''আকাশলীনা'' কবিতাটি শূরু হয় একদিন বিকেলে প্রেমিক-প্রেমিকার কোথাও চলে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যাক্ত করে। ৭০লাইলনের দীর্ঘ এই কবিতাটিতে গন্তব্যস্থলের উল্লেখ নেই। মাত্র তিন লাইনের এক স্তবকে লক্ষ্যস্থলের উল্লখে আছে একবার—
''পাড়ে নেমে সর্পিল আঁকাবাঁকা এই পথটি বেয়ে
ওপরে উঠে যাবো আমরা,
আমাদের লক্ষ্যস্থল হবে, ঐ পাহাড় চূড়া।''
এই লক্ষ্যস্থল গন্তব্যস্থলের সমর্থক নয়। লক্ষ্যস্থলে কেউ কোনো দিন যেতে পারে না, যাওয়া যায় না। প্রেমিক মাত্র সারা জীবন ধরে এই লক্ষ্যস্থলের সন্ধান করেন, যেতে পারেন না। সারা জীবন ধরে লক্ষ্যস্থলের পথ ধরে হাটতে থাকেন মনুষত্ত্ব-সম্পন্ন মানুষ বা প্রেমিক। এই হাটা দৈহিক হাটা নয়। কারণ লক্ষ্যস্থল কোনো স্থান নয়, গন্তব্যস্থল যেমন কোনো এক স্থান। লক্ষ্যস্থল হলো আদর্শ ও মুল্যবোধ। চূড়ান্ত অর্থে আদর্শ ও মুল্যবোধে কখনো পৌছান যায় না। আদর্শ ও মুল্যবোধ ভেতর ধারণ করে আবার এই ভেতরের আদর্শ ও মুল্যবোধের সন্ধান করতে হয়। কবিতাটিতেও আমরা দেখি এরই প্র্রতিরূপ।
কবিতাটির স্তবকের পরে স্তবক জুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দযের মন ভোলান বা মনকে বশিভূত করা বর্ণনা। বেশ সহজ, সবললি ও আন্তরিক; এবং শেষ তিন স্তবক ছাড়া কোথাও ঝুলে পড়ে নি। কয়েকটি উদাহরণ :
একদিন বিকেলে
আমরা দুজন চলে যাবো,
নাম-না-জানা, ঝির ঝির বয়ে চলা,
দূর পাহাড় ছুঁয়ে থাকা,
নির্জন শান্ত গাঢ় নীল
এই গভীর হৃদটা পেরিয়ে-
ছোট্ট পানসিটা বেয়ে।
(প্রথম স্তবক)
প্রেমিক যুগল চলে যাবে, কেমন করে? গভীর হৃদ পেরিয়ে, ছোট্ট পানসি বেয়ে। এখানে গভীর হৃদকে আমরা ''প্রেম'' ধরে নিতে পারি, প্রেমর পথ। প্রেমের পথ সহজ নয়। প্রেম আর জ্ঞান সমর্থক। এ-দুয়ের সহজ ও সরল কোনো পথ নেই। আর পানসি প্রেমিকের প্র্রেমের পথের ''মাধ্যম''।
রাখাইন ছেলেটা
অবাক চোখে তাকিয়ে রইবে
তার মাছ ধরা ফেলে।
যেন আমরা কোনো অজানা গ্রহের না-জানা প্রাণী।
(দ্বিতীয় স্তবক)
তুমি অবাক কন্ঠে বলবে
"দেখো,
ঠিক সাদামেঘের মত মেঘরঙ শাড়ি তোমার।"
আর তখনি আমার চোখে পড়ে যাবে,
তোমার আকাশরঙ নীল শার্টটা
তুমি আমাকে
অনেক ভালোবাসায়
আর আদরে
মুড়িয়ে দিও।
(ষষ্ঠ স্তবক)
'আকাশের বুকে যেমন মেঘ জেগে থাকে
তেমনি তোমার আকাশরঙ নীল শার্টের বুকে
জেগে রইবো মেঘরঙ শাড়ি
এই আমি।
(অষ্টম স্তবক)
এই অষ্টম স্তবক কবিতাটির গভীরতা আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। উপরে বলেছি, একটি শব্দ—"গন্তব্যস্থল" না বল "লক্ষ্যস্থল" বলার ফলে পুরো কবিতাটাই শুধুমাত্র একজোড়া প্র্রেমিক-প্রেমিকার কবিতা না হয়ে প্র্রেমের কবিতা হয়ে উঠেছে। অষ্টম স্তবকে ''যদি চলে যাই পথে শ্যাম যায় মোর সাথে সাথে চরনে চরনে ঠেকাইআ''—এখানে যে প্র্রেমকে আমরা পাই : দু-জন আর ভিন্ন থাকে না, এক হয় যায়, তেমনি শায়মার এই কবিতাটিতেও আমরা সেই প্র্রেমের প্রতিধ্বনি শুনতে পাই—
...তোমার আকাশরঙ নীল শার্টের বুকে
জেগে রইবো মেঘরঙ শাড়ি
এই আমি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




