somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেলা শেষে (ছোট গল্প)

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জরিনা বেগমের কেমন শীত শীত লাগছে। এই শীতের ধরনটা খুব অন্যরকম। ডিপফ্রিজ হতে খাবারের প্যাকেট বের করার সময় হিমশীতল ঠাণ্ডা বাতাস হাতের চামড়ায় যে রকম ঠাণ্ডা একটা পরশ বুলিয়ে দেয়, সারা শরীরে তেমন এক অদ্ভুত ঠাণ্ডা অনুভূতি কাজ করছে। চোখের পাতা এতো ভারী হয়ে আছে যে, চোখ খুলে দেখতে পারছেন না তিনি কোথায় আছেন। বারবার মনে হচ্ছে তিনি মারা গেছেন, মৃত্যুর পর তাকে লাশ রাখার হিমাগারে রাখা হয়েছে। কিন্তু একটানা ঘ্যাচর ঘ্যাচর শব্দটা বড় চেনা চেনা লাগছে। আর এটা হিমাগার নয় তাও বুঝতে পারছেন, কেননা অনেকগুলো মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছেন, খুব চেনা কণ্ঠস্বর, কিন্তু মনে করতে পারছেন না।

‘আম্মা, এই আম্মা চোখ খুলেন। আর কত ঘুমাবেন? সকাল গড়িয়ে যে দুপুর হয়ে এল’- নিকিতা তার মায়ের হাতটা ধরে জোরে ঝাকুনি দিল। গতকাল রাতে সবার সাথে একত্রে বসে রাতের খাবার খেলেন। মধ্যরাত পর্যন্ত নিকিতার সাথে গল্প করে শুতে গেলেন। নিকিতা গত তিনদিন হল মায়ের বাসায় বেড়াতে এসেছে। ছেলে-মেয়ের স্কুল ফাইনাল শেষ, তাই মায়ের সাথে এসে থাকা। মায়ের বয়স হয়েছে, কেমন একটা শিশুসুলভ ব্যাবহার সে মায়ের মাঝে লক্ষ্য করে। খুব মায়া হয় মায়ের জন্য, মনে হয় নিকিতারই ছোট্ট একটি মেয়ে জরিনা বেগম।

মায়ের হিমশীতল হাত ধরে কেমন সন্দেহ হল। নিকিতা তার ভাইয়ের বউ নীলাকে ডাক দিল।

“ভাবী আমার কেমন যেন ভয় হচ্ছে, আম্মার শরীর এতো ঠাণ্ডা কেন? আর ঘুম থেকেও জাগছে না”

“আরে না ভয়ের কি আছে, আম্মা প্রায়ই এমন সারাদিন ঘুমিয়ে থাকেন। দেখি সরে বসতো, আমি দেখছি। আম্মা, এই আম্মা চোখ খুলেন, আম্মা...”

“হুম...” জরিনা বেগম টের পেলেন কে যেন তাকে ডাকছে, কোথায় যেন নিয়ে যেতে চায়। যেন জিজ্ঞাসা করলো, “যাবেন না আমার সাথে...?” তিনি সারা দিলেন। হঠাৎ মনে হল কোথায় যেন যাওয়ার জন্য বহুদিন তিনি অপেক্ষায় আছেন, কেউ একজন আসবে তাকে নিয়ে যেতে। অবশেষে সে এসেছে।

নিকিতা তার বড় ভাইকে ফোন করল, কিন্তু ফোন সুইচ অফ আসছে। আজ শুক্রবার, এখন দুপুর বেলা, জুম্মা নামাজের সময়, ভাই মসজিদে, তাই বোধহয় তার মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে।

নাহিন আর তুর্য এলো ঘরে। নিকিতার ছেলে আর মেয়ে। সাথে মাইশা, নিকিতার ভাইয়ের মেয়ে। তিন শিশু জরিনা বেগমের মাথার কাছে এসে দাঁড়ালো। নিকিতার ভাইয়ের মেয়ে মাইশা খুব পাকা পাকা কথা বলে, বয়স মাত্র আট। সে হঠাৎ বলে উঠলো,

“ও দাদু, তুমি কি মরে গেলে নাকি”

“মা...ই...শা...!” নিকিতার ভাইয়ের বউ মেয়ের দিকে। নিকিতার অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। সে মায়ের বাসা হতে বের হয়ে রাস্তায় এলো, রাস্তা ফাঁকা। মোড়ের সবকয়টা দোকান বন্ধ। যথারীতি ফার্মেসীটাও। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না নিকিতা। হঠাৎ একটা ট্যাক্সি ক্যাব দেখে থামালো হাত ইশারা করে।

ট্যাক্সিওয়ালাকে হাসপাতালের কথা বলে রিকোয়েস্ট করল, ড্রাইভার রাজী হল। বাসায় এসে দেখে মা আগের মতই কেমন নিথর হয়ে শুয়ে আছে। বুকের ভেতর কেমন ছ্যাত করে উঠলো তার। তারা দুই মহিলা এবং ড্রাইভার অনেক কষ্টে জরিনা বেগমকে গাড়ীতে তুলল, দিনের মধ্য প্রহরে হলুদরঙা ট্যাক্সি ছুটে চলল ধানমণ্ডি আট নাম্বারের দিকে।
নিকিতা বারবার মায়ের হাতের পালস ধরে পরীক্ষা করছে, এক অজানা ভয় তার মেরুদণ্ড দিয়ে চোরাস্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে। তার ফর্সা গাল বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু জরিনা বেগমের মুখে পড়ল। ভাইয়ের বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে রক্ত লাল চোখে চেয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে মায়ের দিকে।

জরিনা বেগম কেমন প্রশান্তি অনুভব করছেন, অনেকদিন ধরে তার কোথায় যেন যাওয়ার কথা। লোকটা এতদিন পর তাকে নিতে এসেছে, কতদিনের অপেক্ষা। লোকটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু মনে করতে পারছেন না, ঠিকমত। খুব লজ্জা লাগছে, চোখ খুলে চাইতেও পারছেন না। কিন্তু বুঝতে পারছেন লোকটি তাকে নিতে এসেছে, খুব দূর দেশে, মনে হয় বরফের দেশে। এত শীত! আর কেমন ভেজা ভেজা স্যাঁতসেঁতে অনুভূতি। মনে হচ্ছে বরফগলা কোন নদীতে তিনি তলিয়ে যাচ্ছেন, হাত ধরে আছে সেই খুব চেনা মানুষটি। আহ কি অদ্ভুত প্রশান্তি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×