somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"লালাখাল" এর সবুজ-নীলের জাদুর জগতে

১৯ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীল জলের লালাখাল যেন সবসময়ই হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রকৃতিপ্রেমী আর সৌন্দর্য পূজারী পর্যটক সকলকে। আর তাইতো শীত গ্রীষ্ম বারো মাসই অসংখ্য পর্যটকের আনাগোনা লালাখালের কোলে। মজার ব্যাপার, একেক ঋতুতে একেক রকম তার সৌন্দর্য, বর্ষার রূপ যদি আপনাকে সম্মোহিত করে দিবে, ওদিকে শীতের সময়ের ঘন নীল জল আপনাকে ধাঁধায় ফেলে দেবে। এমনই এক পর্যটন কেন্দ্র লালাখাল আর তার সংলগ্ন লালাখাল চা-বাগান। আজকের পোস্ট দুই বছর আগে ঘন বর্ষায় লালাখাল আর লালাখাল চা-বাগান ভ্রমণকে কেন্দ্র করে। আবার বর্ষা এসেছে, মন বারবার ছুটে যেতে চাচ্ছে সিলেটের অপার সৌন্দর্যের সব প্রকৃতির মাঝে। কিন্তু মন চাইলেই তো আর সব হয় না, কিছু ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার দরুন নিজ ঘরে বসে বসে এই স্মৃতির জাবর কাটা।







সিলেট সীমান্ত থেকে অতি সন্নিকটে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি, সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। আর সেই এলাকার জইন্তা পাহাড় হতে নেমে আসা জলধারা এই লালাখাল হয়ে এসে মিলিত হয় সিলেটের সারি নদীর সাথে। জানা যায়, ভারতের পারায়ার তর সারং ঝর্ণা থেকে প্রবাহিত জলধারাই এই লালাখাল এবং সারি নদীর পানির উৎস। অসমর্থিত সুত্র মতে, এই সারং ঝর্ণা হতেই সারি নদীর নামকরণ করা হয়েছে। লালাখালের নীলাভ-সবুজ জলের মোহময়ী রূপ, তার সাথে দুই পাশের ছোট ছোট চিরহরিৎ টিলা, আর পুরোটা জায়গা জুড়ে মাথার উপর নীলাকাশ, আপনাকে মুগ্ধ হতে বাধ্য করবে। আর তাইতো প্রতিনিয়ত অসংখ্য পর্যটক ছুটে যান এই মনকাড়া পর্যটন স্পটে।







২০১৩’র আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকের কথা। ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় থেকেই ঝরছিল বারিধারা। সিলেট শহরে যখন গিয়ে পৌঁছলাম ভোরবেলা, তখনো তুমুল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুঁকে এই সাতসকালে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম আমরা চারজনের ছোট দলটি। এতো সকালে কেউই নাস্তা করতে রাজী হল না। সোজা চলে এলাম সোবহানিঘাট, সেখান থেকে জাফলংগামী বাসে করে সোজা চলে এলাম সারিঘাট। এখান থেকে চলে গেলাম সিএনজি নিয়ে নৌকা ঘাটে, সেখান থেকে হাজার টাকায় একটা নৌকা ভাড়া করে আমরা চারজনে ভাসিয়ে দিলাম আমাদের তরী লালাখালের নীল জলে। আকাশ কিন্তু তখন কেঁদে চলেছে ঝিরিঝিরি।







প্রথমেই আমাদের নিয়ে নৌকা চলে এল জিরো পয়েন্টে, যেখানে রয়েছে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত চৌকি। একটা পাথর দেখিয়ে আমাদের নৌকার মাঝি বলল এটা সীমান্ত। আমরা নৌকা থেকে নেমে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কিন্তু সীমান্ত আসলে ডানে, বামে না সোজা কোথায় শেষ হয়েছে বুঝতে পারি নাই আমরা। আমাদের একজন সোজা ছবি তুলতে তুলতে এগিয়ে গেল সামনে এবং সীমানা ক্রস করে ফেলল। আমরা তখনো বুঝি নাই, হঠাৎ দেখি ডান পাশের এক বাঁশঝাড় থেকে চারজন বিজিবি সদস্য এগিয়ে আসছে। এসে তো মহা ঝাড়ি, আমরা কারা, এখানে কেন এসেছি, পরিচয়পত্র দেখা ইত্যাদি হট্টগোল শুরু হল। সব শেষে তারা বুঝতে পারলো আমরা টুরিস্ট এবং না বুঝে সেখান পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম। পরে জানা গেল, ঐ বাঁশঝাড়ের পেছনে আছে ক্যাম্প, সেখানে বিজিবি-বিএসএফ মিটিং চলছিল। তখন একজন বিএসএফ প্রথমে আমাদের দেখতে পায়, সে সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে তার অফিসারদের জানায়। সেখানে বিজিবি অফিসার থাকায় আমরা সে যাত্রায় মহা বিপদ থেকে বেঁচে গেছি, না হলে ওরা নাকি গুলি চালাত!!! বিজিবি অফিসাররা আমাদের মাঝি’কে অনেক বকা দিল, পারলে মারধর করে। কেন আমাদের ঐখানে নৌকা থেকে নামতে দিল? পরে আমরা উনাদের বুঝিয়ে বললাম যে, উনার দোষ নাই, উনি না করেছিলেন। কিন্তু আমরাই জোর করে নেমেছি কিছু ছবি তুলব বলে, পরে সীমান্ত পাথর দেখে বুঝতে পারি নাই কোন দিকে সীমানা শেষ হয়েছে। যাই হোক, সেখান থেকে ভালোয় ভালোয় বিদায় নিয়ে আমরা আমাদের নৌকা বিপরীত দিকে চালনা করে চলে এলাম পরবর্তী গন্তব্য লালাখাল চা-বাগান।

এই সেই সীমানা পাথর, বলেন এটা দেখে কীভাবে কেউ বুঝবে এটা দুই দেশের সীমান্ত চিহ্নিত করার পাথর

তাইতো আমার ভ্রমণসঙ্গী ভদ্রলোক দেশ-কালের সীমানা অতিক্রম করে পাড়ি দিতে মগ্ন ঐ দূরের মায়াবী পাহাড়ের পানে। উনার ডান দিকে ছিল সেই বাঁশঝাড়।

ঐ ভদ্রলোকের আর কি দোষ বলেন? চোখের সামনে এমন মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি থাকলে কার বা হিতাহিত জ্ঞান থাকে বলেন?

শতবর্ষী এই চা-বাগানের নিজস্ব একটা সৌন্দর্য রয়েছে। এর কাঁচা মাটির পথ ধরে ছোট-বড় টিলা আর তার মাঝে মেঘেদের ভেলার ভেসে বেড়ানো যে কোন সৌন্দর্য পিপাসু’র জন্য স্পেশাল কিছু। যেমন নীচের এই গাছটা, যার সৌন্দর্য আমাকে সম্মোহিত করে দিয়েছিল খানিক সময়ের জন্য।



আর আমরা গিয়েছিলাম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, যখন লালাখাল চা বাগানে প্রবেশ করলাম, তখন বৃষ্টি থেমে গিয়ে আকাশে হালকা সূর্যের আলো দেখা দিয়েছে। সবেমাত্র বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মুছে পরিস্কার পরিবেশে চারিদিকের সবুজ প্রকৃতি আর ছোট ছোট মেঘের ছেয়ে থাকা টিলাগুলো সত্যি বিমোহিত করছিল প্রতিক্ষণে।







সদ্য শেষ হওয়া পরিস্কার নীলাকাশের নীচে চোখ ধাঁধানো সবুজ চা-বাগানের চারিপাশটা তখন অপার্থিব মনে হচ্ছিল। আমরা চারজন নিঃশব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম সেই চা-বাগান জুড়ে। হিম শীতল বাতাসে শিরশির অনুভূতিতে ছুঁয়ে যাচ্ছিল মনঃপ্রাণ। টিলাগুলোর চুড়ায় উঠার পর দেখি মেঘে ঢাকা টিলা, যেন মেঘেদের দেশে জন্মেছে সবুজ চারাসকল। এমন সুন্দরের মাঝে বারবার ফিরে যেতে চাই।





















সেই প্রকৃতির মাঝে ঘণ্টা খানেক কাটিয়ে আমরা ফিরে এলাম নৌকোয়, এবার যে ফিরতে হবে। ঘড়ির কাটায় প্রায় বেলা এগারোটা, সারা রাত জার্নি করে এখনো যে হালকা বিস্কিট আর পানি ছাড়া কিছু পেটে ভেট হিসেবে প্রদান করা হয় নাই। তো আর কি? আবার সেই মায়াবী নীল জলের বুক চিরে এগিয়ে যাওয়া আর মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা।





সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×