। শাসনের রকমফের।
জগু মিয়া বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো মাঝ রাতে। পেছনে রেখে সব অভিমান ও আহ্লাদ। সে আত্মহত্যা করবে আজ রাতে।
হঠাৎ তার বাপ মগু মিয়া তাকে পিছন থেকে ডেকে উঠলো।
-ওই কই যাস?
-আত্মহত্যা করুম গলায় দড়ি দিয়া।
-খাড়া একটু।
-কেন?
মগু মিয়া এগিয়ে এসে জগু মিয়ার হাতে একগোছা দড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো,
-হারামজাদা দড়িখানা কি তোর বাপে নিবো?
। মধ্যাহ্ন।
চতুষ্কোণ বাক্স ভর্তি নানান রঙের আইসক্রিমে ঠাসা। প্রতি টাকায় চার পিছ। বাক্সের ঝাপি সজোরে ঠুকে দেয় আইসক্রিম বিক্রেতা। অবর্ণনীয় ঠকাস শব্দের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে টিনের চালায়, পরিত্যক্ত কুয়ার জলে, বাঁশের ঝোপে, ফসলের ক্ষেতে, ক্রীড়ামগ্ন ছেলেদের ক্রিকেট মাঠে। লাল রঙা বল, নারকেল শাখার ব্যাট ও বাঁশের স্ট্যাম্প পড়ে থাকে এলোমেলো। বালকেরা দৌড়ে আসে।
আইসক্রিম বিক্রেতা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। খুচরো পয়সায় ভরে ওঠতে থাকে তার গাট। বাক্স খালি হয়ে আসে নিমিষেই, তলানীতে রয়ে যায় কয়েক টুকরো বরফ খন্ড । লাল-নীল জিহ্বা দুলিয়ে ছেলেরা চলে যায় খেলার বাকী অংশে। বিক্রেতা বাক্সখানা উপড় করে বোঝা কমিয়ে হেঁটে চলে উৎফুল্ল মনে।
আইসক্রিম বিক্রেতা চলে গেলে, বালকদের মধ্যে একজন এগিয়ে আসে বিক্রেতা ঠিক যেখানটায় দাঁড়িয়ে আইসক্রিম বিক্রি করছিল এতক্ষণ। মাটিতে পড়ে থাকা এক টুকরো বরফ খন্ড কুড়িয়ে নেয় সে। ক্ষয়ে যাওয়া নোংরা গেঞ্জি দিয়ে বরফ খন্ডে লেগে থাকা ঘাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরো, ধূলা, পাথর মুছে নেয় পরম মমতায়।
এরপর বালকটি যখন চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে মাথা নিচু করে নোংরা বরফ খন্ডটি মুখে পুরবে ঠিক সেই সময় স্বর্গের দেবতাগণ ছিঃ ছিঃ করে ওঠে। দেবতাদের চিৎকারে বালকটির হাত কেঁপে ওঠে। দ্বিতীয়বার বরফ খন্ডটি মাটি থেকে তুলতে গেলে বালকটিকে ব্যর্থ হতে হয়। সেটা ততক্ষণে মাটিতে মিশে গেছে জল হয়ে। স্বর্গে ঠিক মধ্যাহ্ন তখন।
ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫৭