somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রন্তু'র কালো আকাশ - ১৮ (ধারাবাহিক)

১০ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইদানীং রন্তু’র ক্লাসে মন বসে না, বিশেষ করে শেষের ক্লাস দুটোয় তার খুব হাই উঠে। মনে হয় যেন কয়দিন ধরে না ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়াটা রন্তুর অভ্যেস, ও রাত একদমই জাগতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায় বাসায় সবাই গল্প করছে, রন্তুও খুব আগ্রহ নিয়ে বসল সবার সাথে, সেই বসে বসেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়বে সে, এমনই তার ঘুমের অবস্থা। যদিও স্কুলের কারণে খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। নানু ফজরের নামাজ শেষ করে রন্তুকে ডেকে তোলেন, রন্তু স্কুলের জন্য তৈরি হতে হতে নানু নাস্তা তৈরি করে ফেলেন।

আজকে নাজনীন আপা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় পড়াচ্ছেন, তিনি পরিবেশ পরিচিতি পড়ান। ক্লাসের শুরুতেই উনি বলে দিয়েছেন যে, এটা ফাইনাল পরীক্ষায় থাকবেই থাকবে। ফলে সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে ম্যাডামের কথা শুনছে, যখন ম্যাডাম লিখতে বলছে সবাই লিখে নিচ্ছে। কিন্তু রন্তু কোন কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে না, তার শুধু হাই আসছে আর সেই হাই হাত দিয়ে চেপে রাখতে বার বার দুইহাতে মুখে চেপে ধরছে। ভাগ্যিস এখনো ম্যাডামের চোখে পড়ে নাই। রন্তু আড়চোখে চেয়ে দেখে সবাই লিখে লিখে খাতা ভরে ফেলছে, কিন্তু সে কিছুই লেখে নাই। মনে মনে ভাবল, থাক পরে কারো কাছ থেকে তুলে নেবে। উফ, কখন যে স্কুল ছুটি হবে?

(পূর্ব ঘটনা প্রবাহঃ রন্তু, শায়লা আর জাভেদের একমাত্র সন্তান। জাভেদের সাথে শায়লার প্রনয় থেকে পরিণয়, পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর শায়লা ধীরে ধীরে বুঝতে পারে জাভেদ ভয়ঙ্কর রকমের মানসিকভাবে অসুস্থ। এক সময় মানিয়ে নিতে না পেরে ছোট্ট শিশু রন্তুকে নিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসে। তাদের মিউচুয়ালি ডিভোর্স হয়ে গেছে। মা-বাবার এই টানাপোড়নে শিশু রন্তুর মানসিক জগতের গল্প, সাথে তার নিত্যদিনকার প্যাচালি, এই হল এই গল্পের উপজীব্য। কয়েক মাস আগ পর্যন্ত জাভেদ রন্তুকে স্কুলের গেটে মাসে এক-দুইবার দেখা করতে আসতো, গত মাস ছয়েক আগে শেষবারের মত ছেলেকে দেখতে এসেছে। মানসিক সমস্যাগ্রস্থ জাভেদ পরিবার, আত্মীয় পরিজন হতে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে একাকী জীবন পথে হেঁটে চলেছে। অপর দিকে রন্তুর মা শায়লা এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করছে, যেখানে তার এক সিনিয়র পোস্টের সহকর্মী ইরফানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছে প্রণয়ের দিকে। ইদানীং রন্তুর মাঝে একটি মানসিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে, সে বাবা-মা সহ নিজেদের একটি পরিবার খুব মিস করে। আর সেই অপ্রাপ্তি থেকে সে নিজের মনে একা একা এক কাল্পনিক জগতে বিচরন করে। পিতামাতা’র সম্পর্কের এই টানাপোড়নের সাথে তার শিশু মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া’য় কেমন চলছে আমাদের রন্তুর জগত তা জানার জন্য আসুন এবার আবার শুরু করা যাক)

আজ রন্তুর একেবারেই ক্লাসে মন বসছে না, মনে মনে সে এক্সাইটেড হয়ে আছে এই কয়েকদিন ধরে। কারণ, রন্তুর বড় মামা বিদেশ থেকে আসছে, আগামীকাল। এটা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বাসায় কেমন উৎসব উৎসব ভাব। নীচের উত্তরের দিকের ঘরটা এতদিন রাজ্যের সব জিনিসপত্র দিয়ে বোঝাই ছিল, সেটা এই কয়দিন নানু আর ছোট মামা মিলে পরিস্কার করেছে। মাঝে মাঝে রন্তু নিজেও সাহায্য করেছে। বড় মামা এসে এই ঘরে থাকবে। রন্তু বড় মামাকে যদিও স্বচক্ষে দেখেনি, কিন্তু ছবিতে দেখেছে। ছবি দেখে রন্তুর খুব ভয় লেগেছে, মনে হয় বড় মামা খুব রাগী মানুষ। কেমন ইয়া মোটা একখানা গোঁফ, দেখলেই মনে হয় কোন সিনেমার ভিলেন বুঝি। এই কথা রন্তুর কাউকে বলে নাই, বলবে কিভাবে? এই কথা কি কাউকে বলা যায়।

শেষ ক্লাস ছিল ড্রইং ক্লাস, যদিও আজ স্যার তেমন কিছু আঁকতে দিলেন না। ড্রইং টিচার মানুষ হিসেবে খুব মজার, বেশীরভাগ দিন উনি ড্রইং না করিয়ে মজার মজার সব গল্প করেন। কোন একদিন হয়ত কোন একটা নৌকা ভ্রমণের গল্প বললেন, কোনদিন কোন একটা ডানাকাটা পরীর গল্প। কিন্তু মজার ব্যাপার হল গল্প শেষে স্যার হোমওয়ার্ক ধরিয়ে দেন, সেটাও খুব মজার। যে গল্পটি বলা হল, সেটার উপর ভিত্তি করে পরের ক্লাসে একটা ছবি এঁকে আনতে হবে। রন্তুর খুব মজা লাগে। আজ স্যার গল্প করছেন বনের রাজা সিংহ আর ধূর্ত শেয়ালের একটা কাহিনী নিয়ে। রন্তু খুব মনোযোগ দিয়ে গল্প শুনতে পারছে না, সে চিন্তায় আছে সিংহ আর শেয়ালের ছবি কিভাবে আঁকবে। কেন জানি কোন প্রাণীর ছবি আঁকতে গেলে তার সব তালগোল পাকিয়ে যায়। দেখা যায় গরুর ছবি আঁকতে গেছে, দেখতে হয়ে গেছে ইঁদুরের মত। ছোট মামা এটা নিয়ে রন্তুকে খুব ক্ষ্যাপায়।

ছুটির ঘণ্টা পড়েছে, ছেলে মেয়ে সব একসাথে বেঞ্চে হাত দিয়ে বাড়ি দিয়ে কোরাস গাইছে একসাথে, “ছুটি ছুটি, গরম গরম রুটি; এক কাপ চা, সবাই মিলে খা।” ছোট বয়সে আসলে মানুষের মাঝে একধরণের অদ্ভুত সারল্য থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেগুলো সব কোথায় হারিয়ে যেতে থাকে। তাইতো এই শিশুকালে বলতে পারে, এক কাপ চা, সবাই মিলে খা। কিন্তু এই বোধ বড় হবার পর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কর্পূরের মত হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। রন্তু আর তার সহপাঠীরা সেই সারল্য এখনো ধরে রেখেছে বিধায় আনন্দগীত গাইতে গাইতে তাঁরা স্কুলের মাঠে ধুলোর ঝড় তুলে ছুঁটে যাচ্ছে স্কুল গেটের দিকে। স্কুল ছুটি যেন প্রতিদিনকার এক আনন্দ উৎসব ঐ শিশুগুলোর জন্য। কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে স্কুল গেটে না গিয়ে খেলা শুরুর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কাধের ব্যাগকে মাঠের এক পাশে জড়ো করে।

রন্তু স্কুল গেট দিয়ে বের হয়ে এল, দূর থেকে একটা লোককে দেখে কিছুটা চমকে উঠল। অবিকল বাবার মত দেখতে, পড়নের জামাটাও বাবার মত। ঠিক একই রঙের একটা জামা বাবাকেও পড়তে দেখেছে। রন্তুতো প্রথম দেখাতে খুব খুশী হয়ে উঠেছিল, এতদিন পর তাহলে তার কথা মনে পড়ল বাবার! কিন্তু কয়েক পা এগিয়ে যেতে ভুল ভাঙল, যখন দেখলো লোকটা একটা ছোট্ট মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে এদিকে ঘুরলো। কিছুটা মন খারাপ করেই রন্তু বাড়ির দিকে পা বাড়াল। ইদানীং বাবার কথা রন্তুর একটু কম মনে পড়ে, কিন্তু আজ কেন জানি খুব মন খারাপ হয়ে গেল। সেই খাবারের হোটেলটা পার হয়ে যাওয়ার সময় মনে পড়ে গেল, বাবার সাথে এই হোটেলে বসে পরাটা-দই-মিষ্টি খাওয়ার স্মৃতিগুলো। রন্তু নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করল, সে কাঁদবে না। সবাই তাকে বলে সে নাকি ছিঁচকাঁদুনে, কিন্তু রন্তু জানে সে মোটেও ওরকম না। শুধু কষ্ট পেলে তার চোখে পানি চলে আসে, সেটাও ওর নিজের ইচ্ছাতে না, এমনি এমনি চলে আসে। তো সে কি করবে?

বাসায় এসে রন্তুর মন ভালো হয়ে গেল, বাসায় আরও দুয়েকজন আত্মীয় এসেছেন। আজ রাতে সবাই মিলে বড় মামাকে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যাবে। রন্তু জামা কাপড় পাল্টে নানুর পেছনে ঘুরঘুরে করতে লাগলো, সেও এয়ারপোর্ট যাবে সবার সাথে বড় মামাকে আনতে। নানু’র কথা “না, ছোট মানুষ বাসায় থাক, মামাতো সেখান থেকে সরাসরি এই বাসাতেই আসছে, তখন যত খুশী দেখিস তোর মামাকে মন ভরে”। কিন্তু রন্তুতো মামাকে দেখতে এয়ারপোর্ট যেতে চাচ্ছে না, সে যেতে চায় এয়ারপোর্ট দেখতে, প্লেন দেখতে। আকাশে যখন প্লেনগুলো উড়ে উড়ে যায়, সেগুলো দেখতে এত্তটুকুন লাগে। কিন্তু নীচে যখন থাকে তখন নাকি দেখা যায় প্লেনগুলো ইয়া বড়, ইয়া লম্বা। রন্তদের ক্লাসে ছোটন বলেছে, সেগুলো নাকি ওদের পুরো স্কুলের চাইতেও বড় বড় হয়, ছোটন নিজে দেখেছে। ও তো প্লেনেও চড়েছে, ওর বাবা-মা’র সাথে গেল শীতে যখন কোথায় যেন বেড়াতে গেল তখন। রন্তুর মনে হল, ইস... সেও যদি বাবা-মা’র সাথে ওরকম প্লেনে করে বিদেশ বেড়াতে যেতে পারতো।

রন্তু বাসায় মাকে দেখতে পেল না, তার মানে মা অফিসে গেছে। রন্তু ভেবেছিল বড় মামা আসছে এই উপলক্ষে মা অফিস যাবে না। রন্তু কি করবে ভেবে না পেয়ে ছাঁদে চলে আসল, ছোট মামার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে ছোট মামা শুয়ে শুয়ে একটা বই পড়ছে। রন্তু ঘরে ঢুঁকে ছোট মামার খাটের কোনায় বসল।

‘মামা, কি কর?’

‘ড্যান্স’

‘ধুর, তুমিও দেখি নানুর মত কথা বলছ’

‘বলবই তো, আমি নানুর ছেলে না’

‘হুমম’

‘আর তুই যখন দেখছিস আমি বই পড়ছি, তাহলে জিজ্ঞাসা করছিস কেন?’

‘ওমা, তোমরাও তো জিজ্ঞাসা কর অনেক সময়’

‘এখন বল এখানে কেন এই দুপুরবেলায়, ভাত খেয়েছিস?’

‘না, পরে খাব। মামা...’

‘কি?’

‘আমিও যাব...’

‘কোথায় যাবি?’

‘এয়ারপোর্ট, তোমাদের সাথে বড় মামাকে আনতে’

‘উঁহু, সেখানে শুধু বড় মানুষেরা যাবে। তুই তোর আম্মুর সাথে বাসায় থাকবি।’

‘কেন? আমি গেলে কি হয়?’

‘কিছু হয় না, ছোট মানুষ সেখানে গিয়ে কি করবি? আর অনেকক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করে থাকতে হবে।’

‘আমিও থাকব’

‘উঁহু, রাতের বেলা তুই এমনিতেই ঘুমে কাঁদা হয়ে থাকিস। পরে তোকে টানবে কে?’

‘প্রমিজ, আমি ঘুমাব না। প্লিজ মামা, প্লিজ, আমাকেও নিয়ে চলে না।’ রন্তু মামা হাত ধরে টানতে লাগলো। শেষে বাধ্য হয়ে রন্তুর ছোট মামা শিবলি কথা দিল তাকেও নিয়ে যাবে, কিন্তু শর্ত একটাই ঘুমানো চলবে না। রন্তু খুশীতে লাফাতে লাফাতে নীচে নামল, অনেক ক্ষুধা লেগেছে।

এমন আনন্দের সময়গুলোর জন্য সময় যেন আর কাটতে চায় না। রন্তু সেই দুপুর থেকে অস্থির হয়ে আছে কখন রাত নামবে। ছোট মামা বলেছে, তারা রাত আটটার দিকে রওনা দিবে, বড় মামার প্লেন নাকি রাত এগারোটার দিকে ল্যান্ড করবে। রন্তু মনে মনে উত্তেজিত হয়ে আছে এতো সামনে থেকে প্লেন দেখতে পাবে বলে। সারাটা বিকেল একা একা ছাঁদে ঘুরে বেড়ালো, সন্ধ্যের আগে আগে ছাদ হতে নীচে নেমে এসে দেখে মা অফিস থেকে ফিরেছে। মাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে, মুখ কেমন গোমড়া করে বসে আছে। রন্তু ধীর পায়ে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

‘মা, তুমিও চল না?’

‘কোথায়?’ শায়লা বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকাল

‘এয়ারপোর্ট, বড় মামাকে আনতে।’

‘বড় মামা কি ছোট্ট বাবু, তাকে আনতে সবার এয়ারপোর্ট যেতে হবে?’ শায়লার গলার স্বর উচ্চগ্রামে উঠেছে।

রন্তু গুটিগুটি পায়ে ঘরে থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল, শায়লা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমারও কোথাও যেতে হবে না, তুমি আমার সাথে বাসায় থাকবে’

‘কিন্তু আমি যাব মা, ছোট মামা বলেছে।’

‘আমি বলছি তুমি যাবে না, তাই যাবে না’

‘আমি যাব, যাব, যাব’ রন্তু মুখ গোমড়া করে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল। শায়লা উঠে এসে ছেলের গায়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল। রন্তুর নানু ঠিক সে সময় এইঘরে এসে উপস্থিত, উনি এগিয়ে এসে রন্তুকে ধরে ফেললেন।

‘তুই ছেলেটিকে মারলি কেন?’ নানু রাগী চোখে রন্তুর মায়ের দিকে চেয়ে কথাটি বললেন।

‘মুখে মুখে কথা বললে বেয়াদপ ছেলে এমনই মার খাবে’

‘ও কি এমন কথা বলেছে তোকে, শুনি হ্যাঁ?’

‘মা, আমি তোমার সাথে এখন ঝগড়া করতে পারবো না, তুমি প্লিজ যাও’

‘তুই অন্যজনের ঝাড়, ছোট্ট ছেলেটার উপর ঝাড়ছিস কেন?’

‘মা ঘ্যানর ঘ্যানর করো না তো...’

‘এই রন্তু তুই ছোট মামার ঘরে যা, আমি তোকে নিয়ে যাব, দেখি কে কি করতে পারে।’ নানু গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। মা খোলা জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে, চোখের কোনে আলোয় চিকচিক করছে জমে থাকা জলকণা। রন্তু কাঁদতে কাঁদতে ছাঁদে চলে গেল।

রাতের প্রথম প্রহরের এই আলো আঁধারির মাঝে নিঃশব্দে রন্তু কাঁদতে লাগলো। মা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে দিনদিন। কিছু হলেই কেমন রেগে যায়, মাঝে মাঝেই রন্তুর গায়ে হাত তোলে। রন্তুর কিছু ভালো লাগছে না, তার কোথাও যেতে মন চাচ্ছে না, এই রাতের হালকা হয়ে আসা আঁধারের মাঝে আজীবনের জন্য হারিয়ে যেতে মন চাইছে। বাবা-মা দুজনই খুব খারাপ, খুব পচা। তারা কেউ রন্তুকে ভালবাসে না, কেউ না।

শিবলি তার ঘর হতে বের হয়ে দেখতে পেল ছাঁদের কোনায় অন্ধকারের মাঝে কে যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এগিয়ে গিয়ে দেখে রন্তু। বুঝতে বাকী রইল না, আবার নিশ্চয়ই তার বড় বোন মেরেছে ছেলেটাকে। ইদানীং এই বদভ্যাস হয়েছে বড় আপার, কথায় কথায় মেজাজ গরম হবে, আর হাতের সামনে পেলে সেই রাগ ঝাড়বে ছেলেটার গায়ে হাত তুলে। আজ আবার কি হল কে জানে। শিবলি এগিয়ে গেল রন্তুর কাছে।

‘কিরে রন্তুর আঁধারের মাঝে বসে বসে গান গাইছিস কেন?’

‘আমি গান গাইছি না...’ ছোট মামার কণ্ঠ শুনতে পেয়ে চোখ মুছল রন্তু।

‘কিন্তু আমি যে শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। তবে কি কান্না করছিলি?’

‘না...’ বলে রন্তু নিজে লজ্জা পেল, ছোট মামা তার কান্না শুনে ফেলেছে। এখন নিশ্চয়ই তাকে ক্ষ্যাপানো শুরু করবে। কিন্তু রন্তুকে অবাক করে দিয়ে ছোট মামা বলল, ‘চল, চল, নীচে চল। দেরী হয়ে যাবে, ঝটপট তৈরি হয়ে নে। গাড়ী চলে এসেছে।’ রন্তুর একবার ইচ্ছে হল বলে, ‘আমি যাব না, তোমারা যাও’। কিন্তু প্লেন দেখার লোভ সামলাতে পারল না, ফলে অভিমান দূরে ঠেলে ছোট মামার সাথে নীচে নেমে এল।

মাইক্রোবাসে করে রন্তুর খুব কম ঘুরাঘুরি করা হয়েছে। একবার কার বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় যেন চড়েছিল মনে নেই। গাড়ির ভেতর জানালার পাশে বসে বাইরের নিয়ন আলোয় রাস্তাগুলো দেখতে লাগলো। এই হলদে আলোর বাতিগুলো রন্তুদের ওখানে নেই, এগুলো শুধু এই বড় রাস্তাগুলোতে আছে বুঝি। রন্তু আগে কখনো দেখে নাই। সেই ঘোর লাগা নিয়ন আলোয় প্লেন দেখা থেকে শুরু করে নিজে প্লেনে করে বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে একসময় ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।

'রন্তু'র কালো আকাশ' এর আগের সব পোস্টগুলোঃ
রন্তু'র কালো আকাশ - ১
রন্তু'র কালো আকাশ - ২
রন্তু'র কালো আকাশ - ৩
রন্তু'র কালো আকাশ - ৪
রন্তুর কালো আকাশ - (১-৫)
রন্তু'র কালো আকাশ - ৬
রন্তু'র কালো আকাশ - ৭
রন্তু'র কালো আকাশ - ৮
রন্তু'র কালো আকাশ - ৯
রন্তু'র কালো আকাশ - ১০
রন্তু'র কালো আকাশ - ১১
রন্তু'র কালো আকাশ - ১২
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৩
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৪
রন্তু'র কালো আকাশ (পর্ব ১-১৪ ফিরে দেখা)
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৫
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৬
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৭
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×