somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর স্মৃতি-বিজড়িত কাজীর শিমলা ভ্রমণ

২৫ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গত বছর শেরপুর-জামালপুর এর গজনী-মধুটিলা ভ্রমণের সময় আমরা ময়মনসিংহ দিয়ে যাওয়ার সময় গিয়েছিলাম ত্রিশালের কাজীর শিমলাস্থ জাতীয় কবি কাজী নজরুল এর স্মৃতি বিজড়িত ‘নজরুল সংগ্রহশালা’ দেখতে। আমরা মোট আঠারো জনের দল ভ্রমণ বাংলাদেশ'র আয়োজনে গত এপ্রিল মাসে দুই দিনের জন্য বেড়িয়ে পড়েছিলাম ময়মনসিংহ-শেরপুর’এর উদ্দেশ্যে, লক্ষ্যস্থল গজনী, মধুটিলা, লাউচাপড়া ঘুরে বেড়ানো। সকাল থেকে মুষলধারায় বৃষ্টি ঝরছিল বাইরের দিকে, আর আমরা চৌদ্দজন ভ্রমণচারী একটি ছোট্ট মাইক্রবাসের কাঁচে ঘেরা বক্সে করে চলতে লাগলাম ময়মনসিংহ’র দিকে।

টঙ্গি পেরুনোর সময় ঘণ্টা দেড়েক আটকে রইলাম অনাকাঙ্ক্ষিত জ্যামে। তখনো সকালের নাশতা করা হয় নাই কারো, সাথে করে আনা পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘বাকরখানি’ রুটি চিবুতে শুরু করলাম গাড়ীতে বসে বসে। সকাল নয়টার দিকে আমরা যাত্রা বিরতি করলাম রাস্তার ধারের এক রেস্টুরেন্টে সকালের নাশতা সেরে নিতে। রাস্তায় শুধু গাড়ী আর গাড়ী, জ্যামে বসে থেকে থেকে বোর হওয়া ছাড়া আর কি করার। কেউ কেউ হেডফোন কানে গুঁজে দিয়ে গান শুনতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল, কেউ জুড়ে দিল রাজনৈতিক আলোচনা। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা জার্নি শেষে আমরা পৌঁছলাম ময়মনসিংহ, এখানে নজরুল স্মৃতি সংগ্রহশালা দেখা, কিছুটা যাত্রা বিরতি সাথে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নেওয়া।

ত্রিশালের লোক কাজী রফিজ দারোগা। ১৯১৪ সালের দিকে তিনি যখন ভারতের আসানসোলে যান, দেখা পান কিশোর নজরুলের। রুটির দোকানে কাজ করার পাশাপাশি নজরুলের কাব্য এবং গীতি প্রতিভা দেখে অভিভূত হন রফিজ দারোগা। নজরুলকে প্রস্তাব দেন তার সাথে ত্রিশালে চলে আসার, নজরুল রাজী হয়ে যান। ফলে ১৯১৪ সালে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের মাটিতে পা পরে জাতীয় কবির। দারোগা রফিজের নিজ গ্রাম ত্রিশালে নিয়ে এসে তিনি কবি নজরুলকে ভর্তি করে দেন ত্রিশাল উপজেলা সদরের দরিরামপুর একাডেমি স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে। ত্রিশাল থেকে বর্ষায় স্কুলে যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ার দরুন কবি কাজী নজরুল ইসলাম জায়গীর ছিলেন ত্রিশাল ত্রিশাল উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া বেপারীর বাড়িতে। ময়মনসিংহে বছরখানেকের বেশী স্থায়ী ছিলনা জাতীয় কবির সেই যাত্রায় বাংলাদেশে বসবাস। পরের বছরই কবি ফিরে যান আসানসোল।

কবি নজরুলের সেই বাল্য স্মৃতিকে ধরে রাখতে এ গ্রামেরই বটতলা নামক স্থানে স্থানীয় জনগণের দান করা জমিসহ ২৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য, সঙ্গীত, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এ চারটি বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করে। পরে পাঁচটি অনুষদের আওতায় ব্যবসায় প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞানসহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য, লোক সংস্কৃতির উন্নয়ন ও গবেষণারও উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি বিভাগে সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে।

নজরুলের শেকড় নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া বেপারী বাড়ির আঙিনায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র ও নজরুল আর্কাইভ। বিচুতিয়া বেপারীর যে ঘরে নজরুল থাকতেন সেই শোবার ঘরটির ভিটি পাকা করে করা হয়েছে নজরুল আর্কাইভ। তৃতীয়তলার স্মৃতিকেন্দ্রের নিচতলায় রয়েছে ২০০ আসনের অডিটরিয়াম, দ্বিতীয়তলায় অফিস ও তৃতীয়তলায় জাদুঘর-কাম-পাঠাগার।

নজরুলের বাল্য স্মৃতিবিজড়িত কাজীর শিমলা গ্রামের দারোগা রফিজউল্লাহর বাড়িতে করা হয়েছে কবি নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র ও পাঠাগার। দোতলার এ ভবনের নিচতলায় রয়েছে সেমিনার কক্ষ। দোতলায় রয়েছে রিডিংরুম-কাম-রেস্ট হাউস। নজরুলের দুর্লভ সব ছবি, নজরুল সংগ্রহ, কিছু বই ও একটি পুরনো খাট রযেছে এখানে। ভবনের সামনের পুকুরটি সংস্কার করে পাকা করা হয়েছে এর ঘাট। স্মৃতিকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভারত শ্রীলঙ্কা দুবাই ও অস্ট্রেলিয়াসহ দেশ বিদেশের নানা স্থানে নজরুল প্রেমিক ভক্ত অনুরাগী ও গবেষকরা আসছেন নজরুলের শেকড় অনুসন্ধানে।

সেই ভ্রমণের সময় নজরুল সংগ্রহশালায় আমার তোলা কিছু ছবি...








































সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×