somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন টাকার ভাবনা

০৯ ই জুলাই, ২০০৮ ভোর ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগে বসে ক্যাচর ক্যাচর করছিলাম। এক ব্লগার অনলাইনে এসে কথা বলা শুরু করল... কবেকার কথা জানি? মনে নাই....
না থাকুক। কি জিজ্ঞেস করল তা মনে আছে বেশ। জিজ্ঞেস করল, 'চালের কেজি কত করে এখন?' মনে হল যেন আমি আগুনের মধ্যে বসে আছি আর একটা লোক পাশে এসে বলছে, 'আগুনের তাপমাত্রা কত ডিগ্রী সেলসিয়াস?'
আমি কইলাম- ৫০ টেকা কেজি-- উহা বলিলাম মনে মনে, বাহিরে ভদ্র ভাষায় টাইপ করিয়া দিলাম-"এইতো ৫০ টাকা কেজি একটু ভালোটা। আর কমদামিটা ৪০ টাকা কেজি।"
পরে আর ভাব ধরে রাখতে পারি না... ব্রহ্মতালু জ্বলে যায় রাগে.... বলি, "ভাই বিদেশ গিয়েছেন বেঁচেছেন। আমরা যে কিসের মধ্যে আছি!"
মনে মনে এক হাজার বার বলি, হে আল্লাহ, আমার কাছে একটা রেডিও অ্যাকটিভ মাকড়শা পাঠাও, সে আমার হাতে একটা কামড় দিক, আমি স্পাইডার ম্যান (নাকি ওম্যান) হয়ে যাই। তারপর একটা কুলদর্শন ড্রেস গায়ে চাপিয়ে দেয়াল বেয়ে বেয়ে ঝোলাঝুলি করে, কোন একভাবে চাল ডাল নুন তেলের দাম কমিয়ে দেই... এই "কোন একভাবে" মানে যে কি আমার জানা নাই।
অবশ্য স্পাইডার ম্যানের চেয়ে সুপার ম্যানের পাওয়ার বেশি। সে উড়তে পারে, চোখ দিয়ে লেসার মারতে পারে, পৃথিবীর আহ্নিক গতিও সে বদলে দিতে পারে.... ওঁ মধু!!
সে তার গার্লফ্রেন্ড হারানোর কষ্টে একবার উত্তর মেরুতে গিয়ে এমন এক চিৎকার দিয়েছিল যে আমেরিকায় বসে তার গার্লফ্রেন্ড সেটা শুনতে পেয়েছিল। আহা কি ক্ষমতা!

এ-ই যদি আমি হতাম? বাংলাদেশী সুপার ওম্যান, তাহলে আজকে কারো কোন কষ্ট করতে হত না। আমি সব ক্ষমতাসীনদের কানের মধ্যে গিয়ে অত জোরে চিৎকার দিতাম.... মানে ঠিক ২০০০০ ডেসিবেল। হয় সবাই হার্ট অ্যাটাক করে মরত, নয়ত চিৎকারের ঠেলায় চাল ডালের দাম কমে যেত। ওদের কানের কাছে মুখ নিয়ে বিশাল হা করে দিতাম এক চিৎকার,"ওওও---ইইইই..... চালের দাম কমা..আ .আ ... আ..." এই টাইপের কিছু একটা।

সেদিন পিচ্চি ভাইবোন দু'টোর জন্য গিফট কিনতে গিয়ে দেখি এক ছেলে খাতা কিনতে এসেছে টেক্সট জোনে। ৩০০ পৃষ্ঠার খাতা মনে হয় ৩৫ টাকা করে চাইল। কয়েকদিন আগে আমিও ছয় সাতটা খাতা কিনিয়েছি আব্বুকে দিয়ে.... দাম শুনে হা হয়ে থাকলাম। ছেলেটা অনেক্ষণ দামাদামি করে দাম কমানোর চেষ্টা করল- লাভ হল না। দাম কখনো কম রাখা হয় না। বাংলাদেশে সবকিছুর গ্রাফ নিম্নমুখী, খালি উন্নয়ন আর দ্রব্যমূল্যের গ্রাফটা উর্ধ্বমুখী।
মোটামুটি বিচ্ছিন্ন দিন যাপন করেছি বেশ দীর্ঘ একটা সময়। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখছি দ্য সান ইজ রিয়েলি হট ইন দ্য আউটসাইড ওয়ার্ল্ড!
বাসের ভাড়া বেড়েছে বেশ অনেকগুলো টাকা করে। আগে ফট করে বাসা থেকে রিকশা করে মিরপুর দশে চলে আসতাম, বলা লাগত না... জানা কথা ভাড়া ৫ টাকা। এখন রিকশাওয়ালারা, "কই যাইবেন?" জিজ্ঞেস না করেই মুখটা ডেনজেল ওয়াশিংটনের মত করে বলে "দশ টেকা" আমি অবাক হয়ে যাই। পাঁচ ছয়টা মাসের মধ্যে ডাবল ভাড়া চায়?? অথচ পুরো স্কুল লাইফ ৫ টাকা ভাড়া দিয়ে এলাম!! কোথায় ৫ বছর আর কোথায় ৫ মাস!!
বাসে যাতায়াতটা আমার বরাবরই অপছন্দ। "সাইদাবাজ- গুলিস্তান- ফারাংগেইট" করে টিন থাপড়াতে থাপড়াতে বাসের হেলপারদের ঝুলে ঝুলে যেতেই দেখেছি চিরকাল, আজকাল ঐ যন্ত্রটায় চড়তে হয়- এতটা রাস্তা তো আর রিকশায় যাওয়া যায় না। বাসে যাতায়াত শুরু করতে না করতেই এক দফা ভাড়া বাড়ল। আট টাকা ভাড়া দশ টাকা। আহ কি মধুর জীবন!! লাইফ ইজ বিউটিফুল!!
বাসে উঠে দাঁত কটমট করে বসে থাকি। বাস জিনিসটি মেয়েদের কাছে বিভীষিকার আরেক নাম। বিশেষ করে লোকাল বাস। কি যে সব মধুর অভিজ্ঞতা..... নামার সময় হেলপারের হেল্প উথলে ওঠে! পিঠে হাত দিয়ে, হাত ধরে.... তাছাড়া লুইচ্চা যাত্রীদের কথা তো বাদই দিলাম.....ওহ কত প্রকারের হেল্প!! সমগ্র বাংলাদেশ এদের দেখে শেখে না কেন বুঝি না!!
সময় নিয়ন্ত্রণ হইল গিয়া আরেক চিটারির নাম... তাদের ভাড়া আবার ষোল টাকা। বৃষ্টির দিনে উঠে আমাকে ডাবল ভাড়া দিতে হল। এটা আসলে বাংলাদেশীদের সহনশীলতার একটা ছোট্ট নমুনা। আমার মনে হয় পুরো জাতিটাই মরে গেছে........

বাসে বসে বসে দুই লোকের ঝগড়া দেখতে দেখতে আমি বাসের কড়িকাঠ গুনি!! বাসের ছাদে তারা গুনি। এক পাথরবহুল লোক (তার লিভারে স্টোন আছে কিনা জানি না, এই পাথর হল হাতে পরার পাথর.. এগুলোর নকল সংস্করণ আমাদের বাণিজ্য মেলায় ইরানী স্টলের সুদর্শন ছেলে মেয়েদের মুখ দেখার বিনিময়ে দেদার বিক্রি হয়) বাসে উঠেই আমার সামনে বসা ছেলেটার পায়ে চাঁটি মেরে পিছনে যেতে যেতে বলল," পা ঢুকায় বস।" আরেকজনকে এই কথা বলতেই তাদের মধ্যে বিশাল ঝগড়া। আর দেখে কে... এর মধ্যে আবার আমার পাশের রো তে বসা লোকটা খুব ভালোভাবে পাথরওয়ালাকে সমর্থন দিচ্ছে... "উনি যে পাত্থরগুলি পরসেন, এগুলির দাম জানেন? এগুলি অনেক দামি জিনিস... আল্লাহই মানুষকে রিজিক দেন.. কিন্তু একটা পাত্থর আসে ওইটা যদি আপনে হাতে দেন আপনার কোনদিন ভাতের কষ্ট হবে না... আল্লাহই আপনাকে দিবে... সউদিরা কুটি কুটি টাকার পাত্থরের বিজনেস করে, জানেন?... আমরা তো খালি সেলস ম্যান ছিলাম.. তাই দেখতাম.." এইটুকু শুনে আমার মনে হল, এই কুটি কুটি টাকার ভাত দেওয়া পাথরগুলো বাংলাদেশে নিয়ে এসে কুটি কুটি টুকরা করে ছড়িয়ে দেয়া যায় না.... মানুষ ভাতের কষ্টে আছে, কষ্ট ঘুচে যেত তাহলে....

ইতিমধ্যে চাঁটি মারা ভদ্রলোক সমর্থন পেয়ে নিজের গীত গাওয়া শুরু করলেন,'আল্লাহ বলেছেন নিজেকে ছোট করতে তাই আমি উনাকে কথাটা বললাম। নাহলে আমার কি দরকার তিন টাকার লোকের সাথে কথা বলতে যাওয়ার? ভাই আমি একজন নাটকের মানুষ (প্রশ্ন হইল তাহলে বাসে তাও আবার লোকাল বাসে কি মনে করে!) আমি সমাজ নিয়ে চলি..'
আমার সামনে বসে ছেলেটা মিটি মিটি হাসছে। ভালো লাগল, ছেলেটা তেড়ে ফুঁড়ে ঝগড়া করতে যায়নি, হয়ত চাঁটি খেয়ে কিছু হলেও শিখেছে। এই জেনারেশনের এটা ভালো, আমরা বড় জ্ঞান পিপাসু। আমরা সালাম বরকতের মত বুকের রক্ত ঢেলে দিতে যাই না.... আমরা আগে হিসাব করি, এই রক্তদানের কি মূল্য? রক্ত দিলে সন্ধানীতে দেয়া ভালো.... আমি তো মনে করি স্টুডেন্ট পলিটিক্সে জড়িয়ে রক্ত দেয়ার চেয়ে এটা নিশ্চিতভাবেই বেটার।
বাস থেকে লোকগুলো নেমে যায়.. পাথরের ক্যানভাসার... পাথরধারী... একজন একজন করে...
"নেমে যা" আমি মনে মনে বলি, এদেশ থেকেই নেমে যা.. পৃথিবীর বুক থেকেই নেমে যা তোরা... আমরা সব ক'টাই নেমে যাই... গর্দভদের এই পৃথিবীতে কোন স্থান নাই। নতুন পৃথিবী হবে বুদ্ধিমানদের জায়গা..... আমরা জাতিশুদ্ধ এই দলের বাইরে....
পাত্থর হাতে পরলে কোটি টাকার মানুষ হয়, না পরলে তিন টাকার।
আমি তো দেখি কুত্তাও পাথরের উপর বিষ্ঠা ত্যাগ করে। এইসব পাথরের এত মূল্য!! এই দিয়ে হয় মানুষের দাম? হাতে পাথর ধারণ করিলাম আর আমি সউদি শেখ হয়ে গেলাম! আর পাত্থর নাই তো কোন দাম নাই!!
সোনা কি? একটা ধাতু... খুব দামি... কেন? কারণ আমরা তাকে দামি বানিয়েছি। পুরুষেরা সোনা দিয়ে স্ত্রী-প্রেমিকা-কন্যাদের গহনা গড়ে দেয়। হীরা কি.. একটা পাত্থর... তাতে আলোর বিচ্ছুরণ হয় খুব সুন্দরভাবে... মহিলারা উহা পরিলে পুরুষদের চোখ ধাঁধাইয়া যায়... ব্লাড ডায়মন্ড দেখে বুঝলাম ঐ পাথরটার কাছে হাজার হাজার মানুষ জিম্মী করে ফেলেছে নিজেদের...
...........................................
মানুষের হৃদয় দিয়ে আলো বাহির হয় না... আলো ঠিকরাইয়া পড়ে না....
সেজন্য উহার কোন দাম নাই... যত দাম পাত্থরের...
কি মধুময় ব্যাপার!! মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে যাই!!!
বাসের আকাশে তারা দেখতে দেখতে আমার হঠাৎ একটা চিন্তা মাথায় আসে... আচ্ছা আমাদের সারা পৃথিবীতে যে এত সমস্যা, সবগুলোর মূলে কি?
আমার মনে হয়- মিথ্যা।
একটা দিনের জন্য যদি আমরা পৃথিবীর সব মানুষেরা মিলে মিথ্যা বলা ছেড়ে দিতাম! বাসের ছাদের দিকে তাকিয়ে আমি কল্পনা করি... কি দারুণ ব্যাপার হত!
ফখরুদ্দীন- মঈন উদ্দীনরা আর আলু খেতে বলত না, বুশ হঠাৎ করেই বলত, সরি, বাটপারি করেছি তোমাদের সঙ্গে wmd বলে কিচ্ছু নাই, ব্লেয়ার বলত, আসলেও আমি একটা পা চাটা। আই ডোন্ট মাইন্ড!
উফ কি দারুণ ব্যাপার হত... আমাদের রাজনীতিবিদরা সবাই আবার বিশুদ্ধ হয়ে ফিরে আসতেন.... চালের দাম না বেড়ে যদি মানুষের দাম বাড়ত!!
বাসের ছাদের দিকে তাকিয়ে আমার খাতা কিনতে যাওয়া ছেলেটার ঘর্মাক্ত মুখ ভেসে উঠল মনে..... খাতার দাম কত কম হত!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:০০
৫০টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×