somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির খোঁজে (বাংলার জমিদার বাড়ি - পর্ব ১৬)

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলার জমিদার বাড়ি (সকল পর্ব)

ইতিহাস আসলে ঘোলাটে একটা বিষয়, আমরা যারা ইতিহাসের পাতার বর্তমানে অবস্থান করি তারা শতবছরের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে প্রায়ই ঘোলা জলে যেন ডুব সাঁতার কাটি। জমিদার বাড়ির খোঁজে হেথায় সেথায় ঘুরে বেড়িয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার ফলশ্রুতিতে বলতে পার, ইতিহাস আসলে এক পরনির্ভরশীল তথ্যসুত্র, যার উপর আপনার বিশ্বাস করতে হয়, আস্থা রাখতে হয়। তথ্যসুত্র যদি কোন মিথ্যাকে চমৎকার মোড়কে সত্য বলে আপনার নিকট উপস্থাপন করে, আপনার তখন কিছুই করার নেই। কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি’র খোঁজে বেড়িয়ে আমার হয়েছিল সেই দশা। বেশীরভাগ তথ্যসুত্র যখন বলছিল এটা কোন জমিদার বাড়ি নয়, বরং এক ধনাঢ্য এলাকার কিছু তৎকালীন বিত্তশালীদের বসতবাড়ি মাত্র; তখনই জানতে পারলাম উল্টো ঘটনা। সেই ধনবান লোকেরা এই বাড়িগুলো কিনেছিল ঠিকই কিন্তু তা পড়ন্ত এক জমিদার বংশের উত্তরসূরির কাছ থেকে। তাই এগুলো জমিদার বাড়ি বলে কিছু তথ্যসুত্রের যে দাবী তা মোটেও অমূলক নয়।



গত ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ছুটির দিনে সকালবেলা আমি আর ভ্রমণবন্ধু বজলু ভাই মোটর সাইকেলে করে রওনা দেই কেরানীগঞ্জের দিকে, উদ্দেশ্য কলাকোপা-বান্দুরা হয়ে ভাগ্যকুল, মুন্সিগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফিরে আসা। পথে দুই-তিন’টি জমিদার বাড়ির খোঁজে ঢুঁ মারা, যার মধ্যে অন্যতম হল এই কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি। ছুটির দিন বলে দেরীতে ঘুম থেকে উঠে রওনা হতে হতে প্রায় বারোটা বেজে গেল, পথে এক জায়গায় মোটর সাইকেল থামিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করে নিলাম, এরপর যথারীতি লাঞ্চও সেরে নিলাম। অবশেষে আমরা পৌঁছলাম কাঙ্ক্ষিত কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়িতে।





ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের কলাকোপা’র এই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন জমিদার ব্রজেন রায় যার আরেক নাম ছিল সুদর্শন রায়। প্রায় ২০০ বছর পূর্বে কোকিলপেয়ারী’র এই জমিদার ব্রজেন রায় নির্মাণ করেন তার এই কারুকার্যময় জমিদার বাড়ি ‘ব্রজ নিকেতন’। চার একরের উপর জমিতে নির্মিত এই জমিদার বাড়িটি বাগান ঘেরা এক অপরূপ নির্মাণশৈলীতে নির্মিত হয়েছিল, যা আজো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।





কোকিলপেয়ারী জমিদারের ছিল পাঁচ ছেলে। অসমর্থিত সুত্রমতে, জমিদার তার মূল জমিদার বাড়িটি তার ছোট ছেলেকে দিয়ে যান, আর বাকী চার ছেলেদের জন্য আরও চারটি বাড়ি নির্মাণ করে যান। এই বাড়িগুলোকে স্থানীয় লোকেরা তেলিবাড়ি বলে চেনে। এই বাড়ি’র এমন নামকরণের ইতিহাস হল জমিদারের পরবর্তী সময়ে এই বাড়ির মালিকানা জনৈক তেল ব্যবসায়ীর হাতে চলে যায়। যাই হোক না কেন, এই বাড়িগুলোকে জমিদার বাড়ি ছাড়া অন্য কিছু বলে প্রতিয়মান হয় না।





ধারনা করা হয়, ভাগ্যকুলের জমিদার বাড়ির কোন এক বংশধর গোড়াপত্তন করেন এই কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির। প্রায় ২০০ বছরেরও বেশী সময় আগে ব্রিটিশদের কাছ হতে জমিদারি গ্রহণ করেন এই জমিদার যদুনাথ রায়। এখন আমি যে বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানে আছি তা হল কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির নির্মাতা ব্রজেন রায় ওরফে সুদর্শন রায়ের সাথে জমিদার যদুনাথ রায়ের কি সম্পর্ক ছিল তা নিয়ে। যাই হোক, কোন একদিন খুঁজে বের করা যাবে। আসলে এই ব্যাপারে তেমন একটা তথ্যউপাত্ত পাওয়া যায় না কোথাও। বাংলার জমিদার বাড়ি নিয়ে কে কবে মাথা ঘামিয়েছে? :(





জমিদার বাড়ি নিয়ে ধারাবাহিক লেখা শুরু করার পর এই বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। উন্নতবিশ্বে যে সকল স্থাপনা হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষিত হয়, আমাদের দেশে সেইসকল স্থাপনা পড়ে থাকে অবহেলায়, ক্ষয়ে যায় অস্থি-মজ্জা সকল, ঘুণে ধরে বিচূর্ণ হয় ইতিহাসের পাতা। অপূর্ব সকল স্থাপনা আর নির্মাণশৈলী নিয়ে আমাদের বাংলাদেশের আনাচে কানাচেতে পড়ে আছে অসংখ্য জমিদার বাড়ি, রাজবাড়ীসহ আরও কত স্থাপনা। আর এই সব স্থাপনার কিছু কথা এই বোকা মানুষটার ছেঁড়া খাতায় লিখে রাখার প্রয়াস হল এই “বাংলার জমিদার বাড়ী” সিরিজ।





মজার ব্যাপার কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ির সন্নিকটে রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির, শ্রীলোকনাথ সাহা বাড়ি/তেলিবাড়ি/কলাকোপা আনসার ক্যাম্প, উকিল বাড়ি, দাস বাড়ি। আমার ব্যক্তিগত মতামত হল এই সবকয়টি স্থাপনাই কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির অংশ। কেননা তৎকালীন কোন জমিদার বাড়ির শ’পাঁচেকের মধ্যে অন্যকোন ধনাঢ্য ব্যক্তির ভবন নির্মাণ সেই যুগে ছিল অসম্ভব ব্যাপার। কোকিলপেয়ারী জমিদারের এই বিশাল বাড়িগুলো পরবর্তী প্রজন্মের কারো হাত ঘুরে বিক্রি হয় কোন এক আইনজীবী’র কাছে যার মাধ্যমে আরও কিছু আইন পেশাজীবী এই বাড়িগুলো কিনে নেন। ফলশ্রুতিতে বাড়িগুলোর নামকরণ হয়েছে জজবাড়ি, উকিল বাড়ি ইত্যাদি।



ঢাকা হতে নয়াবাজার বুড়িগঙ্গা সেতু হয়ে বা ৩য় বুড়িগঙ্গা সেতু দিয়ে দোহার নবাবগঞ্জের কলাকোপা এসে আপনি যে কাউকে জিজ্ঞাসা করেন জজবাড়ি যাওয়ার পথ, অতি সহজেই পৌঁছে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। মাত্র শখানেক গজের মধ্যে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে সবকয়টি ভবন। আপনি যে কোন এক ছুটির দিনে স্বপরিবারে বেড়িয়ে আসতে পারেন এই চমৎকার জায়গাটি হতে, আশা করি আপনার ভালই লাগবে।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:১৮
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×