somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় জুমুয়ার খুৎবা দেয়া মাকরূহে তাহরীমী তথা হারাম

১০ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি, জুমুয়ার খুতবা নিয়ে নানা ধরনের বিক্রীত/মনগড়া লেখালেখি দেখা যাচ্ছে। মানুষ কিছু ধর্মব্যবসায়ীদের ধোকায় প্রতারিত হচ্ছে। জুমুয়ার দিনে ইংরেজিতে বা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষায় খুতবা দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ইলম না থাকার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে কাফের-মুশেরেকরা চক্রান্ত করে যাচ্ছে মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করার জন্য।
সূতরাং খুতবার বিষয়ে শরীয়তের সঠিক ফায়সালা নিয়ে দলিল ভিত্তিক একটি পোষ্ট দেয়া হল-

আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় জুমুয়ার খুৎবা দেয়া মাকরূহে তাহরীমী। কাজেই জুমুয়ার খুৎবা বাংলায় দেয়া মাকরূহে তাহরীমী। দিলে নামায দোহরানো ওয়াজিব হবে। যারা এরূপ শরীয়ত বিরোধী কাজের জন্য বলবে তারা গুমরাহ। শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা শক্ত শাস্তির উপযুক্ত।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সমস্ত ইমাম, মুজতাহিদ এ ব্যাপারে (ইজমায়) ঐক্যমতে পৌঁছেছেন যে, খুৎবা আরবী ভাষায়ই দিতে হবে। আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় খুৎবা দেয়া বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ও মাকরূহ্ তাহ্‌রীমী।
দুই খুৎবার একটি আরবী ভাষায় অপরটি অন্য কোন ভাষায় অথবা এক খুৎবার অংশ বিশেষ আরবী ভাষায় এবং অংশ বিশেষ অন্য কোন ভাষায় দেয়া অথবা আরবী খুৎবা প্রদানকালে বাংলা, উর্দু, ইংরেজী, ফার্সী অর্থাৎ এক কথায় পৃথিবীর অন্য যে কোন আজমী (অনারবী) ভাষায় অনুবাদ করা বা আরবীতে খুৎবা দেয়াকালে অন্য কোন ভাষায় মাঝে মধ্যে শে’র বা কাছীদা পাঠ করাও শরীয়তের দৃষ্টিতে সুন্নত পরিপন্থী, বিদয়াত ও মাকরূহে তাহরীমী।

তবে মুছল্লীদেরকে খুৎবার বিষয়বস্তু বুঝানোর জন্য প্রথম আজানের পূর্বে বা পরে এবং ছানী আজানের অবশ্যই পূর্বে ওয়াজ নছীহত করা জায়িয এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জুময়ার দিন খুৎবার পূর্বে মিম্বরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতেন। অতঃপর হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খুৎবা প্রদান করতেন। (মুস্তাদরিকে হাকিম ১ম জিঃ, ১০৮ পৃষ্ঠা)

খুৎবার বিষয়বস্তু বুঝানোর জন্য খুৎবার পূর্বে অর্থাৎ ছানী আযানের পূর্বে ওয়াজ করা যেতে পারে কিন্তু তথাপিও ছানী আযানের পর অর্থাৎ খুৎবাতে আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করা মাকরূহ্‌ তাহ্‌রীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।

যারা জুমুয়ার খুৎবা আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় দেয়ার পক্ষে- তাদের বক্তব্য হলো, ‘খুৎবা শব্দের লোগাতী বা শাব্দিক অর্থ হলো, ‘বক্তৃতা, ভাষণ বা ওয়াজ। সুতরাং বক্তৃতা, ভাষণ বা ওয়াজ যেমন যে কোন ভাষায় দেয়া যেতে পারে; তদ্রুপ জুমুয়ার খুৎবা ও যেকোন ভাষায়ই দেয়া যেতে পারে।’ এর উপর ক্বিয়াস করে ইদানিংকালে কেউ কেউ জুমুয়ার খুৎবা বাংলা ভাষায় দেয়ার কথা বলছেন। মূলতঃ তাদের উক্ত ক্বিয়াস সম্পূর্ণই ভ্রান্ত ও বাতিল।
শরীয়তে এমন কতক শব্দ রয়েছে, যাদের শুধু লোগাতী বা শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করলে তা যথার্থ হবে না বরং তার প্রচলিত শরয়ী অর্থের উপরই আমল করতে হবে। তার মধ্যে একটি হলো জুমুয়ার খুৎবা। লোগাতে খুৎবা শব্দের অর্থ যদিও বক্তৃতা, ভাষণ বা ওয়াজ। কিন্তু শরীয়তে খুৎবা শব্দ আলাদা তাৎপর্যমন্ডিত।

মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন শরীফে খুৎবাকে যিক্‌র বলে সম্বোধন করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “হে ইমানদারগণ, যখন জুমুয়ার দিন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহ্‌র যিক্‌রের দিকে ধাবমান হও। (অর্থাৎ খুৎবা শুনার জন্য আস)।”

উক্ত আয়াত শরীফে অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কিরাম একমত যে, যিক্‌র শব্দ দ্বারা খুৎবাকে বুঝানো হয়েছে। তাফসীরে ইবনে কাছীর ৯ম খন্ড পৃঃ ৪৫৬, বুখারী শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১২৭, মাবছুত লিস সারাখসী ২য় জিঃ পৃঃ ২৬/৩১, কবীরী পৃঃ৮৭, হেদায়া ১ম জিঃ পৃঃ১৩৯)

ফুকাহায়ে কিরামের অনেকেই খুৎবাকে আল্লাহ্ পাক-এর যিক্‌র ও ইবাদতের দিক দিয়ে নামাযের ন্যায় বলেছেন। যেমন হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘জুমুয়ার নামাযকে (চার রাকায়াতের স্থলে দুই রাকায়াতে) সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে একমাত্র খুৎবার কারণেই।’ (ইযালাতুল খফা)

হযরতুল আল্লামা আলাউদ্দীন আল কাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল বাদায়ে” কিতাবের হাওলা “আল বাহর” এ উল্লেখ করেন যে, জুমুয়ার খুৎবা হলো দুই রাকায়াত জুমুয়ার নামাযের স্থলাভিষিক্ত। ’

অনুরূপভাবে আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, নিযামুল ফতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে। আবার খোলাছাতুল ফতওয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, “যে সকল কাজ-কর্ম নামাযের মধ্যে হারাম সেগুলো খুৎবার মধ্যেও হারাম ও নিষিদ্ধ। সুতরাং খুৎবা দানকারী ও শ্রবণকারীদের জন্য খাওয়া, পান করা, কথা-বার্তা বলা যদিও তা তাস্‌বীহ্ হোক না কেন এবং সালামের জবাব দেয়াও জায়িয নয়।”

আর এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, “যখন কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা অতি মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করো। সম্ভবতঃ তোমরা রহমত প্রাপ্ত হবে।” (সূরা আ’রাফ)

অনেক মুফাস্‌সিরীনে কিরাম এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, উক্ত আয়াত শরীফ খুৎবাকে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ণ হয়েছে। এবং তাফসীরে কামালাইনের লেখক আল্লামা সালামুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতেও উক্ত অভিমত নকল করেন। অনুরূপভাবে তাফসীরে মায়ারেফুল কুরআনেও উল্লেখ রয়েছে।

হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, ইমাম ছাহেব যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজরা হতে বের হবেন, তখন কোন নামায ও কথাবার্তা বলা নিষিদ্ধ।” (আবূ দাউদ শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফে আছে, “জুমুয়ার দিন ইমামের খুৎবা প্রদানকালে যদি কেউ অন্যকে বলে চুপ কর, তবে সেটাও অন্যায় হবে।” (নাসাঈ শরীফ)
সমস্ত ফিকাহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, জুমুয়ার খুৎবা দেয়া ওয়াজিব। বিনা খুৎবার জুমুয়া দুরস্ত হবে না।

নামায যেমন ওয়াক্ত হবার পর পড়তে হয়, খুৎবাও তদ্রুপ ওয়াক্ত হবার পর দিতে হয়। ওয়াক্ত হবার পূর্বে বা পরে খুৎবা দিলে খুৎবা দুরস্ত হবে না।
জুমুয়ার নামাযে যেরূপ ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ রয়েছে, জুমুয়ার খুৎবায়ও তদ্রুপ ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ রয়েছে।
খুৎবা জুমুয়ার নামাযেরই একটি অংশ বিশেষ এবং নামাযের ন্যায় একটি ইবাদত। কাজেই নামাযে যেরূপ আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করা জায়িয নেই, তদ্রুপ খুৎবার মধ্যেও আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করা জায়িয নেই।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী যামানায় অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোননি। তোমাদের বাবা-দাদা চৌদ্দপুরুষ শোনেনি।"

যারা জুমুয়ার খুৎবা বাংলায় দেয়ার কথা বলে তারা দাজ্জালে কায্‌যাব তথা মিথ্যাবাদী দাজ্জালের অন্তর্ভূক্ত। তারা মিথ্যাবাদী ও নবী দাবিদার। তারা বিদয়াতী। তারা ধর্মের মাঝে নতুন বিদয়াত প্রবর্তক। তারা গুমরাহ ও ফিৎনাবাজ।
হাদীছ শরীফ অনুযায়ী, যে ভুল ফতওয়া দেয় এবং সে ফতওয়ার উপর যতজন আমল করে তাদের সবার গুনাহ উক্ত ভুল ফতওয়া দানকারীর উপর বর্তাবে।
জুমুয়ার নামাযে বাংলা খুৎবা দানকারীর প্রস্তাবকারীদের কোনমতেই এমনিতেই ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাদেরকে শক্তভাবে প্রতিহত করতে হবে। ফিৎনাবাজ, বিদয়াতী, নতুন নবী দাবিদার ও গুমরাহ হওয়ার কারণে তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে শক্ত শাস্তির উপযুক্ত।

উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনায় কারো কোন দ্বিমত থাকলে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর দলিল দিয়ে খন্ডান। মনগড়া মত দিয়ে নয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তবে দলিল পেশ কর। সূরা: বাকারা
৩৪টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×