somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শালিমার বাগ - কাশ্মীরি মুঘল গার্ডেন (শেষ পত্র) (কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বঃ নিশাতবাগ - কাশ্মীরি মুঘল গার্ডেন (দ্বিতীয় পত্র) (কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)

এক সপ্তাহের কাশ্মীর ভ্রমণের শেষ দ্রষ্টব্য ছিল “শালিমার গার্ডেন”। মোঘল আমলে এই একই নামে তিনটি বাগান নির্মিত হয়েছিল। একটি কাশ্মীরের শ্রীনগরে অবস্থিত, যেটি নির্মাণ করেছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর, তার পুত্র সম্রাট শাহজাহান, পিতার এই বাগানের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এর আদলে তৈরি করেন পাকিস্তানের লাহোরে আরেকটি শালিমার গার্ডেন। অপরটি রয়েছে দিল্লীতে। যাই হোক আমাদের কাশ্মীর ভ্রমনের শেষদিনের শেষ গন্তব্যে আমরা যখন পৌঁছলাম, তখন শেষ বিকেলের স্বর্ণআলোর সাথে সিঁদুর রঙা আকাশের অদ্ভুত এক মিলনকাল চলছিল। দিনের বেলা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ধুয়ে দিয়ে গেছে বাতাসের গায়ে ভেসে থাকা কলঙ্কস্বরূপ ধূলিকণার দলকে। ফলে অদ্ভুত এক কোমল পরিবেশ ছিল। ভেজা সতেজ সবুজ সব গাছ, মাটি জুড়ে চোখে ধাঁধানো সবুজ ঘাসের লন, বাগানের পেছনে দাড়িয়ে থাকা পাহাড়ের ভাজে ভাজে ছোট ছোট মেঘ শিশুদের অলস পায়চারী। এ যেন চলে এলাম এক জাদুর ভুবনে।









ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে দেখা যায়, সকল মুঘল গার্ডেনগুলোর গোঁড়াপত্তন করেছিলেন সৌন্দর্য পূজারী সম্রাট জাহাঙ্গীর। কিন্তু কাশ্মীরের এই বাগানগুলোর শিকড় আরও গভীরে প্রোথিত। দ্বিতীয় শতকে এই বাগানের জন্ম তৎকালীন শ্রীনগরের শাসক প্রভাসেনা দ্বিতীয়’র (Pravarsena II) হাত ধরে। এই শাসকের হাত ধরেই শ্রীনগর শহরের গড়ে ওঠা। ৭৯ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৩৯ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রভাসেনা এই অঞ্চল শাসন করেন। ডাল লেকের উত্তর-পূর্ব কোণে উনি একটা কটেজ নির্মাণ করেন বসবাসের জন্য এবং এর নাম দেন শালিমার। “শালিমার” শব্দের অর্থ ‘ভালবাসার আবাস’। পরবর্তীতে সুকর্ম স্বামী নামক এক ধর্মযাজক এখানে অনেকদিন বসবাস করেন। সময়ের আবর্তে একসময় এই স্থাপনা লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যায়। কিন্তু ঐ এলাকার নাম হয় শালিমার।









পরবর্তীতে সম্রাট জাহাঙ্গীর রানী নূর জাহান’কে উপহার দেয়ার জন্য ১৬১৯ সালে এই এলাকায় তার রাজকীয় স্বপ্নের বাগান “শালিমার” নির্মাণ আরম্ভ করন। সেই পুরানো বাগানটিকে পরিবর্ধন, পরিমার্জন এবং পুনঃনির্মাণ করেন এবং এর নাম দেন “ফারাহ বাকশ” যার শাব্দিক অর্থ “আনন্দদায়ী”। পীর পাঞ্জাল পর্বতশ্রেণীর বরফঢাকা রাস্তা হাতির পিঠে চড়ে এখানে অবকাশ যাপনে আসতেন সম্রাট জাহাঙ্গীর পত্নী সমেত। ইতিহাস হতে জানা যায়, সর্বমোট ১৩ বার তারা এখানে এসে দীর্ঘ সময় অবকাশ যাপন করেছেন। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে সম্রাট শাহজাহান এর আদেশে তৎকালীন কাশ্মীরের গভর্নর জাফর খান এটা আরও বিস্তৃত এবং উন্নত করেন এবং নাম পাল্টে রাখেন “ফাইজ বাকশ” যার অর্থ “উদার প্রান্ত”। তারপর থেকে এটা যুগে যুগে শাসকদের অবকাশ এবং চিত্তবিনোদন এর স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জাফর খান এর পর পাঠান এবং শিখদের হাত হয়ে মহারাজা রণজিৎ সিং এর আমলে ঔপনিবেশিক আমলে ইংরেজ অতিথিদের জন্য বাগানের মাঝখানে মার্বেল পাথরের একটা অতিথিশালা নির্মিত হয়। মহারাজা হরি সিং এর আমলে এখানে বিদ্যুতায়ন ঘটানো হয়। এভাবে দীর্ঘ সময় পরিক্রমা পেড়িয়ে আজকের শালিমার গার্ডেনে রূপ নিয়েছে ভুবনখ্যাত এই বাগানটি।









এই বাগানটি সুবিখ্যাত পার্সিয়ান বাগানের নকশার আদলে তৈরি। একটি সমতল ভূমিতে বর্গাকৃতির নকশা দিয়ে কেন্দ্রে জলধারা জমা হয় যেখান হতে পুরো বাগানে পানির সরবরাহ করা হয়। সুপরিকল্পিত এই বাগান মোঘলদের কর্তৃক পরিমার্জন করার সময় একটি মুল প্রবাহপথ তৈরি করা হয় যার নাম ‘শাহ নহর’ বা মূল ধারা। এই ধারা হতে পানির প্রবাহ বাগানের তিনটি ধাপ গড়িয়ে নেমে গিয়ে মেশে সুবিখ্যাত ডাল লেকে। ৩১ একর জমির উপর নির্মিত এই বাগানের মূল কাঠামো ৫৮৭ মিটার লম্বা এবং ২৫১ মিটার চওড়া। তিন ছাদ বিশিষ্ট এই বাগানের প্রতিধাপে রয়েছে ফোয়ারা এবং দুপাশ বিস্তৃত ‘চিনার’ গাছের সারি।









অপূর্ব সব স্থাপত্যকলার সাথে বাহারি সব ফুলের বাগান আর লম্বা সারি সারি গাছের ছায়ায় ঢেকে থাকা বাগান ঘুরে বেড়ালাম যে যার মত করে। সন্ধ্যের আগে আগে সূর্য যখন হারিয়েছে ডাল লেকের কোলে, তখন আমরা বাগান হতে বের হয়ে আমাদের টেম্পু ট্র্যাভেলা’র এ চড়ে বসলাম ফিরতি পথে। ও হ্যাঁ, পথিমধ্যে সারা হবে কাশ্মীর এর বিখ্যাত শাল এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি। আগামী পর্বে সেই গল্প শুনিয়ে কাশ্মীর কথন শেষ করব। আর সিমলা-মানালি? সেটাও খুব শীঘ্রই শুরু করার ইচ্ছে আছে। সাথে থাকুন, পাশে থাকুন।

















সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×