somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনে দেখা (পর্ব - ০১)

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিকালের দিকে প্রছন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছিল প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্তই ছিল।
দুপুরের দিকে বাইক নিয়ে বের হয়েছিলাম আর চিরচেনা সেই ফ্রেন্ডের অফিসে গিয়েই জড়ো হলাম একে একে সার্কেলের সবাই। সার্কেলের সবাই একত্রিত হওয়া মানেই সবার অন্ধকার জগৎকে তুলে আনা। প্রতিদিনকার মত আজকেও তাই হল।

তবে আজকে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বন্ধু রাফসানের পালিয়ে বিয়ে করার কথা, আর নিজ পকেটের টাকা দিয়ে তাদের পালাতে সাহায্য করা অফিসের মালিক বন্ধু মাহমুদের বীরত্ব।

সার্কেলের মাঝে রাফসানই ছিল মোস্ট ট্যালেন্টেড প্লে বয়, জীবনে কতটা প্রেম করেছে তার হিসাব তার নিজের নিকটও নাই। কিন্তু শেষে এসে থেমে গেল সালমা নামক এক মেয়ের নিকট। হয়তো এটাই ছিল রাফসানের সত্যিকারের ভালোবাসা।
প্রায় ছয়মাসের মত সম্পর্ক ছিল তাদের, আমরা সার্কেলের সবাই অবাক তার প্রেমের দীর্ঘ স্থায়িত্ব দেখে। যে ছেলেটি মাসে সর্বনিম্ন দুবার প্রেমিকা পরিবর্তন করে সে ছেলেটির সম্পর্কের স্থায়িত্ব এতদিন।
ভীষণ পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল তার মাঝে, দূরন্তপনা ছেলেটি হয়েছিল ভীষণ আনমনা।
ভালোবাসা সত্যিই পারে একটি মানুষের মাঝে পরিবর্তন এনে দিতে।
রাফসানের চরিত্রও পরিবর্তন হয়ে গেল, বিয়ের পিড়িতে ও বসে গেল।

সার্কেলের প্রথম উইকেট পতন রাফসানকে দিয়েই হল। দ্বিতীয় উইকেটের শিকার কে হবে তা নিয়ে সবার মতামত আলাদা। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যক মতামত ছিল মাহমুদ টার্গেট করেই। সার্কেলে সবার মাঝে একমাত্র ইয়াছিনই একজন সফল ব্যাবসায়ী এবং কর্মক্ষেত্রে সে ভালো অবস্থানেই আছে বলা যায়।
কেউ কেউ হাত তুলেছিল ছানাউল্লাহর প্রতি, কিন্তু বেচারার সরাসরি কথা তিনি কখনো বিয়েই করবে না।

ভালোবাসত একজনকে, আর তার ভালোবাসার গল্পটার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী একমাত্র আমিই। মেয়েটাও পাগল ছিল প্রায় ছানাউল্লাহর জন্য।
কিন্তু ছানাউল্লাহ অপারগ ছিল,
তার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করার কোনো উপায় ছিল না তার হাতে, এক পর্যায়ে মেয়েটির বিয়েই হয়ে যায় প্রবাসী এক পাত্রের সাথে।
শোকেই পাথর হয়ে বেচারা এখন বিয়ে না করে বাকী জীবন কাটানোর জন্যই প্রস্তুত।

আড্ডা চলছে আমাদের আর এরই মধ্যে পশ্চিমাকাশে কালো মেঘ এসে হানা দিয়েছে, মুষলধারে বৃষ্টিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
গ্রামে বৃষ্টি হওয়া মানে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া। ভারত বনাম আফগানিস্তান এর খেলা চলছে আর এই মূহুর্তেই বিদ্যুৎ গায়েব ।

বাড়ি থেকে ইতিমধ্যে ফোন এসেছে, ইফাত কই তুই বাড়িতে আয় দ্রুত কথা আছে।
বৃষ্টির দোহাই দিয়া তখন কল কেটে দিয়ে আবার মেতেছিলাম আড্ডায়।
আড্ডার মাঝেই সন্ধ্যাকালীন ভোজনের জন্য শহীদের বিখ্যাত হোটেলে যাওয়া। সেখানে গিয়ে সবাই একেকজন যেন এমন খেলা বিশারদ যে সবার আলোচনা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ও হার মানাবে।

নাস্তা শেষেই চা পানের জন্য আজাদের দোকানে যাওয়া, চা আর দই এর জন্য আজাদের দোকান সবার পছন্দের প্রথম স্থানে।
সেখানে চা খেয়ে বের হয়ে বাড়ি ফেরার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়েছিলাম তখন দেখা ভাই/বন্ধুসুলভ এক স্যারের সাথে।
কলেজ জীবনেই তিনি আমাদের ক্লাশ নিয়েছিলেন। ওনার সাথে সম্পর্কটা বন্ধুর মতই।
বয়স প্রায় ত্রিশ পার হয়েছে কিন্তু এখনো অবিবাহিত তিনি। ওনার সাথে দেখা হলেই বিয়ে করার জন্য উস্কানি মূলক কথা বলাই যেন আমাদের মুল লক্ষ্য থাকে।
এরই মধ্যে বাবার ফোন এলো- কিরে কই তুই বাবা, বৃষ্টি তো থেমে গেল বাড়িতে আসবি কখন.?
বলেছিলাম - আসতেছি বাবা
স্যারকে বিদায় দিয়ে পার্কিং থেকে বাইক বের করে স্টার্ট দিয়ে পিলিয়ন হিসাবে ছানাউল্লাহ কে নিয়ে বাড়িতে চলে আসা, ছানাউল্লাহ সহপাঠী,বন্ধু, এবং কাজিনও বটে।

বাড়িতে এসে দেখি ছোট খাট একটা পারিবারিক সমাবেশ।
বাবা, মা, আন্টি, চাচা, চাচী এবং কাজিন মিলে একটি মহাসমাবেশই গড়ে উঠেছে। বাইক রেখে সমাবেশে যোগ দিতেই চাচা বললো - শুনো ইফাত, তোমার জন্যই অপেক্ষা করেছিলাম।
এটা তো জানো তোমার আম্মু অসুস্থ, তোমার কোনো বোন নাই বা অন্য কেউ নাই যে তোমার আম্মুকে সাহায্য করবে। আর তুমি পরিবারের বড় সন্তান সেটাও জানো। বড়সন্তান হিসেবে পরিবারের প্রতি তোমার কি কর্তব্য সেটাও তোমাকে বলতে হবে না, পড়াশুনা করো শহরে থাকো সবকিছুই বুঝো।
তাছাড়া তোমার আম্মুকে সাহায্য করার জন্য কাউকে না কাউকেই প্রয়োজন।

চাচার কথাবার্তায় আমার বুঝা হয়ে গেছে কি ঘটতে চলছে আমার কপালে। মানে সার্কেলের সেকেন্ড উইকেট এর শিকার আমিই হতে যাচ্ছি।
স্বাধীন জীবন থেকে এক পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করার জন্য আমাকে নিয়ে মহাষড়যন্ত্র চলছে।

চাচা আবার বললো- আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে বিয়ে করাতে চাই। আমার বন্ধুর মেয়ে ইন্টারমেডিয়েট ১ম বর্ষে পড়ে, মেয়ে দেখতে সুন্দরী এবং লম্বা। তোমার পছন্দ হবে শিউর। মেয়েরা এক বোন এক ভাই, মেয়েই বড় আর বাবা আর্মি অফিসার যশোর ক্যান্টেনমেন্ট এ আছে।
উনারা আগে যশোর ক্যান্টেনমেন্টেই থাকতো কিন্তু পড়াশুনার সুবাধে বর্তমানে ঢাকাতেই থাকে।
মেয়ে যাত্রাবাড়ি শামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজে পড়ে।
এখন আমরা চাচ্ছি কাল মেয়ে দেখতে যাবো, তুমিও আমাদের সাথে যাবে।
ওদের গ্রামের বাড়ি পানিয়ালা, আমরা চাচ্ছি তুমি অমত করবে না।

চাচার কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, কি এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন আমি একদিকে ক্যারিয়ার, নিজের স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে, এবং ভালোবাসা। যদিও বর্তমানে ভালোবাসার মানুষটির সাথে খুব একটা সুসময় যাচ্ছে না তবুও ভালোবাসা ত । অন্যদিকে নিজের পরিবার এবং মায়ের অসুস্থতা।
কি করবো আমি.?

চাচা জোর দিচ্ছে আমার সিদ্ধান্ত কি.?
আমি বললাম- আমার সময়ের প্রয়োজন, আমার ক্যারিয়ার এখনো বাকী এখন এসব কিভাবে কি.?
চাচা বললো- পারিপাশ্বিক অবস্থা চিন্তা করে দেখো আর সিদ্ধান্ত নাও
আমি বললাম - আই নিড টাইম
চাচা বললো - কাল আমাদের সাথে চলো তারপর যত সময় দরকার তোমার ততই সময় পাবে।
বাবা বললো - কাল তাহলে আমরা কনে দেখতে যাচ্ছি।

আমি কিছু না বলেই বাসা থেকে বাহিরে চলে গেলাম।
কি করবো না করবো তা নিয়ে ভাবতে লাগলাম। দুটো রাস্তার মধ্যখানে আমার অবস্থান, কোন পথে যাবো কি করবো তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজন সময়।

রাস্তায় গিয়ে ফোন দিয়ে ছানাউল্লাহ কে ডেকে ওর সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করলাম । ছানাউল্লাহ বললো কাল যা তুই কনে দেখতে বাকীটা পরে দেখা যাবে।
এরই মধ্যে আবার বাবার ফোন, চাচা কথা বলছে - কাল যাচ্ছো তো আমাদের সাথে.?
আমরা মেয়ের বাবাকে জানানোর জন্যই অতি দ্রুতই তোমার সিদ্ধান্ত যাচ্ছি।
আমি তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই বললাম- জ্বী, যাচ্ছি।

রাস্তার পাশে বসে আছি, আর ভাবতে লাগলাম কেন যে আসলাম এবার বাড়িতে । বাড়িতে না আসলে হয়তো এমন কিছু ঘটতো না ।
ফোনের নেট অফ ছিল, অন করার দেখি ভার্সিটির বান্ধুবি শৈলীর ম্যাসেজ - কিরে ইফাত তুই ক্যাম্পাসে আসিস না কেন.?
আমি রিপ্লায় দিলাম - রবিবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। তুই ভালো আছিস.?
সে রিপ্লায় দিলো - না ভালো নেই, রবিবার বেঁচে থাকলেই ত দেখা হবে।
বললাম- কি হইছে তোর.?
সে বললো- মাথা ব্যাথা আর নিম্ন রক্তচাপ
আমি বললাম - মরবি না তুই বেঁচে থাকবি আমার বিয়ে খাওয়ার জন্য হলেও।
সে বললো- আমি নাচুম
আমি হাহা রিয়াক্ট দিয়ে বললাম - আচ্ছা
সে বললো - চা থাকবে আমার জন্য.?
আমি বললাম - চা না শুধু ম* ও থাকবে। বাকীদের সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বল চাঁদপুর আসার জন্য।
এরই মধ্যে গ্রুপে বার্তাটি প্রচার হয়ে গেলো।

সারা ভাবলো মজা করছি আমি, সারাও ভার্সিটি ফ্রেন্ড।
গ্রুপে সবার সাথেই কথা হলো একেকজন একেক পরামর্শ দিলো যা দেখে মনে সবাই এক্সপেরিয়েন্স সম্পূর্ন।
এর পর অপেক্ষা করতে লাগলাম পরবর্তীদিনটির জন্য, না জানি কি আছে কপালে.?
কনে দেখতে যাবো কি যাবো না.? নাকি বাসায় না বলে ঢাকায় ফিরে যাবো..?

(চলবে....)
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×