somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'৭১ এর এই দিনে.... বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান

২৮ শে অক্টোবর, ২০০৭ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ২৮ অক্টোবর রোববার মহান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৩৬ তম শাহাদত বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামের সন্তান সিপাহী হামিদুর রহমান।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয় সিপাহী হামিদুর রহমান তাদের একজন। আর স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩৫ বছর পর তার স্মৃতি রক্ষার্থে নির্ম্মান করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ বাংলাদেশে আনার সিদ্ধান্ত হলেও কোন পথে নিয়ে আসা হবে তা নির্ধারন হয়নি।

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষদিকে কমলগঞ্জের ধলাই সীমান্ত এলাকায় প্রচন্ড যুদ্ধ চলছিল। চারদিকে চা বাগান, মাঝখানে ধলাই সীমান্ত চৌকি। ধলাই সীমান্ত চৌকি থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর শহরে ছিল মুক্তিবাহিনীর সাবসেক্টর ক্যাম্প। সব প্রস্তুতি নিয়ে ২৮ অক্টোবর ভোর রাতে লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নেতৃত্বে একটি দল পাক সেনাদের উপর চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমন চালায়। ব্যাপক গোলাবর্ষনে পাক সেনাদের ক্যাম্পে আগুন ধরে যায়। প্রচন্ড গুলিবর্ষন ও পাকবাহিনীর পেতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। সৈনিক হামিদুর রহমান সীমান্ত চৌকি দখলের উদ্দেশ্যে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে হালকা একটি মেশিনগান নিয়ে বিপ্তি গোলাগুলির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে শত্রুপরে ৫০ গজের মধ্যে ঢুকে পড়েন। গর্জে উঠে তার হাতের মেশিনগান।
শত্রুদলের অধিনায়কসহ বেশ কয়েকজন সৈন্য এতে প্রাণ হারায়। এমন সময় শত্রুসৈন্যের একটি বুলেট হামিদুর রহমানের কপালে বিদ্ধ হয়। ১৯৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তের তৎকালীন ইপিআর বর্তমান বিডিআর ফাঁড়ির সামনে এক সম্মুখ যুদ্ধে মরনপন লড়াই করে সিপাহী হামিদুর রহমান মৃতূবরন করেছিলেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ সময় পর ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত রী বাহিনীর উদ্যোগে সর্বপ্রথম কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই সীমান্ত চৌকির পাশে নির্ম্মাণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিফলক। মহান এই বীরশ্রেষ্ঠের সম্মানে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্ম্মানের দাবী দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বাস্তবায়িত হয়। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১০ শতাংশ জায়গার উপর সাড়ে ১৪ ল টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্ম্মাণ করে। ২০০৬ সালের ১ জুলাই তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম, সাইফুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন। সাথে সাথে কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ- মাধবপুর সড়কটিকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়।

৭ জন বীর শ্রেষ্ঠের মধ্যে ২ জনের কবর ছিল বিদেশের মাটিতে। গত বছর ২৪ জুন পাকিস্তানের করাচী থেকে বীর শ্রেষ্ঠ ফাইট ল্যাঃ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। বাকী বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা এলাকা থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহন করেছে। অতিসম্প্রতি ঢাকায় বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যকার ৫ দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনে সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়েছে বিজয়ের মাস আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। শীঘ্রই ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারতের ত্রিপুরা যাবেন।

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৩৬ তম মৃতূø বার্ষিকীতে কমলগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা েভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে পাঠ্য পুস্তকসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ধলই সীমান্ত বলা হচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ক্যাঃ (অবঃ) সাজ্জাদুর রহমান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এনিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে বহুবার বলা হয়েছে যে, ধলই সীমান্ত কমলগঞ্জ উপজেলাধীন। এই ভুল সংশোধন করার ব্যাপারে সরকারীভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের সাথে তিনিসহ কমলগঞ্জের বহু মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছিলেন। তারা দাবী করে বলেন, ভারতের আমবাসা থেকে অতি সহজে কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চেকপোষ্ট দিয়ে বাংলাদেশে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা যাবে। এতে করে সহজে বাংলাদেশে তার দেহাবশেষ প্রবেশ করবে আর কমলগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা শেষবারের মত তার কফিনটির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
এব্যাপারে আলাপকালে ত্রিপুরায় গিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের কবর চিহিßতকরন দলের সদস্য ল্যাঃ কর্ণেল(অবঃ) সাজ্জাদ এ জহির বলেন, বিষয়টি নির্ভর করছে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের উপর। তাই এখন সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না যে কোন পথে ও কিভাবে দেহাবশেষ বাংলাদেশে আসবে।
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×