somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমনীর বিষাক্ত নিঃশ্বাস বা যৌন দাসত্ব এবং একজন অমানুষ

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








সময় চলছে প্রবাহ মান রাতের গভীর গাঢ় নির্ঘুম আধারে পরে থাকি আমি। ইট, কাঠ, সিলিংফ্যান এদের ও বয়স বাড়ে। বার্ধক্য আসে, ক্লান্ত হয়। আমাকে ছোয়না বার্ধক্য, তবে ক্লান্তি নামক ব্যাপার আমার প্রতিটা লোমকুপ জুড়ে রয়েছে। রাতের প্রায় পুরোটাই নির্ঘুম কেটে যায়। এত ক্লান্তিতেও ঘুম আসেনা, আসলেও ঘুমতে ইচ্ছা করেনা। মানুষ বাচে কদিন? চলমান পৃথিবীর কোটি মানুষ, কোটি সভ্যতা, কতো দেশ? কিছুই দেখিনি। কেবল দেখেছি আমার গ্রাম। চোখ ধাধানো সবুজ। ধানক্ষেত, বন, দুর্বা ঘাস। এদের কাছে যেতে মন কেমন করে? আমার। অর্ধ নগ্নতার এই নগরের ক্লান্ত সারি সারি নত মুখের ক্লান্তি, প্রাসাদ তুল্য অট্টালিকা নামক বন্ধী শিবির ছেড়ে আমি কাল চলে যাচ্ছি, চিরতরে। ভিষন একঘুয়ে এই শুয়ে থাকার হাত থেকে চির পরিত্রান। এভাবে পরে থেকে একই ব্যাপার বার বার ভাবতেও আর ভালো লাগেনা। জীবেন কিছু জায়গায় খুব বড় ভুল হয়ে গেছে। শত চেষ্টা করলেও আর বেরোতে পারবনা সেই ভুল গুলোর ফাদ ছিড়ে। ভাবারও নেই নতুন কিছু, চোখ বুঝলেই সেই ডানা ভাংয়া কৈশর, কান্না ভেজা চোখ, অপলক ক্লান্ত প্রতিক্ষা, খোলা জানালা, ভেজানো কপাট, সাদা কাফন, "রুনি"। উহঃ আর ভাবতে পারিনা, আমার ভীষন ভয় হয়, মরতে ইচ্ছা করেনা কিছুতেই, কিন্তু রুনি কেবল নিরন্তর আয়-আয় বলে কাছে ডাকে। সেই রুনি, ছোট বেলায় যাকে নিয়ে নদীতে ঝাপিয়ে পরেছি। সাতার কেটেছি এপার থেকে ওপার। যাকে বহু মেরেছি পার্বতী কে যেভাবে মারতো দেব। বহু দিন কেদে-কেটে অস্হির হয়েছে। যাকে ভাবতাম ও আমার সম্পত্তি। ছোট বেলায় এক ভাবি জিগ্যেস করেছিলো ওকে- "এই রুনি বড় হয়ে কাকে বিয়ে করবি?" ও বলেছিল, "অনুপ কে।" হ্যা আমি সেই অনুপ, ছোট বেলার সেই থপ থপ করে হাটা ছেলেটা আজকে পাচ ফুট সারে আট হয়ে গেছি। যে রুনি কে নিয়ে ঘরকন্যা খেলেছি গরমের দিনেও কাথা গায় দিয়ে এক জন আর একজনার উষ্নতায় ভিজে একাকার হয়েছি। সেই থেকে বুঝতে শিখেছি আমারা বড় হয়েছি। বয়স বেড়েছে ওর ও, আমার ও, স্বপ্নেরও। আমার সেই যৌবন স্বপ্নদের ছিল ঢাকায় পড়ার পুলক, বড় হওয়ার চিরোবাসনা। কামনা-বাসনা প্রেমে ছিল "রুনি"। তবুও পুলক- মনের ভেতর ঢাকা, স্বপ্নের শহর। সেই পুলক চেপে রেখে বলেছি পারবনা ঢাকা যেতে পারবনা ছেড়ে থাকতে। রুনি চোখ মুছেছে বলেছে যাও আমি পথ চেয়ে থাকব তোমার আশায় আজীবন এপথে। যে পথে আমারা গন্জে গেছি দুই টাকার চকলেট খেতে।

হাজার স্বপ্ন, হাজার আশা রুনির জন্য লাল শাড়ী আর নাকে একটা নাক ফুলের স্বপ্ন বুকে নিয়ে, সেই বুকেরই বা পাশের বুক পকেটে ওরই লেখা একটা চিঠি যাতে লেখা, "হাজারটা তারার মালা পারাবে আমার গলায়।" সেই মালা পরার আশা নিয়ে চলে এলাম এ নগরে।

যে আমি সপ্ন দেখেছি, ওর নাক ফুলের আলোয় দেখবো ওর মুখ, কোন সন্ধ্যা দীঘির পাড়ে বসে। চির সবুজ ঘাস, চাদের আলো আর মসৃন বাতাসে উড়বে ওর চুল ঘাস। সে চুলে বন্য দীঘির জলের গন্ধ। আমি বিভোর হব সে গন্ধে হবো মাতোয়ারা। অথচ অবাক লাগে আমার, সেই চির গ্রাম্য আমি নাগরিক হয়ে গেলাম এ নগরের। পরকিয়া চিনে গেলাম, ছোট ছাত্রের মায়ের কামুক দৃষ্টিতে ঝলসে যাওয়া কামনা আমাকে একে একে চিনিয়ে দিল দিঘির জলের বাইরেও জীবন আছে। কামনা বাসনার এক অদ্ভুত জীবন, রমনীর হাত ডুবে যেতে থাকে আমার চুলের ভেতের একে একে অনেক বার, বহু বার বা অগনিত বার।

সাদা মাটা সকালের গাড়ো লাল সূর্যের মতন ভালোবাসা দিয়ে যে আমাকে শিখিয়ে ছিল স্বচ্ছ বৃষ্টির পানির মতন ভালো বাসা বা প্রেম, আমি সেই রুনি কে ভুলে গেলাম বা ভুলিয়ে দিলো এই নগর আমার অতীত বা ভবিষ্যৎ আমি কেবল মনে রেখেছিলাম আমার বর্তমান। সেই কাদা জলের গেয় আমি আজ শহরে থাকি। পাশ্চাত্য সভ্যতা দেখি। রুনির শেখানো প্রেম দুরে ঠেলে গ্রাম্যতাকে আড়াল করি শহুরে মুখশের আড়ালে। আর প্রেম নামক সেই অদ্ভুত ক্রিয়া করি, এই শহরের নীল আলোয় শরীর মৈথুনে মেতে উঠি প্রেম হীন কিছু মাংশ পিন্ডের সাথে। একে একে আমার শুক্র কীটেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় পতিতা পল্লীর আনাচে কানাচে, জন্ম নিয়ন্ত্রনের রাবারের ঠোংয়া ছিড়ে আমার সন্তানেরা ছড়িয়ে পড়ে কোন এক রমনির আধার কোন আড়ালে, আমার সব কিছু মিলে মিশে একাকার হয়, মিসে যায় রোগ, লালসা বা কাম লিপ্সা।

রুনি মরে গেল যৌতুকের দায়ে আর আমাকে রেখে গেল অদ্ভুত এক দায় বন্ধনের মাঝে। আমি খুব অল্প দিনের মধ্যেই রুনির দায় মুক্ত হতে চলছি। আমি মারা যাচ্ছি হয়তো কালই, এর পর সেই চোখ ধাধানো সবুজ, ধান ক্ষেতের আইল ধরে হেটে গেলে আমাদের গন্জে যাওয়া রাস্তা, তার থেকে একটু এগিয়ে গেলে একটা বন, কিছু আম গাছ নিঝুম ঝিঝি ডাক এক দলা ঘাসের স্তুপ, যেটা রুনির কবর। তার পাশেই খোড়া হবে কবর, নতুন কবর নতুন কাফন।

অসুস্হতার প্রথম প্রথম খুব মাথা ব্যাথা হত, এরপর কাশি। ডাক্তার বলল যক্ষা, ভাবলাম বেচে গেছি, এখন যক্ষায় কেউ মরে না। এর পর আরম্ভ হল পেট খারাপ আর ভালো হলোনা শরির শুকিয়ে কাঠ। ডাক্তার এবার বললেন এইডস।

পতিতা পল্লীর আনাচে কানাচে যে নীল মৃত্যু ছড়িয়ে আছে, সেই বিষের আকর্ষনে উড়ে চলা তরুনেরা সাবধান হোক। আগুনে ঝাপ দেয়ার আগে পাখা খসে পড়ুক পিপড়ার। বেচে যাক নগর নাগরিক আর আমার চির চেনা গ্রাম, আমার আবাস ভুমি। বসন্তের ধুলো ওড়া মাটি, ক্যানোনা আমি খুব অপ্ল দিনের মধ্যেই পচা দুর্ঘন্ধ যুক্ত রক্ত নিয়ে চির দিন জেগে থাকতে যাচ্ছি সেই মাটিতে।

রুনি "তুই আর কটা দিন অপেক্ষা কর আমি আসছি, খুব শিঘ্রই।" তোর বিয়ের সময় আমাকে জানিয়ে ছিলি। তখনও আমি এই কথাটাই বলেছিলাম, এখন হয়তো তুই ভাবছিস মিথ্যুক একটা, এবার ও আসবেনা।
আমি কথা দিচ্ছি এবার আমাকে আসতেই হবে, নাচাইলেও।

মুখ বন্ধঃ লেখাটা ২০০২ সালে লেখাটির কিছু অংশ লিখে ছিলাম। আজ হটাৎ পুরানো কাগজ ঘাটতে গিয়ে পেলাম। আমি একটু সংশোধন করেছি। তখনকার কচি হাতের লেখা অতি আবেগময় ছিল মনেহয়।

উৎসর্গঃ এইডসের রুগী দের। একবার এক হাসপাতালের বারান্দায় দাড়িয়ে ইন্টারে পড়া এক ছেলেকে শেষ বিদায় দিতে হয়ে ছিল আমার। আমি গিয়েছিলাম ব্লাড টেষ্টের রিপোর্ট বুঝিয়ে দিতে। আমার হাত ধরে বলে ছিল ভাইয়া আমি একটা রাত আমার গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কাটিয়ে ছিলাম, তাতেই আমার এইডস হল। মেয়েটা যে আরো অনেকের বেডে যেতো আমি জানতাম না। বলে ও কাদতে কাদতে বেড়িয়ে গিয়ে ছিল। আর আমি তাকিয়ে ছিলাম পথ হারা নাবিকের মতন নির্বাক হয়ে।

ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link

আমার রিসেন্ট আর একটি লেখাঃ
View this link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৯
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×