somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিপ্লব৯৮৪২
জীবন ঘনিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখালেখি করি। চেতন ভগতের মতো বাংলাদেশেও পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। সেই পরিবর্তন শুরু হবে আমার নিজ জেলা কুমিল্লা থেকে, পরে ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশে-এই আমার বিশ্বাস।

আমাদের ইংরেজি শিক্ষা

০২ রা অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুদিন থেকেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা কি শিখছি, কি শিখা উচিত, কিভাবে শিখা উচিত তা নিয়ে লেখব লেখব ভাবছি।কিন্তু সময় আর হয়ে উঠে না।আজ সাইফুরস নিয়ে প্রতারনার এইলেখাটি পড়ার পর আর স্থির থাকতে পারলাম না।লিখতে বসে গেলাম।

আমি বিষয়ভিত্তিক কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব নিয়ে এগুতে চাচ্ছি – আপনাদের ভালো না লাগলে এই পর্বেই শেষ। সংগত কারনেই আজকে আমাদের ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করব।

আমাদের সময় আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনিতে বাংলা ও অংক নামে মাত্র দুটি বিষয় পড়েছি।তৃতীয় শ্রেনিতে ঊঠার পর ইংরেজি A,B,C পড়া শিখেছি।ষষ্ঠ শ্রেনীর পর থেকে একটু আধটু ইংরেজি গ্রামার পড়েছি।আর পুরো ইংরেজি গ্রামারের সাথে যুদ্ধ করেছি ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেনীতে।

এখনকার সময়ে এখন বাচ্চারা শিশু শ্রেনীতেই A,B,C শেখে।২য় বা ৩য় শ্রেনী থেকেই গ্রামার শেখা শুরু করে।এই নিয়ে আমাদের মনে কোন দুঃখবোধ নেই। শিক্ষাবিদরা আমাদের শৈশবে পড়ালেখার বোঝা না চাপিয়েনির্মল আনন্দে কাটানোর যে সুযোগ দিয়েছেন সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এখনকার বাচ্চা পোলাপানের কাঁধে বইয়ের বোঝা দেখে বড়ই মায়া হয়।

আমি সরকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। তাই সেখানকার ইংরেজি শিক্ষার কি হাল তা আলোচনা করলেই মনে হয় সমগ্র দেশের ইংরেজি শিক্ষার একটা চিত্র ফুটে উঠবে।শিক্ষকদের কাছে ছাত্রের ঋন কখনো শেষ হবার নয়।আমিও তাদের কাছে ঋনী। তাই এই আলোচনা তাদের বিরুদ্ধে কোন বিদ্রুপ, কটাক্ষ বা সমালোচনা নয়।সমস্যা চিহ্নিতকরন মাত্র।

আমাদের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনীতে ইংরেজি ক্লাস নিতেন দু’জন ম্যডাম।তারা ক্লাশ ও ছাত্রদের প্রতি ছিল খুবই আন্তরিক।একজন ম্যডামের কথা না বললেই নয়। তিনি ছিলেন প্রনতি চন্দ, পরিশ্রমী ও কর্মঠ।আজ যখন পিছনে ফিরে তাকিয়ে ভাবি, ম্যডামদের এত পরিশ্রম আর কর্মোদ্যমের পরও ক্লাসের ৬০জন ছাত্রের দুয়েকজন ছাড়া বাকী সবার ইংরেজির হাতে খড়ি ভালো হয়নি কেন।
কারন...
১। বইগুলো সুলিখিত ছিল না।
২।ম্যাডাম প্রতিটি অধ্যায় পড়ানোর পর ছাত্রদের দিয়ে অনুশীলনীগুলোর চর্চা করাতেন না, আলোচনাওকরতেন না বা বাড়ীর কাজও দিতেন না।

অপরদিকে বড় হয়ে ছাত্র পড়াতে গিয়ে দেখেছি, ইংরেজি মাধ্যমের ব্যাকরন বইগুলো কতই না সুলিখিত।ব্যকরনের মাত্র একটি নিয়ম নিয়ে পুরো একটি অধ্যায়, অধ্যায় শেষে বহু উদাহরন, অনুশীলনী। ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্র শিক্ষকেরা সেগুলোর চর্চা করে। তাই তারা মোটামোটি অষ্টম শ্রেনীতে উঠার পরই তাদের গ্রামার শেখা সম্পুর্ন হয়ে যায়।

অষ্টম শ্রেনীতে উঠে আমাদের ব্যাকরন বইয়ের কিছুটা উন্নতি হল। শিক্ষকও ভাল পেলাম। মুজিবুল হক স্যার। মুলত তার কাছেই আমার সত্যিকারের ইংরেজি শেখা। কিন্তু দুঃর্ভাগ্য, ৬/৭ মাস পরেই তিনি মুসলিম হাইস্কুলে বদলী হয়ে চলে যান। আমাদের স্কুলের ক্লাশে গ্রামার শেখার এখানেই ইতি ঘটে। পরে যারা আসেন, তারা কখনো
ক্লাসে গ্রামার শিখিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। তাদের বাসায় প্রাইভেট ব্যবসা খুলে বসতেন। ছাত্ররা তাদের কাছে যেত,পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেত। ইংরেজি কতটুকু শেখা হত তা সংশ্লিষ্ট ছাত্র ও শিক্ষরাই ভালো বলতে পারবে।

বড় হয়ে জানতে পেরেছি, একটি বই পাঠ্যভুক্ত করার জন্য অবৈধ লেনদেন হয়। আর এই অপকর্মের পাপ গিয়ে পড়ে ছাত্রদের উপর।

আমাদের সময় ব্যাকরনের পুরো প্রশ্নপত্রই হতো MCQ তে।পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরনও ছিল ইংরেজি ব্যকরন শেখার প্রতিকুল।ফলে বিবদমান শিক্ষা ও শিক্ষক ব্যবস্থায় এস এস সি পাস একজন ছাত্রেরও খুব একটা ইংরজি শেখার সুযোগ হয় না।

HSC তে ভর্তি হয়েছিলাম দেশের স্বনামধন্য একটি কলেজে। এখানেও ইংরেজি সিলেবাসে গ্রামার, গল্প, কবিতা সবই ছিল। সপ্তাহের ছয়দিন ছয়জন শিক্ষকে ছয়দিক থেকে ছয়টি গল্প শুরু করতো, সারা বছর ধরে তাই চলত। গ্রামার শেখানোর দিকে কারো আগ্রহ থাকতো না। সে সব চলত প্রাইভেটে। ছাত্ররাও ছুটতো প্রাইভেটে। শিক্ষকরা ক্লাশেই বিজ্ঞাপন করত কলেজের আগের ব্যাচের বোর্ড স্ট্যান্ড করা কোন ছাত্র তার কাছে ইংরেজী কত ভালো শিখেছে!বাসায় সবার পড়ানোর স্টাইল অন্যরকম, শুধু ক্লাসে ভালো করে পড়ানোতেই তাদের যত সমস্যা।


বিশ্ববিদ্যালয়েও ইংরেজি একটা কোর্স ছিল। সেখানেও গ্রামার, গল্প, কবিতা ছিল। কিন্তু না ,এখানকার শিক্ষকেরাও ক্লাসে কিছু পড়ায়নি। দুনিয়ার ফালতু গল্প ক্লাসে এসে বলত। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে আসার পর আমাদের সময়কার মহা ফাঁকিবাজ শিক্ষক আতিউল্লার নামে ছাত্রদের আন্দোলনের খবর পত্রিকায় দেখি। অভিযোগ যথারীতি ঠিক মত ক্লাশ নেয় না, সিলেবাস শেষ করে না, ক্লাশে এসে ফালতু গল্পগুজব করে ইত্যাদি।

এই হল দেশের ইংরেজি শিক্ষকদের ক্লাসে ইংরেজি পাঠদানের চিত্র।গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকুরীর বাজারে ইন্টারভিউ দিতে এসে ছাত্ররা দেখে ব্যাংক,মাল্টিন্যশনাল কোম্পানী,হালের বিসিএসের প্রশ্নপত্র পর্যন্ত সবই ইংরেজীতে। ইংরেজী ছাড়া গতি নেই। প্রথমবারের মত ইংরেজী শেখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।

দীর্ঘ ১৬ বছর স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ফাকিবাজির কারনে বঞ্চিত এসব ছাত্ররা
ছুটে যায় সাইফুর’স, এফ এম ম্যাথডের মত প্রতিষ্টানের কাছে।কিন্তু ১৬ বছরের বোঝা একটি কোচিংসেন্টার ৪~৬ মাসে আর কতটুকুই বা কমাবে। যদিও তারা বিজ্ঞাপন দেয় প্রথম ক্লাশ থেকেইঅনর্গল ইংরেজিতে কথা বলা শেখাবে।এসব শুধুই ফাঁকা বুলি।
১৬ বছর স্কুল-কলেজ থেকে ইংরেজি শেখা গেলে এসব প্রতিষ্টানের কাছে যাওয়ার কখনোইকারো দরকার হতো না। বিবদমান শিক্ষাব্যবস্থায় মনিটরিংয়ের অভাব,আর শিক্ষকদের ফাঁকিবাজির কারনে সাইফুর’স, এফ এম ম্যাথডের মত প্রতিষ্টান আজ দেশে ইংরেজি শিক্ষায় মহীরুহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রায়সবগুলো জেলায় এদের শাখা আছে। এদের কাছে ছাত্ররা ছুটে যাওয়া মানে, বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষে যথাযথভাবে পাঠদান না হওয়া, যেদিন এই প্রতিষ্টানগুলোর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে সেদিনই বলা যাবে শ্রেনীকক্ষে শিক্ষকরা ইংরেজী পড়াচ্ছে।

এবার আসি সাইফুরসের কথায়।প্রতিষ্টাকালীন সময়ে সাইফুর’স এতখারাপ ছিলো না, মানে এত ব্যবসায়িক ছিল না।কিছু ছাত্রছাত্রী আসলেই উপকৃত হয়েছে। আমি সাইফুর’স এ ফনেটিক নামে উচ্চারনের উপর একটি কোর্স করেছিলাম।খারাপ লাগেনি। তবে শিক্ষকদের মাঝে সমস্যা ছিল। পরে শুনেছি, শিক্ষকদের অপমানজনকভাবে বিদায় করে দেয়া,প্রতিদন্দ্বী প্রতিষ্টানের নামে বদনাম করে বিজ্ঞাপন দেয়া- এসব কারনেই তাদের আজ অধঃপতন।

সবশেষে বলি, ইংরেজী শেখার কোন শর্টকার্ট পথনেই। ধৈর্য্য আর অধ্যবসায় নিয়ে নিজে নিজেই এগুতে হবে।১৬ বছরের পাপ ৬ মাসে শেষ হবে না। আমাদের সমস্যার মুলে হাত দিতে হবে।কোন রকম প্রাইভেট পড়া ব্যতীত, কোন ধরনের কোচিং সেন্টারে যাওয়া ব্যতীত শ্রেনীকক্ষ থেকেই ছাত্ররা শতভাগ ইংরেজি ঘাটতি কিভাবে দূর করতে পারে তা নিয়েই ভাবতে হবে। গ্র্যাজুয়েশন করার পরেও চাকরীর বাজারে এসে ইংরেজী জ্ঞানের অভাবে যেন কাউকে চোখে সর্ষে ফুল দেখতে না হয়।

চলবে?
পরের পর্ব গনিত নিয়ে লেখার ইচ্ছা রাখি।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৩১
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×