somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ যদি একবার তাকে দেখা যায় (একটি অসমাপ্ত প্রেম উপাখ্যান)

২৪ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেয়েটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাঁকা চোখে টুটুলকে লক্ষ্য করল। টুটুল বুঝতে পেরেই চোখ ঘুরিয়ে নিল, কিন্তু জানালার কাঁচে মেয়েটির প্রতিবিম্ব’র দিকে অপলক চেয়ে রইল। হঠাৎ খেয়াল করলো মেয়েটি সেই কাঁচ ভেদ করা দৃষ্টিও ধরে ফেলল। টুটুলের মেজাজটা বেশ ফুরফুরে, আজ ভাইভা ছিল, বেশ ভালো হয়েছে, মনে হচ্ছে এখানে চাকুরীটা হয়ে যাবে। মেসের জীবন আর ভালো লাগে না। গত তিন বছরে ধরে মাস্টার্স পাশ করে বসে আছে, টিউশনিই সম্বল, থাকে কলাবাগান লেক সার্কাস এর একটি মেসে। আজ ইন্টার্ভিউ ছিল বারিধারা আবাসিক এলাকার এক অফিসে, ভাইভা শেষে সাড়ে চারটা নাগাদ সে বাসে উঠেছে কলাবাগানের উদ্দেশ্যে। এখন ছয়টা বিশ, বাস জ্যামে আটকেছে মহাখালী বাস টার্মিনালের কাছে। মহাখালী থেকে বেশ কিছু যাত্রী উঠেছে, পুরো বাস ভর্তি মানুষ।

টুটুল ফার্স্ট স্টপেজ থেকে উঠেছে বলে একেবারে সামনের সিটে জানালার পাশে বসেছে। এই গরমে সবার খুব কষ্ট হচ্ছে। গাড়ী থেমে আছে অনেকক্ষন। মেয়েটি ভিড়ের মাঝে মহিলা সিটের ঐ দিকে যেতে পারেনি। সে টুটুলের সামনের কয়েকজন মানুষের মাঝে আটকে ছিল, এখন একটু দরজার দিককার সাইডে সরে আসলো। টুটুল মনে মনে ভাবছে মেয়েটার মাঝে দু’তিনজন লোকের বাঁধা না থাকলে সে মেয়েটিকে তার সিটটা ছেড়ে দিত। কি মায়াময় মুখ! পানপাতার মত গোল চেহারা, তার মাঝে টানা টানা দুটি স্বচ্ছ চোখ, দেখে মনে হয় এই বুঝি কেঁদে ফেলবে, চোখ হতে গড়িয়ে পড়বে অশ্রুধারা। একেই বুঝি বলে দীঘির ন্যায় টলটলে আঁখি। হালকা পাতলা গড়নের বছর বিশের কাছাকাছি হবে মেয়েটি। মাথায় একগাছি চুল, খোঁপা করে রাখা, কিন্তু খোঁপা দেখে বুঝা যায় অনেক লম্বা হবে সেই কেশমালা। মেয়েটা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, টুটুলের ঠিক সামনে দু’তিন জন মানুষের পেছনে। মেয়েটার সাথে টুটুলের চোখাচোখি হতেই মেয়েটা একটা মিষ্টি হাসি হেসে দৃষ্টিটা সরিয়ে নিল। টুটুলের মনে হল, ‘পাইলাম, ইহাকে পাইলাম...’।

হঠাৎ করেই টুটুলের পাশের সিটে বসা বছর পঁচিশের ছেলেটি মেয়েটিকে ডেকে উঠলো, ‘এই যে আপু, এখানে এসে বসেন’। মেয়েটি সেই দু’তিন জন মানুষের দেয়াল ভেঙ্গে টুটুলের পাশে এসে বসে পড়ল। হাতে একটা শপিং ব্যাগ, সাথে ভ্যানিটি ব্যাগ। মেয়েটা পাশে বসতেই টুটুল কেমন জড়সড় হয়ে গেল, আরেকটু সরে গিয়ে জানালার পাশে চেপে বসল। এতে একটা লাভ হল, গাড়ীর ভেতরের দমবন্ধ করা গুমোট বাতাস হতে একটু ফ্রেশ বাতাস ফুসফুসে চালান করতে পারলো। বাইরের জগত থেমে আছে.... মেয়েটা পাশে বসার কারণে নয়, এখন জ্যামে গাড়ী স্থির হয়ে আছে। টুটুল বিরক্ত হয়ে আকাশের দিকে তাকালো, কালো মেঘের আনাগোনা দেখা যায়, কিন্তু কোন হাওয়ার নাম গন্ধ নেই। দরদর করে ঘামছে শরীর, ঘাড়ে একটু হাত বুলিয়ে বাসের ভেতরে দৃষ্টি আনতেই দেখলো মেয়েটি চোরা চোখে তাকে দেখছিল। সে ঘাড় হঠাৎ ঘুরানোতে দৃষ্টি সম্মুখে নিয়ে নিল, দাঁড়ানো মানুষের প্রাচীর ভেদ করে কোন এক অদৃশ্য অজানায়।

মেয়েটা একটু পরপর গরমে হাঁসফাঁস করছে, একটু পরপর নড়াচড়া করছে। টুটুল একবার ভাবলো মেয়েটাকে বলে সিট বদল করে জানালার পাশে এসে বসে, কিন্তু কেমন এক জড়তা তাকে বাঁধা দেয়। ঐ ছেলেটা কত সুন্দর মেয়েটাকে ডেকে সিটে বসতে বলল। অথচ টুটুল তারও আগে থেকে বেশ কিছুক্ষণ যাবত ভাবছিলো মেয়েটাকে বলে জানালার পাশের তার সিটটিতে বসতে। অথচ সে বলতে পারে নাই, ভাবনা পর্যন্তই সারা। অবশ্য না পারাতে ভালই হয়েছে, সে এখন মেয়েটার পাশে বসে আছে। জড়তা কাটাতে পকেট হতে হেডফোন বের করে গান শুনতে লাগলো আর আড়চোখে মেয়েটিকে দেখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে লাগলো।

কোন ভাবনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিল টুটুল নিজেই জানে না, মেয়েটির নড়াচড়ায় সম্বিৎ ফিরলো। মেয়েটা মাথায় ওড়না দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে বসেছে। আশেপাশে মহিলা সিটে সবার মাথায় কাপড় দেয়া, জ্যামের কারনে অনেক যাত্রী নেমে হাঁটা দিয়েছে, যে কারণে বাস এখন অনেকটাই ফাঁকা। টুটুল বুঝতে পারলো আজান দিচ্ছে, দ্রুত কান হতে হেডফোন খুলে হাতে নিল। সন্ধ্যে হয়ে গেল! গাড়ী এতক্ষনে মাত্র সাত রাস্তা পার হয়েছে। হাতিরঝিলকে কেন্দ্র করে গাড়ীর এক বিশাল জটলা সৃষ্টি হয়েছে। গাড়ী আবার স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা হয়ে এলেও গরম কমে নাই, মনে হচ্ছে আরও বেড়েছে, এখনো শরীর ঘামছে। মেয়েটির দিকে চোখ ফেরালো সরাসরি, মেয়েটা তার ওড়নার এক কোনা দিয়ে মুখটা মুছলো। কি নিস্পাপ সুন্দর একটি শুভ্র মুখ, দেখলে মনে পবিত্র একটা ভাব জন্মায়। নিজের অজান্তেই টুটুল মেয়েটিকে বলে বসল, ‘এই যে শুনছেন, আপনি জানালার পাশের সিটে এসে বসেন; একটু বাতাস পাবনে’।

মেয়েটি উঠে সিট চেঞ্জ করে জানালার পাশে বসলো। টুটুল জানালার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল মৃদু বাতাসে মেয়েটির কানের পাশের রেশমি চুলের একটি ক্ষুদ্র গোছা তির তির করে কাঁপছে। মেয়েটি শান্ত স্থির দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে প্রায় রাত হতে যাওয়া এই সন্ধ্যাবেলা’র আলো আঁধারির আকাশের পানে চেয়ে আছে। একটু মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেয়েটির পানে চেয়েছিল টুটুল। কিন্তু বাসের ভেতর এক মহিলার চিৎকারে রেশ কেটে গেল।

‘এই পানি... এই ছেলে... এই পানি’ বলে ওপাশের জানালা দিয়ে এক মহিলা কোন এক পানিওয়ালাকে ডাকছে। গরমে বাসের সবাই খুব তৃষ্ণার্ত, তাই জানালা দিয়ে রাস্তায় কোন এক পানি বিক্রেতাকে দেখতে পেয়ে মহিলার এই হাঁকডাক। পানি বিক্রেতা ছেলেটি গাড়ীতে উঠলে কয়েকজন পানি কিনতে ব্যাস্ত। এক মহিলাকে দেখা গেল পানি বিক্রেতার সাথে ঝগড়া আরম্ভ করে দিয়েছে, ‘মাম’ পানি নাই কেন? টুটুল মজা পেল, ভদ্রমহিলা বারবার বলতে লাগলো ‘আমি মাম ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারি না’। টুটুলের পেছনের সিটের এক ছেলে আসতে করে বলল, ‘মাম খেতে পারেন, ড্যাড খেতে পারেন না আপা...’। ভাগ্যিস ঐ মহিলা শুনতে পায় নাই, নাহলে আরেকটা ঝগড়া আরম্ভ করে দিতেন। তবে টুটুল এবং তার পাশের মেয়েটি ঠিকই শুনতে পেল; এবং দুজনেই একসাথে হেসে দিল।

যাই হোক টুটুল একটি পানির বোতল কিনে কিছুটা পানি পান করল, আর কিছু পানি হাতের তালুতে নিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে ঠাণ্ডা পানির ছোঁয়া দিল। টুটুল মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে। মেয়েটির দৃষ্টি পানির বোতলে নিবদ্ধ। টুটুল ইশারায় জিজ্ঞাসা করল সে পানি চায় কি না? মেয়েটি ঘাড় নেড়ে ‘হ্যাঁ’সূচক জবাব দিল।
টুটুল পানির বোতল মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল। ঢক ঢক করে মেয়েটি যখন পানি খাচ্ছিল, তার সরু গলার নীলচে শিরাগুলো বাসের হালকা হলদেটে আলোতে দেখতে পাচ্ছিল টুটুল। মেয়েটির পানি খাওয়াটা বড়ই মায়াময়, কেমন ছোট্ট ছোট্ট করে ঢোক গিলছে এক একটা, আর বেশ কিছু সময় খুব ধীর লয়ে শ্বাস নিচ্ছে। টুটুল অপলক চেয়ে রইল, মেয়েটি যখন পর্যন্ত না তার দিকে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘থ্যাংকস’। টুটুল প্রতিত্তরে কি বলবে ভেবে না পেয়ে কেমন একটা বোকা বোকা হাসি দিল। মেয়েটা মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার বাইরে তাকালো।

আবার হেডফোন কানে গুজে দেয়ার জন্য মোবাইল বের করতে দেখে ফেসবুক নোটিফিকেশন, ফেসবুক অন করে টুটুল নোটিফিকেশনগুলো দেখতে লাগলো। মেয়েটি কখন এদিকে তাকিয়েছে টুটুল টের পায় নাই। মেয়েটি হঠাৎ বলল, ‘আপনার ফেসবুক নিকটাতো খুব সুন্দর... ‘নীল জলের মানব’...’। টুটুল একটা ছোট্ট হাসি দিল। পাশের সিটের এক বয়স্ক মহিলা খুব বকবক করে যাচ্ছেন, তার রাত আটটায় ডাক্তারের এপয়েনমেণ্ট, ধানমণ্ডি পাঁচ নম্বরে। এখন অলরেডি সাড়ে সাতটা প্রায় বাজে। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না, এ নিয়ে বকরবকর করেই যাচ্ছেন। টুটুল বলল, ‘আপনি নেমে হেঁটে চলে যান, আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন’। আর যায় কোথায়, এই নিয়ে শুরু হল সবার আলোচনা-সমালোচনা। বাস এখন প্রায় ফাঁকা, বেশিরভাগ যাত্রীই নেমে গেছেন। পাঁচ ছয় জন মহিলা যাত্রীসহ মোটে জনা পনের হবে। টুটুল মেয়েটির কথায় তার দিকে ফিরে তাকালো।

‘আচ্ছা পান্থপথ চৌরাস্তা যেতে আর কতক্ষণ লাগবে?’
‘হুম... যে জ্যাম ঘণ্টাখানেকতো লাগবেই। এখন বাজে পৌনে আটটা, আপনি নয়টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন’ বলে টুটুল একটু হাসল।
‘আপনি কোথায় নামবেন?’ মেয়েটি জিজ্ঞাসা করলো।
‘আমি? কলাবাগান।’
‘আমি যাব রাজাবাজার। আমি অতিশ দীপঙ্কর ইউনিতে পড়ি, পান্থপথেইে' একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে মেয়েটি বলল।
‘ও তাই... কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন নিশ্চয়ই?’
‘না... আমি আড়ং গুলশান শাখায় গিয়েছিলাম। ওদের ওখানে রমজানের ঈদ উপলক্ষ্যে কিছু পার্টটাইম সেলসগার্ল নিবে, ওটার ভাইভা দিতে’
‘ও দ্যাটস গুড’
‘আমার না কেমন ভয় করছে, অনেক রাত হয়ে গেছে, আমি না কখনো এতো রাতে একা বাসার বাইরে থাকি নাই...’ মেয়েটি চেহারায় কেমন অসহায়ত্ব মেখে নরম সুরে বলল।
‘আচ্ছা এখান থেকে হেঁটে যেতে কি আধঘণ্টাই লাগবে?’ মেয়েটি টুটুলের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বলল।
‘হুম...এরকমই লাগবে। গুগল ম্যাপও তাই বলছে’ টুটুল তার হাতের মোবাইলটার দিকে ইশারা করলো। মেয়েটি একটা মিষ্টি হাসি দিল।
‘আচ্ছা চলেন না আমরা হেঁটে চলে যাই’ মেয়েটি কেমন মায়া মায়া চেহারায় মিষ্টি হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করল।
‘যাবেন? হেঁটে? আমা...র সাথে?’ টুটুল একটু অবাক হল, কি একটা ভাবলো, তারপর বলল, ‘ওকে, চলেন’ বলে টুটুল বাসের দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

বাস এখনো থেমে আছে আগের মতই। বাস থেকে নেমে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে টুটুল পেছনে ফিরে দেখে মেয়েটি নেই। ডানে বামে দেখলো কোথাও নেই। হঠাৎ বাসের জানালায় একটি মুখ দেখা গেল আলো আঁধারির মাঝে। টুটুল দেখল একটু অপ্রস্তুত একটি মুখ কেমন হাসি হাসি দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে। টুটুল একটু বোকা বোকা ফিল করল। কি করবে বুঝতে না পেরে আবার বাসে উঠলো। বাসে উঠতেই সেই মহিলা, যে ডাক্তারের কাছে যাবে সে জ্যাম কেমন, কখন ছুটবে এসব জানতে ব্যাস্ত হয়ে উঠলো। টুটুল মহিলাকে উত্তর দিতে দিতে তার সিটে গিয়ে বসল। মেয়েটি মৃদু স্বরে বলল, ‘সরি। আমি নামতে যাবো, পেছন থেকে ঐ আঙ্কেল (পেছনের সিটের দিকে ইশারা করে) বাঁধা দিল। বলল, তুমি কি ঐ লোকটাকে চেন? আমি বললাম, না। আঙ্কেল বলল, তাহলে এই রাত্রে তার সাথে কেন নামতে যাচ্ছো?’। টুটুল একটু হেসে বলল, ‘ইটস ওকে’, ঘাড় ঘুরিয়ে ঐ আঙ্কেলের দিকে একটা হাসি দিল।

প্রায় মিনিট পনেরো পরে ঐ ভদ্রমহিলা টুটুলকে বলল, ‘ভাই হেঁটে হলেও আমার ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরী। আপনি কি একটু আমার সাথে যাবেন, আপনিতো কলাবাগান যাবেন তাই না’। টুটুল অবাক হল, মহিলা কীভাবে জানলো সে কলাবাগান যাবে? তার মানে পাশের মেয়েটির সাথে তার কথোপকথন উনি শুনছিলেন মন দিয়ে। মহিলা বলার সাথে সাথে পাশের আরেক মহিলা বলল, ‘আমিও যাবো, আমার নিউমার্কেট হয়ে মিরপুর যেতে হবে’। হঠাৎ করেই প্রায় দশ-বারো জনের দল পুরো বাস ফাঁকা করে বাস থেকে নেমে পড়ল হেঁটে যাওয়ার জন্য। সেই আঙ্কেল এবং টুটুলের পাশের সিটের মেয়েটিও আছে সেই দলে।

রাস্তা পার হয়ে হাতিরঝিল হতে সোনারগাঁও হোটেলের দিকে যে ফুটপাথ গেছে সেটা ধরে তারা লাইন দিয়ে হাঁটতে লাগলো। সেই মহিলা, যিনি ডাক্তার দেখাবেন সবার আগে আগে হনহন করে হাঁটছেন আর সেই আঙ্কেল ভদ্রলোক সবার পেছনে, সবাইকে যেন পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

মেয়েটি টুটুলের বাম পাশে রয়েছে, তার সাথে সাথে হাঁটছে। মেয়েটি টুটুলকে জিজ্ঞাসা করল সে কি করে? এরপর টুকটাক গল্প করতে করতে তারা এগুতে লাগলো। মেয়েটি এখন বেশ প্রাণবন্ত, হড়বড় করে অনেক কথা বলে যাচ্ছে। তার ভার্সিটির গল্প, এই গল্প সেই গল্প। টুটুল শুনছে, মাঝে মাঝে মেয়েটা হাত নেড়ে নেড়ে কিছু জিজ্ঞাসা করছে, টুটুল উত্তর দিচ্ছে। টুটুলের কাছে পুরো ঘটনাটা কেমন কাল্পনিক, সিনেমাটিক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কোন একটা স্বপ্ন দেখছে, মিষ্টি একটা স্বপ্ন, ঘুম ভাঙ্গলেই যা শেষ হয়ে যাবে।

ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে, যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হবে। সবাই দ্রুত পা চালাচ্ছে। কথা বলতে বলতে কখন তারা পান্থপথ এসে পড়েছে খেয়ালই করেনি। পান্থপথ পৌঁছেই ঐ আঙ্কেল মেয়েটিকে রাজা বাজার যাওয়ার রিক্সা ঠিক করে দিতে ব্যাস্ত হয়ে উঠলেন। মেয়েটি আইল্যান্ডের পাশের রোড ডিভাইডারের উপর টুটুলের সাথে দাঁড়িয়ে রইল। রিকশা পেতেই আঙ্কেল মেয়েটিকে ডাকলেন, টুটুল মেয়েটির সাথে রিকশার দিকে এগিয়ে গেল। মেয়েটি রিকশায় উঠে ভদ্রলোকের দিকে চেয়ে বলল, ‘আঙ্কেল থ্যাংকস, আসি’। টুটুলের দিকে চেয়ে বলল, ‘...আ...সি...’

মেয়েটির রিকশা সিগন্যাল ক্রস করে ফার্মগেটের দিকে চলতে শুরু করল। হঠাৎ টুটুলের মনে হল হায় হায় মেয়েটির নামটা পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করা হল না। না ফোন নাম্বার, না ফেসবুক আইডি। অতিশ দীপঙ্কর ইউনিতে কোন সাবজেক্টে কোন ইয়ারে পড়ে কিছুই জানা হল না! মেয়েটা কথা বলে গেছে, টুটুল তন্ময় হয়ে তার কিন্নর কণ্ঠ শুনেছে। একবারও মনে হয় নাই তার কন্টাক্ট জানা দরকার, এটলিস্ট নামটা।

টুটুল এখন প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকে তার ফেসবুকে হয়ত অচেনা কোন মেয়ে আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসবে, সে ওপেন করে দেখবে সেই মায়াময় মেয়েটি। প্রায় সময় সে পান্থপথে ঘোরাঘুরি করে, অতিশ দীপঙ্কর ইউনি’র সামনের ফুটপাথের চায়ের দোকানে বসে থাকে; সেই মায়াময় মেয়েটির খোঁজে। যদি একবার তাকে দেখা যায়।

পিকচারঃ http://www.drawingforkids.org/

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×