somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লক্ষ্মীপুর হান্ট (রথ দেখা ও কলা বেচা - পর্ব ০১)

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অফিসের কাজে যেতে হবে লক্ষ্মীপুর, শুনে আমি একটু বিরক্ত হলেও মনে মনে আবার খুশীও হলাম। ঐ দিকটা এখনো বেড়ানো হয় নাই। অডিটের কাজে যাওয়া, লোকাল অফিস হওয়ার কারনে তাদের অফিসের সময়সূচী একটু ভিন্ন রকমের। বেলা এগারোটা-বারোটা নাগাদ কাজ শুরু করে, রাত দশটায় অফিস বন্ধ করে। তো আমি যাওয়ার আগে আমার “বাংলার জমিদার বাড়ী” সিরিজের জন্য ঐ এলাকায় কি কি পাওয়া যেতে পারে এর খোঁজে এখানে ওখানে ঢুঁ মারলাম। দর্শনীয় স্থানের একটি তালিকা করতে গিয়ে প্রায় পনেরটি স্থান ঠিক করে নিলাম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে দেখব।

সপ্তাহ দুয়েক আগে এক রবিবার রাতে লঞ্চে করে রওনা হলাম লক্ষ্মীপুর। আমি এর আগে সব লঞ্চ ভ্রমণ করেছি যে কোন ছুটির দিনগুলোতে। ফলে লঞ্চ মানেই আমার কাছে মানুষের সমুদ্র। কিন্তু এবার সেরকম হল না। আগে থেকে বুক করে রাখা কেবিনে ব্যাগ রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে লঞ্চের রেলিং এ দাঁড়াতে মনে হল এখন কৃষ্ণপক্ষ চলছে। আহ যদি আকাশের পূর্ণিমার চাঁদখানি থাকত তার জোছনার ডালা নিয়ে! কি আর করা, রাতের ডিনার সেরে নিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনতে শুনতে হারালাম ঘুমের কোলে।


ফজরের ঠিক আগে আগে লঞ্ছ গিয়ে থামল লক্ষ্মীপুর। আকাশের বুক তখন নীলের আঁচড়ে সয়লাব, একটু একটু করে জানান দিচ্ছে লালিমারা। লঞ্চ থেকে নেমে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে এসে পেলাম রিকশা। রিকশা করে চলে এলাম আমার কর্মস্থলে। নাস্তা সেরে কোম্পানির লোকাল অফিসে এসে দেখি তখনো কেউ আসেনি। বেলা দশটা নাগাদ ফোন দিলে একে একে লোকজন আসল। আমি তাদের সাথে কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার লিস্টের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে। অবাক হলাম লোকাল পিপল হওয়া সত্ত্বেও বেশীরভাগই এই জায়গাগুলো চেনেনা, অনেকে নাম পর্যন্ত শোনে নাই!

যাই হোক দুপুরের বিরতি বেশ লম্বা। আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত ছুটি নিয়ে হোটেলে ফিরে গোসল-লাঞ্চ করে বের হলাম। কোন দর্শনীয় স্থানের লোকেশন কি তা আমি আগেই ঢাকা থেকে জেনে গিয়েছি। শুধু যাতায়াতের পথ ও পরিবহন সম্পর্কে একটু জেনে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। আমার প্রথম গন্তব্য “দালাল বাজার”; সেখানে রয়েছে ‘দালাল বাজার জমিদার বাড়ী” এবং ‘খোয়া সাগর দীঘি’। দুইবার সিএনজি পাল্টে ঘণ্টা খানেকের যাত্রা শেষে পৌঁছলাম দালাল বাজার। বাজারের ভেতর দিয়ে মিনিট পাঁচেকের হাটা পথ পেরিয়ে পৌঁছলাম জমিদার বাড়ীতে। ভেঙ্গেচুরে একাকার এত সুন্দর একটি স্থাপনা। জংলা হয়ে সব শেষরি”বাংলার জমিদার বাড়ী” সিরিজে এ নিয়ে লিখব। সেখান থেকে গেলাম ‘খোয়া সাগর দীঘি”।


বিশাল দীঘি। প্রায় ২৫ একর এলাকা জুড়ে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার সংলগ্ন খোয়া সাগর দিঘী। কুয়াশাকে স্থানীয় ভাষায় খোয়া বলা হয়। দিঘীর বিরাট দৈর্ঘ্য প্রস্থের ফলে এক প্রান্তে দাড়িয়ে অন্য প্রান্তে কুয়াশার মত মনে হত বলে এ দিঘীর নাম খোয়া সাগর দিঘী। আনুমানিক ১৭৫৫ সালে জমিদার ব্রজ বল্লভ রায় মানুষের পানীয় জল সংরক্ষনে এ দিঘীটি খনন করেন। এই দীঘির ঠিক পাশেই রয়েছে দালাল বাজার মঠ। একটু ভালো করে লক্ষ্য না করলে আপনার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। আমি যখন দীঘি আর মঠের ছবি তুলছি ততোক্ষণে সূর্য ডুবে ডুবে প্রায়।


আমি আজকের আমার আরেক দ্রষ্টব্য ‘কামানখোলা জমিদার বাড়ী’ দেখতে যাবো কিনা তা নিয়ে একটু দ্বিধায় ছিলাম। তখন পাশ দিয়ে একটা ব্যাটারি চালিত খালি রিক্সা যাচ্ছিল, তাকে থামিয়ে জমিদার বাড়ীর কথা বলতেই সে রাজি হয়ে গেল। চড়ে বসলাম তার রিকশায়, কিন্তু এ কি পথ আর ফুরায় না, এদিকে দিনের আলো প্রায় ফুরালো বলে। আকাশে যখন আঁধারের চাদর নামি নামি করছে তখন পৌঁছলাম কামানখোলা জমিদার বাড়ী।


জমিদার বাড়ীর আগে পেলাম আরকেটা বিশাল দীঘি। কোন মানুষজনের দেখা না পাওয়ার দরুন জানা হল না এই বিশাল দীঘিটির নাম। যখন জমিদার বাড়ীর ছবি তুলছি তখন আকাশ প্রায় অন্ধকার। রিকশাচালক আর আমি ছাড়া আশেপাশে কোন জনমানবের চিহ্ন নেই। জমিদার বাড়ীর একপাশে আস্তাবল জাতীয় একটি একচালা অন্য পাশে ঝোপের ভেতর ভগ্ন মন্দির। কিছুটা ভয় পেয়ে দ্রুত দুইতিনটা ছবি তুলে দ্রুত রিকশায় চড়ে বসলাম।


দালাল বাজার হয়ে যখন একই রুটে অফিসে ফিরলাম তখন এশার আজান দিচ্ছে। রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ডিনার সারলাম, এরপর ঘুমোতে গেলাম। পরদিন সকাল থেকেই কাজের চাপ ছিল। বিকেলে একজন গাইড হিসেবে হেল্প করবে কনফার্ম করায় তার অপেক্ষায় সময় কাটাতে কাটাতে সন্ধ্যা হল। আবার অফিস এবং কাজ শেষে রাতে হোটেলে ফিরে খেয়ে-দেয়ে ঘুম।

তবে অফিসে বসে একটা কাজের কাজ করলাম, পিয়নকে দিয়ে স্থানীয় ভালো একজন সিএনজি ড্রাইভার ডেকে আনালাম। সে আমার বিবরণ করা জায়গাগুলো চিনতে পারল কিন্তু স্থাপনা সম্পর্কে তেমন আইডিয়া দিতে পারল না। আমি তাকে আধাবেলার জন্য চুক্তিতে ভাড়া করে ফেললাম।


পরদিন ঠিক সকাল সাতটায় আমাকে হোটেল হতে সে পিক করল। এদিন তার সাথে ঘুরে বেশ মজা পেয়েছি। দুই ঘণ্টায় চার জেলা ক্রস করিয়েছেঃ লক্ষ্মীপুর, চাদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী। সব জেলার সীমানা ঘেঁষে ছুটেছি সেদিন। দেখেছি সাহেব বাজারের সাহেব বাড়ী, নীল কুঠি (চাদপুর জেলাস্থ), মিয়া বাড়ী, জ্বীনের মসজিদ, ইসহাক জমিদার বাড়ী, রায়পুর হ্যাচারি (এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর হ্যাচারি – ১০৮টি পুকুর নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ)।


দুপুরে অফিসে ফিরেই কাজে লেগে পড়লাম। সন্ধ্যার আগে আগে কাজ গুছিয়ে ব্যাগ নিয়ে দৌড় লঞ্চঘাটে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় লঞ্চ ছাড়ল, সারারাত কেবিনে ক্লান্ত শরীর নিয়ে গান শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই। ঢাকার সদরঘাতে শেষরাতে লঞ্চ ভিড়তে ঘুম ভাঙ্গল। দ্রুত গুছিয়ে বাড়ীর পথে হাটা শুরু করলাম, কারন সেদিনই আবার অফিস করতে হবে যে। এই হল আমার রথ দেখা আর কলা বেচার ইতিবৃত্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×