্রহ মঙ্গলের দুটি উপগ্রহই কোন এক অজানা কারণে কক্ষচ্যুত হয়ে তীব্র গতিতে পৃথিবীর গায়ে আছড়ে পড়ে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা পৃথিবীর কাছাকাছি এসে পরস্পরের সাথে ধাক্কা খায়। তারই ফলে, নাকি অন্য কোন কারণে কিছু মানুষ সেই ধ্বংস হতে বেঁচে যায়। এর পর...... আরে কিছু মনে নেই ম্রিদুলার। কারন অজানা কোন এক কারণে মানুষের কাছে এর পরের সভ্যতা গড়ে উঠার কোন স্মৃতি নেই।

তীব্র এক ব্যাথা মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল। ম্রিদুলা দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সামলে উঠার চেষ্টা করল। ম্রিদুলা লাগাতারভাবে অষ্টম মাত্রার সিগন্যাল পাঠিয়ে যাচ্ছে রন্তুর কাছে।


৩.

রন্তু ম্রিদুলার হাত ধরে আরেকবার চাপ দিল, সে টের পাচ্ছে ম্রিদুলার শরিরে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু অজানা কোন এক কারণে তার শরীরের ইনকম কাজ করছে না। ম্রিদুলার বিছানা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। হঠাৎ ম্রিদুলার পায়ের কাছের লম্বা জামার ভেতরে একটা কম্পন দেখেতে পেল। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে সে ম্রিদুলার পায়ের কাছে বসে পড়ল, পায়ের কাছ থেকে জামা সরাতেই রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে দেখল রক্তমাখা একটি ছোট্ট মানবশিশু পড়ে রয়েছে। কাঁপা কাঁপা হাতে রন্তু শিশুটিকে স্পর্শ করল। রন্তুর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে শিশুটির বন্ধ চোখের পাতায় গিয়ে পড়ল।

রন্তু আর ম্রিদুলা পাশাপাশি উনিতে (উনি হচ্ছে এক ধরনের কলোনি যেখানে বর্তমান মানুষেরা বসবাস করে) বড় হয়েছে, পড়ালেখা করেছে। ছোটবেলা থেকেই তারা দুইজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। দুইজনে ছিল খুবই ভাব। কিন্তু একদিন তারা দুজন হারিয়ে যায়, ধারনা করা হয় তারা কোনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর ধ্বংসাবশেষে চলে গিয়েছিল। একদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তারা ফিরে আসে। কিন্তু মাঝখানের সময়টায় তারা কোথায় ছিল, কি করেছে কেউ জানে না। বর্তমানে মানব শিশুর মাঝে যে ইনকম জন্মের পরপরই ঢুকানো হয় তা শুধু মানব শরীরের মাধ্যমে যোগাযোগ করার উদ্দেশে নয়, এর আরেকটা কারন হল এটা মানুষকে নপুঙ্কসক করে দেয়। মহাধ্বংস’র পর মানুষ পেয়েছিল মাত্র হাজার পাঁচেক স্থলভূমি বেঁচে থাকার জন্য। তখন থেকে মানুষ জনসংখ্যা সীমিত রাখার জন্য এই ব্যাবস্থা নেয়া হয় এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষের শিখরে থাকা তখনকার বেঁচে যাওয়া কিছু বিজ্ঞানী এই ব্যাবস্থার প্রবক্তা।

এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ জীবনের যে কোন একটি সময়ে একটি শিশুর জন্য আবেদন করতে পারে। এখেত্রে তার জন্য যোগ্য সঙ্গী পেলে তাদের শরীরের টিস্যু হতে সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন মানবশিশুর জন্ম হয় কেন্দ্রীয় “বার্থ কন্ট্রোল ব্যুরোতে”। ম্রিদুলা আরে রন্তু হারিয়ে যাওয়ার পর যখন ফেরত আসলো আবার, তখন থেকেই তারা তাদের মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিল। তারা পরস্পরের প্রতি কেমন এক অজানা আকর্ষণ বোধ করত। এভাবেই একদিন তারা দৈহিকভাবে মিলিত হল। কিন্তু কিছুদিন পর যখন ম্রিদুলা তার গর্ভে অন্যকার অস্তিত্ব টের পেল সেদিন দুজন অজানা আশঙ্কায় শিউরে উঠলো। তারা আবার তাদের উনি হতে পালিয়ে গেল। মানব বসতির একেবারে গা ঘেসে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর এক জঞ্জালের ভেতরে আশ্রয় নিল। সপ্তাহান্তে রন্তু মানব বসতিতে ঢুকে তাদের প্রয়োজনের জিনিস সংগ্রহ করে নিয়ে আসতো।

এভাবে গত আট মাস ধরে তারা এখানে ছিল। শেষে যখন ম্রিদুলার পেট খুব বেশী ফুলে উঠলো, তখন একদিন তারা একটি আধপোড়া ছাপানো বই খুঁজে পেল এবং তা দেখে অবাক হল। কারন এখনকার পৃথিবীর মানুষ ইনকমের সাহায্যে জন্মের পরপরই বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হয়। বইটি হাতে নেয়ার পর উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল। বইটি খুলে চোখ বুলাতে তারা আবিস্কার করল তারা বইয়ের লেখাগুলো বুঝতে পারছে। আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল ধ্বংসপ্রাপ্ত যে ভবনটি হতে তারা বইটি পেয়েছে তা ছিল একটু মিউজিয়াম আর্কাইভ, সেখানে প্রায় ৬০০০ বছরের পৃথিবীর সব ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষিত ছিল, বেশীরভাগই এক্সকম ডিভাইসে (ডেটা সংরক্ষনের ডিভাইস)। কিন্তু কিছু পুস্তকও ছিল, তার মধ্যে একটি ছিল “Pregnancy – An internal journey of human being” বইটিও। আরে পুড়ে যাওয়া এই বইটি তারা দুইজন খুঁজে পায়। এই বই পড়ে তারা বুঝতে পারে কি ঘটনা ঘটেছে, ম্রিদুলা গর্ভবতী হয়েছে। এরপরই কিভাবে মানব শিশু প্রকৃতির নিয়মে জন্ম নেয় তা তারা জেনেছে, জেনেছে কীভাবে শিশু প্রসব করে কোন মানবী।

রন্তু কতক্ষণ নির্বাক বসে আছে জানে না। ম্রিদুলা চোখ খুলে দেখল রন্তু একটি রক্ত মাখা দেবশিশু কোলে নিয়ে বসে আছে, তার দৃষ্টি মেঘলা আকাশের পানে। কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল শিশুটির উপর। তা আকাশের কান্না নাকি হৃদয়ের তা বোঝা গেল না। ম্রিদুলার জোরে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু গলার কাছে কে যেন দশ আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরেছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪১
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×