somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘পঞ্চ ইন্দ্রিয়’র সংযমে ‘ষড়রিপু’র দমন – মাহে রমজানের শিক্ষা এবং বাস্তবতা

২১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা আমরা মানুষেরা রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ এ পঞ্চগুণের উজ্জীবিত ও সজিব জীবনের উপস্থিতি লাভ করি আমাদের মানব জীবনে। এই রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ দ্বারা জীবনের সকল সুখ খুঁজে বেড়াই, পূরণ করার চেষ্টা করি ষড়রিপু’র দাবীসমুহকে। আর আল্লাহপাক মানবজাতির উপর রমজান ফরজ করেছেন ‘সংযম’ শিক্ষার মাধ্যমে নিজ পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা লাভ করে সারা বছর ব্যাপী ষড়রিপু’কে দমন করে একটি সুন্দর এবং সুস্থ মানব জীবন পরিচালনার সামর্থ্য অর্জন করার জন্য।

‘সিয়াম’ বা ‘রোযা’ শব্দের উৎপত্তি আরবী 'সাওম' শব্দটি হতে; রোযা মূলত একটি ফারসী শব্দ। সাওম অর্থ বিরত থাকা। সিয়ামের সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রধান শিক্ষা হল ভোগস্পৃহা নিয়ন্ত্রণ করে দেহমনকে ত্যাগের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে তোলা। আর তাই আমার আজকের লেখার মূল বিষয় ‘সংযম’ এবং ‘ত্যাগ’। একজন স্বাভাবিক মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে এ কথা আমরা সবাই জানি। ইন্দ্রিয়গুলো হলো- কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, চক্ষু ও ত্বক। আর রয়েছে ‘ষড়রিপু’ অর্থাৎ মানুষের চরম ও প্রধান ছ'টি শক্র হলো-কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। রমজানের মূল শিক্ষা হল এই পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এই ষড়রিপু’কে ধ্বংস করা।

অথচ বাস্তবে কি হচ্ছে? আমাদের কাছে ‘রমজান’ শুধু সারাদিন অনাহারে কাটিয়ে সন্ধ্যা হলে ভুঁড়িভোজে মত্ত হওয়ার নিমিত্ত মাত্র। অন্যান্য অনেক ধর্মেও কিন্তু উপবাস রয়েছে। ইসলামের ‘রোযা’ পালনের সাথে সেগুলোর যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে তা আজ আমরা ভুলতে বসেছি। সারাবছর যে বৈধ তথা হালাল কাজগুলো আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় পালন করে আমাদের দেহ এবং আত্মার তৃপ্তি যোগায়, সেই বৈধ কর্মসমূহ রমজানে হারাম করার মাধ্যমে আল্লাহপাক আমাদের সংযম শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। যেমনঃ পানাহার (অবশ্যই হালাল বস্তু), নিজ বৈধ স্ত্রীর সাথে সহবাস ইত্যাদি। আর যা সারা বছর হারাম, তা নিয়ে কিছু বলাই বাহুল্য। কিন্তু রমজানের এই সংযম আর ত্যাগের শিক্ষা কি আদৌ আমরা গ্রহন করছি?

প্রতিটি মার্কেট বিপণী বিতানে উপচে পড়া ভিড় পুরো রমজান মাস জুড়ে, পর্দা-প্রথা’র কথা নাই বা বললাম। কাঁচা বাজারে জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রয়-বিক্রয়ের সূচকও যে ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিটি বাসায় গৃহিণীদের হেঁসেলের ডিউটি বেড়ে দ্বিগুণ। তার সাথে মানবদেহের পাকস্থলী নামক অঙ্গটির বিপাক প্রক্রিয়ায় নিরলস ব্যাস্ততা। এর নাম সংযম? ইফতারকে যদি ‘ফার্স্টমিল অফ দ্যা ডে’ বিবেচনা করি তাহলে রমজান মাস ছাড়া অন্য সময়ে আপনার সকালের নাস্তার সাথে তুলনা করুণ, ঘটনা ক্লিয়ার? সংযমের মাসে যে পরিমাণ ভোগ-বিলাস আর অপচয়-অপব্যায় এ আমরা মত্ত হই তা আমাদের সংযম শেখায় না, শেখায় না ষড়রিপুকে দমন করার কৌশল। বরংচ বিপরীতটাই আমাদের অবচেতনে বসে যাচ্ছে, আর তা হল ‘খাও, পিয় অউর মউজ কারো’।

অথচ খরচের কাজটায় আমরা খুবই কৃপণ। রমজানে দান-খয়রাত, যাকাত, ফিতরা প্রদানের ব্যাপারে কাউকে সহজে উদার হস্ত হতে দেখলাম না। দান-খয়রাত করতে গেলে আগে দেখি মানিব্যাগে খুচরা টাকা-পয়সা কি আছে, আর তার মধ্যে ময়লা-ছেঁড়া থাকলে সুবিধা হয়। ‘ফিতরা’ প্রসঙ্গে বলি, প্রতিবছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করে তা হল সর্বনিম্ন; সেই পরিমাণ টাকাই ফিতরায় দিতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। খুব উচ্চমানের খেজুর বা অন্য জিনিষের হিসেবে এই ফিতরা ২০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু কয়জন সেই হিসেবে ফিতরা দেই? ‘যাকাত’ এর বেলায় কত কম যাকাত দেয়া যায় সে জন্য দৌড়ঝাঁপ করি এক আলেম থেকে আরেক আলেমের কাছে। আবার সেই যাকাত দেয়া নিয়ে চলে কত শো-অফ।

আর কাম, ক্রোধ, লালসা নিয়ে লিখতে গেলে পাতার পর পাতা লেগে যাবে, কথা শেষ হবে না। ইসলাম এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে আমার মত গুনাহগার একজন কিছু নাই বা বললাম, ওটা আলেম যারা তারা বলে আসছেন, বলতে থাকবেন। তথাকথিত প্রগতিশীলতা এবং আধুনিকতার দোহাই দিয়ে ষড়রিপু চরিতার্থ করতে সমাজে আজ যা হচ্ছে তা থেকে রমজান আমাদের কতটুকু বিরত রাখতে সক্ষম হচ্ছে আর আমরাই রমজান থেকে কতটুকু শিক্ষা নিচ্ছি? রমজানের অনুষঙ্গ ‘ইফতার’ সেই কবেই পার্টিতে রূপ নিয়েছিলো, এখন নিচ্ছে ‘সেহেরী’। আধুনিক ফার্স্টফুড আর ব্র্যান্ড ফুডকোর্টগুলো ব্যাবসার পসরা বসিয়েছে রমজানের এই দুই অনুষঙ্গকে ঘিরে। যেখানে ইসলামের অনেক মৌলিক বিধি লঙ্ঘনের সাথে সাথে চলছে 'অপচয় আর অপব্যায়’ যা ‘সংযম’ আর ‘ত্যাগ’ এর সম্পূর্ণ বিপরীত।

সবশেষে কি আর বলব? আসুন ‘রমজান’ এর প্রকৃত শিক্ষা বুঝি, অর্জন করি। নিজের পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ দ্বারা ষড়রিপু’কে দমন করার কৌশল আয়ত্ত করে সারা বছর জুড়ে একটি সুখী এবং সুন্দর জীবন গড়ার শিক্ষা নেই এই রমজানে। রমজান সবার জন্য কল্যাণকর হোক এই কামনায় শেষ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×