পরিবাগ মোড়ে নাক ঠেসে দাঁড়িয়ে আছি। বাস যেখানে থামে ঠিক সেখানে কেউ একজন বমি করে গেছে। মাল্টিকালার বমি। ভদ্রলোক/মহিলা দুপুরে ভাতের সাথে গরুর গোস্ত বেশ আয়েশ করে গিলেছেন তা বমির মাঝখানে ভেসে থাকা দু'টুকরো চিবানো খয়েরি মাংসের উঁকিঝুঁকি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
ঘটনা এখানে না- অন্যখানে। ঘটনার নায়ক জনৈক ভিক্ষুকের আগমন ঘটলো কিছুক্ষণ পরে; ভদ্রলোকের কোমড় থেকে উপরের অংশ আছে। নিচের অংশের কোন অস্তিত্ব নেই। হাতের উপর ভর করে তিনি এগুচ্ছেন গুটিগুটি। বমির ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়ে ইতস্তত ডান-বাম দেখলেন। এরপর মাংসের টূকরো দুটো তুলে একটু ঝেড়ে পরিস্কার করে হাতে থাকা নোংরা কাঁচের বোতলটাতে পাচার করে দিলেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবম্ভ হয়ে গেলাম। পেছনের পকেটে হাত দিতে গিয়েও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে আমি থমকে গেলাম। গতকাল গলা পর্যন্ত গোস্ত গিলে- দীর্ঘশ্বাস ফেলে যখন বলেছিলাম- "আর ভাল্লাগে না গোস্ত খাইতে" ধুর ! কথাটার জবাব আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কীভাবে দেব আমার কি তা জানা আছে? এইত্ত সেদিনই হাঁড়ের সাথে লেগে থাকা যেটুকু মাংস আমি আমাদের লালরঙের ময়লার বালতিটাতে অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দিলাম তাতে এই লোকটার রিজক ছিলো না তো? কারো উপর জুলম করে ফেললাম না তো?
"নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির ততক্ষন পর্যন্ত ভাগ্য পরিবর্তন করেন না ;যতক্ষন পর্যন্ত না তারা নিজেদের পরিবর্তন ঘটায়"
আয়াতটা বললেই লুঙ্গি টাইট করে মাজায় বেঁধে তড়িৎ একশ্রেণির মানুষ ইদানিং তাফসির করে ফেলে- আসেন পিডায়া সরকার নামায়ে দেই, তাইলে ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাইবেক।
অথচ বিস্ময়ের ব্যপার হচ্ছে আয়াতের তাফসির সম্পূর্ণ ১৮০ডিগ্রী বিপরীত দিকে অবস্থান করছে। আমাদের পাপ, নিজেদের উপর করা জুলম এসবের কারণেই আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করে- কষ্ট, আজাব, দারিদ্রতার কষ্ট প্রভৃতিতে জর্জরিত করেন। আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করে দেন আমাদের স্বীয় কর্মের ফলেই।
আজ রাতের খাবার খেয়ে আধ খাওয়া মাংসের টুকরোটা ঢেকুর তুলতে তুলতে ফেলে দেবার আগে আরেকটু ভেবে দেখার সময় আমাদের হবে কি?
armaanthelegend