somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারিনা নেবুলা

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইওরোপীয়ান সাউদার্ন মান মন্দির,নভোমন্ডলের অন্যতম বৃহত ও উজ্জ্বল যে নেবুলার জটিল গঠনের বিস্তৃত বর্ণনা আমাদের কাছে উন্মোচন করেছে তার নাম কারিনা নেবুলা। আমাদের হতে ৭৫শত আলোকবর্ষ দূরে কারিনা নক্ষত্র মন্ডলে এটি অবস্থিত। ১০০ আলোকবর্ষ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত অরাইওন নেবুলা হতে এটি ৪ গুণ বড় এবং উজ্জ্বলতর।

নক্ষত্র উতপাদনের কারখানা হিসেবে এ নেবুলাটি একটি উপযুক্ত স্থান। ঘন মেঘপুঞ্জ দ্বারা আবৃত নেবুলাটির আনাচে কানাচে প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে নক্ষত্রগুচ্ছ। তবে নবজন্ম লাভকারী ভয়ঙ্কর আকৃতির নবীন নক্ষত্রগুলো যে তীব্র বিকিরণ জনিত শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটায় তার কারণেই এত উজ্জ্বল আভাময় দেখায় কারিনাকে। লালচে রক্তিমাভ আভার জন্য হাইড্রোজেন ও আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির সংমিশ্রণই দায়ী। প্রায় ডজন খানেক নক্ষত্রের সন্ধান এ নেবুলাতে সহজেই পাওয়া যাবে, যারা আমাদের সূর্য হতে ৫০ থেকে ১০০ গুন বেশী ভর বিশিষ্ট। অত্যাধিক ভারী বলেই কয়েক মিলিয়ন বর্ষেই তারা তাদের জীবনচক্র সমাপ্ত করে। সেখানে কিনা আমাদের সূর্যের আয়ুষ্কাল ১০ বিলিয়ন বছর। এই দশ বিলিয়ন দীর্ঘ সময়ের সাথে তুলনা করলে কারিনা নেবুলার ঐ ভারী নক্ষত্রগুলোর আয়ুষ্কাল সূর্যের জীবদ্দশার এক পল মাত্র।

কারিনা শব্দটি ল্যাটিন, যার অর্থ keel of a ship. Keel মানে জাহাজের তলি। জাহাজ যেন এদিক ওদিকে বারবার দুলে না উঠে অর্থাত জাহাজকে স্থিতিশীল রাখার নিমিত্তে নির্মিত ধাতব খন্ড বিশেষ। বা আক্ষরিক অর্থে নয় বরং আলঙ্কারিক অর্থে এর অর্থ হতে পারে জাহাজ। দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে একটি নক্ষত্রমন্ডলীর নাম ছিল Argo Navis. Argo মানে জাহাজ। নামকরণ করেছিলেন টলেমি। অসম্ভব বড় আকৃতি বিশিষ্ট হওয়ার দরুণ এর নাম বিলুপ্ত করে এই নক্ষত্রমন্ডলীকে তিন ভাগে বিভক্ত করে তিনটি নামকরণ করা হয়। যেমনঃ
১ carina (keel) অর্থ জাহাজ
২ puppis অর্থ জাহাজের পশ্চাতভাগের ডেক
৩ vela অর্থ পাল

নেবুলাটির মধ্যস্থিত অতিউজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম ইটা-কারিনা। সূর্যের চেয়ে প্রায় ১০০ গুন ভরবিশিষ্ট ও চার মিলিয়ন গুন বেশী উজ্জ্বল বলেই এই নক্ষত্রটি আমাদের ছায়াপথ মিল্কওয়েতে অবস্থানকারী জ্যোতির্ময় সৌন্দর্য্যে সর্বোচ্চ খ্যাত ও হৃদয়গ্রাহী বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত। তাই ইটা-কারিনা এতটা নজড়কাড়া। এটি খুব অস্থিতিশীল হওয়াতে প্রচন্ড গতিশক্তি সম্পন্ন বহিঃ বিস্ফোরণের নমুনা বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছিলেন ১৮৪২ সালে।কয়েকবছর ধরেই ইটা-কারিনা ছিল দ্বিতীয় উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।

সুপারনোভা বা অতিকায় নব-নক্ষত্র বিস্ফোরণের সময় উতপন্ন প্রচন্ড আলোর ছটা যেমন চারিদিক ঝলসে দিয়ে নভোমন্ডলকে আলোকজ্জ্বল করে তুলে, ইটা কারিনা ঠিক তেমন উদাহরণ স্থাপন করলেও বিস্ফোরণে একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি।এর একটি সঙ্গী নক্ষত্র আছে যে কিনা একে প্রদক্ষিণ করে ৫.৫৪ বছরে। প্রদক্ষিণ কালে কক্ষপথের খুব কাছাকাছি এলে প্রবল শক্তি সম্পন্ন বায়ু প্রবাহের সংঘর্ষ তখন বিস্ময়কর ঘটনার সৃষ্টি করে। ২০০৯ এর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তারা দুজন সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়ার দরুণ অনন্য এক নভোমন্ডলীয় অবস্থার উতপত্তি হয়েছিল যা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা নক্ষত্রদুটির গ্যাসীয় পরিমন্ডলের ধরণ ও গঠণ সম্বন্ধে ব্যাপক ধারণা লাভে সক্ষম হন। সেই সময়টুকুতে ইউরোপীয়ান সাউদার্ন মান মন্দির পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল অসংখ্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাংশের সমাহারে। হঠাতই মনে হতো এ মান মন্দির যেন ছোটখাটো এক রণতরীর অন্য আরেক রূপ।
১২টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×