somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম দার্জিলিং - ২য় পর্ব

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব দেখুন এখানে

৩১ জুলাই, ২০১৫ - শুক্রবার (তৃতীয় দিন)

পরদিন ভোর ৪ টায় আমি আমার পার্টনার হাসানুর ভাই কে ডেকে তুললাম। ভোরে সাড়ে ৪ টার দিকে ২ জন বের হয়ে পড়লাম। ইচ্ছে থাকা সত্তেও গাড়ি না পাওয়ায় টাইগার হিল যেতে পারিনি। তবে ভালই হয়েছে। আপনি গেলে ২ দিন অন্থত দার্জিলিং থাকার চেস্টা করবেন আর প্রথম দিন টাইগার হিল (৩ পয়েন্টস) না দেখলেও হবে।

মেল চত্তর ধরে সারা সকাল ঘুরে বেড়ালাম। এরা খুব সাস্থ্য সচেতন। সবাই মর্নিং ওয়াক করছে। আর স্মোক ও করে না দেখি। এখানে রাস্তায় সকালে প্রচুর বানর দেখলাম



ফেরার সময় অন্য পথ দিয়ে ফিরলাম। কাঞ্চন জংঘা ভিউ পয়েন্টে অনেক দুরের পাহাড়ের দৃশ্য আর মেঘের ভেলা উপভোগ করলাম। চত্তরে দেখলাম প্রচুর কবুতর।

এখান থেকে নাস্তার জন্য গিয়ে দেখি কোন হোটেল খোলেনি। এরা খুলে ৯ টার দিকে। তাই হালকা মতন পুরি সবজি মেরে দিলাম। পরে নিলাম চা আর মিস্টি।

১০ টার দিকে বের হয়ে বাইক ভাড়া করে ফেললাম। এবার আর পায় কে। দে টান। ২ পয়েন্টস কাভার করবো। একি দিকে পথ। প্রথমে যাবো রক গার্ডেন - নেমে যেতে হবে প্রায় ৪০০০ ফিট এ। অনেক নাকি ঢালু বেয়ে নামতে হবে। তবে এইসব কথায় আমার কিছুই হয়নি। প্রচুর খাড়া ও ঢালু পথে বাইক চালানোর এক্সপেরিয়েন্স আছে। এখানে দেখতে পারেন আমার বগা লেক এ বাইকিং এর কাহিনী।


দার্জিলিং শহরে মোটামুটি ১৭ টি দর্শণীয় স্থান আছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে :

ক) থ্রি পয়েন্টস
৭৮০০ ফুট উঁচুতে টাইগার হিল। খুব ভোরে এখানে পর্যটকদের ভীড় লেগে যায়। আকাশ সারাক্ষণ মেঘলা থাকার কারণে সূর্যোদয় দেখতে পারাটা ভাগ্যের ব্যাপার। টাইগারহিল থেকে ফেরার পথে পড়বে পৃথিবীর অন্যতম উঁচু রেল স্টেশন ঘুম। এর উচ্চতা ৬৯০০ ফুট। তারপর বাতাসিয়া লুপ। ছোট্ট পার্ক থেকে দেখা যাবে পুরো দার্জিলিং শহর। এই ৩ পয়েন্ট দেখার পর রাস্তার পাশের দোকান থেকে পুরি আর সবজী দিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে নিন।
খ) সেভেন পয়েন্টস
চিড়িয়াখানা ও হিমালয়ান মাউন্টেইনেরিং ইনিস্টিটিউট এক সাথে দেখা যাবে। পরবর্তী গন্তব্য চা বাগান। ছবি তোলার জন্য দারুণ জায়গা ! এর একটু উপরেই পাহাড়ের গায়ে তিব্বতি এতিমদের আশ্রম। পাশেই তেনজিং রক। দড়ি বেয়ে ১১০ ফুট পাহাড়ে উঠতে হলে ১৫ টাকার টিকিট করতে হবে। এই সব দেখতে দেখতেই দুপুর।
গ) ফাইভ পয়েন্টস
প্রথমে যাদুঘর দেখা। তারপর জাপানি মন্দির। লাল কুঠি বা কাউন্সিল হাউজ দেখার পর এভা আর্ট গ্যালারি। সবশেষে ধীরধাম মন্দির।
ঘ) স্পেশাল পয়েন্টস
এবার গঙ্গামায়া পার্ক। দার্জিলিং শহর থেকে ৩৫০০ ফুট নিচে। ঝরণা-ঝুলন্ত ব্রিজ-রং করা বিশাল সব পাথর....আরো কত্তো কী আছে ভেতরে ! টাকার বিনিময়ে নেপালি পোশাক পাওয়া যায়- ছবি তোলার জন্য। সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ পার্ক। পার্ক থেকে বেরিয়ে আসুন। ফেরার পথে রক গার্ডেন। এখানে ৪০০ ফুট উপরে রয়েছে চমৎকার ব্রিজ আর ঝরণা। এটা খো থাকে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত।

যাই হোক,প্রথমে ফুয়েল নিলাম তারপর ছুটলাম রক গার্ডেন এর উদ্দেশ্যে। আমরা এখানে ছিলাম প্রায় ৬০০০ ফিট উচ্চতায়। এবার ডাউন স্ট্রিম এ নামতে লাগলাম আকা বাকা পাহাড়ি পথ ধরে। এক পাশে চা বাগান আর অন্য পাশে পাহারের খাদ এর পর আবার অন্য পাহাড় - যার গায়ে আছে অনেক বাড়ি - দেখতে দারুন লাগে।



ভালো লাগছিলো এমন মসৃণ পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালাতে। এক সময় পৌঁছে গেলাম রক গার্ডেন।



রক গার্ডেন এর কাছে চলে এসেছি - দেখা যাচ্ছে

টিকেট কাটলাম ২০ রুপি করে। এটা বিশাল এক ঝ্ররনা। মুগ্ধ হলাম। আর অবাক হলাম এদের কাজ কারবার দেখে। করছে কি।



ঝর্নার উপর ব্রিজ, ফুল বাগান এটা সেটা করে এক অবস্থা। ভালই। ঝর্না পর্যন্ত গেলাম। তেমন বেশি উচু না। সহজেই ওঠা যায়। ঝর্নার পাশে দিয়ে একটা রেলিং দেয়া পথ দিয়ে ওঠা যায়। ঝরনাটা দারুন।





প্রচুর ছবি তুলে ফিরে এলাম। গেট থেকে বের হয়ে একটা লোকাল ছোট টং এর খাবার দোকানে খেলাম মম। দারুন।



এই জিনিস আমি নেপালেও খেয়েছি। মজার জিনিস। দোকানের মালিক ২ টা মেয়ে।



এদের সাথে অনেক কথা হল। দারুন মিশুক আর হাসি খুশি এরা। এদের পরা মর্শ মত বাইকে করে চলে গেলাম আরো ৩ কিমি সাম্নের দিকে গঙ্গা মায়া পার্ক। এটা আরো একটা ঝ্ররনা। ঝিরি বলা যেতে পারে। দারুন। এখানে নৌকা ভাড়া করে ঘোরা যেতে পারে।






নেপালেও এমন একটা ঝর্না দেখেছিলাম


এবার ফেরার পালা। হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে (বাইক নিতে গিয়ে টাকা শেষ হয়ে গেছিলো। সিকিউরিটি মানি দিয়ে হয়েছিলো) আবার বের হয়ে প্রথমে খেয়ে নিলাম আমাদের ইসলামিয়া হোটেলে। গরু গোস্ত আর ভাত। এরপর চলে গেলাম "লেবং" রেস্কোর্স। জাবার পথে পড়লো "তেঞ্জিং রক"। বিশাল বড় এক পাথর।



আরেক টা জায়গা আছে "রিফিউজি ক্যাম্প" কিন্তু সময়ের জন্য এখানে যেতে পারিনি। বলাই বাহুল্য অনেক ইঞ্জয় করলাম । রেসকোর্স আর্মি দের করা। আমরা ঢুকতে পারিনি যদিও। জানিনা আমাদের কেনো বলা হয়েছিলো এখানে আসার জন্য। তবে আফসোস ছিলো না কারন পাহাড়ি পথে বাইক চালানোর সেই মজা। সন্ধা হয়ে এসেছে। ফেরার পথে একটা টং এর দোকানে চা খেলাম। সুযোগ পেলেই দার্জিলিং এর বিখ্যাত চা খেয়েছি। রোপ কারে চড়তে গেলাম। কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে। ভাল লাগছিলো দুরে পাহারের গায়ে বাড়িগুলোতে আলো জলছিলো মিট মিট করে। সারা পাহাড়ে কে যেন মুক্তা দানা ছড়িয়ে দিয়েছে।



বাইক ফেরত দিলাম তখন সাড়ে ৬ টা। প্রচুর বাইক চালিয়ে আমি একটু টায়ার্ড। সোজা হোটেলে ফিরে নামাজ পড়ে হোটেলের মেনেজার কে ২ জনের জন্য ৫০০ টাকা (এখানে রুপি কে টাকা বলে) দিয়ে ৩ পয়েন্ট এ যাওয়ার জন্য বুক দিলাম গাড়ি। টাইগার হিল, ঘুম মনেস্ট্রি ও বাতাসিয়া লুপ। আপনি চাইলে বুক করতে পারেন ৫ পয়েন্টস, ৭ পয়েন্টস বা সারাদিনের জন্য। দার্জিলিং এ মোট ১৭ টা স্টপ আছে।

১ অগাস্ট, ২০১৫ - শনিবার (৪র্থ দিন)

ভোর পৌনে ৪ টায় মেনেজার এসে আমাদের তুলে দিলো। হোটেলের সামনে থেকে শেয়ারড জিপ গাডি এসে আমাদের তুলে নিলো। প্রথমে যাবো "টাইগার হিল"। যাওয়ার পথ টা দারুন। আমরা ক্রমশ উপরের দিকে উঠছিলাম। একসময় মেঘের ভেতর দিয়ে যেতে থাক্তলাম।


এক সময় পৌঁছে গেলাম। অনেক উচুতে রেলিং দেয়া একটা জায়গা। সবাই অপেক্ষা করছে সূর্য ওঠার আর কাঞ্চন জংঘা দেখার।



৪/৫ টা মেয়ে কফি যার নিয়ে "কফি কফি" বলে ঘুরছিল। কফি নিয়ে আয়েশে চুমুক দিলাম। ঠান্ডায় কাপছিলাম জেকেট পরেও। সবাই ছবি তুলছিলো। আগের পর্বে ভিডিও দিয়েছিলাম। আবার দিচ্ছি। এখানে দেখুন।





টাইগার হিল

এখানে মেঘের অভাব নেই। সারি সারি মেঘের ভেলা ভেসে যাচ্ছে। মনে হয় হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে। মেঘের ভেলার জন্য কাঞ্চন জংঘা দেখা যাচ্ছিলো না। এটা নাকি লাকের ব্যাপার। এখন আসলে বৃষ্টির সময় বলে মেঘ বেশি। তাই দেখা যায় না। তবে আমরা থাকা কালিন সময় তেমন বৃষ্টি হয়নি ভাগ্য ক্রমে।


এখান থেকে ফিরে একটা মনেস্ট্রি আছে। ওখানে চাইলে যেতে পারেন। আমরা জাইনি। নেক্টস এ গেলাম "বাতাসিয়া লুপ" - খুব ই সুন্দর একটা জায়গা।



বাতাসিয়া লুপ

ভালো লাগবে। এখানে বিশাল সাইজের দুরবিন দিয়ে দেখতে পারেন দুরের দৃশ্য। ৩০ টাকা দিয়ে। নেপালি ড্রেস পরে ছবি তুলতে পারেন। ৫০ টাকা লাগবে




নেপালি গোর্খা ড্রেসে আমি

কেনাকাটাও করতে পারেন।





এখানে আধা ঘন্টা থেকে আমরা ফিরে আসলাম হোটেলে। চেক আউট করলাম। প্রথমে খেলাম বিখ্যাত দার্জিলিং এর চা। দারুন।

এরপর নাস্তা করে নিলাম "কেভেন্টারস" এ। অনেক পুরনো নামকরা একটি হোটেলে। বারফি ছবির একটি দৃশ্য এখানে আছে




বারফি



কেভেন্টারস এ আমরা নাস্তা করছি


ভাবতেই ভাল লাগছে এমন একটি জায়গায় নাস্তা করেছি।

এখানে ফুল ইংলিশ ব্রেকফাস্ট পাওয়া যায়। আমি নিলাম ২ টা টোস্ট + বাটার, ২ টা ব্রেড + বাটার, ডাবল স্রেম্বল এগ, কোল্ড কফি। আমার পার্টনার নিলো চিজ বার্গার আর হট চকলেট।

এখানে বসার জায়গাটা ২য় তলায় ওপেন প্লেস। পাশেই মেঘ ভেসে যাচ্ছে। দারুন জায়গাটা।

অনেক ত্রিপ্তি নিয়ে খেলাম। তবে আরো মজা করে খেতে পারতাম যদি হালাল হারাম বাছাই না করতাম।

চলবে....


১ অগাস্ট, ২০১৫ - শনিবার (৪র্থ দিন)


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:১৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×