somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রন্তু'র কালো আকাশ - ১৯ (ধারাবাহিক)

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অসময়ের ঘুম বড্ড বাজে একটা জিনিস, যা রন্তুর খুব খারাপ লাগে। দিনের বেলা ঘুমালে পরে ঘুম ভাঙ্গার পর কেমন সব কিছু অদ্ভুত লাগে। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা, কেমন হালকা হয়ে যায় যেন। অদ্ভুত এক অস্বস্তিকর অনুভূতি, রন্তু এটা বলে বোঝাতে পারবে না। আর তারচেয়ে আরও বেশী বিরক্তিকর হল ঘুম না আসা সত্ত্বেও বিছানায় শুধু শুধু শুয়ে থাকা। স্কুল বন্ধের দিনগুলোতে নানু অথবা মায়ের পীড়াপীড়িতে রন্তুকে মাঝে মাঝে ঘুমের ভান করে দুপুর বেলা শুয়ে থাকতে হয়। বিকেল না হওয়া অবধি এই মটকা মেরে পড়ে থাকা কি যে কষ্টকর, উফ... তখন সময় যেন কাটতেই চায় না। আলতো করে চোখের পাতা ফাঁক করে ঘড়ির দিকে তাকালে দেখতে পায় ঘড়ির কাটাগুলো সব যেন থেমে আছে, কোন নড়াচড়া নেই। মাঝে মাঝে রন্তুর সন্দেহ হয়, ঘড়িগুলো নষ্ট হয়ে গেল কি না। কিন্তু রন্তুকে অবাক করে দিয়ে বিকেল বেলা থেকে আবার যেন ঘড়ির কাটাগুলো তরতর করে এগুতে থাকে।

কিন্তু গত তিনদিন ধরে রন্তুর সারাক্ষণ বিছানায় কাটাতে হয়েছে। প্রথমদিনের কথা অবশ্য মনে নেই, সেদিন নাকি ও অচেতন ছিল। তারপরের দুইদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে রন্তু অধৈর্য হয়ে গিয়েছিল। থেকে থেকে নানুকে সারাক্ষণ পেরেশান করেছে, “ও নানু, বাসায় যাব কখন”। নানু চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে একই উত্তর দিয়েছে, ‘আজীবনের জন্য তোকে এখানে রেখে যাব, বুঝবি মজা।’ আজ সকালে হাসপাতাল থেকে বাসায় এসেছে, কিন্তু বাসায় এসেও নিস্তার নেই। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে, এভাবে নাকি আরও এক সপ্তাহ তাকে শুয়ে শুয়ে রেস্ট নিতে হবে। ভাবতেই রন্তুর কান্না পাচ্ছে, কেন যে মণ্টির সাথে সেদিন মারামারি করতে গেল। কিন্তু রন্তুর কি দোষ, মণ্টি তো তাকে ঐসব বাজে বাজে কথা বলেছিল।

(পূর্ব ঘটনা প্রবাহঃ রন্তু, শায়লা আর জাভেদের একমাত্র সন্তান। জাভেদের সাথে শায়লার প্রনয় থেকে পরিণয়, পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর শায়লা ধীরে ধীরে বুঝতে পারে জাভেদ ভয়ঙ্কর রকমের মানসিকভাবে অসুস্থ। এক সময় মানিয়ে নিতে না পেরে ছোট্ট শিশু রন্তুকে নিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসে। তাদের মিউচুয়ালি ডিভোর্স হয়ে গেছে। মা-বাবার এই টানাপোড়নে শিশু রন্তুর মানসিক জগতের গল্প, সাথে তার নিত্যদিনকার প্যাচালি, এই হল এই গল্পের উপজীব্য। কয়েক মাস আগ পর্যন্ত জাভেদ রন্তুকে স্কুলের গেটে মাসে এক-দুইবার দেখা করতে আসতো, গত মাস ছয়েক আগে শেষবারের মত ছেলেকে দেখতে এসেছে। মানসিক সমস্যাগ্রস্থ জাভেদ পরিবার, আত্মীয় পরিজন হতে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে একাকী জীবন পথে হেঁটে চলেছে। অপর দিকে রন্তুর মা শায়লা এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করছে, যেখানে তার এক সিনিয়র পোস্টের সহকর্মী ইরফানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছে প্রণয়ের দিকে। ইদানীং রন্তুর মাঝে একটি মানসিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে, সে বাবা-মা সহ নিজেদের একটি পরিবার খুব মিস করে। আর সেই অপ্রাপ্তি থেকে সে নিজের মনে একা একা এক কাল্পনিক জগতে বিচরন করে। পিতামাতা’র সম্পর্কের এই টানাপোড়নের সাথে তার শিশু মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া’য় কেমন চলছে আমাদের রন্তুর জগত তা জানার জন্য আসুন এবার আবার শুরু করা যাক)

গত চারদিন আগের কথা, সেদিন বুঝি বৃহস্পতিবার ছিল, সপ্তাহের শেষদিন। স্কুল ছুটি শেষে সব ছেলেমেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় পরের ছুটির দিনের কথা ভেবে। স্কুল শেষে সবাই এইদিন স্কুলের মাঠে খেলা করে, এটা প্রতি সপ্তাহান্তের ঘটনা। রন্তু কোন খেলায় তেমন আগ্রহ পায় না, সে সোজা বাসায় চলে আসে। আগে বাবা দেখা করতে আসতো প্রতি বৃহস্পতিবারেই, তখন স্কুল শেষে বাবার সাথে দেখা করতো। এখন তো বাবাও আসে না, রন্তু মাঝে মাঝে একাএকা রাস্তায় কোন কোনদিন হেঁটে বেড়ায়। সেদিন স্কুলের সব ছেলেপুলে রন্তুকে ধরল তাদের সাথে ফুটবল খেলতে। একবার রন্তুরও ইচ্ছে হল তাদের সাথে খেলায় যোগ দিতে, কিন্তু পরক্ষণেই সেই ইচ্ছে মিইয়ে গেল। অনেক জোরাজুরির পরও যখন রন্তু খেলতে রাজী হচ্ছিল না, তখন মণ্টি হঠাৎ বলে বসল, ‘কেন রে? আজ কি তোর বাবা আসবে? তোর বাবা তো আর কক্ষনো আসবে না’ বলে হো হো করে হেসে উঠলো, তার সাথে বাকী অনেকেই।

রন্তু মাথা নিচু করে স্কুল গেটের দিকে চলে আসছিল, তখন পেছন হতে মণ্টি আবার বলে উঠলো, ‘তোর বাবা তো তোকে ফেলে পালিয়েছে, এই রন্তু তোর বাবা নাকি পাগল হয়ে গেছে...’ এইটুকু শুনেই রন্তুর মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। দৌড়ে পেছনে গিয়ে মণ্টির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, এলোপাথাড়ি চর-থাপড়, ঘুষি মারা আরম্ভ করে দিল। সবাই তখন তাকে থামাতে এগিয়ে গেল, কিন্তু তখন রন্তুর গায়ে যেন মোষের শক্তি, বাচ্চার দল রন্তুকে থামাতে হয়রান। এরই মাঝে রন্তু হাত ছাড়িয়ে আবার ছুটে গিয়ে মণ্টিকে মাথা দিয়ে গুঁতো দেয়ার মত করে আঘাতের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, মণ্টি নিজেকে বাঁচাতে সরে গেলে রন্তু গিয়ে পড়ে পাশের একটি দেয়ালের উপর। সরাসরি মাথা গিয়ে আঘাত করে দেয়ালে। ততক্ষণে স্কুলের দারওয়ান এবং দুতিনজন টিচার ছুটে এসেছে। কিন্তু রন্তু দেয়ালে আঘাত পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে জ্ঞান হারাল। স্কুল হতে তাকে সরাসরি স্কুলের পাশের ফার্মেসীতে নেয়া হল প্রথমে, খবর দেয়া হল বাসায়। ছোট মামা আর নানু সাথে সাথে স্কুলে হাজির হল, সেখান থেকে রন্তুকে নেয়া হল হাসপাতালে। ডাক্তাররা বলেছে আঘাত গুরুতর ছিল, আরেকটু হলে মাথার ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারতো। ডাক্তার আর বাসার সবাই শঙ্কায় কাটিয়েছে সেইদিন, ডাক্তাররা বলেছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে না আসলে ভয়ের কথা। কিন্তু সবার দুশ্চিন্তা দূর করে রাতের দিকে রন্তু চোখ খুলে তাকিয়েছিল এবং খুব অবাক হয়ে আবিস্কার করেছিল সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।

এরপর দুইদিন দুইরাত্রি হাসপাতালের বিছানায় রন্তুকে শুয়ে থাকতে হয়েছে, গিলতে হয়েছে বিস্বাদ সব ঔষধ। না করলেই বিপদ, ইনজেকশন দেয়া হবে... শুনেই রন্তুর কান্না পেয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে ভদ্র ছেলের মত সব ঔষধ বিনাবাক্যে গিলতে হয়েছে তাকে। শুয়ে থাকার কারণেই বুঝি তার খুব নিজেকে দুর্বল লাগতো, নানুকে একথা বলতেই নানু মুখ ঝামটা মেরে বলেছিল, ‘আরও মোষের মত গুঁতো মারতে যা মানুষকে’

‘কিন্তু নানু আমি ইচ্ছে করে ওকে গুঁতো মারতে যাই নাই’

‘তোকে কি কোলে করে ওরা গুঁতো মারতে নিয়ে গিয়েছিল’

‘না, ওরা আমাকে ধরে রেখেছিল; আমি যেন মণ্টিকে না মারতে পারি’

‘তুই কেন মণ্টিকে মারতে গেলি, গুন্ডা হচ্ছিস দিন দিন?’

‘মণ্টি বাবাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছিল।’

‘কি এমন বাজে কথা বলল যে ছেলেটাকে এমন করে মারতে গেলি?’

‘ও বাবাকে পাগল বলেছিল...’

‘তো কি হয়েছে, তোর পাগল বাবাকে ঐটুকু বাচ্চা ছেলেও বুঝেছে তোর বাবা বদ্ধ পাগল’

‘নানু বাবাকে পাগল বলবে না কিন্তু...’ রন্তুর মুখ ভার হয়ে গেল।

‘কেন? আমাকেও মহিষ সেজে গুঁতো দিবি তোর বাবাকে পাগল বললে?’ নানু বিরক্তি নিয়ে বলল। রন্তু আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু নানু ওকে আর কোন কথা বলতে দেয় নাই। ডাক্তার নাকি বলেছে কোন কথাবার্তা না বলে চুপচাপ শুয়ে শুয়ে রেস্ট নিতে। কিন্তু এভাবে শুয়ে শুয়ে রেস্ট নিতে ভাল লাগে না। এরই মাঝে বড় মামাকে কয়েকবার দেখেছে রন্তু হাসপাতালে, রন্তুকে দেখতে এসেছিলেন। বড় মামার চেহারা দেখেই রন্তুর খুব ভয় লাগছিল, কেমন রাগী রাগী। রন্তুর বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে কেমন গম্ভীর গলায় বলছিল, ‘কিরে এতো রাগ কেন? আর মারামারি করা কেন? যারা মারামারি করে তারা তো খুব বাজে ছেলে। তুইও খুব বাজে ছেলে হয়েছিস, একেবারে তোর বাবার মত’ রন্তুর কথাগুলো মোটেও ভালো লাগে নাই। বড় মামাকে রন্তুর দিন দিন আর পছন্দ হচ্ছে না।

যেদিন বড় মামা দেশে এসেছিল, সেদিন রন্তু খুব উৎফুল্ল ছিল বড় মামাকে নিয়ে। কিন্তু বড় মামার আসার পর থেকে সে যতই মামাকে দেখেছে, ততই হতাশ হয়েছে। মামা আসার কয়েকদিন পর একদিন সকালবেলা গুটিগুটি পায়ে বড় মামার ঘরে গেল, মামা খালি গায়ে ভুসভুস করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। রন্তুর দেখেই কেমন পচা একটা অনুভূতি হল। বড় মামা সব কথাই কেমন যেন ঝাড়ি দিয়ে বলে, আর মজার একটা ব্যাপার হল সব কথার শুরুতে অথবা শেষ একটা শব্দ বলবেই বলবে, সেটা হল, ‘হুহ...’। বড় মামার কিছু কথার নমুনা দেয়া যাক,

‘এই রন্তু তুই পড়ালেখা ঠিকমত করছিস তো, হুহ...’

‘হুহ... রন্তু দিনদিন অনেক দুষ্ট হয়ে যাচ্ছিস’

‘হুহ... দেখ তোর জন্য এই খেলনাটা এনেছি, পছন্দ হয়েছে? হুহ...’

‘এই রন্তু, তোর মাকে একটু আমার ঘরে আসতে বলতো হুহ...’

‘হুহ... দেখত তোর নানুর রান্না শেষ হল কি না’

রন্তুর মনে হয় বড় মামার শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, তাই প্রতি কথার শুরুতে অথবা শেষে উনি যখন শ্বাস নেন তখন সেটা হুহ... বলে শোনা যায়। এই ব্যাপারটা নিয়ে ছোট মামার সাথে কথা বলতে হবে, ছোট মামা নিশ্চয়ই ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবে। ছোট মামার কাছে সব সমস্যার ব্যাখ্যা আছে। এই যে, সবাই বাবাকে পাগল বলে, যা রন্তুর একটুও শুনতে ভালো লাগে না। ছোট মামা কিন্তু বলেছে, বাবা আসলে পাগল না। উনি হচ্ছেন সবার থেকে একটু ভিন্নরকমের মানুষ। আমরা সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা। তাই সাধারণ মানুষ বাবাকে পাগল বলে ভেবে স্বস্তি পায়। কিন্তু বাবা পাগল না, একটু ভিন্নরকমের ভালো একটা মানুষ। এই কারণেই রন্তুর ছোট মামাকে এতো পছন্দ, ছোট মামার সাথে রন্তুর মতের অনেক মিল আছে। ছোট মামা হাসপাতালের সেই কয়টা দিন ছোট মামা রন্তুর সাথেই কাটিয়েছে বলা চলে। রন্তুর ঔষধপত্র থেকে শুরু করে রাতে তার সাথে থেকেছেও। দিনের বেলা রন্তুর ঘুম না আসলে, রন্তু যখন ছটফট করেছে শুয়ে শুয়ে, তখন ছোট মামা খুব নিচু স্বরে রন্তুকে কত কত গল্প শুনিয়েছে। নার্স দেখলেই বলেছে, উঁহু কোন কথা নয়, রোগীকে রেস্ট নিতে দিন।

এই কয়দিনে বড় মামা’র পর সবচেয়ে কম কাছে পেয়েছে মা’কে। মা বুঝি রন্তুর উপর খুব রাগ করে আছে। যেদিন হাসপাতাল থেকে বাসায় আসলো, তার আগেরদিন মা বিকেল বেলা অফিস থেকে রন্তুকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিল। রন্তু তখন ঘুমিয়ে ছিল, মায়ের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, কিন্তু চোখ না খুলে মটকা মেরে পড়ে ছিল। মায়ের শরীরের সেই মিষ্টি ঘ্রাণটা হাসপাতালের কড়া ফিনাইলের গন্ধের মাঝেও রন্তু টের পাচ্ছিল ঠিকই। চোখ খুলে তাকাবে কি তাকাবে না, এই নিয়ে যখন রন্তু দোলাচালে ভুগছে, তখন শুনতে পেল মা নানুকে বলছে, ‘হাজার হলেও রক্তের টান, বাবাকে পাগল বলেছে বলে ছেলে নিজের মাথা ফাটিয়ে প্রতিবাদ করতে গেছে’

‘ছিঃ শায়লা, এসব কি বলিস। ও বাচ্চা একটা ছেলে’

‘মা, তুমি বুঝবে না, ওর মাঝেও আমি জাভেদের ছায়া ভয়াবহভাবে দেখতে পাই।’

‘আলাই বালাই সাট, কিসব বাজে চিন্তা তোর মাথায়’

‘বাজে চিন্তা না মা, দেখো ও ঠিক বাবার মতই হবে। আমারই পোড়া কপাল, জাভেদ আমাকে জ্বালিয়েছে, এখন সারাজীবন এই ছেলেও আমাকে জ্বালাবে’ এইটুকু বলেই মা চাপা স্বরে কেঁদে উঠলো। শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে হাসপাতালের বারান্দার দিকে চলে গেল। রন্তু চোখ না খুলে ঘুমের ভান করে পড়ে রইল আর মনে মনে বলল, ‘মা আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দেব না, বিশ্বাস কর। কখনো না। আমি বাবার মত হব না, তুমি যেমন চাইবে, তেমনই হব’।

রন্তু বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো, নামতেই মাথাটা কেমন একটু চক্কর দিল যেন। সবকিছু কেমন মৃদু দুলে উঠলো যেন, কিন্তু তা এক মুহূর্তের জন্য। একটু দাঁড়িয়ে ধাতস্ত হতে যেন নিজের মাঝে বল পেল, খুব ধীর পায়ে ঘরের থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় এল। এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে বলে, নানু বুঝি নানুর ঘরে, শুয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। বড় মামার ঘর হতে শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, তার মানে মামা ঘরেই আছে। ছোট মামা কি বাসায় আছে? রন্তু একবার ভাবল ছাঁদে গিয়ে দেখে আসে, কিন্তু পর মুহূর্তে সেই চিন্তা বাদ দিল। এই দুর্বল শরীর নিয়ে ছাঁদে যেতে পারবে না, হয়তে আবার সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যাবে। রন্তু ধীর পায়ে বড় মামার ঘরে গেল। রন্তুকে দেখে বড় মামা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। বড় মামা তার বিদেশ থেকে আনা বড় বড় ব্যাগগুলো খুলে কি যেন গুছাচ্ছে। কাজ করতে করতেই রন্তুর সাথে কথা বলা শুরু করল,

‘কিরে, এখন কি অবস্থা?’

‘ভাল...’ রন্তু শুকনো মুখে বলল। বড় মামা কথা বললেই মনে হয় যেন ঝাড়ি দিচ্ছে।

‘মাথা ব্যাথা করে? হুহ...’

‘উঁহু’

‘ভাল। শুয়ে থাক গিয়ে, ডাক্তার বলেছে এক সপ্তাহ ফুল রেস্ট। বুঝলি, হুহ...’

‘হুহ... বুঝেছি।’ বলেই রন্তু আঁতকে উঠলো, সে বড় মামাকে নকল করছে, হুহ... বলেছে। আল্লাহ্‌, এখনই বুঝি বড় মামা দিবে একটা রাম চড়। ছোট মামা বলেছে, বড় মামা রেগে গেলে নাকি রাম চড় লাগায়, ছোট মামা এমন কি মা’ও সেই চড় খেয়েছে। কিন্তু রন্তু অবাক করে দেখল বড় মামা তার ব্যাগ নিয়েই ব্যস্ত।

‘কিছু বলবি?’

‘নাহ...’

‘তাহলে গিয়ে শুয়ে থাক, যা রেস্ট নে। আমি একটু ব্যস্ত আছি, বুঝলি। হুহ...’

রন্তু ফিক করে হেসে দিয়ে ঘাড় কাঁত করে সম্মতি জানিয়ে বড় মামার ঘর থেকে বের হয়ে এল। খুব ইচ্ছে হচ্ছে ছাঁদে যেতে, কিন্তু তাকে কে নিয়ে যাবে? ছোট মামাকে ডাকা গেলে ভাল হত, মামা ছাঁদে নিয়ে যেত। একবার ভাবল নানুকে ডাকে, কিন্তু সেই চিন্তা বাদ দিল। নানু এসে বলবে শুয়ে থাকতে, এতো ছাঁদে বেড়াতে হবে না। রন্তুর হঠাৎ করেই বাবাকে মনে পড়ল, আচ্ছা বাবা এখানে থাকলে কি ওকে নিয়ে ছাঁদে যেত। রন্তুর ধারণা বাবা অবশ্যই নিয়ে যেত, যদিও মুখটা খুব গম্ভীর করে রাখত। বাবার সাথে রন্তুর যতটুকু স্মৃতি মনে পড়ে, সবটুকু জুড়ে বাবা খুব গম্ভীর। কিন্তু রন্তু জানে, বাবা আসলে রন্তুকে খুব আদর করে, কিন্তু মুখটা খুব গম্ভীর করে রাখে। সবাই সেটা দেখে ভাবে, বাবা খুব রাগী মানুষ। কিন্তু রন্তুর বিশ্বাস বাবা মোটেও তেমন নয়, বাবা অনেক ভাল একজন মানুষ। কিন্তু সবাই বাবাকে ভুল বুঝে, কিন্তু রন্তু কখনো ভুল বুঝবে না। রন্তু একটু বড় হলে, বাবাকে ধরে নিয়ে আসবে বাসায়, মা হাজারো রাগ করলেও লাভ হবে না। রন্তু জোর করে বাবার সাথে মা’র মিল করিয়ে দেবে, রাগ ভাঙ্গিয়ে দিয়ে বাবা-মা’কে সাথে নিয়ে তাদের নিজের বাসায় ফিরে যাবে। হুট করেই রন্তুর মনটা খুব ভালো হয়ে গেল, সে ধীরে ধীরে তার নিজের ঘরের বিছানায় ফিরে গেল। শুয়ে শুয়ে এই মিষ্টি স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যেন আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

'রন্তু'র কালো আকাশ' এর আগের সব পোস্টগুলোঃ
রন্তু'র কালো আকাশ - ১
রন্তু'র কালো আকাশ - ২
রন্তু'র কালো আকাশ - ৩
রন্তু'র কালো আকাশ - ৪
রন্তুর কালো আকাশ - (১-৫)
রন্তু'র কালো আকাশ - ৬
রন্তু'র কালো আকাশ - ৭
রন্তু'র কালো আকাশ - ৮
রন্তু'র কালো আকাশ - ৯
রন্তু'র কালো আকাশ - ১০
রন্তু'র কালো আকাশ - ১১
রন্তু'র কালো আকাশ - ১২
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৩
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৪
রন্তু'র কালো আকাশ (পর্ব ১-১৪ ফিরে দেখা)
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৫
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৬
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৭
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৮
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×