এখনো শীত আসার অনেক বাকী, কিন্তু আজ সারাদিন রন্তুর কেমন শীত শীত অনুভূতি হচ্ছে। মন হচ্ছে শীত বুঝি এসেই পড়ল বলে। শীতকালে বাবু হয়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোলাগার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। শীতের সকালে খুব ভোরবেলা একা একা ছাঁদে এসে কুয়াশার চাঁদর ভেদ করে সূর্য ওঠার স্মৃতি মনে পড়লে মনটা কেমন অদ্ভুত রকমের বিষণ্ণতায় ছেয়ে যায়। ছোট মানুষের ছোট অনুভূতি, কিন্তু তার গভীরতা? কিছু কিছু মানুষ জন্মে পৃথিবীতে যারা খুব অল্প বয়সেই অনেক বেশী মানসিক গভীরতায় পৌঁছে যায়। রন্তু’র ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। কিন্তু এই বয়সে তা বুঝে ওঠার ক্ষমতা তার হয় নাই। আর তাইতো এই মানসিক গভীরতা নিয়ে বেড়ে উঠছে আমাদের আগামীর রন্তু। আজকের দিনে সে শুধু বুঝতে পারে, থেকে থেকে তার মনটা কেন যেন খারাপ হয়ে যায়, অদ্ভুত এক বিষণ্ণতায় গ্রাস করে তাকে। তখন কিছুই ভালো লাগে না, খুব কান্না পায়, মনে হয়ে জোরে জোরে কিছুক্ষণ কান্না করতে পারলে মনটা ভাল হয়ে যেত। কিন্তু কোন মানুষ তো আর এমনি এমনি কান্না করতে পারে না, একটা কারণ লাগে। তাইতো রন্তু মন ভার করে ছাঁদে হাঁটাহাঁটি করছে সেই বিকেল বেলা থেকে, এখন সন্ধ্যা প্রায় ফুরিয়ে গেল বলে। কিন্তু আজ রন্তুকে কেউ খোঁজ করছে না, আজ নয়, কয়েকদিন ধরেই রন্তু একটা অদ্ভুত স্বাধীনতা ভোগ করছে। মা কিংবা নানু, কেউই তাকে তেমন ঘাঁটাচ্ছে না। রন্তুর যখন ইচ্ছে পড়তে বসেছে, যখন ইচ্ছে খাচ্ছে, ঘুমুচ্ছে। এমন কি গত সপ্তাহে একদিন স্কুল কামাই দিল। মা কিছুই জিজ্ঞাসা করল না, শুধু নানু একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, “কিরে আজ স্কুল গেলি না?” উত্তরে রন্তুর শুধু বলেছিল, “না, আজ স্কুল যেতে মন চাচ্ছে না।” ব্যাস, এইটুকুই। রন্তু অবাক হচ্ছে, সাথে মজাও পাচ্ছে। আগে হলে নানু’র শত জেরা চলত, কেন যাবে না স্কুল? শরীর খারাপ কি না? পড়ার ক্ষতি হবে... এরকম আরও রাজ্যের প্রশ্নবানে প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে যেত রন্তুর। কিন্তু এখন সেগুলোর কিছুই হচ্ছে না। এই যে রন্তু সন্ধ্যার পরেও ছাঁদে আছে, এটা নিয়ে আজ কেউ কোন কথা বলছে না। মা অফিস থেকে সেই বিকেল বেলাই বাসায় এসেছে, রন্তু তখন ঘরে বসেছিল আঁকার খাতা নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ মা আর নানুকে কোন একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে দেখে ছাঁদে চলে এসেছে। ইদানীং প্রায় প্রতিদিনই মা আর নানুকে ঝগড়া করতে দেখা যায়, কি সব বাজে বাজে কথা বলে যে... রন্তুর কিছু ভাল লাগে না। তাদের ঝগড়া শুরু হতেই রন্তু ছাঁদে চলে এসেছে, সেই তখন থেকে এখন পর্যন্ত ছাঁদেই আছে। আজ ছোট মামা বাসায় নেই, কোথাও গেছে, তার ঘরটা যথারীতি হাট করে খোলা। রন্তুর একবার ইচ্ছে হল সেখানে গিয়ে বসে কিছুক্ষণ, মামার ঘরটা তার বড়ই পছন্দ। এরকম একটা ঘর তার চাই ই চাই, বড় হলে এরকম একটা ঘর তার থাকতে হবে। রন্তু মনে মনে প্রায়ই তার সেই ঘরটির একটা ছবি আঁকে। সেই ঘরে সে একা, আর কেউ না, শুধু সে একা থাকবে।
(পূর্ব ঘটনা প্রবাহঃ রন্তু, শায়লা আর জাভেদের একমাত্র সন্তান। জাভেদের সাথে শায়লার প্রনয় থেকে পরিণয়, পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর শায়লা ধীরে ধীরে বুঝতে পারে জাভেদ ভয়ঙ্কর রকমের মানসিকভাবে অসুস্থ। এক সময় মানিয়ে নিতে না পেরে ছোট্ট শিশু রন্তুকে নিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসে। তাদের মিউচুয়ালি ডিভোর্স হয়ে গেছে। মা-বাবার এই টানাপোড়নে শিশু রন্তুর মানসিক জগতের গল্প, সাথে তার নিত্যদিনকার প্যাচালি, এই হল এই গল্পের উপজীব্য। কয়েক মাস আগ পর্যন্ত জাভেদ রন্তুকে স্কুলের গেটে মাসে এক-দুইবার দেখা করতে আসতো, গত মাস ছয়েক আগে শেষবারের মত ছেলেকে দেখতে এসেছে। মানসিক সমস্যাগ্রস্থ জাভেদ পরিবার, আত্মীয় পরিজন হতে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে একাকী জীবন পথে হেঁটে চলেছে। অপর দিকে রন্তুর মা শায়লা এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করছে, যেখানে তার এক সিনিয়র পোস্টের সহকর্মী ইরফানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে গড়িয়েছে প্রণয়ের। ইদানীং রন্তুর মাঝে একটি মানসিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে, সে বাবা-মা সহ নিজেদের একটি পরিবার খুব মিস করে। আর সেই অপ্রাপ্তি থেকে সে নিজের মনে একা একা এক কাল্পনিক জগতে বিচরন করে। এরমাঝে শায়লার প্রবাসী বড়ভাই দেশে এসেছে ছুটিতে। কিছুদিন আগে রন্তু মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েছিল, ডাক্তাররা প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু কোন বিপদ ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছিল সে। কিন্তু বিপদ যখন আসে, চারিদিক দিয়েই আসে। গত পর্বে রন্তুর বাবা জাভেদ বহুদিন পর দেখা দিয়েছে উপন্যাসে। শায়লাকে ইরফানের সাথে বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখে উত্তেজিত হয়ে বাসায় এসে বাজে আচরণ করেছে এবং ফলস্বরূপ শায়লার বড় ভাই শিপলু তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। এইসব ঘটনা পরিক্রমা রন্তুর মনোজগতে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। তার আচরণে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বাবা-মায়ের সম্পর্কের এই টানাপোড়নের সাথে তার শিশু মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং পরিবারের মানুষগুলোর মিথস্ক্রিয়া’য় কেমন চলছে আমাদের রন্তুর জগত তা জানার জন্য আসুন এবার আবার শুরু করা যাক)
রন্তুর নানু রান্নাঘরের ভেতর এখন নিজের মনে গুজগুজ করে রাগ ঝেড়ে যাচ্ছে নিজের মেয়ের উপর। শায়লার সাথে এতক্ষণ কথা কাটাকাটির পর হাল ছেড়ে দিয়ে উনি রান্নাঘরে চলে এসেছেন। সংসারের সকল দায় যে এখন উনার। সংসারের সকল যন্ত্রণা এখনো সামলে যাচ্ছেন এই বুড়ো বয়সে, শুধুমাত্র ছেলেমেয়েদের সুখের কথা চিন্তা করে। শায়লা তো আর কচি খুকী নয়, রন্তুর মত সাতআট বছরের ছেলের মা। সে কি না অফিসের একটা ছেলের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে। আজ এ, তো কাল ও, এসে বলে যাচ্ছে আজ আপানাদের শায়লাকে দেখলাম একজনের সাথে রিকশা করে নিউমার্কেটে, তো কাল রমনা পার্কে। হাজার হলেও তো সমাজে বাস করতে হয়, কথা তো শুনতে হচ্ছে তাকেই। বেহায়া মেয়ে, কিছু বললেই চেঁচিয়ে ওঠে। আরে বিয়ে করবি ভালো কথা, তো বিয়ের পর যত খুশী ঘুরে নিস, এখন কেন? আর ছেলেটাকে একটুও পছন্দ না শায়লার মার, যদিও তাকে কখনো দেখেন নাই। কিন্তু যেই অবিবাহিত ছেলে সাত আট বছরের ছেলের মা শায়লাকে প্রেম করে বিয়ে করতে চায়, এমনকি সাথে করে বিদেশ নিয়ে যেতে চায়, তাকে চালবাজ ধুরন্দর প্রকৃতির ছেলে ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না উনার কাছে। এই ছেলে নাকি বিদেশ গিয়ে রন্তুকেও বছর খানেকের মধ্যে নিয়ে যাবে! বিদেশ গিয়ে দেখা যাবে এক বছরের মাথায় শায়লাকে ডিভোর্স দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিবে, তখন বুঝবে শায়লা।
শায়লা’র মাথা ব্যাথা করছে, মায়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চেঁচামেচি করে এখন মাথার যন্ত্রণায় ভুগছে। এককাপ চা পেলে ভাল হত, আদা-লেবু দিয়ে খুব কড়া করে এক কাপ চা। কিন্তু নিজের উঠে গিয়ে চা করতে মন চাচ্ছে না, আর মাকে তো বলা যায় না, “তোমার সাথে ঝগড়া করে আমার মাথা ব্যাথা করছে, আমাকে এখন চা বানিয়ে দাও”। শায়লার ইদানীং মেজাজটা খুব খিটখিটে হয়ে গেছে, খুব অল্প কথায় রেগে যাচ্ছে। এটা সে উপলব্ধি করতে পারছে, কিন্তু তার মনে হয়ে সবাই ইচ্ছে করেই এমন কথার প্রসঙ্গ নিয়ে আসে যে মেজাজ খারাপ না করে উপায় থাকে না। মায়ের সাথে প্রতিদিন এখন শায়লার বিয়ে নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে, সেখান থেকে মাঝে মাঝে ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যায়। মা কোন মতেই ইরফানের সাথে শায়লার সম্পর্ক মেনে নিতে পারছে না। এই ব্যাপারটা নিয়ে অতি জঘন্য বাজে বাজে কথা পর্যন্ত বলতে বাদ রাখে নাই। শায়লা খুব অবাক হয়, মায়ের এই আচরণে। তার অপরাধ, সে ডিভোর্সড এক ছেলের মা হয়ে কেন অফিসের কোন কলিগের সাথে প্রেম করবে। কিন্তু মাকে কে বুঝায়, সে এমন কিছু করে নাই যা অন্যায়। ইরফান আর সে দুজন দুজনকে পছন্দ করে, ইরফান শায়লাকে আইনগতভাবে বিয়ে করে বিদেশ নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এমনকি ইরফান রন্তুকেও গ্রহণ করে বছরখানেকের মধ্যে তাদের কাছে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু, মা আর বড় ভাইয়া কিছুতেই ইরফানকে পছন্দ করতে পারছে না। পড়াশুনা, পরিবার, স্ট্যাটাস কোন কিছুতেই শায়লা কোন কমতি দেখতে পায় না ইরফানের মাঝে। কিন্তু তার পরিবারের একটি মানুষও এই বিষয়টি বুঝতে চাইছে না। মা এখন নতুন গান শুরু করেছে, তোর বিয়ে করার দরকার কি? অথচ এই মা’ই কি না কিছুদিন আগেও শায়লার কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতো আবার নতুন করে বিয়ে থা করে সংসারি হওয়ার জন্য। আজব মানুষের মন, আর আজব তার গতিবিধি! শায়লা ভেবে পায় না, মানুষের মন এতো অদ্ভুত হয় কি করে! আজ যা তার কাছে গ্রহণযোগ্য, দুদিন পর তা পরম অপাংক্তেয় হয়ে যায় কি করে?
শায়লার বড় ভাই, শিপলু শায়লার ঘরে আসল। শায়লা ভাইকে দেখে সোজা হয়ে বসল। শিপলু একটা চেয়ার টেনে বসল শায়লার মুখোমুখি হয়ে। শায়লা মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল, এখন বড় ভাইয়ের একগাদা লেকচার শুনতে হবে এখন। আবার হয়ত তার সেই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী পাত্রের প্রসঙ্গ উঠবে, নয়ত ইরফানের প্রসঙ্গ। ইরফান ছেলেটা যে মোটেও ভাল না, তা তাকে বুঝানোর চেষ্টা করবে। শায়লা ভেবে পায় না, যে মানুষটাকে এরা দেখেনি, কখনো কথা বলেনি, সেই মানুষ সম্পর্কে কি অবলীলায় কত কটু কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু এখন শায়লার এসব কথা শোনার ধৈর্য নেই, মাথা ব্যাথায় সে মরে যাচ্ছে। শায়লা মুখটা যত সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। সে পারত পক্ষে বড় ভাইয়ের সাথে কোন খারাপ ব্যাবহার এই কয়দিনে করে নাই, বেচারা এতদিন পর মাত্র মাস দুয়েকের ছুটিতে দেশে বেড়াতে এসেছে, তাকে আঘাত করতে চায় না শায়লা কোনভাবেই।
‘ভাইয়া কিছু বলবে?’
‘হুম... নাহ, এমনি এলাম তোর সাথে একটু কথা বলি।’
‘বল কি কথা, শুনছি’
‘নাহ, তেমন কোন কথা না। তোর মেজাজটা ইদানীং খুব খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে রে...’
‘তাই! জানতাম না তো।’ শায়লা অবাক হওয়ার ভান করল।
‘তোর এই আচরণে সবচেয়ে বেশী কষ্টে আছে মা আর রন্তু।’
‘আছা, তাই নাকি? অসুবিধা নাই, খুব শীঘ্রই তাদের কষ্ট দূর করে দেব’ শায়লা কেমন অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে বলল।
‘তুই আমার কথার ভুল অর্থ বুঝছিস।’
‘আমি সবার কথারই ভুল অর্থ বুঝি...’
‘তোর সাথে তো কথা বলাটাই মুশকিল হয়ে গেছে ইদানীং’
‘তাহলে কথা না বললেই তো হয়, কেন তোমারা কথা বলতে আস?’
‘তুই কি এই কয়দিনে রন্তুর দিকে একটু খেয়াল করেছিস? ছেলেটা কেমন বদলে গেল এই কয়েকদিনের ব্যবধানে।’
‘বদলালে বদলাবে, প্রতিটি মানুষই প্রতিদিন অল্প অল্প করে বদলায়। কখনো হয়েত একদিনে অনেকখানি বদলে যায়। আর তখনই আমাদের চোখে তা ধরা দেয়। রন্তও হয়ত হুট করে অনেকখানি বদলেছে।’
‘যেভাবে যতটুকুই বদলাক, তুই ছেলেটার সাথে কথা বলছিস না, ছেলেটা তো কারো সাথেই তেমন কথা বলছে না। কেমন একা একা নীরবে ঘুরে বেড়ায় সারা বাড়িতে।’
‘এটা তো ভালই, ও ওর মত থাকছে, থাকতে দাও। ওদের বংশের ধারাতেই আছে এমন ধাত, আমি তুমি কি করতে পারব?’
‘তুই এমন কথা বলছিস কেন?’
‘কেমন কথা বলছি? কেমন কথা বলতে হবে আমাকে?’
‘বাদ দে, তোকে কিছুই বলতে হবে না’
‘না না, বল। বলতে হবে তোমাকে, আমাকে কিভাবে কথা বলতে হবে? কিভাবে চলতে হবে? এগুলোতো এখন তোমরা নির্ধারণ করে দিবে তাই না?’
‘দেখ শায়লা গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসবি না। তুই আর মা ইদানীং যা শুরু করেছিস, তোদের দুজনের চিল্লাফাল্লায় বাসায় থাক দায় হয়ে যায়’
‘ও তাই, তাহলে বললেই হয়, বাসা ছেড়ে চলে যাব। তোমাদের আর যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না’
‘আমি সেই কথা বলেছি? অনেক বাড় বেড়েছে তোর তাই না?’ শিপলু হঠাৎ করেই রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো।
‘চেঁচাচ্ছ কেন? উচিত কথা বলেছি বলে ভাল লাগছে না? তোমার সেই মধ্যপ্রাচ্যের আইবুড়ো ব্যাটাকে বিয়ে করতে রাজী হলে সব ঠিক ছিল তাই না?’
‘শায়লা...’ বলে শিপলু ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিল শায়লার গালে। শায়লা যেন এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে থেকে কথা বলে গেছে। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে এই অপ্রত্যাশিত শারীরিক আঘাত পেয়ে যেন বাস্তবে ফিরে আসল। এতক্ষণের রুদ্রমূর্তি ভেঙ্গে খানখান হয়ে গিয়ে মানুষ শায়লার ভেতরের চাপা কষ্টগুলো ডুকরে কেঁদে উঠলো। শায়লা ডুকরে কেঁদে উঠতেই শিপলু ঘর হতে বের হয়ে গেল। দুই মাসের ছুটিতে দেশে এসেছিল কিছু ভাল সময় কাটাবে বলে। আসার পর থেকে ছোট বোনের এই ঝামেলা আর ভাল লাগছে না।
বড় মামাকে ছাঁদে আসতে দেখে রন্তু একটু অবাক হল, মামা কি তাকে খোঁজ করতে ছাঁদে এল? কিন্তু রন্তু দেখল বড় মামা ছাঁদের এই প্রান্তে না এসে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ছাঁদের ঐ প্রান্তে রেলিং এর দেয়াল ধরে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পর একটা দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বলে উঠলো, বড় মামা সিগারেট ধরাল। বড় মামা বাসায় সিগারেট খায়, নানু-মা জানলেও কেউ কিছু বলে না। মানুষ খুব বড় হয়ে গেলে বুঝি কেউ তখন আর শাসন করে না, যেমন বড় মামা। রন্তুর মনে হল, ইশ কবে যে এমন বড় হবে সে? যখন তাকে কিছু বলার বা শাসন করার কেউ থাকবে না, কোন স্কুল আর পড়ালেখার ব্যাপারগুলো থাকবে না। যখন যা ইচ্ছে করে বেড়াতে পারবে সে, কেউ থাকবে না বাঁধা দেয়ার। বাতাস এইমুখী হওয়ায় সিগারেটের ধোঁয়া রন্তুর দিকে চলে আসছিল, কিছু ধোঁয়া তার নাকে আসতেই রন্তু কেশে উঠলো। রন্তুর কাশের শব্দে শিপলু প্রথমে একটু চমকে উঠেছিল, পর মুহূর্তেই বুঝতে পারল এটা রন্তুর গলা। এই সন্ধ্যা শেষের রাতের বেলা ছেলেটাকে ছাঁদে দেখে একটু অবাক হলেও পরেই মনে হল ছেলেটা খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে, সবার চোখের সামনে, কিন্তু কেউ দেখছে না। এই বদলে যাওয়াটা খুব ভাল যে না, তা শিপলু খুব ভাল বুঝে। ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানেরা বেশীরভাগ এমন করেই বদলে যেতে যেতে একদিন নীরবে হারিয়ে যায়, ক্ষয়ে যায়। রন্তুর ভাগ্যে যেন এমনটা না হয়। দেশে আসার পর ভাগ্নেটার সাথে তেমন করে কথা বলে হয় নাই, এখন এই রাত্রির প্রথম লগ্নে মনে হল ছেলেটার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করা যেতে পারে। ধীর পায়ে শিপলু রন্তুর দিকে এগিয়ে গেল।
'রন্তু'র কালো আকাশ' এর আগের সব পোস্টগুলোঃ
রন্তু'র কালো আকাশ - ১
রন্তু'র কালো আকাশ - ২
রন্তু'র কালো আকাশ - ৩
রন্তু'র কালো আকাশ - ৪
রন্তুর কালো আকাশ - (১-৫)
রন্তু'র কালো আকাশ - ৬
রন্তু'র কালো আকাশ - ৭
রন্তু'র কালো আকাশ - ৮
রন্তু'র কালো আকাশ - ৯
রন্তু'র কালো আকাশ - ১০
রন্তু'র কালো আকাশ - ১১
রন্তু'র কালো আকাশ - ১২
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৩
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৪
রন্তু'র কালো আকাশ (পর্ব ১-১৪ ফিরে দেখা)
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৫
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৬
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৭
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৮
রন্তু'র কালো আকাশ - ১৯
রন্তু'র কালো আকাশ - ২০
রন্তু'র কালো আকাশ - ২১
রন্তু'র কালো আকাশ - ২২ (ধারাবাহিক)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৯