somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরবে না মোর সেই ঈদের দিনগুলো

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কখন প্রথম ‘ঈদ’ শব্দটি বুঝতে শিখেছি মনে নেই। শিশুকালে প্রথম ঈদ বলতে মনে পরে খুব ভোর বেলা নতুন সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসলটাকে, কেননা অন্যদিন এতো ভোরবেলা গোসল করানো হতো না। প্রথম ঈদের নামাজ কবে পড়েছি মনে নেই। মনে পরে পাড়ার মাইকে ফজরের পর থেকে শুরু হয়ে যেত ‘ঈদের জামাতের সময়সূচী’ জানানোর ঘোষণা। ঢাকায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠায় ঈদগাহ তেমন আশেপাশে কম ছিল, মূলত আমরা মসজিদের ইট-সুরকির দেয়ালের গণ্ডিতেই বেশীরভাগ ঈদের নামাজ আদায় করেছি। তবে ঈদগাহ যে একেবারেই ছিল না, তা কিন্তু না। খোলা খেলার মাঠগুলোতে অনেক জায়গাতেই ঈদের জামাত হতো পার্শ্ববর্তী মসজিদের উদ্যোগে। এখনতো সিটি কর্পোরেশন এর উদ্যোগেই ঢাকা শহরের প্রতিটি খেলার মাঠে ঈদের জামাত হয়।

সেই শৈশব থেকে আজ অবধি ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে দুটি বিষয় নিয়ে আমি অস্বস্তিতে থাকি। একটি হল ঈদের নামাজের অতিরিক্ত ছয় তকবির, আরেকটি হল নামাজ শেষে কোলাকুলি করা। যাই হোক শৈশবে আমি নামাজ শেষ করেই ভোঁ দৌড় দিতাম বাসার দিকে, ঈদের সেমাইয়ের জন্য মুখে লোল পড়ছে যে... :) । অনেক সময়তো নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই এক ডোজ খেয়ে নিতাম। সেমাই খাওয়া শেষ করে আশেপাশের আত্মীয়স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যেতাম, যার মূল আকর্ষণ ছিল ‘সেলামী’ তথা ঈদি। সেই লোভে খুঁজে খুঁজে গুনে গুনে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় যেতাম... কি বেহায়া ছিলাম ছোট বেলায়! আর এখন অনেক দাওয়াত পাওয়া সত্ত্বেও যাই না, বসে থাকি নিজের ঘরের চার দেয়ালের মাঝে!

বেলা বারোটা বাজলেই বাসায় এসে পোলাও-কোরমা খাওার বায়না। রান্না হয়তো চুলোয়, তারপরও আমার ঘ্যানর ঘ্যানর চলতেই থাকতো। বড়রাতো বুঝতো না, কত কাজ ঈদের দিন আমার! যাই হোক, কোনমতে পোলাওটা খেয়ে বেড়িয়ে পড়তাম বাসা থেকে একটু দূরের আত্মীয়দের বাসাগুলোর উদ্দেশ্যে। এই করে করে বিকেল হত। সব বাসায় এটা সেটা খেয়েও ক্লান্ত হতাম না, কীভাবে যেন সব হজম হয়ে যেত? আর সারাক্ষণ মনের মাঝে চলতো কত টাকা ঈদ বখশিস পেলাম তার হিসেব।

বিকেল হলে ছুটে যেতাম “চকবাজারের ঈদের মেলা”য়। পুরাতন ঢাকার চকবাজারে বসতো জমাট এক ঈদের মেলা। এখনো নামকাওয়াস্তে একটা বসে, কিন্তু সেই মেলার জৌলুশ আর কোথায়? মেলায় প্রধান আকর্ষণ ছিল নাগরদোলায় চড়া। এখন চকবাজারে যে সিটি কর্পোরেশন মার্কেট (ইমিটিশন মার্কেট) আছে, সেখানে একসাথে তিন-চারটি নাগরদোলা বসতো। এর সামনেই বসতো হরেক রকমের সুস্বাদু আচারের দোকানগুলো। এখান হতে আচার কিনে নিয়ে লাইন দিয়ে উঠে পরতাম নাগরদোলায়, আর নামার নাম নেই। কয়েক চক্কর ঘোরার পর নীচের ছেলেপেলেদের প্রতিবাদের মুখে নেমে এসে আবার লাইন দিতাম। শেষে মেলা ঘুরে পছন্দের কোন একটা খেলনা কিনে নিতাম। এভাবে মেলায় ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যা হলে বাসার দিকে পা বাড়াতাম।

সন্ধ্যার পর সেমাই-জরদা খেয়ে ঢুলু ঢুলু চোখে এঘর ওঘর করতে থাকতাম। ছোট ভাইকে জেরা করতাম, আমার কোন ঈদ সেলামী তার কাছে কেউ দিয়েছে কি না? আগে, কোন বাসায় আমাদের দুই ভাইয়ের একজন না গেলে, অন্যজনের কাছে তার ঈদ বখশিস দিয়ে দেয়া হতো। দিনশেষে মা’র কাছে সব ঈদ সেলামী জমা রেখে তার হিসেব মিলাতাম, ‘তোমার কাছে মোট এত টাকা জমা রেখেছি। এই ঈদে এত, আগের ঈদে এত, তার আগের ঈদে এত......’।

রাতে বড়দের সাথে বসতাম ঈদের নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখতে। কিন্তু ঘুমকাতুরে আমার ঐ বসা পর্যন্তই সারা, কখন যে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যেতাম টেরই পেতাম না।

============

লেখাটি ব্লগার জাফরুল মবীন এর আহবানে “সামুর ব্লগারদের শৈশবের ঈদ” সংকলনে আপনার গল্প পাঠান প্লিজ'র জন্য লিখলাম। পাঠকের ভালো লাগবে কিনা জানিনা। কেননা ইহা একান্তই আমার নিজস্ব স্মৃতিকথা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×