somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"গানের রিভিউ; সায়ানের 'আইবুড়ি' একটি চিরচেনা পারিবারিক নির্যাতনের গল্প... "

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


...অবশেষে পিতৃদ্বয়ের প্রতীক্ষা ফুরায়
‘মেয়ে আসছে মেয়ে আসছে’ ধবনি শোনা যায়,
অসুস্থ এক রুগীর মত মেয়েটাকে ধরে
ধরে ধরে মুরুব্বীরা আনে বসার ঘরে,
ঘোমটা মাথায় জড়সড় বসলো সোফায় মেয়ে,
চুপটি করে রইলো কেবল মাটির দিকে চেয়ে,
বাদবাকি সব মানুষগুলো দেখছে শুধু তাকে;
মেয়ের বাবা মনে মনে আল্লাহ্ রসুল ডাকে...

বুক রিভিউ, মুভি রিভিউ তো অনেক পড়লেন, এবার পড়ুন একটি গানের রিভিউ... একটা গান, যেই গানে আছে পর্দা ছেঁড়ার ধৃষ্টতা, একজন কণ্ঠশিল্পী যিনি সমস্ত ঝড় ঝাপটা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একা বেয়ে চলছেন তার ডিঙি নৌকা।

সায়ান

সায়ানের পরিচয় আজ দেবো না, সরাসরি চলে যায় তার গান "আইবুড়ি"তে...

আইবুড়ি আসলে গান না, আইবুড়ি এই সমজের প্রত্যেকটা পরিবারে ঘটে চলা নির্যাতনের কথক;

আমাদের সমাজে যে সব মেয়েদের চেষ্টা করেও বিয়ে দেয়া যায় না, তাদের জন্যে ‘আইবুড়ি’ একটি প্রচলিত ডাক। এই গান তাদের পিতা-মাতাদের নিয়ে। ‘কন্যাদায়-গ্রস্থ’ মাতা-পিতা বলা হয় যাদের প্রচলিত ভাষায়। কিছু অসভ্যতা আমাদের সমাজটির চরিত্রের অণু-পরমাণূতে একেবারে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে মিশে আছে, তাই ‘কন্যা’ শব্দটির পাশে ‘দায়’ শব্দটি এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে অবলীলায়। এই গানটি সেই ঘৃণ্য অবস্থার প্রতি সামান্য এক ছটাক ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নয়। বছরের পর বছর যেই সংস্কৃতি টিকে আছে, দু-একটা গানের, দু-এক ফোঁটা ঘৃণায়, সেই সংস্কৃতি পাল্টাবে না জানি, কিন্তু একজন মানুষ হিসাবে শিল্পীর ব্যক্তিগত ঘৃণাটুকু এই গান।

ছেলের বাবা হাজির হলেন মেয়ের খরিদ্দার
মেয়েটাকে ঘেঁটে-ঘুঁটে দেখতে হবে তার,
আইবুড়ি তার মেয়েটাকে করতে হবে পার
মেয়ের বাবা তাই সাজলেন আজ শাড়ীর দোকানদার

ফুস্‌লিয়ে ফাস্‌লিয়ে যদি গছিয়ে দেয়া যায়
ভালয় ভালয় একটা বোঝা তবেই বিদায় হয়

মনে মনে দোয়া দরুদ...
ওরে আল্লাহ্‌ আল্লাহ্ বিল্লাহ্‌ কর
আইবুড়ি এই মেয়ের ভাগ্যে আজকে যেন জোটে বর

মেয়ের বয়স কুড়ি না হতেই শুরু হয়ে যায় ভাগ্যাহত কন্যা দায় গ্রস্থ পিতার পাত্র খোঁজা। এশিয়ার দেশগুলোতে সেটল ম্যারেজের ক্ষেত্রে মেয়ে দেখা নামক এই বিদঘুটে প্রথাটা চালু আছে। পুরো প্রসেসটি বেশ জটিল এবং অর্থ ও সময় দুটোরই অপচয় ঘটায়। প্রথমে মেয়ের বা ছেলের খোঁজ লাগাও - সে হতে পারে বিনামূল্যে সাহায্যকারী কোন আত্মীয় বা অর্থের বিনিময়ে সাহায্যকারী ঘটক ব্যাক্তি বা সংস্থা। শুধুমাত্র এই ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ম্যাচমেকার সংস্থা এবং ওয়েবসাইট।বাংলাদেশেও এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে অনেকে এদের কাছে ধর্ণা দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে চান বিয়ের এই phase টিতে।

ছেলের বাবায় মেয়ের বাবায় গল্প কত হয়
আরো কিছু মানুষ থাকে বৈঠকখানায়
সামনে পড়ে আলাউদ্দিনের মিষ্টি এবং দই
খেতে খেতে হঠাৎ বলে ‘মেয়ে গেল কই’?

মেয়ে তখন ভিতর-ঘরে কাঁপুনি তার বুকে
ফর্সা হবার স্নো পাউডার ঘষছে যে তার মুখে
মুরুব্বীরা আয়নাটাকে সামনে বসিয়ে
সবচে’ ভালো শাড়ীখানা দিচ্ছে পরিয়ে

একটা ভাল সম্বন্ধ খুঁজে পাওয়া গেলে শুরু হয় মেয়ে দেখা।
মূল কনসেপ্ট হচ্ছে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে ছেলের বাসার সবাই চেখে দেখবেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা - মেয়ের বাড়ির রান্না থেকে শুরু করে, মেয়ের চেহারা ছবি, পরিবারের অন্যান্যদের অবস্থা ইত্যাদি। এই ব্যাপারটা যে কি ভয়ঙ্কর তা সে মেয়ে মাত্রই জানে। সেজেগুঁজে বসে থাকো, হেঁটে দেখাও, গান শুনাও, ধাঁধার উত্তর দাও, হাসি মশকরা সহ্য কর - এরকম বিভিন্ন বিচিত্র ব্যাপারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় মেয়েটিকে। অনেকে নামাজের মাশলা-মাসায়েল জিজ্ঞেস করে মেয়েকে। অনেকে আবার ভেজা পায়ে হেঁটে যেতে বলে পায়ের নিচের ফাঁকা জায়গাটা ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য - যেন ওটা ঠিক না থাকলে কেয়ামত হয়ে যাবে। মুরুব্বীরা মেয়েটার শরীরের বিশেষ জায়গায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে - 'আমাগো পোলাডা মজা পাইবো কিনা সেইটা নিশ্চিত করতে হইবো না?' যেন কোরবানীর গরুর হাট। অথচ ছেলেটাকে এসবের কিছুই করতে হয়না।

অবশেষে পিতৃদ্বয়ের প্রতীক্ষা ফুরায়
‘মেয়ে আসছে মেয়ে আসছে’ ধবনি শোনা যায়
অসুস্থ এক রুগীর মত মেয়েটাকে ধরে
ধরে ধরে মুরুব্বীরা আনে বসার ঘরে
ঘোমটা মাথায় জড়সড় বসলো সোফায় মেয়ে
চুপটি করে রইলো কেবল মাটির দিকে চেয়ে
বাদবাকি সব মানুষগুলো দেখছে শুধু তাকে
মেয়ের বাবা মনে মনে আল্লাহ্ রসুল ডাকে

ম্যাডাম একটু শুনে যান... আহা এই দিকে তাকান
ওরে পাংখা ছেড়ে দে রে তোরা কোক পেপ্‌সি আন
ম্যাডাম আমার দোকান থেকে একটা শাড়ী নিয়ে যান
এমন জিনিষ অন্য কোথাও পেলে ফেলবো কেটে কান

মেয়ের চোখটা কি ট্যারা... মেয়ের নাকটা কি খাড়া
মেয়ে হাঁটো দেখি দেখবো তোমার পা’টা কি খোঁড়া
না না চোখ ট্যারা নয়,পা খোঁড়া নয়, নাকটাও খাড়া
শাড়ীর আঁচল টেনে দেখেছি নেই ছেঁড়া ফাঁড়া

মুখে বসন্তের ঐ দাগ... মেয়ে পার কি তবে পাবে ?
শাড়ীর কোথাও কোন দাগ থাকলে বাতিল হয়ে যাবে...

মেয়ে ঘোমটা খোলো দেখবো তোমার লম্বা কেমন চুল
আপা দেখুন শাড়ীর সুতোর কাজে নেই তো কিছুই ভুল
আপা মেপে দেখুন শাড়ীখানা পুরো বারো হাত
মেয়ে হাসো দেখি দেখবো তোমার ক’টা উঁচু দাঁত

কোথায় এত কমে পাবেন এমন শাড়ী জববর
শাড়ীর সঙ্গে আছে বোনাস, পাবেন ব্লাউজের কাপড়
মেয়ের সাথেও আছে বোনাস, জানে রবীন্দ্র সঙ্গীত
জমিয়ে দেবে শ্বশুরবাড়ির গানের আসর


ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই রয়েছে। সভ্য মানুষেরাও এই সমাজেই আছেন। তাদেরকে বাদ দিয়েই আমি এক ধরনের আচরণের কথা বলছি। আমাদের দেশে যখন কোন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়, তখন নবজাতক কন্যার গায়ের রংটি ফর্সা হলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আত্মীয়-স্বজনেরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। কিন্তু যদি কন্যা সন্তানটির গায়ের রং কালো হয়, তবে অনেকেই মনে মনে দু-একবার ভেবে ফেলেন, ‘একে পার করতে ঝামেলা পোহাতে হবে!’ বেচারা শিশুটি জানতেও পারেনা, পৃথিবীর আলোতে প্রবেশের দু-এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে ‘পার’ করা নিয়ে তার আত্মীয়-মহলে এক পশলা দুশ্চিন্তা করা সারা। এই শিশুটি যখন বেড়ে উঠতে থাকে, খুব ছেলেবেলা থেকেই এক ধরনের গ্লানির সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে যায়। বেড়ে উঠবার গোটা প্রক্রিয়াতে কালো মেয়ে‘টিকে বিয়ের বাজার ধরবার জন্যে প্রস্তুত হতে হয়। নানান পদের ‘রূপ- মসলা’ মেখে চেহারার কদর্যতা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার হাজার রকম কায়দা কন্যাটিকে রপ্ত করতে পরামর্শ দেয়া হয়। ভালো-মন্দ, ন্যায্য-অন্যায্যতার নিজস্ব বিচার জ্ঞান হবার অনেক আগে থেকেই তার ভেতরে এক হীনমন্যতার বোধ জন্মে যায়, যার আদতেই কোন ভিত্তি নেই। এক অপ্রয়োজনীয় অপরাধবোধ হয়ে যায় তার নিত্য-সঙ্গী।

মেয়ের সব দেখা হলো... মেয়ে এমনিতে ভালো
শুধু গায়ের রঙটা একটুখানি সামান্য কালো
এই শাড়ীটা তো নেবোনা... এর গায়েতে ধুলো
কোনো ধলা মেয়ে থাকলে দেখান দেখবো সবগুলো

এই হতভাগী যদি তাদের পছন্দ না হয়
তবে হাবে ভাবে সেই কথাটাই জানিয়ে দিয়ে যায়
তখন আশাতে বুক বাঁধে মেয়ের পিতা দোকানদার
বুঝি একদিন তার আইবুড়ি মেয়ে হবেই হবে পার

বাবার দুঃখ দেখে কালো মেয়ে মনে মনে ভাবে
কবে চোখের জলে গায়ের রঙটা ফর্সা করা যাবে!

আবার আলাউদ্দিনের দোকান থেকে মিষ্টি কেনা হয়
আবার পাত্রপক্ষ এসে কন্যা বাতিল করে যায়

যদি ছেলের বাবা হয়ে থাকেন বোকা কাস্টমার,
শুক্‌রিয়া আলহামদুলিল্লাহ মেয়ে হলো পার...

চরম আত্মবিশ্বাস-হীনতার শৈশব পাড়ি দিয়ে মেয়েটি ও তার পরিবার যখন বুকের প্রবল ধুকপুকানি সমেত, সমাজ নির্ধারিত বিয়ের বয়সটির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, তার পরের লজ্জাজনক অধ্যায়টি’ই এই গানের বিষয়। কিছু অসাধারণ ভাগ্যের অধিকারিণী মেয়ের অবশ্য ‘কালোর’ মধ্যেও ‘ভালো‘, ‘খাড়া‘ ও ‘মিষ্টি চেহারা’ থাকার গুণে দ্রুতই ‘বর’ জুটে যায়। আর যাদের জোটে না, বারেবারে এক নারকীয় পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়, এবং কিছুতেই ‘পাশ-নম্বর’ জুটতে চায় না।

পৃথিবীতে যারা ভালো চেহারা নিয়ে এসেছেন, রূপসী, সুন্দরী, তারা আয়নায় তা উপভোগ করুন। তাদের রূপের শোভায় আমাদের সকলেরই নয়ন জুড়াক। সুন্দর চেহারার মানুষদের ‘আনন্দিত’ হবার মত কারণ আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু গর্ব বোধ করবার মত কিছু বোধহয় নেই। কেননা চেহারার সৌন্দর্য্য তো প্রকৃতির খেয়াল, তাই সৌন্দর্য্য নিয়ে কৃতিত্বের কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে, দিনের পর দিন যারা আয়না দেখে মন খারাপ করছেন, আমি বলবো, খুবই খুবই বোকামি করছেন। এমন এক পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি, যেখানে দুঃখ পাবার মত অনেক যোগ্য, উচিত ও ন্যায্য কারণ রয়েছে। তাদের প্রতি, দীর্ঘশ্বাস বা চোখের জলের এহেন অপচয় না করার অনুরোধ রইলো।

এই পৃথিবীতে কোন সন্তানের প্রথম আশ্রয়, প্রথম বিশ্বাস হলো তার বাবা-মা। সেখানেই কোন সন্তান যদি তার প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। মনুষ্য সমাজে বিয়ে-শাদীর মত আনন্দ-উৎসবে পাত্র-পাত্রী দেখা-দেখির বিষয়গুলো সম্মান বজায় রেখে সম্পন্ন করা অসম্ভব হওয়ার কথা না। বিকি-কিনির বাজারে, মানুষকে যেন কোরবানির হাটের ‘গরুর’ মত না দেখায়, সেই দায়িত্ব বোধহয় মানুষকে তার নিজের গরজেই নিতে হবে। কন্যা সন্তানকে বিয়ে দিতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই চাওয়াটি বাস্তবায়নের জন্যে যেই প্রচলিত পদ্ধতিগুলো আছে, তার সবগুলোই অন্ধভাবে অনুকরণ করা আসলেই জরুরী কিনা, তা নিয়ে খানিকটা চিন্তা ভাবনা করলে, ‘কন্যা’ মানুষটির প্রতি, মনুষ্যত্বের প্রতি, খানিকটা সুবিচার করা হবে, এবং সভ্যতার যাত্রায় আরেকটু এগোনো যাবে! এমনিতেই আমরা অনেক পিছিয়ে আছি!

ছেলের বাবা হাজির হলেন মেয়ের খরিদ্দার
মেয়েটাকে ঘেঁটে-ঘুঁটে দেখতে হবে তার,
আইবুড়ি তার মেয়েটাকে করতে হবে পার
মেয়ের বাবা তাই সাজলেন আজ শাড়ীর দোকানদার

ফুস্‌লিয়ে ফাস্‌লিয়ে যদি গছিয়ে দেয়া যায়
ভালয় ভালয় একটা বোঝা তবেই বিদায় হয়

মনে মনে দোয়া দরুদ...
ওরে আল্লাহ্‌ আল্লাহ্ বিল্লাহ্‌ কর
আইবুড়ি এই মেয়ের ভাগ্যে আজকে যেন জোটে বর

ছেলের বাবায় মেয়ের বাবায় গল্প কত হয়
আরো কিছু মানুষ থাকে বৈঠকখানায়
সামনে পড়ে আলাউদ্দিনের মিষ্টি এবং দই
খেতে খেতে হঠাৎ বলে ‘মেয়ে গেল কই’?

মেয়ে তখন ভিতর-ঘরে কাঁপুনি তার বুকে
ফর্সা হবার স্নো পাউডার ঘষছে যে তার মুখে
মুরুব্বীরা আয়নাটাকে সামনে বসিয়ে
সবচে’ ভালো শাড়ীখানা দিচ্ছে পরিয়ে

অবশেষে পিতৃদ্বয়ের প্রতীক্ষা ফুরায়
‘মেয়ে আসছে মেয়ে আসছে’ ধবনি শোনা যায়
অসুস্থ এক রুগীর মত মেয়েটাকে ধরে
ধরে ধরে মুরুব্বীরা আনে বসার ঘরে
ঘোমটা মাথায় জড়সড় বসলো সোফায় মেয়ে
চুপটি করে রইলো কেবল মাটির দিকে চেয়ে
বাদবাকি সব মানুষগুলো দেখছে শুধু তাকে
মেয়ের বাবা মনে মনে আল্লাহ্ রসুল ডাকে

ম্যাডাম একটু শুনে যান... আহা এই দিকে তাকান
ওরে পাংখা ছেড়ে দে রে তোরা কোক পেপ্‌সি আন
ম্যাডাম আমার দোকান থেকে একটা শাড়ী নিয়ে যান
এমন জিনিষ অন্য কোথাও পেলে ফেলবো কেটে কান

মেয়ের চোখটা কি ট্যারা... মেয়ের নাকটা কি খাড়া
মেয়ে হাঁটো দেখি দেখবো তোমার পা’টা কি খোঁড়া
না না চোখ ট্যারা নয়,পা খোঁড়া নয়, নাকটাও খাড়া
শাড়ীর আঁচল টেনে দেখেছি নেই ছেঁড়া ফাঁড়া

মুখে বসন্তের ঐ দাগ... মেয়ে পার কি তবে পাবে ?
শাড়ীর কোথাও কোন দাগ থাকলে বাতিল হয়ে যাবে...

মেয়ে ঘোমটা খোলো দেখবো তোমার লম্বা কেমন চুল
আপা দেখুন শাড়ীর সুতোর কাজে নেই তো কিছুই ভুল
আপা মেপে দেখুন শাড়ীখানা পুরো বারো হাত
মেয়ে হাসো দেখি দেখবো তোমার ক’টা উঁচু দাঁত

কোথায় এত কমে পাবেন এমন শাড়ী জববর
শাড়ীর সঙ্গে আছে বোনাস, পাবেন ব্লাউজের কাপড়
মেয়ের সাথেও আছে বোনাস, জানে রবীন্দ্র সঙ্গীত
জমিয়ে দেবে শ্বশুরবাড়ির গানের আসর

মেয়ের সব দেখা হলো... মেয়ে এমনিতে ভালো
শুধু গায়ের রঙটা একটুখানি সামান্য কালো
এই শাড়ীটা তো নেবোনা... এর গায়েতে ধুলো
কোনো ধলা মেয়ে থাকলে দেখান দেখবো সবগুলো

এই হতভাগী যদি তাদের পছন্দ না হয়
তবে হাবে ভাবে সেই কথাটাই জানিয়ে দিয়ে যায়
তখন আশাতে বুক বাঁধে মেয়ের পিতা দোকানদার
বুঝি একদিন তার আইবুড়ি মেয়ে হবেই হবে পার

বাবার দুঃখ দেখে কালো মেয়ে মনে মনে ভাবে
কবে চোখের জলে গায়ের রঙটা ফর্সা করা যাবে!

আবার আলাউদ্দিনের দোকান থেকে মিষ্টি কেনা হয়
আবার পাত্রপক্ষ এসে কন্যা বাতিল করে যায়

যদি ছেলের বাবা হয়ে থাকেন বোকা কাস্টমার,
শুক্‌রিয়া আলহামদুলিল্লাহ মেয়ে হলো পার...


আমি আর বেশী কথা বললাম না। গানটা নিজেই যথেষ্ট এই সমাজের পরিস্থিতি অবস্থা জোরালো কণ্ঠে আপনার কানে পৌঁছে দেয়ার জন্য, নারী নির্যাতনের সূতিকাগারই যখন এই সমাজ তখন পরিবারকে দোষ দিয়ে কি লাভ ?
গানের লিংক সরাসরি দেয়া পাইরেসিকে উৎসাহিত করবে তাই ইউটিউব লিংকঃ
http://www.youtube.com/watch?v=5LIIebsHve8
১১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×