রাতুলের মন খুব খারাপ, সে তার পড়ার টেবিলের উপর দুই হাত রেখে তার উপর মাথা দিয়ে কাঁদছে। তার মা তাকে কিছুখন আগে একটা চড় মেরেছে। চড় খাবার কারনে সে কাঁদছে না, সে কাঁদছে ডোরেমনের আজকে একটা নতুন পর্ব হবে, সেটা মা দেখতে দিচ্ছেনা এই কারনে। তার মা রিজিয়া পারভিন, তিনি দেখছেন জি বংলায় অগ্নি পরীক্ষা। তার মন প্রচন্ড আবেগে ভরে আছে- কারন আজকের পর্বে দেখানো হবে নাইকা কিভাবে তার স্বামিকে তার স্বামীরপ্রেমীকার হাত থকে ছিনিয়ে আনে। একেবারে জোশ ওয়ালা একটা সিন আছে। স্বামীর কলার ধরে টেনে আনবার দৃশ্য, সে ভেবেই শরীরে শীহরন পাচ্ছে। মবিনের অবশ্য কোন মেয়ের সাথে ইটিস পিটিস নেই। থাকলে সেও একই স্টাইলে কলার ধরে টেনে আনতে পারত। মাঝে মাঝে সিরিয়াল দেখতে দেখতে মবিনকে তার কাছে কিছুটা সেকেলে লাগে, এই লোক আছে খেলা দেখা নিয়ে। বাংলাদেশের খেলা যেদিন হয় সেদিন টিভি তার দখলে, আরে সিরিয়াল দেখ দেখে কিছু শেখো। এখনকার ফ্যাশনে সংসার জীবনে স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কের পাশা পাশি অন্য কিছু সম্পর্ক না থাকলে কি চলে?! সে আছে ছক্কা আর চার নিয়ে। আরে চিয়ার্স গার্ল গুলারে যখন দেখায় তখন চ্যানেল পাল্টে ফেলে, এইটা একটা কথা?! অন্য মেয়েদের দিকে তাকালেইতো ওর প্রতি তার এট্রাকসন টা বাড়বে। রাশি তে যে রকম দেখায়। না তার কাছে পারভিন ই সব। তবে পারভিন অবশ্য পিছিয়ে পরার লোক না। সে একটা মোবাইল নাম্বার জুটিয়েছে, "বড়ি আচ্ছা লাগতেহ"র কাহিনীর মতন সেও একটু আধটু অন্য পুরুষের সাথে কতা চালাতে চায়, নিউমার্কেটের এক সেলস বয় নাম মিজান দেখতে একেবারে "সাতপাকে বাধার" নায়কের মতন টল ফিগার ঝক ঝকে চেহারা আসল পুরুষ। টালি গন্জের হিরো দেবের মতন স্টাইল করে, কথাও বলে ছেলেটা ওর মতন হেসে হেসে। ওকে দেখলেও তার পরান যায় জ্বলিয়া। অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে নাম্বার টা নিয়েছে। ছেলেটার সাথে মাঝে মাঝে কথা হয় তার, ও আদর করে ডাকে মিজু। মিজুই একদিন জিগ্যেস করে বসল- মবিন কখন বাসায় থাকে, বাচ্চা টা কখন স্কুলে যায়, সে কখন একা থাকে? কথা গুলো সোনার পর পারভিনের কান লাল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে তো সিরিয়াল দেখা মেয়ে তাকে এত সহজে কাবু করা সম্ভব না, সে এই ছেলের সাথে কথা বলতে চায় কেবল পরকিয়ার হালকা স্বাধ নেবার জন্য নাহলে সিরিয়াল গুলো সঠিক ভাবে বোঝা যায়না। তাই বলে তো আর শরীর বিকিয়ে দেয়া যায়না। তবে সেদিন হিন্দি সিরিয়াল "ছোটি বহু"তে নাইকা মেয়েটা একটা জামা পড়েছিলো সেইম ডিজাইনের একটা জামা মিজুর দোকানে আছে, কিন্তু দাম অনেক। অবশ্য কখন মবিন বাসায় থাকেনা সেটা মিজুকে বললে হয়তো প্রথম দিনের গিফট হিসেবে ড্রেসটা পাওয়া যেত। তাহলে পাশের ফ্লাটের রুমা ভাবি কে একটা চরম জবাব দেয়া যায়। গেলো ঈদে দাবাং ড্রেস কিনে পারভিনের সামনে কি ঢংটাই না করেছিল? আরে মুটকি দাবাংয়ের নাইকার ফিগার দেখেছিস, আর তুই আধমনি বস্তা, তোরেতো ঐ ড্রেস লাগতে ছিলো ফুটবলের মতন। মবিন কে অবশ্য সে বলে ছিল এরকম একটা ড্রেস কিনে দিতে। মবিন মার্কেটে গিয়ে কিনে আনল ইরানি বোরকা, আরে ছাগল বোরকা এখন আর ভাল মানুষে পরেনাকি? বোরকা পরা মহিলা গুলাইতো সিরিয়ালের মধ্যে টাউট গিরি করে। মবিন কে অবশ্য এসব কথা বলা যায়না ও জানলে খবর আছে। খবরের কথা মাথায় আসায় আবার পারভিনের মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়। মবিন অফিস থেকে আইস্যাই আরম্ভ করে খবর দেখা। সময়, ইন্ডিপেন্ডেট আরো কি কি? আরে এখন কার সময় কেউ বাংলাদেশি চ্যানেল দেখে নাকি?! কি সব অখাদ্য নাটক বানায়। "গুলশান এভিনিউ"টা অবশ্য খারাপ না। ভারতিয় গুলার কাছে শিশু, কুটনামিতে কোলকাতার গুলা ফাস্ট। নতুন করে আবার স্লিভ লেস ব্লাউজ বের হয়েছে, স্টার জলসার একটা সিরিয়ালে দেখিয়েছে। তার ইচ্ছা পাতলা কালো জর্জেটের নিচে লাল স্লিভ লেস পরে মার্কেটে যায়, মিজুটাকে একটু না দেখালেও বা ছেলেটা খালার বয়সি একটা মহিলার সাথে কথা বলবে কি ভাবে? কিন্তু মবিনটাকে নিয়েই সমস্যা ও সিরিয়ালও দেখবেনা আর ওকে একটু খোলা মেলাও চলতে দেবেনা। উনি পরাবে বৌকে বোরকা, ফাইজলামি আরকি। মাঝে মাঝে পারভিনের কিছুটা খারাপ লাগে সংসারের কথা বার্তা গুলায় যদি একটু আধটু ডিস, ডিস, ড্রুম শব্দ দেয়া যাইতো তাহলে একটা আলাদা শান্তি পাওয়া যাইতো, সে অবশ্য স্লোমোশনে হাটা টা রপ্ত করে ফেলেছে। বিভিন্ন সিনে নাইকা কে স্লোমোশনে সব করতে হয়। আর একটা সমস্যা হয়েছে পারভিনের, কেন যে সে মুসলমানের ঘরে জন্মনিয়েছে? নাহলে তো নিজের নামটা পল্টে লক্ষি বা সিতা রাখতে পারত। একটু সিদুর বা একটা মংগল সুত্র পরতে পারলে খারাপ হতো না। ঘরের মধ্যে একটা দুর্গা প্রতিমা থাকাও খুব দরকার ছিল সব সিরিয়ালেই দুর্গা কে দেখায়। উলু দেয়াটা সে শিখেছে, পুজো এপিসোড গুলো দেখার সময় উলু না দিতে পারলে বরং তার লজ্জাই লাগবে। অবশ্য এখন ঘরের মধ্যে প্রায় উলু দেয়াহয়। কোন না কোন সিরিয়ালে উলু দেয়ার দুই একটা সিকোয়েন্স তো আছেই। বিশেষ করে সন্ধ্যায় যখন মসজিদে আজান হয় প্রায় তখনই উলুর সিন সহ পুজো দেখায়, যা লাগেনা তার? কোল কাতার ভাষা গুলোও ভালোই, এই যেমন এলুম, গেলুম, হালুম। ধ্যাত বলে সে টিভিটা বন্ধ করে দেয়। নাহ্ আজকের পর্বেও দেখালোনা কলার ধরার সিন টা। কালকের পর্বে দেখাবে। এখন পাচমিনিটের গ্যাপ আছে এই ফাঁকে সে রাতুল কে ডাকদিয়ে বলে- "নাও দেখো তোমার ডোরেমন।" পাচ মিনিট দেখবে এর পর হোমওয়ার্কা করবে, হোমওয়ার্কের কথা সুনতেই রাতুলের মাথা খিচড়ে যায় ওর কাছে যদি ডোরেমনের মতন একটা এলিয়েন থাকত তাহলে গ্যাজেট নিয়ে সেও পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারত। ওর মাও হয়েছে জিয়ানের মায়ের মতন ঐযে ডোরেমনের মোটা ছেলেটার মায়ের মতন সারাদিন খালি জিয়ান কে মারে। ক্লাসে নবিতার মতন ওর ও একটা বন্ধবি আছে ওর নাম লিড়া। আজকে পেন্সিল নেবার সময় ও লিড়ার হাত ছুয়েছে কি নরম। অবশ্য তার কাছে ডোরেমনের একটা পুতুল আছে। আর পেন্সিল থেক শুরু করে স্কুল ব্যাগ এমন কি মোজাও ডোরেমনে ছবি আকা। কেবল স্কুল ড্রেসটায় ডোরেমনের ছবি আকা নেই দেখে, মাঝে মাঝে তার খুব মন খারাপ লাগে। আবার ভাবে থাক অন্য সবার চেয়ে তো তার কাছে ডোরেমনের খেলনা বেশি আছে। ওর ক্লাসে পড়ে রাসেল দেখতে জিয়ানেরর মতন, কিন্তু ওর সাথে চালাকিতে পারেনা। রাসেল একবার কিনে আনল ডোরেমন পেন্সিল। এর পর রাতুল নিয়েগেলো ডোরে মন পেন্সিল বক্স, দেখে তো রাসেলের চক্ষু চরক গাছ। লিড়ার পছন্দ হয়েছিল বক্সটা ওকে ও সেটা দিয়ে দিয়েছে। বাবাকে বলেছে হারিয়ে গেছে। নবিতা তো কত মিথ্যা বলে। মিথ্যা না বললে কি আর ধোলাইয়ের হাত থেকে বাচা যায়। তার কাছে তো আর ডোরেমন নেই যে সে তাকে বাচিয়ে নিবে তার কাছে মিথ্যই ডোরেমনের গ্যাজেট।টিভিতে ডোরেমন আরম্ভ হয়ে গেছে দেখাচ্ছে- নবিতা সিজুকার মানে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে মেয়েটা বাথ টবে গোসল করছে দরজার ফাকা দিয়ে দেখছে তার গাল লাল হয়ে উঠছে....।
পারভিন চলে এসেছে সে রাতুলের হাত থেকে রিমোর্ট টা নিয়ে রাতুল কে তাড়া দেয় যাও হোমওয়ার্ক কর। টিচার চলে আসবে এক্ষুনি। এখন যে সিরিয়াল টা আরম্ভ হবে সেটা কিছুটা এডাল্ট গোছের, দু-একটা বেড সিন দেখায়। কাহিনি হলো নাইকার স্বামির প্রেম ছিল তার বড় বোনের সাথে, ঘটনা চক্রে ছোট বোনের সাথে বিয়ে হয়ে যায় নায়কের। কিন্তু সে তার অতিত প্রেম ভুলতে পারেনি। বড় বোনও ছলে বলে কৌশলে এসে উঠেছে নাইকার বাড়ি। নাইকা আবার একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করে সেখানে তার উপর পরেছে বসের কু-দৃষ্টি সে লড়ছে তার সতিত্য বাচানোর লড়াইয়ে মুলত সেটা নিয়েই গল্প। আর এদিকে নাইকা যখন বাসায় থাকেনা তখন নাইকার বড় বোনের সাথে নায়ক....। সেই ঘটানা আবার দেখে ফেলেছে বাড়ির চাকরানী চন্দনা, এখন নাইকার জামাই মানে নায়ক আর নাইকার বড় বোন উঠে পড়ে লেগেছে চন্দনাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে। তার মাথায় দেয়া হয়েছে গয়না চুরির অপবাদ।
কলিং বেল বাজছে, পরভিন রাতুল কে ডাক লাগায় দেখ টিচার এসেছে। রাতুল গেট খুলে দেয়। রাতুলের টিচার দেখতে তেমন সুদর্শন না, তবে এই লোক যে সময়ে পড়াতে আসে তখনই এই সিরিয়ালটা আরম্ভ হয়, তার শরীরের ভিতেরে তখন......। এই লোকটাও কেমন যেন গোবেচারা চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনা। আরে আমি তোর ছাত্রের মা আমাকে এত সমিহ করার কি আছে? আমি বাঘ না ভাল্লুক, একটা উল্লুক কোথাকার? কথা টথা বললে একসাথে বসে ওকে নিয়ে সিরিয়ালটা দেখা যেত।
মবিন বসে আছে আমার পাশের চেয়ারটায়, কিছুটা মন মরা হয়ে। আমরা বসে আছি নিউমার্কেটের "সিরিয়ালস সারিজ" নামের দোকানের সামনের ফুচকার দোকানে, আমি জানতে চাই কি রে কি হল? এরকম ঝিম মেরে আছিস ক্যানো? ও বলে দোস্ত আমার খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমি ওর কাধে হাত রাখি কি হয়েছে বল আমাকে। দোস্ত রাতুল ইদানিং প্রচুর মিথ্যা কথা বলে, ছেলেটা ওর ক্লাস টেষ্টের মার্কশিট জুতার সেলফের মধ্যে লুকিয়ে রেখে তিন দিন ধরে মিথ্যা বলে যাচ্ছে যে রেজাল্ট দেয় নাই, পরে ওর ক্লাস টিচারের সাথে দেখা হয়েছিল। উনিই বললেন রেজাল্টা খারাপ করার কথা। আমি বলি এটা সবাই করে এতে এতো ভেংয়ে পড়ার কি আছে? ছোট বেলা আমিও একবার অংকে ফেল মেরেছিলাম, সারা দিন পালিয়ে ছিলাম। ও বলে দোস্ত ব্যাপারটা তুই যত হালকা ভাব নিচ্ছিস এটা অতটা হালকা না। শোন তোর ভাবিরও কিছু সমস্যা পাচ্ছি ও নিউমার্কেটে একটা ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে। তুই কিভাবে জানলি? রাতুল বলেছে। আমার সংসার টা কেন এমন হচ্ছে? দোস্ত। ইসলামের পথে থেকেছি সব সময় বৌকে বোরকা কিনে দিয়েছি আব্রুতে থাকা শিখাতে চেয়েছি, আর সেই বৌ কিনা! মায়ের সাথে ঝগড়া করে আলাদা হয়ে গেল কদিন আগে। আমার শ্বাশুড়ি এলে তো ও আমাকেও মানেনা। এমন সময় আমার চোখ সিরিয়ালস সারিজ এর দরজার দিকে যা। দোকানের দরজা ঠেলে যে মহিলা বেড়িয়ে আসছে যদি আমার দেখার ভুল নাহয় ওটাই পারভিন ভাবি। আমি অবাক হয়ে দেখি উনি স্লিভ লেস লাল ব্লাউজ পরেছেন পরনে ফিন ফিনে জর্জেট শাড়ি মাথার উপর সান গ্লাস উঠানো। মবিন বসে আছে আমার দিকে মুখ করে তাই ও দেখতে পাচ্ছেনা। আমিও দেখাতে চাইনা এরকম কিছু। দোকানের মধ্যে থেকে একটা ছেলে বেড়িয়ে আসে, হাতে একটা ব্যাগ। ব্যাগের উপর লেখা ছোটি বহু থ্রি পিস। সেটা এগিয়ে দেয় ভাবির দিকে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাই ছেলেটা ব্যাগটা দেবার সময় ভাবির হাতটা আলতো ছুয়ে দেয়। আমি অবাক হই যখন দেখি ভাবি মুচকি হাসে ছেলেটার হাত ছোবার পর।
আমি মবিন কে বলি তুই বাসায় যা, আমি দেখি কি করতে পারি তোর জন্য। আর শোন ছেলেটা কে পড়া শুনার পাশা পাশি একটা খেলাধুলার কিছুতে নাম লিখিয়ে দে, যেমন ক্রিকেটের কোন কোচিংয়ে দিয়ে দিতে পারিস। ধানমন্ডির দিকে বহু আছে এরকম কোচিং এর ব্যাবস্হা। ভাবির ব্যাপারটা দেখছি আমি।
মবিন চলে যায় ওকে কিছুটা নিশ্চিন্ত দেখায়।
আমি আমার এই গল্পের দুইটা শেষ লিখছি, একটা বাস্তব আর একটা অবাস্তব, তবে দুটাই যে কারো জীবনে ঘটার ফিফটি ফিফটি চান্স আছে।
প্রথমে অবাস্তব টা লিখি, ঢাকা কলেজে আমার এক ছোট ভাই পড়ে, মোট কথা ক্যডার টাইপের ছেলে আমি বললে যে কারো ভুরী নামিয়ে দেয়া ওর জন্য কোন ব্যাপার না। ও হচ্ছে গিরগিটির মতন যখন যে দল ক্ষমতায় তখন সে সেই দলের কান্ডারি। সবাই ওকে ডাকে ট্যারা কালু ভালো না মোঃ আহম্মদ ইবনে সোয়েব জালাল। ওর বণ্ধুরা ডাকে জালাইল্লা। আমি অবশ্য আহম্মেদ ডাকি, কোন এক অদৃশ্য কারনে এই ছেলে আমার খুব ভক্ত ক্যানো সেটা জানিনা। আমি ওকে কল দেই ও আমার প্রত্যেকটা কথার উত্তরেই বলে জ্বি ভাইজান।
পরদিন সকালে ও আমাকে ফোন দেয় ভাইজান মিজাইন্যা হারামজাদা (সরি ভাইজান আপনার সামনে মুখখারাপ করলাম) আর কখনো মুখ দেখাইবোনা। সালারে সরি ভাইজান এমন ছ্যাচা দিছি ইহ জনমে আর কোন মহিলাতো ভালো বিয়া করতেও সাহস পাইবনা কোন মাইয়ারে। আহম্মদ আর একটা কাজ আছে, রাজা বাজারে ডিসের লাইন চালায় কারা একটা লাইনের কিছু চ্যানেল ব্লক করা লাগবে। ও হইয়া যাইব ভাইজান। বলে ফোনটা কেটে দেয়।
আমি মবিন কে বলি ভাবিকে বেশি করে সময় দে একটু বাহিরে ঘুরতে টুরতে নিয়া যা। মবিন রাজি হয় এখন সে প্রতিদিন সময় মতন বাসায় যায় বৌ বাচ্চাকে সময় দেয়। ছেলেটা ভালোই ক্রিকেট খেলে অনুর্ধ ৭ এ চান্স পেয়েছে, ভাবিকে মবিন কিছু হাতের কাজ করার ব্যাবস্হা করে দিয়েছে। অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিল।
এবার বাস্তবত, মিজান কে মারধোর করার পর ও আর দোকানে আসেনা। মবিন আমাকে ফোন দেয় তোর ভাবিকে কোথাও পাচ্ছিনা, মোবাইল বন্ধ। দারোয়ান বলেছে একটা ছেলে এসে নাকি ট্যাক্সি করে নিয়ে গেছে। ভাবি আর ফিরলেন না। পরে অবশ্য ভাবি কে এক জায়গায় দেখার খবর দিয়েছিল আহাম্মদ। গুলশানে কোন এক এপার্ট মেন্টে ফ্লাটের ব্যাবসা করে। রম রমা ব্যাবসা, নিরিহ এক গৃহ বধু আজকে মক্ষিরানী হয়েছে। মবিন কিছুটা বিকার গ্রস্হ হয়ে গেছে। বাংলা দেশ ক্রিকেট টিম একের পর এক হারছে। বৌ পালিয়ে গেছে আর এক ছেলের সাথে ছেলেটা হয়ে যাচ্ছে মিথ্যুক চোর। মাথা খারাপ তো হবেই। সে রাতুলের হাত পা বেধে ঘরে ফেলে রেখেছে। রাতুল মিথ্যার পাশা পাশি চুরি করাও শিখেছে। পাড়ার কোন দোকান থেকে একটা ডোরেমন সার্পনার চুরি করেছে, আর করবেইনা বা কেন? লিড়াকে দিতে হবেনা? লিড়াই তো কাল ওর কাছে চেয়েছিল ঐরকম একটা সার্পনার।
মুখ বন্ধঃ গল্পের সবগুলা চরিত্রই কাল্পনিক কেবল টিভি সিরিয়ালের চরিত্র গুলো ছাড়া। এই গল্পে কেউ যদি সাম্প্রদায়িক গন্ধ খুজে বেড়ান তাদের জন্য একটা ছোট গল্প লিখি, একবার একটা মেডিক্যাল ক্যাম্পে গিয়েছিলাম, প্রসুতি বিভাগে এক মহিলার খুব ব্লিডিং হচ্ছিল। মেয়েটার স্বামি একজন কে ধরে আনলেন রক্ত দেবার জন্য। সেই লোকও খুবই আগ্রহী রক্ত দেবার জন্য ক্রসম্যাচের রেজাল্ট যখন হাতে পেলাম তখন দেখি ডোনার মানে জিনি রক্ত দিচ্ছেন তার নাম "আশিশ কুমার শিল", আর পেসেন্টের নাম "আন্জুমনোয়ারা আখি"। যে দেশে হিন্দু মুসলমান কে রক্ত দেয় মুলমান হিন্দুকে সে দেশ সাম্প্রদায়িক হতে পারেনা। বরং ভারতে একবার একটা মেডিক্যাল ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে এক ব্রাম্মন ভদ্র লোক কে গরু গুতা দিয়েছে। পিছন দিয়ে সিং ঢুকে গেছে অল্পের জন্য কিডনি বেচে গেছে কিন্তু ব্লিডিং হয়েছে প্রচুর। রক্তের গ্রুপ "ও" পজেটিভ, "ও" পজেটিভ পাওয়া গেলো অনেকেরই, কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়, রক্তাটা অন্য কোন ব্রাম্মনের হতে হবে। ব্রাম্মন ছাড়া অন্য কারো রক্ত নিলে ধর্ম নষ্ট হবে! এখন ব্রাম্মনের রক্ত কৈ পায়। পরে অবশ্য অন্য একজন পুরহিত রক্ত দিয়ে সে যাত্রা জীবন বাচিয়ে দিয়েছিল ভদ্র লোকের।
আমরা দিন দিন টিভি সিরিয়াল জেনারেশন হয়ে যাচ্ছি,প্রত্যন্ত গ্রামের দাদা দাদী থেকে আরম্ভ করে, শহুরে গ্রিলের সংসারের নারী-পুরুষ সবাই আজকাল ঝুকে পরেছে টিভি সিরিয়াল নামের নীল বিষের নেশায়। এ নেশা এত সহজে কাটবার নয়। আরো বহু ঘর ভাংতে হবে পরকিয়ায়, বহু শ্বাশুরী বৌ য়ের সম্পর্ক হতে হবে তিক্ত। যা হোক বড় রকমের হোচট না খেলে আমরা জাগিনা, আমরা যখন জেগে উঠি ততদিনে লুটেরারা নিয়ে যায় সব কিছু লুট করে, আমাদের মান, ইজ্জত, সম্মান, সম্ভ্রম।
ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link
আমার রিসেন্ট আর একটি লেখাঃ
আইটেম গার্ল
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



