somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চে গুয়েভারা, সাম্রাজ্যবাদ ও আজকের কমিউনিজম।

২৬ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চে গুয়েভারা জন্মেছিলেন আর্জেন্টিনায়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন একজন চিকিত্সক; কিন্তু বিপ্লবের নেশা তাকে চিকিত্সা পেশায় আটকে রাখতে পারেনি। চিকিত্সা বিজ্ঞানে যখন অধ্যয়ন করছেন তখন তিনি মোটরসাইকেলে করে ল্যাটিন আমেরিকা ভ্রমণ করেন। পরে ল্যাটিন আমেরিকা ভ্রমণের সেসব কথা তিনি লিখে গেছেন ‘মোটর সাইকেল ডায়েরিজ’-এ। যে বই প্রকাশিত হওয়ার পর বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এই ভ্রমণের সময় তিনি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে বিচলিত হন। তিনি বুঝতে পারেন, মানুষের এই দুঃখ-দুর্দশার মূলে আছে পুঁজিবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও বাজারের ওপর পুঁজিপতিদের একচেটিয়া আধিপত্য। আর তাই তিনি শোষণমুক্তির পথ হিসেবে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও বিপ্লবের পথ বেছে নেন। সাম্রাজ্যবাদ ও তার পোষিত পুঁজিপতিদের উত্খাত করে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি জড়িয়ে পড়েন। এই জন্যই আর্জেন্টিনার চে গুয়েভারাকে দেখি কিউবায় এসেছেন বিপ্লব করতে। পরবর্তীকালে তিনি কিউবার মতো কিছু করার জন্য কঙ্গো ও বলিভিয়াতে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি চেয়েছিলেন, দেশে দেশে ভিয়েতনামের মতো প্রতিরোধ যুদ্ধ সৃষ্টি করে সাম্রাজ্যবাদকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে। অবশ্য কঙ্গো ও বলিভিয়ায় তার বিপ্লব প্রচেষ্টা সফল হয়নি। বিশেষ করে বলিভিয়ায় যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি প্রাণ দেন। কিন্তু প্রাণ দিয়েই হয়তো তিনি প্রমাণ করেছেন, বিপ্লবীর মৃত্যু নেই।
কিউবার নতুন সরকারে তিনি শিল্পমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ওই সরকারের ভেতর তিনি ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিন্তু চে গুয়েভারা মানুষ হিসেবে ক্ষমতা, যশ, সম্পদ হাতের মুঠোয় পেয়েও এ সবকিছুকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তার মুক্তির আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং দুর্ভোগ, ঝুঁকি ও মৃত্যুকে অবলীলায় বেছে নিয়েছেন। একজন আদর্শবাদী বিপ্লবীর এটাই হয়তো ট্র্যাজেডি। শেষের দিকে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে তার বহু বিষয়ে মতান্তর হয়েছিল। বিশেষ করে তত্কালীন সময়ে সোভিয়েত রাশিয়ার সুবিধাবাদী অবস্থানকে তিনি তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সমাজতন্ত্রের নামে সেখানে যা চলছে তা হচ্ছে দলীয় স্বৈরাচার। অন্যদিকে প্রলেতারিয়েত শাসনের নামে সোভিয়েত ইউনিয়নও এক ধরনের সাম্রাজ্যবাদী জবরদস্তি প্রতিষ্ঠা করার পাঁয়তারা করছে। চে’র এই বিশেষ অবস্থানের জন্য সোভিয়েত চাপে ক্যাস্ট্রো তার বহুদিনের সহযোদ্ধাকে শুধু সরকার থেকেই বিতাড়িত করেননি, একভাবে বলা যায় তিনি তাকে কিউবা থেকেও বিতাড়িত করেছিলেন। এভাবেই আজীবন রোম্যান্টিক ও আদর্শবাদী বিপ্লবী চে গুয়েভারা আদর্শের জায়গা থেকে তার সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে ক্যাস্ট্রোও নিজের ক্ষমতা মজবুত করার জন্য কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি, তা আদর্শের দিক দিয়ে এক ধরনের পদস্খলন সত্ত্বেও। এর পরের ইতিহাস সবার জানা। তিনি বলিভিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য সেখানকার মার্কিনপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করতে গিয়ে ধরা পড়েন। সিআইএ’র এজেন্টরা তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং তার হাত দুটো কেটে প্যাকেট করে কিউবায় পাঠিয়ে দেয়। গেরিলা যুদ্ধের সময় চে কিউবা থেকে কোনো সাহায্য পাননি। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ইতিহাসে এভাবে চে হয়ে যান গ্রিক ট্র্যাজেডির এক হিরো।
চে’র মৃত্যুর এতদিন পর তার ছবি বুকে নিয়ে এখনও অনেক তরুণ ঘোরাঘুরি করে। ম্যারাডোনার মতো খেলোয়াড় তার বুকে চে’র উল্কি এঁকেছেন। চে’কে নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। কিউবার টাকায় তার ছবি শোভা পায়। কিউবার ছাত্ররা স্কুলের প্রারম্ভিক সমাবেশে গেয়ে ওঠে : সেরে মোস কমো এল চে—আমরা চে’র মতো হয়ে উঠব। কোনো সন্দেহ নেই, এর অনেক কিছুর মধ্যেই আছে চে’র ইমেজকে ব্যবহার করার অপরাজনীতি। যেসব বামপন্থী আদর্শের দিক দিয়ে আজ পদস্খলিত হয়ে গেছেন, তারাই চে’র ঘাড়ের ওপর বন্দুক রেখে শিকার করতে চান।
ইতিহাসের এই এক অদ্ভুত রহস্যময় আর্তি। চে’র নিখাদ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতায় কোনো সংশয় ছিল না এবং তার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের তাত্পর্যও আজ ফুরিয়ে যায়নি। কেননা সাম্রাজ্যবাদ তাবত্ দুনিয়াজুড়ে আজও তার দুষ্কৃতি ও লুণ্ঠন কার্য অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বের সর্বত্র তাদের রাইফেল, ট্যাঙ্ক, মর্টার, কামান, যুদ্ধজাহাজ, বোমারু বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে তাক করে আছে এক মার্কিন বিশ্বব্যবস্থা কায়েম করার জন্য।
আজ যদি চে বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি কী করতেন? ধারণা করি, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি আরেকটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। এটি ঘটনার একটি দৃশ্য। আর একটি দৃশ্যে তিনি দেখতে পেতেন, যে আদর্শকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মানবমুক্তির জন্য লড়াই করতে চেয়েছিলেন, সেই কমিউনিজমের পতন হয়েছে। মার্কসবাদ তার অভ্যন্তরীণ অসঙ্গতির জন্য মানুষের আরাধ্য মুক্তি ও স্বাধীনতা আনতে দুঃখজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ইতিহাস কমিউনিস্টদের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের শুধু পতনই হয়নি, সেটি এখন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। যে পতনের লক্ষণ চে তার জীবদ্দশায় দেখতে পেয়েছিলেন। চে’র আইডল ছিলেন মাও সেতুং। সেই মাওয়ের চীনেও এখন বড় রকমের পালাবদল ঘটে গেছে। বাজার অর্থনীতির নামে চীন যা শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করেছে, তা এক ধরনের পুঁজিবাদই। অতএব পুঁজিবাদের মর্মবস্তু গ্রহণ করে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে চীন লড়বে, এ চিন্তা আজ রীতিমত হাস্যকর হয়ে উঠেছে। এ কারণেই দেখি বিশ্বজুড়ে আমেরিকা দাপিয়ে বেড়ালেও চীনের ভূমিকা নিরুত্তাপ ও নিস্পৃহ। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর আমেরিকাকেন্দ্রিক বিশ্বে যে দু’একটি দেশ কোনো কোনো দিক দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা ধরে, চীন তার একটি। কিন্তু মার্কসবাদ থেকে চীনের পশ্চাদপসরণই বলে দেয়, বিভিন্ন দেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামগুলোতে চীনের ভূমিকা আর আগের মতো নেই; তেমনি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতায় তার মুখেও কোনো রা নেই। এ কারণেই চে’কে এখন চীনে ‘বামপন্থী হঠকারী’ বলা হয়। হায় চে গুয়েভারা!
বিশ্ব কমিউনিজমের এই হাল-হকিকতের পাশাপাশি বাংলাদেশের কমিউনিজম নিয়ে দু’একটি কথা এই সূত্রে বলা যেতে পারে। ষাট ও সত্তর দশকে দেশে দেশে কমিউনিস্টরা অনেক ধরনের বিপ্লবী ঘটনা ঘটিয়েছে। এরকম ঘটনা এ অঞ্চলে তেমন ঘটেনি। একমাত্র ব্যতিক্রম চারু মজুমদার। হয়তো চে গুয়েভারার বিপ্লবী প্রত্যয় তিনি কিছুটা আত্মস্থ করেছিলেন। এর কারণ হচ্ছে, এদেশে যারা কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তারা ছিলেন প্রায় সবাই সন্ত্রাসবাদী। যুগান্তর, অনুশীলন অথবা সূর্যসেনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবাদী গ্রুপ থেকেই তারা ১৯৩০ ও ৪০-এর দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগ দেন। সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ছিল ব্রিটিশবিরোধী, একই সঙ্গে মুসলিম-বিদ্বেষী। ওই আন্দোলন যে মানসিক কাঠামো সৃষ্টি করেছিল এবং যে চিন্তা ও অভ্যাস গঠন করেছিল, তার থেকে মুক্ত হয়ে আসা সহজ ব্যাপার ছিল না। মুসলিম বিদ্বেষের কারণে কমিউনিস্ট আন্দোলন পূর্ববঙ্গে ব্যাপক সাড়া জাগাতে পারেনি। এমনি প্রেক্ষাপটে কমিউনিজম এদেশে কিছু মানুষকে ভারতমুখী করে তুলেছিল, কিন্তু প্রকৃত অর্থে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী করে তুলতে পারেনি। কারণ সাংস্কৃতিক রুচির অভিন্নতার কারণে এখানকার কমিউনিস্টরা কলকাতার বাবু কালচারকে আদর্শস্থানীয় মনে করেছেন। কিন্তু কোনো প্রলেতারিয়েত কালচারের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। ভারতীয় পুঁজিও যে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বড় রকমের আগ্রাসন হতে পারে, এই চেতনা এখানকার কমিউনিস্ট তাত্ত্বিকদের মাথায় খেলেনি।
এই আন্দোলনের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর নেতৃ পর্যায়ে যারা ছিলেন বা এখনও আছেন তাদের অধিকাংশই বুর্জোয়া, পেটিবুর্জোয়া ও মধ্য শ্রেণী থেকে এসেছেন। প্রলেতারিয়েত শ্রেণী থেকে এসেছেন এমন নেতাকর্মীর সংখ্যা নগণ্য। ফলে এদের পক্ষে চিন্তা-চেতনার দিক দিয়ে বুর্জোয়া প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করা ছিল আদতেই কঠিন। এই কারণেই দেখি ষাট ও সত্তরের দশকে এদেশে যারা বিপ্লবী স্লোগান দিয়ে রেড বুক বুকে নিয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছেন কিংবা ভিয়েতনামের মতো কিছু করে দেখাতে চেয়েছেন, তারা নানা রকমের শ্রেণী স্বার্থে আজ বড় বড় বুর্জোয়া দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন বা বুর্জোয়া দলের ভেতরে গিয়ে অনায়াসে কাজ করেছেন কিংবা কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেই বুর্জোয়া বৈশিষ্ট্য আমদানি করেছেন। এভাবে কমিউনিজমকে তারা এক রকম খোদা হাফেজ জানিয়ে দিয়েছেন। এরকম সন্ত্রাসবাদী ঝোঁক ও বুর্জোয়া কালচারের অনায়াস আত্মস্থকরণের ফলে এ দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন কখনও প্রকৃত অর্থে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসানের পর যখন পশ্চিমা বিশ্ব সভ্যতার সংঘাত তত্ত্ব কার্যকরী করতে শুরু করল, তখন আমাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদ দিশেহারা এই মার্কসবাদীদের খুঁজে নিতে ও ব্যবহার করতে শুরু করল। কমিউনিজমের পতনের পর থেকে সাম্রাজ্যবাদ ইসলামপ্রধান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছে, সেখানে মুসলিম সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ এই কমিউনিস্টদের তারা সহজেই নিজেদের হাতের মুঠোয় পেয়ে গেল। সাম্রাজ্যবাদের এই অন্যায় যুদ্ধে ইসলামকে প্রতিহত করার কাজে দু’একজন বিচ্ছিন্ন এবং ব্যতিক্রম ছাড়া এই কমিউনিস্টরা সবাই আজ সাম্রাজ্যবাদের শ্রেফ দাসানুদাসে পরিণত হয়েছেন। যারা এক সময় সাম্রাজ্যবাদ উত্খাত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তাদেরকেই আজ সাম্রাজ্যবাদ বশীভূত করে ফেলেছে। তারাই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিবিপ্লবী ও প্রতিক্রিয়াশীল।
চে’র মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গের এক কবি লিখেছিলেন—

বলিভিয়ার জঙ্গলে নীল প্যান্টালুন পরা
তোমার ছিন্নভিন্ন শরীর,
তোমার খোলাবুকের মধ্যখান দিয়ে
নেমে গেছে শুকনো রক্তের রেখা
চোখ দুটি চেয়ে আছে,
সেই দৃষ্টি এক গোলার্ধ থেকে ছুটে আসে অন্য গোলার্ধে,
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়।

জানি না আমাদের এখানকার মার্কসবাদীরা কমিউনিজমের পতন ও নিজেদের সর্বাত্মক পদস্খলনের পরও কোনো অপরাধবোধে দগ্ধীভূত হন কিনা। আজ চে’র মৃত্যুর এতদিন পরেও তিনি প্রাসঙ্গিকতা হারাননি। কমিউনিজম হয়তো প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। কিন্তু চে’র দুরন্ত আত্মত্যাগ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতা ও আন্তর্জাতিকতার আবেদনকে ছোট করে দেখা সম্ভব নয়। মার্কিন সভ্যতাকে তিনি ‘বর্বর সভ্যতার’ নিদর্শন মনে করতেন। তথাকথিত মার্কিনি গণতন্ত্র তার কাছে ছিল আমেরিকা মহাদেশের জেল সুপার (কারারক্ষী) নির্বাচন। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে পরদেশ ও পররাজ্য লুণ্ঠনের নীতিতে কোনো তফাত্ নেই। চে গুয়েভারার এই মার্কিন শোষণের বিরোধিতা আজও সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতার অত্যুজ্জ্বল নীতিগত নিদর্শন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এবং তাদের লাতিন আমেরিকান তাঁবেদাররা হয়তো তাকে হত্যা করতে পেরেছে। কিন্তু মানুষের মুক্তিসংগ্রাম, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, যার অপর নাম চে গুয়েভারা—তাকে হত্যা করতে পারেনি। চে বার বার ফিরে আসবেন। যেমন করে আমাদের এখানে ফিরে আসেন তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহরা। আজকে সাম্রাজ্যবাদের ভর কেন্দ্র হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। আফগানিস্তান থেকে ইরাক হয়ে ফিলিস্তিন—এই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার তাঁবেদারদের বিরুদ্ধে চলছে এক রক্তাক্ত জনযুদ্ধ। চে যদি জীবিত থাকতেন তবে বলিভিয়ার জঙ্গল ছেড়ে এই ভরকেন্দ্রে এসে যে উপস্থিত হতেন না তা কে বলবে। অন্তত যে মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, বিপ্লবের লড়াইয়ে কোনো দেশের সীমানা নেই। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী এই বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে চে কি সর্বহারার সেই আন্তর্জাতিকতাকে শক্তিশালী করার কথা ভাবতেন? অন্তত আজ যেখানে মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই চলছে ইসলামী আদর্শ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের পাটাতনে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, কমিউনিজমের বিপর্যয়ের পর ইসলাম আজ এক সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আদর্শ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে সর্বহারার আন্তর্জাতিকতা যেমন সাম্রাজ্যবাদকে বড় ঝাঁকুনি দিতে পেরেছিল, আজ ইসলামও সাম্রাজ্যবাদের মোকাবিলায় নতুন তাত্পর্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। চে কীভাবে এই নতুন পরিস্থিতিকে মূল্যায়ন করতেন জানি না, তবে ইতিহাসের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। ইতিহাসের মার্কসবাদী ব্যাখ্যার মধ্যে আটকে থেকে আজকের পরিস্থিতিকে পুরোপুরি বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়।
কমিউনিস্টদের একটা প্রত্যয় হচ্ছে, ধর্ম নিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতা চলে না। তাহলে লাতিন আমেরিকার লিবারেশন থিওলজিস্টদের সঙ্গে কমিউনিস্টরা কীভাবে হাতে হাত ধরে একসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে অথবা আমাদের এখানে তিতুমীর-শরীয়তুল্লাহরা সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই। ইতিহাসের এই পৃষ্ঠাগুলো আবারও একটু উল্টে-পাল্টে দেখার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি।

Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×