somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন - মুহম্মদ আবদুল হাই (“ভ্রমণ সাহিত্যে চোখ বুলাই” - পর্ব ০৩)

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“ভ্রমণ সাহিত্যে চোখ বুলাই” - সকল পর্ব

ভ্রমণ নয়-স্মৃতি কথা, স্মৃতিকথা নয়-ভ্রমণ, এ দুয়ের সংমিশ্রণে এক আশ্চর্য রস সৃষ্টি করেছেন তিনি; তাতে সঙ্গীতের সম্মোহ সৃষ্টি করেছে ভাষা।... ‘আর তার আশার দানা-রঙীন গানের উপর আঁকা সাঁজেলিজে যেন একটি মিষ্টি তিলক ফোঁটা। শেষে আর্ক দু’ত্রয়ামফ। আট দিক থেকে আটটি রাস্তা এসে পায়ে কুর্নিশ করেছে।’ বিলেতে সাড়ে সাত শ দিনে’র ভাষা আশ্চর্য সঙ্গীতমুখর। অনুভব ও হৃদয় সংবেদনার মদিরতা মাখা তা স্বীকার করিতেই হবে।


উপরের কথাগুলো প্রখ্যাত আব্দুল গাফফার চৌধুরী’র, মুহম্মদ আবদুল হাই এর “বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’ নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই কথাগুলো তিনি বলেছিলেন। অনেকদিন হল “ভ্রমণ সাহিত্যে চোখ বুলাই” সিরিজ এর লেখা নেই। আসলে এতো ব্যাস্ততা আর তার মাঝে এতো এতো লেখার পোকা ঘুর ঘুর করে যে, প্রতিদিনই একটা করে লেখা দিতে মন চায়। যাই হোক শুরু করি আমার পঠিত মুহম্মদ আবদুল হাই এর “বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’ নিয়ে আজকের লেখা।

মুহম্মদ আবদুল হাই এর “বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’ মূলত আজ থেকে পাঁচ যুগ আগেকার সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত এবং ঐ সমসাময়িক কালেই প্রথম প্রকাশিত হয়। মুহম্মদ আবদুল হাই রচিত এ বইটি সেই অর্ধ শতাব্দী পূর্বেই ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যা আজও ভ্রমণ সাহিত্য প্রিয় মানুষের নিকট সমানভাবে সমাদৃত। এর মূল কারণটা কি? কারণ, ধ্বনিবিদ মুহম্মদ আবদুল হাই তার দীর্ঘ প্রবাস জীবনকে যেমন অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে অনুধাবুন করেছিলেন, তেমনি তৎকালীন ব্রিটিশ সভ্যতাকে উপলব্ধি করেছিলেন হৃদয় দিয়ে। লন্ডনের প্রকৃতি, মাটির রুপরসগন্ধ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও দৈনন্দিন জীবনের মাঝে লুকিয়ে থাকা বহমান সভ্যতা, ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা বিষয়কে তিনি লেখনীর মাধ্যমে ছবির মত ফুটিয়ে তুলেছেন এই গ্রন্থে।

এই বইতে মোট একত্রিশটি পরিচ্ছেদ রয়েছে। প্রতিটি পরিচ্ছেদেই লেখক লন্ডনের প্রতি তার ভালো লাগা এবং উচ্ছসিত হওয়ার সাথে সাথে নিজ দেশের একটি তুলনামূলক ছবি আঁকারও চেষ্টা করেছেন। তবে বইটি পড়তে গিয়ে এখনকার পাঠক কিছুটা ধাক্কা খেতে পারেন, কেননা তিনি বাংলাদেশকে পুরো লেখায় পাকিস্তান বলেই অভিহিত করেছেন, কেননা তখন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির উদ্ভব হয় নাই। (কেউ কেউ আবার উনাকে রাজাকার ট্যাগ দিয়েন না ভাই ;) )।

একবারে শুরুর পরিচ্ছেদ থেকে আপনি দেখতে পাবেন লেখকের চারিপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সতর্ক অনুধাবন ক্ষমতা। প্লেনে চড়ে বসার পর থেকে লন্ডন পৌঁছে এবং সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে এই পরিবেশ এবং প্রকৃতিকে লক্ষ্য করে গেছেন। একবারে শুরুর প্যারায় দেখুন, “... পাখীর মতো ডানা মেলে দিয়ে জীবনের প্রথম আজ নিজের দেশের আকাশে উড়ছি। নিজের দেশের শ্যামশোভা এমন ক’রে দেখার সুযোগ হয়নি কোনদিনও। নীচে ফসলের মাঠ আর তরুলতার সবুজ। ওপরে নীল শুন্য আকাশ। সাদা-কালো রঙ-বেরঙের মেঘমালায় ছোঁয়া লাগছে শরীরে ও মনে। ওপর থেকে মাঠঘাট দেখে মনে হচ্ছে কে যেন পাশার ছক পেতে রেখেছে। মানুষ ও মানুষের ঘরবাড়ীগুলো দেখে গালিভারের লিলিপুটের কথা মনে পড়ছে। অনন্তকাল-স্রোতের মধ্যে বুদ্বুদের মতো মানুষের জীবন-অবিরত ফুটছে ও ঝরছে। দুনিয়ার খেলাঘরে কয়েকটি মুহূর্ত কাটিয়ে দেবার জন্যে তার কত আয়োজন-আর নিজের শক্তির পরিচয়ে কি তার আনন্দ! কিন্তু ওপর থেকে এমন নির্লিপ্তভাবে দেখলে মানুষের ক্ষুদ্রতার কথা আশ্চর্যভাবে মনে প’ড়ে যায়...

এমনতর লেখনী নিয়ে তরতর করে এগিয়ে গেছে এই ভ্রমণ কাহিনী। কখনো প্রকৃতি, কখনো মানুষের জীবনাচার, কখনো সেখানকার রীতিনীতি, সংস্কৃতি ফুটে উঠেছে বিভিন্ন পরিচ্ছেদে। কি নেই এই ভ্রমণ কাহিনী’র বইটিতে? পরতে পরতে পাবেন ক্রিসমাস থেকে শুরু করে ইউথ উৎসব হয়ে আমাদের মুসলমানদের ঈদের উৎসবের খুঁটিনাটি পর্যন্ত, পাবেন লাইব্রেরী থেকে নিয়ে বইয়ের দোকান হয়ে পাঠদান। আছে যোগাযোগের স্থলপথ-জলপথ থেকে শুরু করে টিউব রেলওয়ে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, এমিউজমেণ্ট পার্ক থেকে শুরু করে মিউজিয়াম, লেক-নদী-পাহাড়ের কথা। আছে সেই সময়ের লন্ডনের শিক্ষা, আচার ব্যবহার, খেলাধুলা, শান্তি –শৃঙ্খলা ব্যাবস্থা থেকে শুরু করে খাবার-পানীয় নিয়ে লেখকের অভজারভেশন।

একশত বিশ পৃষ্ঠার এই বইটি বর্তমানে “স্টুডেন্ট ওয়েজ” প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। বইটির দামও খুব বেশী নয়, মাত্র একশত টাকার মত। আজ থেকে পঞ্চযুগ আগেকার ব্রিটিশ জীবনধারা সম্পর্কে জানতে বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি নিরাশ হবেন না।

এবার আমার ব্যাক্তিগত অভিমত বলি। লেখনের পুরো লেখনী জুড়ে লন্ডন শহরের প্রতি এক অতি আশ্চর্য মুগ্ধতা মিশে ছিল। ফলে সেখানকার জীবন ব্যাবস্থার তেমন কোন নেগেটিভিটি লেখনীতে খুঁজে পাওয়া যায় না তেমন একটা। যেমনটা আপনি পাবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র” বইটিতে। এটি সম্পূর্ণরুপে আমার ব্যাক্তিগত অভিমত। এই খুঁতটুকু ছাড়া আমার কাছে বইটি খুবই সুপাঠ্য মনে হয়েছে। প্রায় ছয় মাস পর এই সিরিজে লেখা দিলাম, এখন থেকে চেষ্টা থাকবে মাসে একটা করে হলেও লেখা দেয়ার।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×