somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিশন গোয়া - ২০১৬ (প্রথম পর্ব)

৩১ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কেরালা ট্রিপ প্ল্যানিং এর সময়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, ট্রিপটা এক্সটেন্ড করার। যেমনটা করেছিলাম কাশ্মীর ট্যুর এর সময় সিমলা-মানালি এড করে। হাতে অপশন ছিল চেন্নাই-উটি এড করারা, কিন্তু নানান দিক বিবেচনা করে শেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কেরালা ভ্রমণ শেষে গোয়া হয়ে মুম্বাই গিয়ে শেষ হবে আমাদের এবারের ভারত ভ্রমণ এর পালা। আর তাই কেরালার নয়দিনের ট্যুর শেষ করে আমরা এরনাকুলাম রেল স্টেশনে এসে বিদায় দিয়েছিলাম আমাদের নয়দিনের সফরসংগী মিঃ বিনয় পি যোশ এবং তার সেভেন সিটার টয়োটা ইনোভা গাড়ীটিকে। স্টেশনে ঢুকে ক্লকরুমে আমাদের ব্যাগ জমা রেখে আমরা বাইরে বের হয়ে এলাম, কারণ আমাদের ট্রেন রাত সাড়ে দশটায়।

এরনাকুলাম শহরের খুব একটা দেখার সুযোগ মিলল না এই দু’আড়াই ঘন্টার ভ্রমণে। কিছুটা হেঁটে, শপিং করে, টুকটাক খাবার চেখে দেখে সময় পার করে আমরা আবার এরনাকুলাম রেল স্টেশনে ফেরত চলে এলাম। স্টেশনে এসে আমার মন চাইল একটু স্নান সেরে নেই। ভারতীয় রেলস্টেশনে নাকি ভাল ব্যবস্থাপনা আছে বিশ্রাম, গোসল এসবের। তো প্রথম শ্রেণী যাত্রীদের বিশ্রামাগারের গোসলখানায় গিয়ে দেখি একটা ট্যাপ এর কল ছাড়া কোন কিছু নাই। নোংরা ফ্লোর, চারিপাশ। এসব দেখে গোসলের চিন্তা বাদ দিয়ে চলে আসলাম। একটা ফাস্টফুডের দোকান হতে রাতের খাবার কিনে নিয়ে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমাদের রাতের গোয়া হয়ে যাওয়া “রাজধানী এক্সপ্রেস” এর। রেল ষ্টেশনের চার্জার পয়েন্ট হতে সবাই ব্যস্ত ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস সব রিচার্জ করতে।

রাত দশটা নাগাদ রেলগাড়ী প্ল্যাটফর্মে ঢুকলে আমরা সবাই উঠে পড়লাম আমাদের নির্দিষ্ট বগীতে। যদিও সিট পড়েছে বিক্ষিপ্তভাবে ভিন্ন ভিন্ন কূপেতে। আমার সিট পড়েছে এক জৈন ধর্মাবলম্বী ফ্যামিলির সাথে। প্রথমে খুব পজেটিভলি নিলাম, তারা উপবাস আছে শুনে, আমার রাতের খাবার অন্য কূপেতে আমার ভ্রমণসঙ্গীদের সাথে গিয়ে খেয়ে এলাম। কিন্তু এদের বিশাল বহর মনে হয় পুরো ট্রেনেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কেননা, আমি আমার সিটে ফেরত এসে দেখি, আমার সিট দখল করে তাদের নানান আত্মীয় স্বজন এসে বসে পড়েছে, চলছে দেদারসে গল্প। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, ভাবলাম জরুরী কথা হয়ত চলছে, কথা শেষ করে চলে যাবে। আমি প্রায় মিনিট দশ-পনের অপেক্ষা করে শেষে বললাম, “ইয়ে মেরা সিট হ্যায়...”। উত্তরে বলল, “ও... আপ বায়ঠিয়ে গ্যা...”, ভাবখানা এমন আমি সারারাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উনাদের গল্প শুনতে ট্রেনে উঠেছি।

যাই হোক, সারারাত উনাদের আরও নানান যন্ত্রণা দাঁত কামড়ে সহ্য করে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। ভোরের আলো ফুটতে ঘুম ভাঙ্গল, ট্রেন গোয়ায় প্রবেশ করেছে। গোয়া’র দুটি প্রধান রেল ষ্টেশন, ‘মারগাও’ আর ‘ভাস্কো-দ্যা-গামা’ দুটোই পড়েছে দক্ষিণ গোয়ায়। ও হ্যাঁ, গোয়াকে দুটো ভাগে ভাগ করে সকল কিছু গড়ে উঠেছে, উত্তর গোয়া আর দক্ষিণ গোয়া। তো ইন্টার সিটি যত রেল, সব এই দুই ষ্টেশনে থামে। আমাদের ট্রেন আমাদের নামিয়ে দিবে মারগাও স্টেশনে। আমরা ফ্রেশ হয়ে নিজ নিজ ব্যাগপত্তর গুছিয়ে নিলাম। এরপর ট্রেনের এটেন্ডেন্ট নাস্তা নিয়ে এলে নাস্তা করে অপেক্ষা করতে লাগলাম মারগাও পৌঁছানোর।

সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আমাদের নামিয়ে দিল গোয়ার মারগাও স্টেশনে। ষ্টেশন হতে বের হয়ে আমরা একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে রওনা হলাম গোয়ার রাজ্য রাজধানী ‘পাঞ্জিম’ এর উদ্দেশ্যে।

আয়তনে ভারতের ক্ষুদ্রতম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ ক্ষুদ্রতম রাজ্য গোয়া। গোয়ার উত্তরে মহারাষ্ট্র, পূর্বে ও দক্ষিণেকর্ণাটক এবং পশ্চিমে আরব সাগর পরিবেষ্টিত গোয়ার রাজধানীর নাম পানজিম বা পনজী। গোয়ার প্রাপ্ত নানান শিলালিপি এবং অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান বিশ্লেষণ করে বুঝা যায়, ভারতবর্ষের প্রাচীনতম মানব বসতী’র নিদর্শন গোয়া। আদি গোয়েন সমাজের সাথে ইন্দো-আর্য এবং দ্রাবিড় অভিবাসীরা মিশে গিয়ে গোয়ার প্রারম্ভিক সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপন করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গোয়া ছিল মৌর্য সাম্রাজ্যের অংশ যার শাসনকর্তা ছিলেন বৌদ্ধ সম্রাট মগধের অশোক। সেই সময়ে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের হাত ধরে গোয়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রসার ঘটেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতক হতে খ্রিষ্টাব্দ ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্ত সময় পর্যন্ত গোয়া শাসিত হয় ভোজা (Bhoja)দের দ্বারা। পরবর্তীতে এর শাসনভার কোলাহপুরের সাতবাহানা থেকে বাদামির চালুক্যদের কাছে চলে যায়। এরা শাসন করে ৫৭৮ থেকে ৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এর পর ৭৬৫ থেকে ১০১৫ সাল পর্যন্ত কোনকান এর (বর্তমান মহারাষ্ট্র) সিহারা শাসনের কেটে যায়। এর পরের কয়েক শতক কাদম্বাদের শাসনে থেকে গোয়ায় জৈন ধর্ম বিস্তার লাভ করে; যা চলে প্রায় ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত। ১৩১২ সালে গোয়া চলে আসে দিল্লী সালতানাতের অধীনে। প্রায় দুইশত বছর পর ১৫১০ সালে পূর্তগিজরা তৎকালীন ক্ষমতাসীন সুলতান ইউসুফ আদিল শাহকে পরাজিত করে দখল নেয় গোয়ার। প্রায় চারশতক স্থায়ী পূর্তগীজ আমলের চিহ্ন এখনো রয়েছে গোয়ার অলিতে গলিতে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলেও গোয়া রয়ে যায় পূর্তগীজ কলোনি হিসেবেই। ১৯৬১ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে গোয়া ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে এবং ১৯৮৭ সালের ৩০শে মে, ভারতের ২৫তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে গোয়া স্বায়ত্তশাসন লাভ করে।

তো আগামী দিন তিনেক এর ট্যুরে এই ঐতিহাসিক গোয়ার অলিগলিতে খুঁজে বেড়ানো হবে সেই হারানো ইতিহাসের অংশ বিশেষ; পাঠক সেই ভ্রমণের গল্প শুনতে সাথেই থাকুন। এবার, আর খুব বেশী অপেক্ষায় রাখবো না, নিয়মিত হব খুব শীঘ্রই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×