
~বাংলাদেশের ইতিহাস খুব বৈচিত্র্যময়। দেশটার জন্ম হয়েছে অনেক নাটকীয়তার সাক্ষী রেখে।

~পাশে নেই কেন কেউ আমরা? কারণ এবারের ছাত্র আন্দোলন গুলো শুধু ছাত্রদের সুবিধা, স্বার্থের জন্যই, ওদের ভাই-বোন হত্যার বিচার চাইছে। এতে আমাদের কি? আমাদের কিছু যায় আসে এতে? ওদের স্বার্থ, ওদের আন্দোলন। সব দায় ও ওদের ই!! এই চিন্তাধারা নিয়ে কিন্তু এখনো বেচে আছি আমরা, আমরা সাধারণ জনগণ।
চলুন একটু দেখে আসি ছাত্রদের আন্দোলনের নয় দফা দাবিগুলোঃ
১. বেপোরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।
২. নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর গতকালের বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে।
৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে, থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে।
৭. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না।
৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।
~আচ্ছা আমাকে কেউ বলতে পারবেন ৬ আর ৭ ছাড়া বাকি দফা গুলো বাস্তবায়িত হলে সেখান থেকে আপনারা সড়ক চলাচলে একটু বাড়তি নিরাপত্তা পাবেন না? হয়ত ৬,৭ দফা গুলো তাদের জন্যই একটু সুবিধা নিয়ে আসবে যাদের সন্তানরা স্কুল কলেজে পড়ে এবং বাবার গাড়ি না থাকাতে পাবলিক বাসে যাতায়াত করে।
~যদি আমাদের মত ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আপনাদের জীবনের নিরাপত্তা দানে একটু সহায়ক হতে পারে তবে কেন আমাদের আন্দোলনটাকে আপনারা সাপোর্ট করতেছেন না প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে!!!
~আচ্ছা মূল কথায় আসিঃ
একটা ছাত্র আন্দোলন সবসময় ন্যায় এর জন্য হয়। গণতান্ত্রিক দেশে জনমানুষের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য হয়। তাহলে এসব আন্দোলনের বাস্তব ফলাফল পাওয়া যায়না কেন? কেন অপরাধীদের বিচার হয়না? অপরাধীদের এমন কি আলাদিনের চেরাগ আছে যার শক্তি বলে ওরা প্রতিবার পার পেয়ে যায়? বানিয়ে বলছি? না, একদম ই না। পত্রিকার পৃষ্ঠা খুলে দেখে বলেন তো, তিতুমির কলেজের সেই ছেলের হাত যারা কেড়ে নিয়েছিল তাদের বিচার হয়েছিল কিনা? বলেন তো, পায়েল হত্যার বিচার হয়েছে কিনা? -আদালতের প্রসেস ভাই একটুতো সময় লাগবে। -আচ্ছা জীবন কেড়ে নেওয়ার সময় তাহলে কেন একটু সময় দেওয়া হয়না? কেন শুধুমাত্র সাধারণ জনমানুষকে স্পট ডেড হতে হয়। -সবায় স্পট ডেড হয়নাতো ভাই। -মানে বুঝলাম না? -কাউ কে প্লান পরিকল্পনা করেও সুস্থ করার বদলে মেরে ফেলা হয় যেমনটা করা হয়েছিল পায়েল এর সময়ে!
~এটা কি অসহযোগ আন্দোলন না শান্তিপূর্ন?!!
~অসহযোগ শব্দটা আসে যখন প্রকৃতি স্বাভাবিক গতিতে চলার সময়ে একটু একটু করে অনেকাংশে বাধার সম্মুখীন হয়। একটা এক্সিডেন্ট ঘটেছে, বিচারের দাবীতে তার আত্মীয়রা আহ্বান জানাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছাত্রদের ব্যাপারে না বিষয়টা ঠিক এভাবে ঘটেনা, কারণ অতীত ঐতিহ্য ছাত্রদেরকে শিখিয়ে দিয়েছে। আহ্বান, মিষ্টি-মধুর সম্ভাষণে কখনো এখানে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব না। -তারপর ও কি তারা কোন অনৈতিক কাজ করেছিল? -না, করেনাই। প্রথম দিন ওরা সুন্দর ভাবে মানববন্ধন করেছিলো, করেছিলো বলতে করতে চেয়েছিল। কিন্তু যখন তাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করতে দেওয়া হয়নাই তারপর ই কিন্তু ওরা নিজেদের হাতে লাঠি নিয়েছিল, মূলত সেই ঘাতক জাবালে নূর এর কিছু বাস ভাঙ্গার জন্য (প্রথম দিনের হিসেব ভিন্ন।) সাথে অন্যান্য যেসব পরিবহনের বাস গুলোও ব্যাপরোয়াভাবে চালায় এবং হাফ ভাড়া নেয়না সেগুলো। রমিজ উদ্দিন কলেজের সাথে সাথে একাত্নতা পোষণ করে সেদিন সোমবার ঢাকা কলেজ সহ আরো কিছু স্কুল-কলেজ আন্দোলন করেছিলো প্রথম দিন। এরই মধ্যে আপনি ভাবেন যদি পরিবহন মন্ত্রী এমন ভাবে হাসিমুখে কথা বলে মিডিয়া এর সামনে, সাথে এই ব্যপারটাকে ক্ষুদ্র, বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উরিয়ে দেয় এবং এও বলে বিচার চাইতে হলে আরো ৩০ টা লাশ লাগবে (উনার বক্তব্যটা বিশ্লেষণ করে দেখবেন) তখন ছাত্রসমাজ কি বসে থাকবে? কখনোই থাকবেনা।


~সোমবারের কতিপয় স্কুল কলেজের আন্দোলনের পর ও যদি কর্তৃপক্ষ আশ্বাস না দেয় যে, এতদিনের মধ্যে আমরা এর সঠিক বিচার করব এবং তোমাদের দাবিগুলো খতিয়ে দেখে এগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাব। তখন ছাত্ররা কি করবে? আর তাই গতকাল (মঙ্গলবার) আরো জোড়ালভাবে আরো স্কুল কলেজ এই আন্দোলনে সামিল হয়েছে। কিন্তু কালকেও হল কি? কর্তৃপক্ষ থেকে কোন ধরণের আশ্বাস বাণী শোনা গেলোনা। ছাত্রদেরকে যেভাবে দমীয়ে রাখা যায় সেভাবে অগ্রসর না হয়ে গতকালকে উলটো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের উপর মারধর করে। মারধর করে আন্দোলনটাকে স্থগিত করে রাখতে চেষ্টা করে। সোজা আঙ্গুলে ঘি আসার পরও যদি আপনি আঙ্গুল বাকা করে ঘি খেতে চান তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর সেটাই হয়েছে। গতকাল কে কিছু ছাত্র আহত হয়েছে, যার দরুন আজকে আরো জোড়াল ভাবে আন্দোলনের জন্য মাঠে নেমেছে একটা কিশোর ছাত্রসমাজ। -বেশি কিছু চেয়েছিল তারা? -না। সুধু চেয়েছিল তাদের ভাইবোনদের হত্যার বিচার।
~সোমবার, মঙ্গলবার এবং আজ বুধবারের সকল রাষ্ট্রীয় ও ব্যাক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির দায় পরিবহণ মালিক সমিতি সহ আমাদের মন্ত্রী মহোদয় এর।

১/ ফিটনেসবিহীন গাড়ি সনাক্তকরণ ও সেগুলো পুলিশের হাতে সোপর্দ করা।
২/ লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার চিহ্নিত করে পুলিশের হাতে দেওয়া। কিন্তু পুলিশের গাড়ির লাইসেন্স যদি না থাকে তবে পুলিশকে কার হাতে সোপর্দ করা উচিৎ!!! (ভিডিওটা হারিয়ে ফেলছি, একটা পুলিশ এর বাইক ধরেছিল ছাত্ররা যেটার লাইসেন্স ছিলনা। ভিডিওটা কেউ পেলে শেয়ার করবেন।)


~কিন্তু এসব কি? একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যদি পুলিশ এভাবে লাঠিচার্জ করে তাহলে ছাত্রসমাজ অসহযোগ এর সাথে নিজেকে অভ্যস্থ করাবেনা কেন?



~ভিডিওটি দেখুন কালেরকণ্ঠের সৌজন্যেঃ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর ওপর পিক-আপ উঠিয়ে দিল চালক (ভিডিও)
~শিশু ছাত্রদের উপর ছাত্রলীগ যুবলীগের হামলা কেন? এবার যাত্রাবাড়ীতে শিক্ষার্থীদের গাড়িচাপা, ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা
~ছাত্রদের আন্দোলন কি অসহযোগ আন্দোলন ছিল? ছাত্ররা দেখছিল লাইসেন্স, গাড়ি ভাঙছিল কে? ছাত্ররা সবসময় ন্যায্য আন্দোলন করে, এর মধ্যে কতিপয় অসাধু নিজ স্বার্থ লুটতে ব্যস্ত থাকে। এর দায় তো আর তাদের না!
~যে কাজ আপনাদের করার কথা ছিল সেটা করতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন বলে কি ছাত্ররাও ব্যর্থ হবে? দেখুন এরাই একটা সময়ে জাতিকে সঠিক পথের নিশানা দেখিয়ে দিবেঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছে শিশু শিক্ষার্থীরা!
~শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অশান্তিতে রূপান্তরিত করছে কারা? এক ছাত্রের মা এগিয়ে এসে বাঁচায় ছেলেকে (ভিডিও)
আন্দোলনের কিছু ফটোঃ

ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে পারবেনা, আপনি নিজে একটু ভেবে দেখবেন!!!





~মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি যখন আজ উলটো পথে যাচ্ছিলোঃ







~মারা যাওয়া এক শিক্ষার্থীর (মিম) বাবাও একজন ড্রাইভার। সর্বশেষ ড্রাইভারের হাতেই তার মেয়ের খুনের পর উনার কিছু কথা শুনে আসুনঃ আর বাস চালাবেন না মিমের বাবা
~সম্পূর্ণ লেখাটা পড়ার পর ও যদি আপনার কাছে মনে হয় ছাত্রদের এই আন্দোলনটা শান্তিপূর্ণ না, অসহযোগ আন্দোলন। তবে আপনাকে বলতে হয়ঃ আপনিও শাজাহান খানের মত হাসতে থাকুন, কারণ আপনার ও কমনসেন্স এর অভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে!!!
~এই সম্পর্কিত আগের লেখাটি পড়তে ক্লিক করুণঃ বাসচাপায় ৩ শিক্ষার্থী নিহতঃ এর দায়ভার কার!?
~বিঃদ্রঃ যাদের মনে এই প্রশ্নের উদয় হয় যে, ছাত্ররা প্রথমেই কেন এমন ভাঙচুর এর আন্দোলন করে? উনারা দয়া করে আমাকে জানাবেন, তিতুমির কলেজের সেই শিক্ষার্থীর ঘাতকদের বিচার হয়েছিলো কিনা এবং পায়েল হত্যার বিচার কতটুকু এগিয়েছে? ওদের সময় কিন্তু কোন আন্দোলন করা হয়নি (শুধুমাত্র মানববন্ধন ছাড়া।) এছাড়াও অতীতের ছাত্রদের কোন দাবীগুলো আন্দোলন ছাড়া মেনে নেওয়া হয়েছে???
আমার শিরা-ধমনীতে আমার ঐতিহ্যের রক্ত থাকবে। তাই নয় কি!!!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




