somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যোগেশ দত্তঃ জীবন যুদ্ধে পরাজিত এক মুক্তিযোদ্ধা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথা গোজার ঠাই নাই। ভাইয়ের বাড়িতে থেকে দিন কাটছে। বয়সের ভারে কোন কাজও করতে পারেন না। কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের লীপুর গ্রামের যোগেশ দত্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের টানে ৩৩ বছর বয়সে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। ৭১ এর রণাঙ্গণের বীর যোগেশ দত্ত খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন আজ।

অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। চিকিৎসকরা বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে অপেন হার্ট সার্জারি করানোর জন্য। বর্তমানে তিনি একিউট অ্যানটারোসেপটাল এম আই ও ক্রমিক রেনাল ফেলিউর ও ক্রনিক এসট্রা কটিভ পাল সোনারী ডিজিজে ভোগছেন। একাত্তরে পাক বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট এলাকায় এসে বিভিন্ন ঘর বাড়ির সাথে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশের ঘর জ্বালিয়ে দেয়। তার নিজ গ্রামসহ এলাকায় চলে গণহত্যা। তিনি নিজ চোখে এগুলো দেখে আর ঠিক থাকতে পারেন নি। ঘৃণা ও প্রতিশোধের আগুণ জ্বলতে থাকে তার মনে। তাই নিজ মাতৃভূমি ও নিজ মাতৃভূমির সন্তানদের পাক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেওয়ার।

পাক বাহিনীর হাত থেকে প্রাণে রক্ষার জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়া ভারতগামী জনতার সাথে তিনিও চলে যান সীমান্তের ওপারে। শরনার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে নামলেখান মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমানের নেতৃত্বে ভারতের কুমার ঘাটে ট্রেনিং নেন তিনি। ট্রেনিং শেষে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে যুদ্ধ করেন মুন্সিবাজার এলাকায়। তিনি তার যুদ্ধকালীন স্মৃতি চারণ করে বলেন, মুন্সিবাজার এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে আমাদের যুদ্ধ হয়েছিল দীর্ঘদিন। যুদ্ধে পাক বাহিনীর বন্দুকের গুলি এসে লেগেছিল আমার বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে। তবুও যুদ্ধের ময়দান থেকে পিছপা হয়নি আমি। মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেই ঘরে ফিরেছিলাম। যুদ্ধে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়েছিলো।

দীর্ঘ নয়মাসের যুদ্ধে তার সহযুদ্ধারা ছিলেন, নজিব আলী, শিশির মিয়া, আব্দুল সোবহানসহ আরো অনেকেই। যুদ্ধ পরবর্তী মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্যাপ্টেন এনামের নিকট অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। লেখাপড়া জানা না থাকায় জীবন রার্থে বেছে নেন কৃষি কাজ। নিজের জমি ও অন্যর জমি বর্গাচাষ করে চলতে থাকে সংসার। অভাবের সংসারে সুখ না থাকলেও দুবেলা পেট ভরে দু’মুঠো ভাত ছিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ পায়ের আঙ্গুলের যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে হয় তাকে। জমানো কোনো টাকা ছিলো না। তাই নিজের কৃষি জমি বিক্রি করে অর্থের যোগার করেন। ৫ সন্তানের জনক মুক্তিযোদ্ধ যোগেশ দত্ত তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিতে বিক্রি করেছেন, জীবনের শেষ সম্বল বসত ভিটাও। আজ তার মাথা গোজার কোনো ঠাই নেই!

বয়সের ভারে জীবিকা নির্বাহেরও কোন পথ নেই। সম্প্রতি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি আজ মৃত্যুর মুখোমুখি। চিকিৎসকরা বলেছেন জরুরি ভিত্তিতে অপেন হার্ট সার্জারি করানোর জন্য, আর সেজন্য প্রয়োজন ২ ল টাকা। মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ দত্ত বলেন, ঠিকমতো দুবেলা অন্নের জোগারই করতে পারছি না, চিকিৎসার দু ল টাকা জোগার করব কোথা থেকে। যুদ্ধের সময় কোন কিছু পাওয়ার আশায় যুদ্ধ না করলেও, স্বাধীন দেশে চিকিৎসার অভাবে মরতে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের একথা কখনও ভাবিনি। দেশ স্বাধীন করা এই মুক্তিযোদ্ধা তার জীবন কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে দুচোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৩৬ বছরে চাওয়া পাওয়ার কোন হিসাব করিনি। নয় মাস যুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। তিনি বলেন, জীবনের চেয়ে বড় পাওনা আর কি হতে পারে।

৭১এর পাক বাহিনীর নিকট হার না মানা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ হার মেনেছেন দুরারোগ্য ব্যাধির নিকট। ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধে জয়ী হলেও আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীবন যুদ্ধে পরাজিত। বর্তমানে প্রতিদিন উর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের বাজারে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা ৫শ টাকায় অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটছে তার। ভূমিহীন এই গরীব মুক্তিযোদ্ধার চোখে ও মুখে আজ শুধু অসহায়ত্বের ছাপ। নিজ হাতে স্বাধীন করা দেশে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার আকুতি।

বর্তমানে ৭০ বছর বয়সের মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ দত্ত অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাপ্রধানসহ সমাজের হßদয়বান ও দানশীল ব্যক্তিত্বের নিকট তাকে একটু সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন জানান। জাতিকে স্বাধীন দেশ উপহার দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ দত্ত সবার একটু সাহায্য সহযোগিতা পেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন দুরারাগ্যো ব্যধি থেকে। জাতিকে লাল সবুজের পতাকা এনে দেওয়া এই মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং- ০৫০৪০৩০০৪১।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:০৩
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×