somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযোদ্ধা রাকেশ শব্দকরঃ জীবন যোদ্ধে আজো সংগ্রামী

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধে অনেকই রাতারাতি বড়লোক বনি গেছইন। আর আমার মত বউত মুক্তিযোদ্ধা হারাদিন রিক্সা চালাইয়াও পেটের ভাত যোগার করতো পারের না, অউতো আমরার স্বাধীনতা।
কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন মুক্তিযোদ্ধা রাকেশ শব্দকর।

কমলগঞ্জ থানার আলীনগর ইউনিয়নের নছরতপুর (কাজিরগাঁও) গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ২৭শে মার্চ পাকবাহিনী শমসেরনগরে বাঙ্গালী হত্যার খবর পেয়ে তার মনে জ্বলে ওঠে প্রতিশোধের আগুন। তখন রাজনীতি না বুঝলেও স্বাধীনতার মানে কি? তা ঠিকই অনুভব করতে পেরেছিলেন। তাই ২১ বছর বয়সেই অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধে। রাতের আধারে বাড়ির কাউকে না বলে শরীফপুর সীমান্ত অতিক্রম করে সাথীদের নিয়ে চলে যান ভারতের কৈলাশহরে। সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় আসামের লোহারবন্দ ট্রেনিং ক্যাম্পে। ক্যাম্পে অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ শেষে রাকেশসহ ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠানো হয় ধর্মনগর সীমান্তে। তার সহযোদ্ধারা ছিলেন ক্যাঃ মোজাফ্‌ফর মিয়া, অজিত বর্ধন, মনিন্দ্র বাউরী, শৈলেন্দ্র ভৌমিখ, ঝুনু লালসহ আরো অনেকেই। ল্যাঃ সিকান্দারের নেতৃত্বে ফুলতলা, লাতু, কালাটি, বড়লেখা, গাজীপুর এলাকায় পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। গাজীপুরের একযোদ্ধে বীরমুক্তিযোদ্ধা ল্যাঃ সিকান্দার শত্রুর গুলিতে শাহদাত বরণ করেছিলেন। তখন দীপু বাবু ও ক্যাঃ মোজাফ্‌ফরের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন কুলাউড়ার কলেজ রোডসহ লংলার বিভিন্ন এলাকায়।


তার উপর দায়িত্ব পড়েছিলো রাস্তায় মাইন পেতে ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে পাক সেনাদের গতিরোধ করার জন্য। তিনি বলেন, আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব আমি সফলতার সহিত পালন করেছিলাম। লংলার একটানা তিনদিনের যুদ্ধ তার জীবনে স্মরণীয় বলে তিনি জানান। সেই যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতির পর পাক সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিলো। রাকেশ মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেয়ায় যুদ্ধকালীন সময় পাক বাহিনীর এদেশীয় দালালরা অনেকবার তার পিতা-মাতার উপর অমানষিক নির্যাতন চালিয়েছিলো। আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো তার বসত বাড়িতে। তবুও দেশ মাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গ করা রাকেশ পিছু হটেননি একটি বারের জন্যও। নয়মাস যুদ্ধ শেষে স্বাধীন হয় দেশ। অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফিরেন রাকেশ। কিন্তু বাড়িতে এসে কিছুই পাননি তিনি। পাক বাহিনীর স্থানীয় রাজাকাররা বসত বাড়ি পুড়িয়েও ক্ষান্ত হয়নি লুট করে নিয়ে গিয়েছিলো বাড়ির সবকিছু। তাই নতুন করে শুরু করেন বেঁচে থাকার যুদ্ধ। কিন্তু এতেও বাঁধা।

যুদ্ধের তিন বছর পর স্বাধীন দেশে রাজাকাররা আক্রোশ মেটাতে আবারও তার বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এতে তার আতাউল গণি স্বাক্ষরিত একমাত্র সম্বল মুক্তিযোদ্ধের সনদটিও পুড়ে যায়। দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ধর্ণা দিয়ে ১৯৯৯ সালের ২৬শে জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্য আহাদ চৌধুরী স্বারিত একটি সনদ সংগ্রহ করেন তিনি। যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন দেশে বেঁচে থাকার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মহলে গিয়ে ধর্ণা দিয়েছেন একটু সাহায্যের জন্য। তখন সাহায্য না পেয়ে শুধু আশার বাণী শুনতে পেয়েছিলেন যা আজোও বাস্তবায়িত হয়নি।

মুক্তিযোদ্ধা রাকেশ দুঃখ করে বলেন, ‘আমি মুর্খ মানুষ, আমার কথা পত্রিকাত লেইখা কিতা হইবো, হককোলেও নিজর আখের গুছানিত ব্যস্ত, আমরার কথা কেউ শুনবনি।’ ৭১ সালে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে জীবনপন যুদ্ধ করে দেশে স্বাধীনতা আনলেও জীবন যুদ্ধে আজও তিনি সংগ্রামী। দারিদ্র আজও তার পিছু ছাড়েনি। প্রতিনিয়তই সেই দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে চলছেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য একাত্তরে যে হাতে অস্ত্র ধরেছিলেন আজ সেই হাত দিয়ে ধরেছেন রিক্সার হ্যান্ডেল। রিক্সা চালিয়েই আজ তার সংসার চলছে। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে কখনো পরিশ্রান্ত হয়ে হাঁপিয়ে ওঠেন। শরীরে ব্যাথা হয়, কষ্ট হয়, তবুও বাঁচার জন্য কষ্ট করতে হবে। অর্থের অভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেন নি। তিনি দুঃখ করে বলেন, অনেকেই অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। তাই বর্তমান নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে তার আকুল আবেদন তার জন্য কিছু নাই হোক তার সন্তানদের যেন একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে নুন্যতম বেতনেরও একটি চাকুরীর সুযোগ করে দেন।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×