somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার এত দিনের নামাজের কি হবে ?? হুমায়ুন কবির (সুমন)

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রহিম মিয়া গ্রামের একজন গরীব খেটে খাওয়া মুরব্বির নাম । দাড়িগুলো একদম সাদা, তেমন পড়ালেখা করতে পারে নাই । দৈনন্দিন কাজের ফাকে ফাকে সমাজের অন্য দশ জন মুরব্বির মত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানে রোজা রাখে আর টুকিটাকি ধর্মীয় কাজ করে যা সেই বংশানুক্রমেই জানে । কোন একদিন বাড়িতে দুপরের বিশ্রামের সময় তার মেয়েকে বলল মা একটা ওয়াজ লাগাওতো একটু শুনি । কথা মত মেয়ে সাদিয়া নামাজের গরত্ব সম্পর্কিত একটা ওয়াজ চালু করল । রহিম মিয়া একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতেছে ওয়াজের মধ্যে এক সময়ে হুজুর সূরা আনকাবুতের এই আয়াতটি বলতেছে, ( হে রাসূল ) আপনি আপনার প্রতি ( আল্লাহর পহ্ম থেকে ) প্রত্যাদিষ্ট (পাঠানো ) কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন । নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য (খারাপ কাজ ) থেকে বিরত রাখে । আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ । আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর । সূরা আনকাবুত - ৪৫ । আয়াতের কথাগুলো শুনে রহিম মিয়া থমকে গেল । এরপর রহিম মিয়া খুব চিন্তা করতে করতে মনে মনে বলতে লাগল তাহলে কি যারা খারাপ কাজে লিপ্ত তাদের নামাজ হয় না ? যদি এটা সত্য হয় আর সত্য হবে না কেন কারন তাতো কুরআনে আল্লাহই বলতেছে, তাহলে সমাজের বেশীর ভাগ লোকেরই নামাজ হয় না কারন বেশীর ভাগেই খারাপ কাজে লিপ্ত ? এরপর সেই ঠিক করল তাদের স্থানীয় মসজিদের ঈমাম মুফতী ওসামাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করে বিস্তারীত জানবে । একদিন বিকেলে আছরের পরে রহিম মিয়া বলল ঈমাম সাব আপনার কি সময় আছে আমার কিছু কথা ছিল ?? মুফতী ওসামা বলল হা রহিম ভাই সময় আছে বলুন , আচ্ছা হুজুর যারা অশ্লীল ও খারাপ কাজ করে তাদের কি নামাজ কবুল হয় ? প্রশ্ন শুনে হুজুর ওসামা একটু ওবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রহিম ভাই হঠাৎ করে এমন করে কেন জিজ্ঞেস করলেন ? না আমি এক আলেমের মুখ থেকে শুনলাম কুরআনে নাকি আল্লাহ বলেছে নামাজ নাকি সকল অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মানুষদের দূরে রাখে ?? হা ঠিকই শুনেছেন । তাহলে হুজুর দেখুন আমাদের মসজিদে যারা নামাজ পড়ে আমার চোখে দেখা প্রায় সকলেই তো খারাপ কাজে লিপ্ত । যেমন দেখুন বয়সের ভারে দাড়ি ফেকেছে তাদের মত বুড়োরা পর্যন্ত মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে গিয়ে দোকানে বসে এক হাতে চায়ের কাপ আর অপর দিকে চোখ দিয়ে টেলিভিশনে বেপর্দা মেয়ের ডং রং দেখতেছে, এটা কি অশ্লীল কাজে লিপ্ত নয় ?? এরপর দেখুন হজ্জ করে এসেছে, নামাজও পড়ে ৫ ওয়াক্ত কিন্তু জমীনের আইল ঠেলে, সমান্য ঝগড়াতেই যে কারো সাথে মুখে লাগামহীন গালী আর গালী, এদের নামাজ কি হয় ?? মুফতী ওসামা বলল রহীম ভাই আপনি কি জানেন আমরা নামাজ কেন পড়ি ?? রহিম মিয়া বলল কুরআনে নাকি নামাজের কথা বলেছে তাই পড়ি তবে কোথায় বলেছে তাতো জানি না ।
ঈমাম ওসামা : আচ্ছা রহিম ভাই ধরুন আমাদের মসজিদে যদি ১০০ জন মুসল্লি নামাজ পড়ে তাদের মধ্যে কত জন জানে নামাজের ভিতরে ও বাহিরে ফরজ কয়টি ??
রহিম মিয়া : তাতো মনে হয় অর্ধেকেরও বেশী জানে না !
ঈমাম ওসামা : আচ্ছা ধরে নিলাম অর্ধেক তাহলে এবার বলুন বাকী ৫০ জনের মধ্যে কতজনে শুদ্ধ করে কুরআন পড়তে পারে ??
রহিম মিয়া : আমার তো মনে হয় ২/৪ জন জানে এমনকি আমিওতো জানি না ।
ঈমাম ওসামা : না আমি ধরে নিলাম ২৫ জনে জানে শুদ্ধ করে পড়তে । আচ্ছা এবার বলুন নামজের ভিতরে যে সূরা পড়ে তার অর্থ কত জনে জানে ??
রহিম মিয়া : আমারতো মনে হয় আপনি ছাড়া আর কেউ জানে না ।
ঈমাম ওসামা : আচ্ছা ধরে নিন ২৫ জনের মধ্যে ১০ জন জানে , বলুনতো এই ১০ জনের মধ্যে কত জনে সব চিন্তা ছেড়ে নামাজ মন দিয়ে পড়ে ।
রহিম মিয়া : এটা কি করে সম্ভব, নামাজে দাড়ালেই তো কত কথা মনে আসে ।
ঈমাম ওসামা : এবার বলুন ১০০ জনের মধ্যে কত জন নামাজ পড়ে ??
রহিম মিয়া : ঈমাম সাব ১০০ জনের কেন আমারতো মনে হয় ১০০০ জনে দু একজনের নামাজ হয় কিনা সন্দেহ ।
ঈমাম ওসামা : এবার নিজেই বুঝুন কেন নামাজ পড়ার পরেও অশ্লীল কাজে লিপ্ত ।
রহিম মিয়া : ঈমাম সাব তাহলেতো নামাজ পড়া দেখতেছি অনেক কষ্ট ??
ঈমাম ওসামা : হা রহিম ভাই এই কথও আল্লাহ কুরআনে বলেছে , ধৈর্য্যর সাথে নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর । অবশ্য তা ( নামাজ পড়া আর ধৈর্য ধরা ) যথেষ্ট কঠিন । কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব । সূরা বাক্কারাহ - ৪৫ । আমরা যা আলোচনা করলাম জেনে বুঝে সেই দোষগুলো নিয়ে যারা নামাজ পড়ে তাদের প্রতি আল্লাহর লানত । দেখুন আল্লাহ কুরআনে বলতেছে , অতএব দুর্ভোগ (ধ্বংস) সেসব নামাযীর জন্য, যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর ( উদাসীন ); যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে । (সূরা মাউন - ৪,৫,৬)
রহিম ভাই শুনেন আমাদের সমাজের মানুষগুলো নামাজ সম্বন্ধে জানবে তো দূরের কথা তারা কিভাবে নিজেদের মুসলমান দাবী করে তাও জানে না । তারা তো শুধু লোক দেখানো মাত্র নিজের মনের মত ইসলামকে বানিয়ে নিয়েছে অথচ এটার জন্য যে সেই পরকালে কিছুই পাবে না তা নিয়ে সেই একদম বেমালুম । যদি মানুষগুলো আল্লাহকে ভয় করে নামাজ পড়ার চেষ্টা করত তাহলে তারা আগে শিখে নিত কিভাবে নামাজ পড়তে হয় ?? বর্তমানে মানুষগুলো ইসলাম সম্বন্ধে এতই উদাসীন যে, ড্রাইবার হতে হলে ড্রাইবিং শিখতে হবে এটা জানে তবে মুসলীম হতে হলে যে কুরআন হাদীস জানতে হবে এটা জানে না এবং বুঝতেও চায় না ।
রহিম মিয়া : তাহলে ঈমাম সাব আমিওতো নামাজের অনেক হুকুম আহকাম ও কুরআন ঠিকমত জানি না অর্থতো দূরের কথা । তাহলে আমার এত দিনের নামাজের কি হবে ??
ঈমাম ওসামা : রহিম ভাই চিন্তার কোন কারন নাই , আপনি এখন থেকে শিখা শুরু করেন আর আগের ভুলের জন্য মাফ চান তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ মাফ করবেন ।
রহিম মিয়া : ঈমাম সাব এই বয়সে কেমন করে যে শিখি ?? লোকে দেখলে কি বলবে ??
ঈমাম ওসামা : রহিম ভাই এমন কথা ভাবা মানে শয়তান আপনার সাথে আছে । বুড়ো বয়সে শিখলে মানুষ কি বলবে লজ্জা লাগে তাই না ?? তাহলে শুনুন পরকালে যে ঐসব মানুষসহ এমন কি আরো অনেকের সামনে যখন শস্তি দিবে তখন লজ্জা লাগবে না ??
রহিম মিয়া : ঈমাম সাব তাওতো ঠিক বলছেন । ইনশা আল্লাহ কাল থেকে আপনার কাছে নিয়মিত বসব আর আগামী জুমআর নামাজে আপনি আমাকে যা বলছেন তা সবার উদ্দেশ্যে বলবেন তাহলে দেখবেন যে আরো অনেকেই শিখতে আসবে আর যাদের নসিব খারাপ তারা আগের মতই থেকে জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হবে ।
ঈমাম ওসামা : রহিম ভাই আপনিই হলেন একজন জ্ঞানী লোক । শুনুন শুধু নিজে পড়লে হবে না ছেলে মেয়ে মা বাবা বউসহ সবাইকে শিখার জন্য বলতে হবে । তাহলেই সম্ভব নামাজের মাধ্যমে অশ্লীল কাজ ও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা । আল্লাহ যেন পুরো বিশ্বের সকল মুসলীমদের সত্যকে সঠিকভাবে বুঝার ও মানার তওফিক দান করেন । আমীন

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×