somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ক্ষ’- ব্যান্ডের 'আমার সোনার বাংলা ' আমার বড় ভালো লাগিয়াছে, আমি কি জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করিলাম???

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন ধরিয়া ‘ক্ষ’- ব্যান্ডের গাওয়া একটি ভিডিও ‘ আমার সোনার বাংলা’ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলিতেছে। সামুতেও একটি ব্লগে খুব চমৎকার আলোচনা হইয়াছে। এক পক্ষের খুব শক্তিশালী অভিযোগ হচ্ছে এই ভিডিওতে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করা হইয়াছে, জাতীয় সঙ্গীত গাইবার কিছু নিয়ম- কানুন ও প্রোটোকল আছে, সেইগুলা ঠিকঠাক মানা হইনাই। এই সমস্ত অভিযোগ মেনে নিয়েই আমি কিছু কথা বলিতে চাই।
প্রত্যেকটি দেশেই তাদের সংস্কৃতির নানা কিছুকে প্রতিকীকরন বা জাতীয়করন করিয়া থাকে, যেমন আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল, বৃক্ষ হল আম, ফুল শাপলা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং আরও অনেক কিছু। বেশিরভাগ জাতীয় বস্তু সামগ্রী নিয়ে তেমন কোন অসুবিধা নাই, মানে খুব বেশী নিয়ম কানুন নাই। কাঁঠাল গাছ থেকে নামানোর সময় স্যালুট করাটা জরুরী না, শুইয়া বসিয়া যে কোনভাবেই খাওয়া চলে। তারপরেন ধরেন জাতীয় বৃক্ষ আম, উহা আপনার ইচ্ছে মত লাগান, কাটেন, উহার কাঠ দিয়া শয্যা বানান অথবা বেড়া দেন, আইনগত বিধি বিধান আছে কিনা জানিনা, তবে ইহা জানি যে থাকিলেও কেহ মাথা ঘামায়না। আর শাপলা আমাদের জাতীয় ‘ফুল’ হওয়া সত্ত্বেও দিনে দুপুরে বাজারে ইহা সবজি হিসেবে কেনা-বেচা হয়, মানুষ হরদম ইহা খাইয়া চলিতেছে। অথচ ‘জাতীয় ফুল’ খাইয়া ফেলার মত অবমাননায় এখনও পর্যন্ত কারও পেট খারাপ করিল বলে শুনি নাই। কিন্তু গোল বাঁধিবার দুইটি বিশেষ বস্তু হইতেসে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। একটি দেশ কে প্রতিনিধিত্ব করিবার দুইটি মোক্ষম বস্তু এই দুইটি, একইসাথে অনেক আবেগের, অনেক ভালবাসার। এবং যেহেতু দেশকে প্রতিনিধিত্ব করিবার মত আনুষ্ঠানিক বিষয় জড়িত, বেশ কিছু নিয়ম ও প্রোটোকল মানিবার আছে, যেগুলো ভাঙ্গা সাংবিধানিকভাবে অবমাননার শামিল।
আমরা আমাদের শ্রদ্ধার আর ভালবাসার জিনিসগুলোকে নানাভাবে সম্মান জানাইবার চেষ্টা করি। মজার বিষয় হইতেসে সম্মান জানানোর জন্য আমরা নানা কিছু আচার-আচরন তৈরি করার মাধ্যমে বস্তুটিকে দৈনন্দিন জীবন থেকে বিসর্জন দেই। যেমন কুরআন শরিফ- ঘরের সবথেকে উঁচু আলমারির উচু কোনে এর অবস্থান ছোটোবেলা থেকে দেখে আসছি, কিতাব ধরার আগে অযু থেকে শুরু করে পবিত্রতা রক্ষার নানা নিয়ন কানুন এর সাথে আমার দূরত্বই তৈরী করেছে। সমস্ত নিয়ম কানুন মানিলে একই রকম দূরত্ব তৈরী হয় আমাদের পতাকা জাতীয় সঙ্গীতের সাথে।
শুধুই শ্রদ্ধার সম্পর্ক হইতেসে দূরের সম্পর্ক। আটপৌরে আর আপনার সম্পর্ক হইতেসে ভালবাসার। শ্রদ্ধার অনুভূতি ভঙ্গুর ও অস্থায়ী, তাই শ্রদ্ধা জানাইবার জন্য আমরা অনেক নিয়ম- কানুন বানাই ও তা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের চেষ্টা করি। যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন হইল কিনা ইহা লইয়া ব্লগে- ফেবুতে বিতর্ক করি। ভালবাসার কিন্তু কোন প্রোটোকল বা শাস্ত্র নাই, উল্লেখ্য বাৎস্যায়নের ‘কামসুত্র’ ভালবাসিবার নিয়ম কানুন নহে, সহায়িকা মাত্র। যা আমাদের ভালবাসার ধন তা নিয়ে আমাদের আহ্লাদ না করিলে চলেনা।
তাই খেয়াল করিবেন যে ক্রিকেট খেলার মাঠ থেকে বিজয় মিছিলে, এরকম কোথাও নানা আকৃতির, নানা ভঙ্গীমায়, নানাকিছুর সাথেই আমাদের জাতীয় পতাকার উপস্থিতি দেখি, এই উন্মাদনায় আমরা আপ্লুত হই। পতাকা নিয়ে তাঁর এই ভালোবাসা আমাদেরকে ছুঁয়ে যায়। আইন মানিতে গেলে কিন্তু ধরা খাইবেন।
পতাকার নির্দিষ্ট মাপ আছে আমরা সবাই জানি, এই মাপ মানিয়াই কি পতাকার ডিজাইন নিয়া করা টি -শার্ট গায়ে দেই যে পতাকার অবমাননায় আমার গা চুলকোয়না? শাস্ত্রে আছে- ‘The ‘Flag’ shall not be dipped to any person or any inanimate object ’ . তাহলে পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারীতে গালে কপালে পতাকা আঁকিয়া ফেসবুকে ছবি আপ্লোডাই উহার বেলা? বলিতে গেলে আরও বহু ধারা উপধারা হাজির করা যাইবে কিন্তু অনর্থক কথা বাড়িয়ে লাভ কি? আসল কথা হল প্রানের আবেগ নিয়মে বাঁধিয়া রাখা যায়না। রাখিতে যাওয়া মুর্খামি।
‘ক্ষ’ ব্যান্ডের সুরেলা সাবালিকা এবং কতিপয় অর্বাচীন বালক( দাঁড়াইলিনা কেন ?? দুধের মধ্যে এক ফোঁটা চোনা ঢাললি!) ‘ আমার সোনার বাংলা’ শুনিয়া আমার মত কিছু মানুষ খুবই পছন্দ করিয়াছে, তাহা এদিক ওদিক চাহিয়া বেশ বোঝা যাইতেসে। শেয়ার লাইক এর ধুম দেখিয়া এই ভিডিওর বাজার পাইয়াছে বোঝা যায়। জাতীয় সঙ্গীতের দায় একইসাথে ‘ জাতি’ ও ‘ সঙ্গীত’ দুইটার প্রতি। জগতে আমার “ আমার সোনার বাংলা”-র অস্তিত্ব শুধু জাতীয় ‘প্রতীকী সঙ্গীত’এর দায়িত্ব পালন করা নয়, আলাদাভাবে সঙ্গীত হিসেবেও এর পরিচয় আছে। যার আবেদন আর্টের কাছে, সঙ্গীত বোধের কাছে। এই জায়াগাটাতে ‘ক্ষ’ ব্যান্ডের কাজ বড়ই মনোরম হইয়াছে, সাকিবের ছক্কায় গ্যালারীতে ভুল নিয়মের পতাকা দোলানো তরুনীকে দেখিয়া যেমন আপ্লুত হই, অনেকটা ওইরকম। অনেকবার শুনিয়াছি, আরও অনেকবার শুনিব, আরও অনেক শেয়ার করিব। কিন্তু ঐ খেলার আগে যদি আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘ক্ষ’ ব্যান্ডের “ আমার সোনার বাংলা” গাওয়ার কথা আসে তবে তাহা চলিবেনা না, অইখানে একদম ঠিক ঠাক জাতীয় সঙ্গীত “ আমার সোনার বাংলা” গাওয়া চাই, যেইখান থেকে শুরু ঠিক সেইখান থেকে, সবাই দাঁড়ায়ে, সুর প্রক্ষেপনে কোন কারিকুরি চলিবে না, ঠিক ওইসময় যে পতাকা টা উঠতে থাকবে ফ্ল্যাগ পোস্ট দিয়ে তাও একদম ঠিকঠাক মাপে, সঠিক রঙের হতে হবে, যদিও ঠিক তখন বুকে ভুল মাপে পতাকা আঁকিয়া ভুল সুরে চিৎকার করিয়া ‘আমার সোনার বাংলা ’ গাইতে থাকিবে কিছু সহজ মানুষ।


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫০
৩০টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×